শুক্রবার | ২৮ নভেম্বর ২০২৫ | হেমন্তকাল
শিরোনাম :
Logo গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি রবিউল হাসানকে চাঁদপুর জেলার পুলিশ সুপার পদে বদলী Logo প্রতিষ্ঠার পর থেকে নির্মাণ হয়নি চাঁদপুর সদর হাসপাতালে স্থায়ী মর্গ, জীর্ণ-ভবনে ময়নাতদন্ত Logo চাঁদপুর ফরিদগঞ্জে তারুণ্যের আলো সামাজিক উন্নয়ন পরিষদের উদ্যোগ ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প Logo ফের ভূমিকম্প Logo কচুয়ায় জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ উপলক্ষে ৩০টি প্রদর্শনী Logo কুবির বাংলা বিভাগের বাংলা নাটক বিষয়ক প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন Logo মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় যুবক নিহত Logo মাগুরার শ্রীপুরে প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ ও প্রদর্শনী- ২০২৫ এর উদ্বোধন Logo পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় জাতীয় প্রাণীসম্পদ সপ্তাহ ২০২৫ প্রদর্শনী Logo আমরা নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করছি: চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের বিএনপির প্রার্থী বাবু খান

নিখোঁজ তরুণরা গেল কোথায়?

  • amzad khan
  • আপডেট সময় : ১২:১১:৩৮ অপরাহ্ণ, সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৬
  • ৮৪৬ বার পড়া হয়েছে
নিউজ ডেস্ক:
রাজধানী ঢাকা ও পাবনা থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ সেই সাত তরুণের এখনো হদিস মেলেনি। নিরুদ্দেশ হওয়ার পর দুই সপ্তাহের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও ওই তরুণদের অবস্থান জানাতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ব্যক্তিগত কোনো কারণে তারা কী স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে রয়েছেন নাকি গোয়েন্দা হেফাজতে রয়েছেন, নাকি জড়িয়ে পড়েছেন জঙ্গিবাদে এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে বিভিন্ন মহলে।
জঙ্গিদের কর্মকাণ্ডের ওপর নজর রাখেন এমন এক গোয়েন্দা কর্মকর্তার মতে, ‘হিজরত’ করার আগে একসঙ্গে বনানীর একটি ক্যাফেতে বসে চার যুবক আড্ডা দেবে, এটা বাস্তবসম্মত নয়। অতীতে যারা জঙ্গিবাদে জড়িয়েছে, ওই সব যুবকদের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটেনি। অতীতের রেকর্ড অনুযায়ী, হিজরতের অন্তত তিন মাস আগে থেকে নব্য জেএমবির সদস্যরা মোবাইল যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। অথচ বনানী ও পাবনা থেকে নিখোঁজ তরুণরা লাপাত্তা হওয়ার আগ পর্যন্ত মোবাইল ফোনসেট সচল রেখেছিলেন। তাই প্রশ্ন উঠেছে, নিখোঁজ তরুণরা গেছের কোথায়? তারা কি নিজেরা ‘আত্মগোপনে’ গেছেন, না কি তারা গোয়েন্দা হেফাজতে? এ নিয়ে নিখোঁজদের পরিবারে উৎকণ্ঠাও বেড়ে চলছে।
নিখোঁজদের স্বজনদের দাবি, তাদের সন্তানরা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়তে পারে না। কোনো কারণে গোয়েন্দা হেফাজতে আটক থাকতে পারে। তবে পুলিশ ও র‌্যাবের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের দাবি, ওই নিখোঁজ তরুণদের আটক করা হয়নি। তাদের খুঁজে বের করতে কাছ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তারা নিজেরা আত্মগোপন করেছেন নাকি অন্য কোনো চক্র তাদের অপহরণ করেছে তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে গত সপ্তাহে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় এক সভায় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, ‘নিখোঁজ হওয়া মানেই জঙ্গিতে যোগদান করা নয়। তাই নিখোঁজ হলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। অনেকে পারিবারিক বা ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে চলে যায়, আবার ফিরে আসে। তারপরও পুলিশকে জানালে আমরা খুঁজে বের করে আনার চেষ্টা করি এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে সফল হয়েছি।
১ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানী এলাকা থেকে একযোগে চার তরুণ নিখোঁজ হন। তারা হলেন সাফায়েত হোসেন, জায়েন হোসেন খান পাভেল, সুজন ও মেহেদী। এদের মধ্যে সাফায়েত ও পাভেল নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। বনানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী সুজন ও চাকরির পরীক্ষা দিতে বরিশাল থেকে ঢাকায় এসেছিলেন মেহেদী হাওলাদার। এ ছাড়া বনানী থেকে পৃথকভাবে সাঈদ আনোয়ার খান নামে আরো এক তরুণ নিখোঁজ হন। ৫ ডিসেম্বর নিখোঁজ হয়েছেন ‘ও’ লেভেল পাস এই যুবক। অন্যদিকে ২৯ নভেম্বর সকালে ঢাকা সেনানিবাস সংলগ্ন মাটিকাটা এলাকার ১৪৫/এ নম্বর বাসা থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন কেয়ার মেডিকেল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র ইমরান ফরহাদ। এ ছাড়া ৩০ নভেম্বর নিখোঁজ হন পাবনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী জাকির হোসেন ও তানভীর আহমেদ তনয়। ১১ ডিসেম্বর জাকির বাড়ি ফিরলেও এখনো বাড়ি ফেরেননি তানভীর।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, ওই তরুণদের হঠাৎ নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। বিশেষ করে বনানী থেকে চার জনের একযোগে নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি রহস্যজনক। নিখোঁজ চার জনের মধ্যে সাফায়েতের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রোফাইল ঘেঁটে জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ার বিষয়ে সন্দেহ করছে পুলিশ ও র‌্যাব।
১ ডিসেম্বর বনানী থেকে একসঙ্গে চার তরুণ নিখোঁজ হওয়ার আগে তারা নর্দান ক্যাফেতে জড়ো হয়েছিলেন। সেখানকার সিসিটিভির ফুটেজ থেকে দেখা যায়, এক পর্যায়ে স্যুপ খান তারা। তাদের কাঁধে ব্যাগ ছিল। ক্যাফেতে কয়েকবার তরুণরা আসন বদল করেন। কিন্তু তাদের অঙ্গভঙ্গি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ছিল।
অন্য এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, সারাদেশে প্রতিদিন নানা কারণে অনেক ব্যক্তি নিখোঁজ হন। নিখোঁজ হলেই জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত এমন ধারণা গ্রহণযোগ্য নয়। জঙ্গিবাদে জড়িত হয়ে নিখোঁজ হলে তার বিভিন্ন আলামত থাকে। তাই নিখোঁজ হওয়ার আগে ওই ব্যক্তির আচরণ কেমন ছিল, তা বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, কেয়ার মেডিকেল কলেজের ছাত্র ইমরান ফরহাদের মা গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন, মেডিকেল কলেজ নির্বাচন নিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ইমরানের মনোমালিন্য ছিল। এটিও নিখোঁজ হওয়ার কারণ হতে পারে। তবে অন্য সন্দেহও উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে না।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া শাখার উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, নিখোঁজ তরুণদের খুঁজতে পুলিশ মাঠে কাজ করছে। উদ্ধারের জন্য পুলিশের ওয়েবসাইটে তাদের ছবিও প্রকাশ করা হয়েছে। দেশের সব থানায় জরুরি বার্তা পাঠানো হয়েছে। একাধিক সংস্থা তাদের নিখোঁজ রহস্য উšে§াচনে নিবিড়ভাবে তদন্ত করছে।
বনানী থেকে নিখোঁজ সাফায়েত হোসেনের বাবা আলী হোসেন বলেন, এখনো ছেলের কোনো খোঁজ পাইনি। যত দিন যাচ্ছে, তত উদ্বেগ বাড়ছে। তারা পুলিশ ও র‌্যাবের দ্বারে ঘুরতে ঘুরতে এখন ফিরে আসার বিষয়টি আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। তার সন্তান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে রয়েছে বলে তাদের ধারণা। তিনি জানান, বনানীর নর্দান ক্যাফেতে বন্ধু পাভেলের সঙ্গে সর্বশেষ আড্ডা দিয়েছিল সাফায়েত। সেখানে আরো যে দুই তরুণ এসেছিল, তাদের সঙ্গে সাফায়েতের পরিচয় ছিল না।
একই সঙ্গে নিখোঁজ মেহেদির চাচা মাহবুবু হাওলাদার বলেন, পুলিশ ও র‌্যাবের দ্বারে দ্বারে আমরা ঘুরছি। তাদের কাছে আকুতি জানাচ্ছি, যেভাবেই হোক আমাদের সন্তানকে উদ্ধার করুন। আমরা তার শোকে পাথর হয়ে গেছি। কত জায়গায় আর যাব তাকে খুঁজতে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের একাধিকবার অনুরোধ করেছি, আপনাদের হেফাজতে থাকলে ছেড়ে দিন। অন্যদিকে ৫ ডিসেম্বর বনানী থেকে নিখোঁজ সাইদের পরিবারের সদস্যরা জানান, নিখোঁজের পর থেকেই সাঈদের বাবা-মা ভেঙে পড়েছেন। তারা ছেলেকে উদ্ধারের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। ঘটনার পর ১২ দিন পেরিয়ে গেলেও সাঈদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, সম্প্রতি নিখোঁজ তরুণদের সন্ধানের জন্য পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাবও কাজ করছে। আমরা ওই যুবকদের খুঁজছি। তারা নিজেরা আত্মগোপন করেছেন নাকি কেউ তাদের অপহরণ করেছে তাও তদন্ত করা হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে এই র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, আমার জানা মতে র‌্যাব কিংবা পুলিশ ওই যুবকদের আটক করেনি।
গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় ভয়াবহ হামলার দীর্ঘদিন পর প্রায় একই সময়ে সাত তরুণের হঠাৎ নিখোঁজ হওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর অনেকে আবার নতুনভাবে জঙ্গিবাদে সক্রিয় হওয়ার আশঙ্কা করছেন। তবে গোয়েন্দারা জোর দিয়ে বলছেন, কয়েক তরুণের নিখোঁজ হওয়ায় খুব বেশি আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। জঙ্গিবাদ কিংবা উগ্রবাদ মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি রবিউল হাসানকে চাঁদপুর জেলার পুলিশ সুপার পদে বদলী

নিখোঁজ তরুণরা গেল কোথায়?

আপডেট সময় : ১২:১১:৩৮ অপরাহ্ণ, সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৬
নিউজ ডেস্ক:
রাজধানী ঢাকা ও পাবনা থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ সেই সাত তরুণের এখনো হদিস মেলেনি। নিরুদ্দেশ হওয়ার পর দুই সপ্তাহের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও ওই তরুণদের অবস্থান জানাতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ব্যক্তিগত কোনো কারণে তারা কী স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে রয়েছেন নাকি গোয়েন্দা হেফাজতে রয়েছেন, নাকি জড়িয়ে পড়েছেন জঙ্গিবাদে এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে বিভিন্ন মহলে।
জঙ্গিদের কর্মকাণ্ডের ওপর নজর রাখেন এমন এক গোয়েন্দা কর্মকর্তার মতে, ‘হিজরত’ করার আগে একসঙ্গে বনানীর একটি ক্যাফেতে বসে চার যুবক আড্ডা দেবে, এটা বাস্তবসম্মত নয়। অতীতে যারা জঙ্গিবাদে জড়িয়েছে, ওই সব যুবকদের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটেনি। অতীতের রেকর্ড অনুযায়ী, হিজরতের অন্তত তিন মাস আগে থেকে নব্য জেএমবির সদস্যরা মোবাইল যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। অথচ বনানী ও পাবনা থেকে নিখোঁজ তরুণরা লাপাত্তা হওয়ার আগ পর্যন্ত মোবাইল ফোনসেট সচল রেখেছিলেন। তাই প্রশ্ন উঠেছে, নিখোঁজ তরুণরা গেছের কোথায়? তারা কি নিজেরা ‘আত্মগোপনে’ গেছেন, না কি তারা গোয়েন্দা হেফাজতে? এ নিয়ে নিখোঁজদের পরিবারে উৎকণ্ঠাও বেড়ে চলছে।
নিখোঁজদের স্বজনদের দাবি, তাদের সন্তানরা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়তে পারে না। কোনো কারণে গোয়েন্দা হেফাজতে আটক থাকতে পারে। তবে পুলিশ ও র‌্যাবের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের দাবি, ওই নিখোঁজ তরুণদের আটক করা হয়নি। তাদের খুঁজে বের করতে কাছ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তারা নিজেরা আত্মগোপন করেছেন নাকি অন্য কোনো চক্র তাদের অপহরণ করেছে তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে গত সপ্তাহে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় এক সভায় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, ‘নিখোঁজ হওয়া মানেই জঙ্গিতে যোগদান করা নয়। তাই নিখোঁজ হলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। অনেকে পারিবারিক বা ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে চলে যায়, আবার ফিরে আসে। তারপরও পুলিশকে জানালে আমরা খুঁজে বের করে আনার চেষ্টা করি এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে সফল হয়েছি।
১ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানী এলাকা থেকে একযোগে চার তরুণ নিখোঁজ হন। তারা হলেন সাফায়েত হোসেন, জায়েন হোসেন খান পাভেল, সুজন ও মেহেদী। এদের মধ্যে সাফায়েত ও পাভেল নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। বনানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী সুজন ও চাকরির পরীক্ষা দিতে বরিশাল থেকে ঢাকায় এসেছিলেন মেহেদী হাওলাদার। এ ছাড়া বনানী থেকে পৃথকভাবে সাঈদ আনোয়ার খান নামে আরো এক তরুণ নিখোঁজ হন। ৫ ডিসেম্বর নিখোঁজ হয়েছেন ‘ও’ লেভেল পাস এই যুবক। অন্যদিকে ২৯ নভেম্বর সকালে ঢাকা সেনানিবাস সংলগ্ন মাটিকাটা এলাকার ১৪৫/এ নম্বর বাসা থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন কেয়ার মেডিকেল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র ইমরান ফরহাদ। এ ছাড়া ৩০ নভেম্বর নিখোঁজ হন পাবনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী জাকির হোসেন ও তানভীর আহমেদ তনয়। ১১ ডিসেম্বর জাকির বাড়ি ফিরলেও এখনো বাড়ি ফেরেননি তানভীর।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, ওই তরুণদের হঠাৎ নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। বিশেষ করে বনানী থেকে চার জনের একযোগে নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি রহস্যজনক। নিখোঁজ চার জনের মধ্যে সাফায়েতের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রোফাইল ঘেঁটে জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ার বিষয়ে সন্দেহ করছে পুলিশ ও র‌্যাব।
১ ডিসেম্বর বনানী থেকে একসঙ্গে চার তরুণ নিখোঁজ হওয়ার আগে তারা নর্দান ক্যাফেতে জড়ো হয়েছিলেন। সেখানকার সিসিটিভির ফুটেজ থেকে দেখা যায়, এক পর্যায়ে স্যুপ খান তারা। তাদের কাঁধে ব্যাগ ছিল। ক্যাফেতে কয়েকবার তরুণরা আসন বদল করেন। কিন্তু তাদের অঙ্গভঙ্গি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ছিল।
অন্য এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, সারাদেশে প্রতিদিন নানা কারণে অনেক ব্যক্তি নিখোঁজ হন। নিখোঁজ হলেই জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত এমন ধারণা গ্রহণযোগ্য নয়। জঙ্গিবাদে জড়িত হয়ে নিখোঁজ হলে তার বিভিন্ন আলামত থাকে। তাই নিখোঁজ হওয়ার আগে ওই ব্যক্তির আচরণ কেমন ছিল, তা বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, কেয়ার মেডিকেল কলেজের ছাত্র ইমরান ফরহাদের মা গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন, মেডিকেল কলেজ নির্বাচন নিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ইমরানের মনোমালিন্য ছিল। এটিও নিখোঁজ হওয়ার কারণ হতে পারে। তবে অন্য সন্দেহও উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে না।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া শাখার উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, নিখোঁজ তরুণদের খুঁজতে পুলিশ মাঠে কাজ করছে। উদ্ধারের জন্য পুলিশের ওয়েবসাইটে তাদের ছবিও প্রকাশ করা হয়েছে। দেশের সব থানায় জরুরি বার্তা পাঠানো হয়েছে। একাধিক সংস্থা তাদের নিখোঁজ রহস্য উšে§াচনে নিবিড়ভাবে তদন্ত করছে।
বনানী থেকে নিখোঁজ সাফায়েত হোসেনের বাবা আলী হোসেন বলেন, এখনো ছেলের কোনো খোঁজ পাইনি। যত দিন যাচ্ছে, তত উদ্বেগ বাড়ছে। তারা পুলিশ ও র‌্যাবের দ্বারে ঘুরতে ঘুরতে এখন ফিরে আসার বিষয়টি আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। তার সন্তান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে রয়েছে বলে তাদের ধারণা। তিনি জানান, বনানীর নর্দান ক্যাফেতে বন্ধু পাভেলের সঙ্গে সর্বশেষ আড্ডা দিয়েছিল সাফায়েত। সেখানে আরো যে দুই তরুণ এসেছিল, তাদের সঙ্গে সাফায়েতের পরিচয় ছিল না।
একই সঙ্গে নিখোঁজ মেহেদির চাচা মাহবুবু হাওলাদার বলেন, পুলিশ ও র‌্যাবের দ্বারে দ্বারে আমরা ঘুরছি। তাদের কাছে আকুতি জানাচ্ছি, যেভাবেই হোক আমাদের সন্তানকে উদ্ধার করুন। আমরা তার শোকে পাথর হয়ে গেছি। কত জায়গায় আর যাব তাকে খুঁজতে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের একাধিকবার অনুরোধ করেছি, আপনাদের হেফাজতে থাকলে ছেড়ে দিন। অন্যদিকে ৫ ডিসেম্বর বনানী থেকে নিখোঁজ সাইদের পরিবারের সদস্যরা জানান, নিখোঁজের পর থেকেই সাঈদের বাবা-মা ভেঙে পড়েছেন। তারা ছেলেকে উদ্ধারের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। ঘটনার পর ১২ দিন পেরিয়ে গেলেও সাঈদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, সম্প্রতি নিখোঁজ তরুণদের সন্ধানের জন্য পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাবও কাজ করছে। আমরা ওই যুবকদের খুঁজছি। তারা নিজেরা আত্মগোপন করেছেন নাকি কেউ তাদের অপহরণ করেছে তাও তদন্ত করা হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে এই র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, আমার জানা মতে র‌্যাব কিংবা পুলিশ ওই যুবকদের আটক করেনি।
গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় ভয়াবহ হামলার দীর্ঘদিন পর প্রায় একই সময়ে সাত তরুণের হঠাৎ নিখোঁজ হওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর অনেকে আবার নতুনভাবে জঙ্গিবাদে সক্রিয় হওয়ার আশঙ্কা করছেন। তবে গোয়েন্দারা জোর দিয়ে বলছেন, কয়েক তরুণের নিখোঁজ হওয়ায় খুব বেশি আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। জঙ্গিবাদ কিংবা উগ্রবাদ মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।