নিউজ ডেস্ক:
তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ এমন কর্মীর পেছনে ১ টাকা ব্যয় করলে ব্যাংকের আয় বাড়ে ২৫ টাকা। যেখানে সাধারণ কর্মীর পেছনে ১ টাকা খরচ করলে ব্যাংকের আয় হয় মাত্র ৬ টাকা। আইসিটিতে দক্ষ একজন কর্মীর পেছনে ব্যাংকের বিনিয়োগ চার গুণ বেশি লাভজনক।
আজ রোববার এক সেমিনারে ‘ব্যাংকের মুনাফা ও ব্যবসা বৃদ্ধিতে তথ্যপ্রযুক্তির প্রভাব’ শীর্ষক গবেষণাপত্রে এসব তথ্য জানানো হয়। মিরপুরে এ সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম)।
গবেষণায় বলা হয়, আইসিটিতে ১ টাকা বিনিয়োগ করলে ব্যাংকের জন্য তা ১৩৬ টাকার সমান উৎপাদনশীলতা তৈরি করে। এর বিপরীতে প্রযুক্তিবহির্ভূত খাতে ১ টাকা খরচ করলে সেটি ৫৮ টাকার সমপরিমাণের উৎপাদনশীলতা নিয়ে আসে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯০ সালের পর থেকে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে ধীরে ধীরে আইসিটির ব্যবহার শুরু হয়। সে সময় ব্যাংকের একজন কর্মী গড়ে ৪১ কোটি টাকা লেনদেন করতেন। সেটি ২০১৫ সালে প্রায় চার গুণ বেড়ে ১৬০ কোটি টাকা হয়েছে। অর্থাৎ লেনদেন সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে একজন কর্মীর আর্থিক লেনদেনের দক্ষতাও এ সময়ে প্রায় চার গুণ বেশি বেড়েছে।
কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংকের মুনাফাও এ সময় বেড়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ১৯৯০ সালে বেসরকারি ও বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলো মুনাফা করলেও সরকারি ব্যাংকের লোকসানের কারণে সামগ্রিক ব্যাংক খাত লোকসানের মধ্যে ছিল। সেই অবস্থা থেকে ২০০০ সালে ব্যাংক খাতের গড় মুনাফা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৫৫ কোটি টাকায়। এ মুনাফা ২০১৫ সালে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
২৫ বছরের বেশি সময়ে ব্যাংক খাতের মুনাফা ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিতে আইসিটি খাতের ভূমিকা নির্ধারণে বেশ কয়েকটি গাণিতিক সমীকরণ গবেষণায় ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি তৈরিতে মতামতভিত্তিক যে জরিপ করা হয়েছে, সেখানে গড়ে ৬১ শতাংশ গ্রাহক অনলাইন ব্যাংকিংয়ের বিষয়ে নিজেদের সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন। সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ গ্রাহক বলেছেন, তথ্যপ্রযুক্তির কারণে ব্যাংকের লেনদেনে ভুলের পরিমাণ কমে এসেছে। তবে অনলাইন লেনদেন করতে গিয়ে কোন সমস্যার মুখে পড়লে তা সমাধানে ধীরগতির বিষয়ে গ্রাহকেরা তাদের অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথাগত ব্যাংকিং মাধ্যমে এখন বছরে গড়ে ১৭০ কোটি বার লেনদেন হচ্ছে। আর আইসিটির কারণে অনলাইনে ২০০ কোটি বারের বেশি লেনদেন হচ্ছে। প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে ব্যাংক খাতের একজন কর্মী এখন বছরে গড়ে ১০ হাজার লেনদেন সম্পন্ন করছেন। ২০০০ সালের আগ পর্যন্ত ব্যাংকের একজন কর্মীর গড় লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৫ হাজারের কম। অর্থাৎ প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গত দেড় দশকে ব্যাংকের কর্মীদের কর্মদক্ষতা দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে।
আইসিটিতে বিনিয়োগ করা ব্যাংক খাতের জন্য কতটুকু লাভজনক, মূলত সে বিষয় সামনে রেখে গবেষণাটি করা হয়েছে। গবেষণার প্রাথমিক তথ্য-উপাত্ত ২১টি ব্যাংক থেকে নেওয়া হয়েছে। আর সেকেন্ডারি বা প্রকাশিত তথ্য-উপাত্ত আর্থিক খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া ব্যাংক ও আইসিটির বিষয়ে গ্রাহকের মতামত জানতে দেশব্যাপী ৫০০ জন লোকের সাক্ষাৎকারও নেওয়া হয়েছে।
সেমিনারে ডাচ বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবুল কাশেম মো. শিরিন বলেন, অনলাইন ব্যাংকিংয়ের কারণে কস্ট অব ফান্ড কমেছে। আগে ১০০ টাকা সংগ্রহে ৬ টাকা খরচ হতো, এখন মাত্র ২ টাকা। তিনি বলেন, কয়েকটি ব্যাংকের উপর নির্ভরশীল হওয়ার কারণে এটিএম বুথের সংখ্যা বাড়ছে না। এ বিষয়ে নীতিগত পরিবর্তন আনা দরকার। তিনি বলেন, আইটি খাতে ভেতরে-বাইরে ঝুঁকি আছে, বিশেষ করে ব্যাংকের ডাটার নিরাপত্তা দিতে হবে। সার্বিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিগত সহায়তা আরও বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।
এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান, বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী, ডাচ বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবুল কাশেম মো. শিরিন, ব্যাংক এশিয়ার প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরফান আলী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ইয়াসিন আলীসহ বিভিন্ন ব্যাংকের আইটি বিভাগের প্রধানরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
গবেষণাপত্রটি প্রস্তুত করেছেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান আলম, শিহাব উদ্দিন খান ও সহকারী অধ্যাপক কানিজ রাব্বি।