শিরোনাম :
Logo দূর্গা পূজা উপলক্ষে চাঁদপুর জেলা পুলিশের মতবিনিময় সভা Logo জাকসু প্রচারণায় আচরণবিধি লঙ্ঘন  বাগছাসের জিএস প্রার্থীর Logo শ্রমিক দলের প্রধান উপদেষ্টার সুস্থতা ও ঝালকাঠি প্রেসক্লাব সভাপতির রুহের মাগফিরাত কামনায় মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত Logo লস্কর সিনেমার গানে জীবন ওয়াসিফ ও শেরপুরের কলি সাহা Logo সিরাজগঞ্জে এতিমদের জমি দখলে প্রভাবশালীদের টানাটানি Logo চাঁদপুর বক্ষব্যাধি হাসপাতালে ব্র্যাকের উদ্যোগে ডেঙ্গু প্রতিরোধে ক্লিনিং ক্যাম্পেইন Logo সাংবাদিক কবির হোসেন মিজি সম্পাদিত ছোট কাগজ জানালা’র মোড়ক উন্মোচন Logo একসময়ের জনপ্রিয় বাউল শিল্পী সফিউল্লাহ এখন রিক্সা–সাইকেল মেকানিক Logo শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ক্ষমতায় ছিল নির্বাচনগুলো নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে: বদরুদ্দীন উমরের জবানবন্দি Logo ঝটিকা মিছিলের বিষয়ে ‘মনিটরিং’ জোরদার করবে সরকার, নেবে কঠোর ব্যবস্থা : প্রেস সচিব

অপরাধে লুটের অস্ত্র

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ১২:০৪:০৫ অপরাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫
  • ৭৭২ বার পড়া হয়েছে
কক্সবাজারের মহেশখালীর ডাকাত জিয়াউর রহমান পাঁচ বছর আগে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের হাতে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে পাঁচটি হত্যাসহ অন্তত ১৪টি মামলা রয়েছে। সেই সব মামলা থেকে রেহাই পেতেই তিনি নিজেকে ভালো মানুষ সাজাতে অস্ত্র জমা দেন। সঙ্গে তাঁর বাহিনীর সদস্যরাও অস্ত্র জমা দিয়েছিলেন।

লোক-দেখানো ভালো সেজে যাওয়া সেই ডাকাত সর্দার জিয়াউর আবারও অস্ত্র সংগ্রহ করেন। এবার তার হাতে আসে লুট হওয়া পুলিশের অস্ত্র। এই খবর জানতে পেরে গত ১৪ নভেম্বর কোস্ট গার্ডের কর্মকর্তারা তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক ও অস্ত্র উদ্ধার করেন। আটকের পর জিয়াউর স্বীকার করেন, গত বছরের ৫ আগস্ট থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র সংগ্রহ করে ফের ডাকাতিতে নেমেছেন তিনি। তার বাহিনীর হাতেও পৌঁছেছে লুটের সেইসব অস্ত্র।

লুটের অস্ত্র চলে গেছে ডাকাতদের হাতেওগত ২৫ জানুয়ারি চট্টগ্রাম শহরের ডবলমুরিং এলাকায় ডাকাতদের একটি গোপন আস্তানা থেকেও লুট হওয়া বিপুল গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে পুলিশ। লুট হওয়া অস্ত্র বিক্রি করতে গিয়ে গত ১৫ আগস্ট ফেনীতে ধরা পড়েছেন রুবেল (২৯) নামের এক যুবক। থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র যে ডাকাতসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধীদের হাতে চলে গেছে, সেগুলো তারই প্রমাণ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

পুলিশের তথ্য মতে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় গত বছরের ৫ ও ৬ আগস্ট দেশের বিভিন্ন থানায় ও কারাগারে হামলা চালিয়ে পিস্তল, রিভলভার, শটগানসহ ১১ ধরনের পাঁচ হাজার ৭৫০টি অস্ত্র লুট হয়। এর মধ্যে চার হাজার ৩৫৮টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার পর্যন্ত এক হাজার ৩৯২টি অস্ত্র উদ্ধারের বাইরে রয়েছে। এসব অস্ত্রের মধ্যে গণভবন ও জাতীয় সংসদ ভবন থেকে লুট হওয়া এসএসএফের অস্ত্রও রয়েছে।

জানা গেছে, লুট হওয়া ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে গত সেপ্টেম্বরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী যেমন তোড়জোড় শুরু করেছিল, সেটির গতি অনেকটাই কমে গেছে।

অনেক ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ চেইন অব কমান্ডও মানছে না। মানছে না সদর দপ্তরের নির্দেশনাও। বিভিন্ন অজুহাতে তারা থাকছে নিষ্ক্রিয়। আর এই সুযোগে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে ডাকাত, ছিনতাইকারী ও দস্যুরা। দিন দিন অপরাধ বাড়ছে। পুলিশের পরিসংখ্যানেই উঠে এসেছে এসব তথ্য।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী গত বছরের আগস্ট মাসে ডাকাতির মামলা হয় ৩৭টি। পরের মাস সেপ্টেম্বরে ডাকাতি বেড়ে ৫৭টিতে দাঁড়ায়। এ ছাড়া এই মাসটিতে ১০৪টি দস্যুতার মামলা হয়। অক্টোবরে ডাকাতির মামলা বেড়ে ৬৮ এবং দস্যুতা ১৫৭টিতে গিয়ে দাঁড়ায়। নভেম্বরে ডাকাতির ৪৭ এবং দস্যুতার ১৩৩টি মামলা হয়। গত ডিসেম্বরে ডাকাতির মামলা হয় ৭১টি এবং দস্যুতার মামলা হয় ১৫৯টি। চলতি জানুয়ারি মাসেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক ডাকাতির তথ্য মিলছে।

তবে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, ‘পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনা মেনে কাজ করছে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ। অস্ত্র উদ্ধার আমাদের অন্যতম অগ্রাধিকার। সারা দেশে অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চলছে।’

সাবেক আইজিপি নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘নানা কারণে পুলিশের মনোবল পুরোপুরি ফিরে আসেনি। মানুষ পুলিশের দিকে তাকিয়ে থাকে। মানুষকে আতঙ্কমুক্ত করতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘যেসব অস্ত্র লুট হয়েছে, সেগুলো তো ভালো মানুষের হাতে থাকার কথা নয়। অপরাধীরা সংগ্রহ করবে—এটাই স্বাভাবিক।’

তিনি বলেন, পুলিশের মনোবল বাড়াতে প্রতিনিয়ত মোটিভেট করতে হবে। ডাকাতি রোধে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং চিহ্নিত করে তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে।’

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

দূর্গা পূজা উপলক্ষে চাঁদপুর জেলা পুলিশের মতবিনিময় সভা

অপরাধে লুটের অস্ত্র

আপডেট সময় : ১২:০৪:০৫ অপরাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫
কক্সবাজারের মহেশখালীর ডাকাত জিয়াউর রহমান পাঁচ বছর আগে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের হাতে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে পাঁচটি হত্যাসহ অন্তত ১৪টি মামলা রয়েছে। সেই সব মামলা থেকে রেহাই পেতেই তিনি নিজেকে ভালো মানুষ সাজাতে অস্ত্র জমা দেন। সঙ্গে তাঁর বাহিনীর সদস্যরাও অস্ত্র জমা দিয়েছিলেন।

লোক-দেখানো ভালো সেজে যাওয়া সেই ডাকাত সর্দার জিয়াউর আবারও অস্ত্র সংগ্রহ করেন। এবার তার হাতে আসে লুট হওয়া পুলিশের অস্ত্র। এই খবর জানতে পেরে গত ১৪ নভেম্বর কোস্ট গার্ডের কর্মকর্তারা তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক ও অস্ত্র উদ্ধার করেন। আটকের পর জিয়াউর স্বীকার করেন, গত বছরের ৫ আগস্ট থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র সংগ্রহ করে ফের ডাকাতিতে নেমেছেন তিনি। তার বাহিনীর হাতেও পৌঁছেছে লুটের সেইসব অস্ত্র।

লুটের অস্ত্র চলে গেছে ডাকাতদের হাতেওগত ২৫ জানুয়ারি চট্টগ্রাম শহরের ডবলমুরিং এলাকায় ডাকাতদের একটি গোপন আস্তানা থেকেও লুট হওয়া বিপুল গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে পুলিশ। লুট হওয়া অস্ত্র বিক্রি করতে গিয়ে গত ১৫ আগস্ট ফেনীতে ধরা পড়েছেন রুবেল (২৯) নামের এক যুবক। থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র যে ডাকাতসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধীদের হাতে চলে গেছে, সেগুলো তারই প্রমাণ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

পুলিশের তথ্য মতে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় গত বছরের ৫ ও ৬ আগস্ট দেশের বিভিন্ন থানায় ও কারাগারে হামলা চালিয়ে পিস্তল, রিভলভার, শটগানসহ ১১ ধরনের পাঁচ হাজার ৭৫০টি অস্ত্র লুট হয়। এর মধ্যে চার হাজার ৩৫৮টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার পর্যন্ত এক হাজার ৩৯২টি অস্ত্র উদ্ধারের বাইরে রয়েছে। এসব অস্ত্রের মধ্যে গণভবন ও জাতীয় সংসদ ভবন থেকে লুট হওয়া এসএসএফের অস্ত্রও রয়েছে।

জানা গেছে, লুট হওয়া ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে গত সেপ্টেম্বরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী যেমন তোড়জোড় শুরু করেছিল, সেটির গতি অনেকটাই কমে গেছে।

অনেক ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ চেইন অব কমান্ডও মানছে না। মানছে না সদর দপ্তরের নির্দেশনাও। বিভিন্ন অজুহাতে তারা থাকছে নিষ্ক্রিয়। আর এই সুযোগে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে ডাকাত, ছিনতাইকারী ও দস্যুরা। দিন দিন অপরাধ বাড়ছে। পুলিশের পরিসংখ্যানেই উঠে এসেছে এসব তথ্য।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী গত বছরের আগস্ট মাসে ডাকাতির মামলা হয় ৩৭টি। পরের মাস সেপ্টেম্বরে ডাকাতি বেড়ে ৫৭টিতে দাঁড়ায়। এ ছাড়া এই মাসটিতে ১০৪টি দস্যুতার মামলা হয়। অক্টোবরে ডাকাতির মামলা বেড়ে ৬৮ এবং দস্যুতা ১৫৭টিতে গিয়ে দাঁড়ায়। নভেম্বরে ডাকাতির ৪৭ এবং দস্যুতার ১৩৩টি মামলা হয়। গত ডিসেম্বরে ডাকাতির মামলা হয় ৭১টি এবং দস্যুতার মামলা হয় ১৫৯টি। চলতি জানুয়ারি মাসেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক ডাকাতির তথ্য মিলছে।

তবে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, ‘পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনা মেনে কাজ করছে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ। অস্ত্র উদ্ধার আমাদের অন্যতম অগ্রাধিকার। সারা দেশে অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চলছে।’

সাবেক আইজিপি নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘নানা কারণে পুলিশের মনোবল পুরোপুরি ফিরে আসেনি। মানুষ পুলিশের দিকে তাকিয়ে থাকে। মানুষকে আতঙ্কমুক্ত করতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘যেসব অস্ত্র লুট হয়েছে, সেগুলো তো ভালো মানুষের হাতে থাকার কথা নয়। অপরাধীরা সংগ্রহ করবে—এটাই স্বাভাবিক।’

তিনি বলেন, পুলিশের মনোবল বাড়াতে প্রতিনিয়ত মোটিভেট করতে হবে। ডাকাতি রোধে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং চিহ্নিত করে তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে।’