জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হল থেকে বিড়াল ও তাদের বাচ্চা বাইরে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি ১০নং ছাত্র হল, মেয়েদের তারামন বিবি হল ও নওয়াব ফয়জুন্নেছা হলে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। বিগত এক সপ্তাহের ও অধিক সময় ধরে বিশ্ববিদ্যাল্যের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের ফেইসবুক পোস্টে ফুটে উঠেছে এই চিত্র।
আজ ১২ অক্টোবর রবিবার সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ছবিতে দেখা যায় নওয়াব ফয়জুন্নেছা হল থেকে একাধিক বিড়ালের বাচ্চা পলিথিন ব্যাগে করে নিয়ে যাচ্ছেন অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি।
এ বিষয়ে প্রাণী কল্যাণ সংস্থা ‘পথের প্রাণ’ এর সভাপতি এবং মার্কেটিং বিভাগের ৫০ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী ফারজানা শাওন বলেন, “৮ অক্টোবর আমাকে একজন শিক্ষার্থী ফোন করে জানান ১০ নং ছাত্র হল (পূর্ববর্তী বঙ্গবন্ধু হল) থেকে ১০টি বাচ্চা বিড়াল বাইরে ফেলে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে আমি তাৎক্ষণিকভাবে হলের প্রভোস্ট, হল সংসদের ভিপি এবং শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলি। তাদেরকে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয় যেন তারা ফেলে দেওয়া বিড়ালের বাচ্চাগুলাকে তাদের মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেয়।
কিন্তু তারা উপযুক্ত সময়ের মধ্যে এটি করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি একটি ফাঁকা স্থানে বিড়ালের বাচ্চাগুলোকে ফেলে দেওয়া হয়েছে যেখানে কুকুর ও বন্য শেয়ালের আবাসস্থল। মেয়েদের হলের নির্বাচিত হল সংসদ প্রতিনিধিদের সাথে এই বিষয়ে পূর্বেও আলোচনা হওয়া সত্ত্বেও আমাদের না জানিয়েই এই কাজ করা হয়েছে।”
একই ইস্যুতে ডিপ ইকোলজি এন্ড স্নেক কনজার্ভেশন ফাউন্ডেশন এর পরিচালক এবং আইন ও বিচার বিভাগের ৪৯তম আবর্তনের শিক্ষার্থী সৈয়দা অনন্যা ফারিয়া একটি অনলাইন বিবৃতিতে জানান, “গত বুধবার জাবির ১০নং হল থেকে ১০টি বিড়াল ফেলে দেয়া হয়।
এক্টিভিস্টদের দাবীর মুখে হলসংসদের প্রতিনিধিরা ক্যাম্পাসে এই নিয়ে কাজ করে এরকম সংগঠন আছে জানতাম না বলে।
যদিও আমাদের পয়েন্ট ছিল আমাদেরকে না চিনলেও কেন্দ্রীয় পরিবেশ সম্পাদককে তো জানাতে পারতো। আনফরচুনেটলি পরিবেশ সম্পাদক ব্যাপারটায় স্ট্রং পজিশনে যাননি।
আমরা চেয়েছিলাম বাচ্চাদের না পাওয়া গেলে জরিমানা হোক, সেটা দিয়ে হলের বিড়াল বন্ধ্যাকরণ হবে, ব্যবস্থাগ্রহণের প্রচারণা মানুষকে আইন-সচেতন করবে। ওদিকে দুধের বাচ্চাগুলো টারজান পয়েন্টে ফেলে আসায় শিয়াল মে/রে ফেলে। কিন্তু হলসংসদকে কোন অফিশিয়াল দুঃখপ্রকাশ, মুচলেকা বা জরিমানা কিছুই দিতে হয়নি।”
তিনি আরও বলেন,”জাকসুর আগে পরিবেশ নিয়ে অসংগতি দেখলে প্রশাসনকে জবাবদিহিতা করতাম, এখন জাকসুর পরিবেশ সম্পাদককে প্রশ্ন করব এটাই স্বাভাবিক।
এখানে জাকসুকে বা তাকে জবাবদিহি কেন করা হচ্ছে বলে ভিকটিম কার্ড প্লে করবেন না, পারসোনালি ওনার প্রতি কোন গ্রাজ নাই। এক্টিভিস্টদের চুপ করিয়ে রাখলে তো সমস্যা। কোন পদ ছাড়াই পকেটের টাকা খরচ করে জাবির পোলাপান কুকুর-বিড়াল খাওয়ায়, ডাক্তার দেখায়। নির্বাচিতের কাছে আমরা আইনের প্রয়োগ, পরিবেশের বিপর্যয় ঠেকানোর সাসটেইনেবল পদক্ষেপ আশা করি।”
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান নওয়াব ফয়জুন্নেছা হলেরই কয়েকজন আবাসিক নারী শিক্ষার্থী এবং হলের কর্মচারী সম্মিলিতভাবে বিড়াল ফেলে দেন।
উল্লেখ্য, গত ১০ অক্টোবর ‘পথের প্রাণ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের’ পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের সবগুলো আবাসিক হলের বিড়ালগুলোকে জলাতঙ্কের ভ্যাক্সিন দেওয়া হয় এবং অতিসত্ত্বর প্রাণী সংরক্ষণ আইন মেনে বিড়ালগুলোকে স্পে-নিউটার করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীপ্রেমী শিক্ষার্থীদের এতশত উদ্যোগের পরেও কতিপয় ব্যক্তির দ্বারা প্রানীদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।