শিরোনাম :
Logo জীবননগরে ডিবির অভিযান, গাঁজাসহ আটক ২ Logo জবিস্থ চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রকল্যাণের নবীনবরণ ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত Logo চাঁদপুরে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ড্যাবের উদ্যোগে ইফতার মাহফিল Logo ধর্ম অবমাননার অভিযোগে পাবিপ্রবির দুই শিক্ষার্থী সাময়িক বহিষ্কার Logo যে ভিটামিনের অভাবে স্মৃতিশক্তি কমে যায় Logo রোজায় সুস্থ থাকতে বিভিন্ন শরবত ও পানীয়ের স্বাস্থ্য উপকারিতা Logo কুবিতে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ; প্রমাণ বিনষ্টসহ ৫ দাবি শিক্ষার্থীদের Logo হাবিপ্রবি শস্যবৃত্ত সংগঠনের নেতৃত্বে সৌরভ ও আকাশ Logo মুন্সিগঞ্জে স্বামীকে হত্যার দায়ে স্ত্রীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। Logo কানাডায় টপ টোয়েন্টি অ্যাওয়ার্ড পেলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তারিফ মাহমুদ

কেমন আছে মা ইলিশ!

  • আপডেট সময় : ০৪:১১:১৯ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর ২০১৬
  • ৭৫২ বার পড়া হয়েছে
নিউজ ডেস্ক:
নদী-সাগরে কয়েক বছর ধরে দেশের জাতীয় মাছ ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও মা ইলিশের ডিম ধারণক্ষমতা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। দুই থেকে তিন বছরে ৩৩ শতাংশ ধারণক্ষমতা হারিয়েছে মা ইলিশ। চাঁদপুর ইলিশ গবেষণা কেন্দ্র এ বিষয়ে নিরবচ্ছিন্ন গবেষণায় এ শঙ্কার কথা জানিয়েছে।

ডিম ধারণের ক্ষমতা হ্রাস, চলতি মৌসুমে সাগরে ও সাগর মোহনাবেষ্টিত নদী এলাকায় প্রচুর ইলিশ ধরা পড়া এবং চাঁদপুর পদ্মা-মেঘনা অঞ্চলে ইলিশ তুলনায় অনেক কমে যাওয়া, পুকুরে ইলিশ চাষসহ ইলিশ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ইলিশ-গবেষক ড. মো আনিছুর রহমান এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, মা ইলিশ আগের মতো ডিম ধারণ করতে পারছে না। প্রতিটি মা ইলিশ ১০ থেকে ১২ লাখ ডিম ধারণক্ষমতা রাখে। অথচ একটা সময় ছিল, যখন মা ইলিশ ২০ থেকে ২২ লাখ পর্যন্ত ডিম ধারণ করতে পারত। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, এই হার কমে সাড়ে ছয় লাখ থেকে আট লাখ নেমে এসেছে।

কেন মা ইলিশ ডিম ধারণক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে— এমন প্রশ্নের জবাবে ওই মৎস্যবিজ্ঞানী বলেন, পানিতে, বিশেষ করে নদী এলাকার মা ইলিশ বিচরণ এবং প্রজননক্ষেত্রগুলোর অনেক স্থানে দূষণ দেখা দিয়েছে। পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে কার্বন ডাইঅক্সাইড ও অ্যামোনিয়া গ্যাসের পরিমাণ বাড়ছে। এ গ্যাস বৃদ্ধি মাছের জন্যই সহায়ক নয়।

তিনি সমকালকে জানান, দেশের নদী অঞ্চলে ইলিশের অভয়াশ্রম এবং কয়েকটি নদীর পানি ও মা ইলিশসহ সব ধরনের ইলিশের ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন, পানিতে ক্ষতিকর অ্যামোনিয়া গ্যাসের মাত্রা বেড়ে গেছে। যেখানে প্রতি লিটার পানিতে অ্যামোনিয়ার মাত্রা শূন্য থাকার কথা, সেখানে ওই গ্যাস প্রতি লিটার পানিতে শূন্য দশমিক শূন্য ১ থেকে ১ পর্যন্ত চলে আসছে। যে কারণে পানিতে বাড়ছে কার্বন ডাইঅক্সাইড, কমেছে মাত্রাতিরিক্ত হারে অক্সিজেনের পরিমাণ। বিশেষ করে চাঁদপুর অঞ্চলের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের চরআলেকজান্ডার এলাকা পর্যন্ত ১২০ কিলোমিটার ইলিশ বিচরণ ও প্রজননক্ষেত্রের অনেক স্থানে অক্সিজেনের মাত্রা কমেছে। ক্ষতিকর গ্যাসের মাত্রা বেড়েছে। এর কারণ হিসেবে দেখা গেছে, নদীর পানিদূষণ, অনেক স্থানে গভীরতা হ্রাস, জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা রকম বিরূপ প্রভাব। বিশেষ করে বুড়িগঙ্গা দিয়ে অব্যাহত বর্জ্যপ্রবাহের ফলে এর দূষণ মাত্রাতিরিক্তভাবে চাঁদপুর ও পদ্মা-মেঘনা নদীতে ধাবিত হচ্ছে। যার ফলে ওই নদীর নিকটবর্তী এলাকা মেঘনার সঙ্গে ষাটনল বিশাল ইলিশ বিচরণ এলাকায় পানিদূষণের পরিমাণ অনেক বেশি। এ ছাড়া নদী তীরবর্তী শহর ও উপজেলা শহরগুলো থেকে অব্যাহত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদীতে।

তবে এ শঙ্কার অবস্থান থেকে তিনি আশার আলো দেখিয়েছেন। তা হচ্ছে মা ইলিশ ডিম ধারণক্ষমতা হারালেও তার সংখ্যা এবং পুরুষ ইলিশের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত বছরও এক কোটি ৬০ লাখ মা ইলিশ ডিম ছাড়ার সুযোগ পেয়েছে। এর আগের বছরগুলোতে এর পরিমাণ ছিল কম। ইলিশ বাড়ার কারণ হিসেবে গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে কয়েকটি দিক। এগুলো হচ্ছে ইলিশের জাটকা রক্ষায় গত তিন থেকে চার বছরে নদী অঞ্চলে কঠোর অভিযান এবং অক্টোবরে মা ইলিশ রক্ষায়ও কঠোর নজরদারি দেওয়ার সংখ্যার দিক থেকে ইলিশ বেড়ে চলছে।

এ বিজ্ঞানী জানান, আগে মাত্র ১৫ দিন মা ইলিশ রক্ষায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু এবার তা বাড়িয়ে ২২ দিন করা হয়েছে। আগামী ১২ অক্টোবর থেকে এ অভিযান চলবে, যাতে করে নদীর মা ইলিশ রক্ষা পাবে।কলাপাড়ায় চলছে পুকুরে ইলিশ চাষ কার্যক্রম :বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট পটুয়াখালীর কলাপাড়া নদী উপকেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে পুকুরে ইলিশ চাষ কার্যক্রম শুরু করেছে। মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগিতায় গত বছরের অক্টোবরে এ কার্যক্রম শুরু করেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এনহ্যান্সড কোস্টাল ফিশারিজ।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, জাটকা ইলিশ পুকুরে ছেড়ে পুকুরের বিভিন্ন ঘনত্বে ইলিশ মাছের বেঁচে থাকার হার ও বৃদ্ধির পরীক্ষামূলক গবেষণা চলছে। জাটকা সহজপ্রাপ্যতার বিবেচনায় মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ময়মনসিংহ সদর দপ্তর থেকে উপকূলের কলাপাড়া উপজেলায় পুকুরে ইলিশ চাষের গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে বলে কলাপাড়া নদী উপকেন্দ্রের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে।

কলাপাড়া নদী উপকেন্দ্রের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল হক পুকুরে ইলিশ চাষ গবেষণা কার্যক্রমের বিশদ ব্যাখ্যা করে সমকালকে বলেন, নদী উপকেন্দ্রের অভ্যন্তরে ৪৫ শতাংশের একটি পুকুরে সাত ফুট গভীর ও স্বল্পমাত্রার লবণাক্ত পানিতে মশারি জালের বেড়া দিয়ে নয় ভাগে ইলিশের পোনা ছাড়া হয়েছে। পুকুরের পূর্ব দিকের প্রথম তিন ভাগে দুইশ’ করে ছয়শ’, মাঝের তিন ভাগে চারশ’ করে বারোশ’ এবং পশ্চিম দিকের তিন ভাগে ছয়শ’ করে আঠারোশ’ ইলিশের পোনা ছাড়া হয়েছে। আন্ধারমানিক ও রামনাবাদ নদী থেকে ৯ ইঞ্চি এবং তিন থেকে চার ইঞ্চি সাইজের পোনা ছাড়া হয়েছে পুকুরের তিন অংশে। জাটকা মাছগুলোর খাবারের চাহিদা পূরণের জন্য পুকুরের মধ্যে ক্ষুদ্র উদ্ভিদকণা (ফাইটো প্লাংটন) তৈরির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ ছাড়া কয়েক দিনের মধ্যে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ল্যাবরেটরিতে ক্ষুদ্র প্রাণিকণা (জু প্লাংটন) তৈরি করে তা খাবার হিসেবে পুকুরে দেওয়া হবে। ডুবন্ত ও ভাসমান খাদ্য এবং নার্সারি পাউডার ব্যবহার করে পুকুরে ছাড়া ইলিশের পোনার খাবার দেওয়া হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পুকুরে যাতে অন্য কোনো প্রজাতির মাছ কিংবা প্রাণী প্রবেশ করে ইলিশ পোনার ক্ষতি করতে না পারে, সে জন্য পুকুরের চারপাশে মশারি জালের বেষ্টনী দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। নদীর মতো পুকুরেও কৃত্রিম ঢেউ সৃষ্টি করার জন্য বৈদ্যুতিক প্যাডেল হুইল অ্যারেটর (ঢেউ সৃষ্টি করার যন্ত্র) স্থাপন ও এয়ার ব্লোয়ার (বাতাস সরবরাহকারী যন্ত্র) বসিয়ে তা থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে জালের প্রতিটি ভাগে বাতাস দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে ইলিশের পোনার স্বাভাবিক শারীরিক বৃদ্ধি ঘটে এবং বেঁচে থাকতে কোনো সংকট সৃষ্টি না হয়। প্রতি মাসে জাল টেনে মাছগুলোর নমুনা যাচাই করা হয়। তবে সাত-আট মাসে পুকুরে ইলিশের আকার তেমন একটা বৃদ্ধি পায়নি বলে জানান কর্মকর্তারা।

কলাপাড়া নদী উপকেন্দ্রের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল হক সমকালকে আরও বলেন, পুকুরে ইলিশ চাষ ও গবেষণা একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। এ ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ সফলতা পেতে ১০ থেকে ১৫ বছর সময় লাগতে পারে। তিনি পুকুরে ইলিশ চাষে সফলতার ব্যাপারে যথেষ্ট আশাবাদী।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

জীবননগরে ডিবির অভিযান, গাঁজাসহ আটক ২

কেমন আছে মা ইলিশ!

আপডেট সময় : ০৪:১১:১৯ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর ২০১৬
নিউজ ডেস্ক:
নদী-সাগরে কয়েক বছর ধরে দেশের জাতীয় মাছ ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও মা ইলিশের ডিম ধারণক্ষমতা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। দুই থেকে তিন বছরে ৩৩ শতাংশ ধারণক্ষমতা হারিয়েছে মা ইলিশ। চাঁদপুর ইলিশ গবেষণা কেন্দ্র এ বিষয়ে নিরবচ্ছিন্ন গবেষণায় এ শঙ্কার কথা জানিয়েছে।

ডিম ধারণের ক্ষমতা হ্রাস, চলতি মৌসুমে সাগরে ও সাগর মোহনাবেষ্টিত নদী এলাকায় প্রচুর ইলিশ ধরা পড়া এবং চাঁদপুর পদ্মা-মেঘনা অঞ্চলে ইলিশ তুলনায় অনেক কমে যাওয়া, পুকুরে ইলিশ চাষসহ ইলিশ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ইলিশ-গবেষক ড. মো আনিছুর রহমান এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, মা ইলিশ আগের মতো ডিম ধারণ করতে পারছে না। প্রতিটি মা ইলিশ ১০ থেকে ১২ লাখ ডিম ধারণক্ষমতা রাখে। অথচ একটা সময় ছিল, যখন মা ইলিশ ২০ থেকে ২২ লাখ পর্যন্ত ডিম ধারণ করতে পারত। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, এই হার কমে সাড়ে ছয় লাখ থেকে আট লাখ নেমে এসেছে।

কেন মা ইলিশ ডিম ধারণক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে— এমন প্রশ্নের জবাবে ওই মৎস্যবিজ্ঞানী বলেন, পানিতে, বিশেষ করে নদী এলাকার মা ইলিশ বিচরণ এবং প্রজননক্ষেত্রগুলোর অনেক স্থানে দূষণ দেখা দিয়েছে। পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে কার্বন ডাইঅক্সাইড ও অ্যামোনিয়া গ্যাসের পরিমাণ বাড়ছে। এ গ্যাস বৃদ্ধি মাছের জন্যই সহায়ক নয়।

তিনি সমকালকে জানান, দেশের নদী অঞ্চলে ইলিশের অভয়াশ্রম এবং কয়েকটি নদীর পানি ও মা ইলিশসহ সব ধরনের ইলিশের ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন, পানিতে ক্ষতিকর অ্যামোনিয়া গ্যাসের মাত্রা বেড়ে গেছে। যেখানে প্রতি লিটার পানিতে অ্যামোনিয়ার মাত্রা শূন্য থাকার কথা, সেখানে ওই গ্যাস প্রতি লিটার পানিতে শূন্য দশমিক শূন্য ১ থেকে ১ পর্যন্ত চলে আসছে। যে কারণে পানিতে বাড়ছে কার্বন ডাইঅক্সাইড, কমেছে মাত্রাতিরিক্ত হারে অক্সিজেনের পরিমাণ। বিশেষ করে চাঁদপুর অঞ্চলের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের চরআলেকজান্ডার এলাকা পর্যন্ত ১২০ কিলোমিটার ইলিশ বিচরণ ও প্রজননক্ষেত্রের অনেক স্থানে অক্সিজেনের মাত্রা কমেছে। ক্ষতিকর গ্যাসের মাত্রা বেড়েছে। এর কারণ হিসেবে দেখা গেছে, নদীর পানিদূষণ, অনেক স্থানে গভীরতা হ্রাস, জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা রকম বিরূপ প্রভাব। বিশেষ করে বুড়িগঙ্গা দিয়ে অব্যাহত বর্জ্যপ্রবাহের ফলে এর দূষণ মাত্রাতিরিক্তভাবে চাঁদপুর ও পদ্মা-মেঘনা নদীতে ধাবিত হচ্ছে। যার ফলে ওই নদীর নিকটবর্তী এলাকা মেঘনার সঙ্গে ষাটনল বিশাল ইলিশ বিচরণ এলাকায় পানিদূষণের পরিমাণ অনেক বেশি। এ ছাড়া নদী তীরবর্তী শহর ও উপজেলা শহরগুলো থেকে অব্যাহত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদীতে।

তবে এ শঙ্কার অবস্থান থেকে তিনি আশার আলো দেখিয়েছেন। তা হচ্ছে মা ইলিশ ডিম ধারণক্ষমতা হারালেও তার সংখ্যা এবং পুরুষ ইলিশের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত বছরও এক কোটি ৬০ লাখ মা ইলিশ ডিম ছাড়ার সুযোগ পেয়েছে। এর আগের বছরগুলোতে এর পরিমাণ ছিল কম। ইলিশ বাড়ার কারণ হিসেবে গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে কয়েকটি দিক। এগুলো হচ্ছে ইলিশের জাটকা রক্ষায় গত তিন থেকে চার বছরে নদী অঞ্চলে কঠোর অভিযান এবং অক্টোবরে মা ইলিশ রক্ষায়ও কঠোর নজরদারি দেওয়ার সংখ্যার দিক থেকে ইলিশ বেড়ে চলছে।

এ বিজ্ঞানী জানান, আগে মাত্র ১৫ দিন মা ইলিশ রক্ষায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু এবার তা বাড়িয়ে ২২ দিন করা হয়েছে। আগামী ১২ অক্টোবর থেকে এ অভিযান চলবে, যাতে করে নদীর মা ইলিশ রক্ষা পাবে।কলাপাড়ায় চলছে পুকুরে ইলিশ চাষ কার্যক্রম :বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট পটুয়াখালীর কলাপাড়া নদী উপকেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে পুকুরে ইলিশ চাষ কার্যক্রম শুরু করেছে। মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগিতায় গত বছরের অক্টোবরে এ কার্যক্রম শুরু করেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এনহ্যান্সড কোস্টাল ফিশারিজ।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, জাটকা ইলিশ পুকুরে ছেড়ে পুকুরের বিভিন্ন ঘনত্বে ইলিশ মাছের বেঁচে থাকার হার ও বৃদ্ধির পরীক্ষামূলক গবেষণা চলছে। জাটকা সহজপ্রাপ্যতার বিবেচনায় মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ময়মনসিংহ সদর দপ্তর থেকে উপকূলের কলাপাড়া উপজেলায় পুকুরে ইলিশ চাষের গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে বলে কলাপাড়া নদী উপকেন্দ্রের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে।

কলাপাড়া নদী উপকেন্দ্রের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল হক পুকুরে ইলিশ চাষ গবেষণা কার্যক্রমের বিশদ ব্যাখ্যা করে সমকালকে বলেন, নদী উপকেন্দ্রের অভ্যন্তরে ৪৫ শতাংশের একটি পুকুরে সাত ফুট গভীর ও স্বল্পমাত্রার লবণাক্ত পানিতে মশারি জালের বেড়া দিয়ে নয় ভাগে ইলিশের পোনা ছাড়া হয়েছে। পুকুরের পূর্ব দিকের প্রথম তিন ভাগে দুইশ’ করে ছয়শ’, মাঝের তিন ভাগে চারশ’ করে বারোশ’ এবং পশ্চিম দিকের তিন ভাগে ছয়শ’ করে আঠারোশ’ ইলিশের পোনা ছাড়া হয়েছে। আন্ধারমানিক ও রামনাবাদ নদী থেকে ৯ ইঞ্চি এবং তিন থেকে চার ইঞ্চি সাইজের পোনা ছাড়া হয়েছে পুকুরের তিন অংশে। জাটকা মাছগুলোর খাবারের চাহিদা পূরণের জন্য পুকুরের মধ্যে ক্ষুদ্র উদ্ভিদকণা (ফাইটো প্লাংটন) তৈরির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ ছাড়া কয়েক দিনের মধ্যে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ল্যাবরেটরিতে ক্ষুদ্র প্রাণিকণা (জু প্লাংটন) তৈরি করে তা খাবার হিসেবে পুকুরে দেওয়া হবে। ডুবন্ত ও ভাসমান খাদ্য এবং নার্সারি পাউডার ব্যবহার করে পুকুরে ছাড়া ইলিশের পোনার খাবার দেওয়া হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পুকুরে যাতে অন্য কোনো প্রজাতির মাছ কিংবা প্রাণী প্রবেশ করে ইলিশ পোনার ক্ষতি করতে না পারে, সে জন্য পুকুরের চারপাশে মশারি জালের বেষ্টনী দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। নদীর মতো পুকুরেও কৃত্রিম ঢেউ সৃষ্টি করার জন্য বৈদ্যুতিক প্যাডেল হুইল অ্যারেটর (ঢেউ সৃষ্টি করার যন্ত্র) স্থাপন ও এয়ার ব্লোয়ার (বাতাস সরবরাহকারী যন্ত্র) বসিয়ে তা থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে জালের প্রতিটি ভাগে বাতাস দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে ইলিশের পোনার স্বাভাবিক শারীরিক বৃদ্ধি ঘটে এবং বেঁচে থাকতে কোনো সংকট সৃষ্টি না হয়। প্রতি মাসে জাল টেনে মাছগুলোর নমুনা যাচাই করা হয়। তবে সাত-আট মাসে পুকুরে ইলিশের আকার তেমন একটা বৃদ্ধি পায়নি বলে জানান কর্মকর্তারা।

কলাপাড়া নদী উপকেন্দ্রের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল হক সমকালকে আরও বলেন, পুকুরে ইলিশ চাষ ও গবেষণা একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। এ ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ সফলতা পেতে ১০ থেকে ১৫ বছর সময় লাগতে পারে। তিনি পুকুরে ইলিশ চাষে সফলতার ব্যাপারে যথেষ্ট আশাবাদী।