নিউজ ডেস্ক:
পুরনো বছরকে বিদায় ও নববর্ষকে স্বাগত জানাতে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস চলছে সৈকতের রাজধানী কক্সবাজার ও প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে। গতকাল শুক্রবার থেকে আগামী ১ জানুয়ারি পর্যন্ত কক্সবাজার ওসেন্টমার্টিনে বইয়ে চলছে পর্যটকদের মহোৎসব। বর্ষবিদায় এবং বর্ষবরণের উৎসবকে রাঙিয়ে তুলতে ৩০ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত সৈকতে বসছে বিচকার্নিভাল। ৩০ ডিসেম্বর থেকে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে বসছে বিশাল কার্নিভাল। তিন দিনব্যাপী এ কার্নিভাল বিরাট আকারে আয়োজিত হবে। কার্নিভালে দেশের নামকরা বেশ কয়েকজন শিল্পী সঙ্গীত পরিবেশন করবেন। টিভিতে অনুষ্ঠানগুলো লাইভ দেখানো হবে। মূলত কক্সবাজারে আসা পর্যটকদের বাড়তি বিনোদন জোগাতে এ কার্নিভালের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
সংশ্লিøষ্টরা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে মহান বিজয় দিবসের আগ থেকেই কক্সবাজারে বিপুল পর্যটক এসেছেন। থার্টিফার্স্ট নাইট ও নতুন বছর ২০১৭ সালকে স্বাগত জানাতে পর্যটকেরা কক্সবাজারে ছুটে আসছেন। গতকাল শুক্রবার থেকে টানা তিন দিনের ছুটিকে সামনে রেখে পর্যটকেরা ছুটে আসছেন। চলতি সপ্তাহের মধ্যে অন্তত পাঁচ লাখ পর্যটকের সমাগম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এখানে। ১ জানুয়ারি পর্যন্ত এ সংখ্যক পর্যটক কক্সবাজারে অবস্থান করবেন।
এ ছাড়া দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন যাতায়াতের সব জাহাজের টিকিট ও হোটেল মোটেল অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। ২৩ ডিসেম্বর থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত একটানা তিন দিন সরকারি ছুটি থাকায় গত কয়েক দিন ধরে টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনে পর্যটকের ঢল নেমেছে। কোথাও নেই তিল পরিমাণ জায়গা। ২৩ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নতুন বুকিং ও নতুন পর্যটক বহনের মতো কোনো পরিবেশ নেই বলে জানিয়েছেন টেকনাফ-সেন্টমার্টিন দ্বীপ নৌরুটে চলাচলকারী জাহাজ কর্তৃপ। কেয়ারি সিন্দাবাদের ইনচার্জ মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, আরো নতুন টিকিটের জন্য চাপ আসছে, তবে আমাদের জাহাজে কোনো জায়গা নেই। সরকারি নিয়ম মেনেই আমদের যাত্রী পরিষেবা দিতে হয়। এখন নতুন পর্যটকের আবদার রা করা কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। সেন্টমার্টিনে পর্যটকদের খাবারসহ বিভিন্ন সমস্যাও হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
শীতের হিমেল হাওয়া এড়িয়ে সমুদ্রের উষ্ণতার খোঁজে কক্সবাজারে ছুটে আসছেন পর্যটকেরা। সাপ্তাহিক ছুটিসহ বড় দিনকে ঘিরে বুকিং হয়েছে ৪ শতাধিক হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউজ ও রিসোর্টগুলোর সব কক্ষ। সমুদ্রের উষ্ণতার খোঁজে ছুটছেন পর্যটকরা। ফলে বিপুল সংখ্যক পর্যটককে আনন্দ দিতে নেয়া হয়েছে নানা আয়োজন। আর পর্যটকদের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। সাপ্তাহিক ছুটিসহ বড় দিন ২৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে ছুটি। একই সাথে শিাপ্রতিষ্ঠানগুলো এখন বন্ধ রয়েছে। তা ছাড়া আর ক’দিন পরেই থার্টিফাস্ট নাইট। তাই এ ছুটিকে উপভোগ করতে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন ছুটে আসছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকেরা। ইতোমধ্যে বুকিং হয়ে গেছে পর্যটন নগরীর সব হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউজ ও রিসোর্টগুলো। আর পর্যটকদের আনন্দ দিতে সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছে পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউজ ও রিসোর্টগুলো শতভাগ বুকিং হওয়ায় এবার ব্যবসায়ীরা কাক্সিক্ষত ল্যমাত্রা অর্জন করতে পারবেন।
ট্যুর অপারেটরস অব কক্সবাজারের (টুয়াক) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এস এম কিবরিয়া জানান, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কক্সবাজারে লাধিক পর্যটক এসে গেছেন। আরো বিপুল পর্যটক আসার পথে রয়েছে। আজকের মধ্যে অন্তত তিন লাখ পর্যটক সমাগম হবে। থার্টিফার্স্ট নাইট ও নববর্ষ বরণের প্রাক্কালে আরো বেশ পর্যটক আসবে। সব মিলে পাঁচ লাখ পর্যটক সমাগমের সম্ভাবনা রয়েছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হোসাইন মো: রায়হান কাজেমী জানান, পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য নানা ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রতিটি পয়েন্টে ইউনিফর্ম ও সাদা পোশাকে ট্যুরিস্ট পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সাংবাদিক আলহাজ মো: ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, সাগরবেষ্টিত সেন্টমার্টিন দ্বীপের মানুষ সাগরের মতোই উদার এবং পর্যটকবান্ধব। পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধার প্রতি দ্বীপবাসীর তীক্ষè নজর রয়েছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা ও সংবাদকর্মী মাওলানা নুর মোহাম্মদ জানান, সেন্টমার্টিন দ্বীপে ভ্রমণে এসে জাহাজ জার্নি করে টেকনাফ ফিরে গন্তব্যে যেতে কাক্সিত গাড়ির টিকিটের জন্য টেনশনে ভুগতে হয় না। সেন্টমার্টিন দ্বীপে বসেই টিকিট করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপ ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ নুর আহমদ জানান, দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে ভ্রমণে আসা দেশী-বিদেশী পর্যটক, শিক্ষার্থী, ভিআইপি, ভিভিআইপি যাতে নিরাপদে আনন্দ উপভোগ করতে পারেন সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।