নিউজ ডেস্ক:
ফুটবল ইতিহাসের সেরা লড়াই কোনটা? আন্তর্জাতিক ফুটবলে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সুপার ক্ল্যাসিকোর সঙ্গে অন্য কোনো ম্যাচের তুলনা নেই। এই ম্যাচের ভোল্টেজ সবকিছুকেই ছাপিয়ে যায়।
কিন্তু ক্লাব ফুটবলে! এখানেও ফুটবল দুনিয়ায় সব লড়াইকে ছাপিয়ে গেছে বার্সেলোনা-রিয়াল মাদ্রিদের এল ক্ল্যাসিকো। ১৯০২ সালের ১৩ মে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হয় স্পেনের দুই বিখ্যাত ক্লাব। রিয়াল মাদ্রিদকে সেবার ৩-১ গোলে হারিয়েছিল বার্সেলোনা। পরের তিনটা ম্যাচেও জয় পায় কাতালানরাই। সেই যে শুরু, এরপর শত বছর পেরিয়ে গেছে। দুই দলের লড়াই নিয়ে ভক্তদের আগ্রহ দিনে দিনে কেবল বেড়েছেই। মৌসুমের শুরুতেই সবাই জানতে চায়, কবে হবে এল ক্ল্যাসিকো! লিগের বাইরেও দুয়েকটা বোনাস এল ক্ল্যাসিকো পাওয়া যাবে তো! তারপর এল ক্ল্যাসিকোর লড়াই শুরু হলে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকেন ভক্তরা। লিওনেল মেসি আর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ক্ল্যাসিক লড়াই দেখেন। অতীতে যেমন ভক্তরা এল ক্ল্যাসিকোতে খেলতে দেখেছেন আলফ্রেডো ডি স্টেফানো, ফেরেচন পুসকাস আর দিয়েগো ম্যারাডোনার মতো তারকাদের। ফুটবল ইতিহাসের সেরা এই লড়াই কী এবার হারিয়ে যাবে কালের গর্ভে! আর কী দেখা যাবে না এল ক্ল্যাসিকোর লড়াই!
গত ১ অক্টোবর স্প্যানিশ পুলিশের শত বাধা সত্ত্বেও কাতালানরা স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দিয়েছে। নব্বই ভাগ মানুষ ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। সবাই ছিল স্বাধীনতার পক্ষে। কাতালানরা স্বাধীন হবে কি না এখনো একটা বড় প্রশ্ন। স্বাধীন হলে কী হবে বার্সেলোনার! কোথায় খেলবে কাতালান এই ক্লাবটি! এরই মধ্যে নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। কাতালুনিয়ার ক্রীড়ামন্ত্রী বলেছেন, বার্সেলোনা ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলতে পারে। এমনকি ইতালি আর ফ্রান্সেও খেলতে পারে তারা। লা লিগার কথা তিনি উচ্চারণ করেননি। লা লিগা কর্তৃপক্ষও শক্ত অবস্থানে। কাতালানরা স্বাধীন হলে, লা লিগায় খেলার যোগ্যতা হারাবে বার্সেলোনা। তবে কী আর এল ক্ল্যাসিকো হবে না! ফুটবল ইতিহাসের সেরা লড়াইটা এভাবেই হারিয়ে যাবে! রাজনীতির বলি হবে ফুটবল! এরই মধ্যে ভক্তরা প্রশ্ন তুলেছে, কাতালুনিয়া স্বাধীন হোক না হোক, তাতে ফুটবলের কী! রাজনীতির সঙ্গে ফুটবলের কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না। ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার নীতিমালাও এটাই। কিন্তু বার্সেলোনা তো রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়েই পড়ল। এরই মধ্যে বার্সা তারকারা কাতালুনিয়ার স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। পিকে, ইনিয়েস্তারা সরাসরিই স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলছেন। সাবেক তারকা জাভি হার্নান্দেজ আর পেপ গার্ডিওলা জোরাল বক্তব্য দিয়েছেন স্বাধীনতার পক্ষে। সবকিছু মিলিয়ে কাতালুনিয়ার স্বাধীনতা খুব একটা দূরের বলে মনে হয় না। আর স্বাধীন হলেই বার্সেলোনাকে লা লিগা ছাড়তে হতে পারে। সেক্ষেত্রে একটা মৌসুম মেসিদেরকে কেবল চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলেই হয়ত কাটাতে হবে! বার্সেলোনার সাবেক প্রেসিডেন্ট লাপোর্তা বলেছেন, লা লিগা থেকে বার্সেলোনাকে বাদ দিলে এটা হবে ফুটবলের জন্য একটা বড় ভুল। লা লিগার সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপনই হলো এল ক্ল্যাসিকো। দুই দলের ২৬৯ বারের লড়াইয়ে ১১১ বার জিতেছে বার্সেলোনা। রিয়াল মাদ্রিদ জিতেছে ৯৯ বার। এমন কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। এই লড়াই না থাকলে শ্রী হারাবে লা লিগা। আর মেসি-রোনালদোর দ্বৈত লড়াই না থাকলে ভক্তরাও আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে লিগ সম্পর্কে। দেখা যাক, স্প্যানিশ ফুটবলের কর্তা ব্যক্তিরা কাতালানরা স্বাধীন হলে কী পদক্ষেপ নেয়!