নিউজ ডেস্ক:
রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ। যেখানে থমকে থাকে আকাশ। পরাজয় নিশ্চিত জেনে এখানকার পরিত্যক্ত ইটের ভাটাতেই একাত্তরে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়েছিল দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। আজ সেখানের মিলিত মানুষের দাবি যুদ্ধপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামাতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হোক। এবং ফিরিয়ে এনে বিচার হোক ব্রিটেন, আমেরিকা বা অন্যত্র পলাতক যুদ্ধাপরাধীদের।
কুয়াশা ঘেরা সকালে স্মৃতির মিনার ফুলে ফুলে সেজে ওঠে। বিশাল কালো শোকস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানান সব স্তরের মানুষ।
জনতার দাবি প্রসঙ্গে আওয়ামি লিগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে পলাতক যুদ্ধাপরাধী আশরাফুজ্জামান ও চৌধুরী মইনুদ্দিনকে ফিরিয়ে আনতে সরকার সক্রিয় রয়েছে।”
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১-এ পাকিস্তানের দোসর আল-বদরের সাহায্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, সংস্কৃতি কর্মী-সহ বিভিন্ন পেশার বরেণ্য ব্যক্তিদের অপহরণ করা হয়। পরে নির্মম অত্যাচার করে রায়েরবাজার ও মিরপুরে তাদের হত্যা করা হয়। এ দু’টি স্থান এখন বধ্যভূমি হিসেবে সংরক্ষিত। মুক্তিযুদ্ধের শেষ লগ্নে ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে আল-বদর বাহিনী আরও অনেক বুদ্ধিজীবীকে ধরে নিয়ে মহম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে আল-বদর ঘাঁটিতে নির্যাতনের পর রায়েরবাজার বধ্যভূমি ও মিরপুরে নিয়ে হত্যা করে।
শহিদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, ডাঃ আলীম চৌধুরী, অধ্যাপক মুনিরুজ্জামান, ডঃ ফজলে রাব্বী, সিরাজ উদ্দিন হোসেন, শহীদুল্লাহ কায়সার, অধ্যাপক জিসি দেব, জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, সাংবাদিক খন্দকার আবু তাহের, নিজামউদ্দিন আহমেদ, এসএ মান্নান (লাডু ভাই), এএনএম গোলাম মোস্তফা, সৈয়দ নাজমুল হক, সেলিনা পারভিন-সহ আরও অনেকে।
বাংলাদেশ এ বছর এমন একটি প্রেক্ষাপটে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করছে, যখন একাত্তরের সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কাজ এগিয়ে চলছে। অনেকের বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে। ইতিমধ্যে মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত অনেকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। মানবতা বিরোধী হত্যা মামলায় দণ্ডিত জামাতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হয়েছে। জামায়াতের আর এক নেতা মহঃ কামারুজ্জামান এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার অন্যতম হোতা আলি আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির রায়ও কার্যকর হয়েছে।
চলতি বছরের ১১ মে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের নীলনকশা বাস্তবায়নকারী আলবদর বাহিনীর প্রধান ও জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামির ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হয়। তবে বুদ্ধিজীবী হত্যায় জড়িত আরও দু’জন চৌধুরী মঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান খান পলাতক থাকায় তাদের বিচার এখনও কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। চৌধুরী মইনুদ্দিন ব্রিটেনে এবং আশরাফুজ্জামান খান আমেরিকায় পলাতক রয়েছে। তাদের ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
























































