রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী সংহতির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এক আলোচনা সভা। আলোচনায় এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় “বাজার বন্দুক বুরোক্রেসি: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কার ও স্বাধীনতা”। শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৪টায় রাবির সিরাজী ভবনে অনুষ্ঠিত হবে এ আলোচনা। এতে উপস্থাপনায় থাকবেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রেজা নিউটন।
‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী সংহতি’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র ও বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার আড্ডা চলুক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরাই আলাপচারিতার মাধ্যমে ঠিক করুক কেমন হবে গণতান্ত্রিক রাবির নকশা। আর সে ঐক্য স্থাপনের লক্ষ্যেই কাজ করে যাবে ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী সংহতি’।
এতে বলা হয়, সেলিম রেজা নিউটনকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। তাকে নিয়ে অনেক বড় করে লেখা যায়, লেখা দরকার, কিন্তু এসব তিনি পছন্দ করেন না। ঘরকুনো নিউটনকে খুব একটা পাওয়াও যায় না, তবে যখন সামরিক সরকারকে উৎখাতের প্রয়োজন হয়, বা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসী বাহিনীর কাছ থেকে শিক্ষার্থীকে ছিনিয়ে আনা দরকার হয়, তিনি হাজির হন। তিনি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার নিয়ে দীর্ঘদিন কথা বলছেন। আজ যখন নতুন করে সংস্কারের কথা আসছে, চলুন আমরা তার আলাপের মাধ্যমে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক সংস্কার আড্ডা শুরু করি।
এতে আরও বলা হয়, রাষ্ট্র সংস্কার ও গণতন্ত্র, জুলাই অভ্যুত্থানে দুটিই শিক্ষার্থী-জনতা একই সঙ্গে চেয়েছে। এই দুটি দাবী, একে অন্যের পরিপূরক বটে। বিদ্যমান ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র কাঠামো বহাল রেখে রাষ্ট্র সংস্কার ব্যতিরেকে গণতন্ত্রের কোনো অর্থ হয় না। আবার, সকল সংস্কার শেষে গণতন্ত্রের দিকেই যেতে হবে, নয়তো কীসের সংস্কার? তবে রাষ্ট্র সংস্কার একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া বটে। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে ও তার সকল প্রতিষ্ঠানকে যেভাবে দলীয় রূপ দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে, তার গণ্ডি থেকে দেশটিকে বের করে এনে সকল প্রতিষ্ঠানকে গণতান্ত্রিক করা এক নতুন যুদ্ধ বটে। এই যুদ্ধ, যেকোনো দলীয় বৃত্ত থেকে বেরিয়ে বাংলাদেশকে অবশেষে একটি রাষ্ট্রে রূপ দেওয়ার যুদ্ধ। এই যুদ্ধ, রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের ব্যক্তি স্বাধীনতা ও অধিকারের অধিকার কায়েমের যুদ্ধ। এই যুদ্ধ, নিজের ভেতরের হাসিনাকে ও ফ্যাসিবাদকে পালাতে বাধ্য করার যুদ্ধ। এবং এ যুদ্ধ আমাদের করতেই হবে, জয়ীও হতে হবে, কেননা জুলাই অভ্যুত্থানকে সুষ্ঠু পরিণতি দেওয়াও আজ আমাদের দায়িত্ব বটে।
এতে বলা হয়, মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে জুলাই অভ্যুত্থান, সকল গণ-আন্দোলনে আমরা বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রণী ভূমিকা দেখেছি। আমাদের সবার প্রিয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বরাবরের মতো বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মতিহারের সবুজ চত্বর হয়েছে ফ্যাসিবাদ মুক্ত। তবে আমাদের দায়িত্ব শেষ নয়। মতিহারের বুকে কথা কওয়া ও আওয়াজ ওঠানো আমাদের জারি রাখতে হবে, ইনসাফের পথে হাঁটা থামানো চলবে না। শিক্ষার্থী-শিক্ষক-প্রশাসন সবার সহায়তায় দল-মত-নারী ও পুরুষ-ধর্ম নির্বিশেষে আমরা আলাপ তুলতে চাই যে আমরা কেমন বাংলাদেশ চাই, কেমন বিশ্ববিদ্যালয় চাই, কী রকম সংস্কার চাই। চলুন, রাষ্ট্র ও বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কারে আমরাও এবার অংশগ্রহণ করি, আমরাই আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করি।
পরিশেষে বলা হয়, চলুন, আমরা শিক্ষার্থীরা একজোট হই, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে যাত্রায় যে সংস্কার আজ আবশ্যক, তাতে শরিক হই।