শিরোনাম :
Logo বিএসএফের হাতে আটক বাংলাদেশী কিশোরকে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বিজিবির নিকট হস্তান্তর Logo ব্যানসন গ্ৰুপের কোনো ঘরবাড়ি থাকবে না; রাবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাহী Logo নতুন পোপ নির্বাচিত হবে যেভাবে Logo শুল্কযুদ্ধ থামাতে যুক্তরাষ্ট্রকে যে বার্তা দিলো চীন Logo পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক Logo পারভেজ হত্যার বিচারের দাবিতে ইবি ছাত্রদলের মানববন্ধন Logo পঞ্চগড়ে ট্রাক মেরামতের সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মেকানিক নিহত, আহত সহকারী Logo সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে চাঁদপুর সওজ বিভাগ Logo জাবিতে বটতলাসহ ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো ওয়াশরুম স্থাপনের দাবি লাল সবুজের Logo যবিপ্রবিতে সক্রিয় তেল চুরির সিন্ডিকেট, হাতেনাতে ধরা

শিশুর চশমা লাগে কেন?

  • নীলকন্ঠ অনলাইন নীলকন্ঠ অনলাইন
  • আপডেট সময় : ০৮:৪১:১৮ অপরাহ্ণ, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫
  • ৭০৯ বার পড়া হয়েছে
আমি প্রায় ২৫ বৎসর যাবৎ চক্ষু বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রাকটিস করছি। আমি এই দীর্ঘ প্রাকটিস জীবনের অভিজ্ঞতায় দেখেছি ইদানিং প্রায় সকল বাচ্চারই দূরে দেখার জন্য চশমা লাগছে। চিকিৎসা শাস্ত্রের ভাষায় এটাকে বলা হয় মাইওপিয়া বা ক্ষীণ দৃষ্টি। কাছে বা নিকটে সব ভাল দেখা যায় কিন্তু দূরে দেখা যায় না।

কারণ-

বিভিন্ন কারণে এটা হতে পারে। যেমন-

১। পরিবেশগত কারণ
২। জন্মগত বা জেনেটিক
৩। কোনও কারণ জানা যায় না (ইডিওপ্যাথিক)।

পরিবেশগত কারণ
আমাদের আধুনিক জীবন যাপনে এসেছে আমুল পরিবর্তন। আমরা বড়রা সব সময় বাইরে থাকি জীবিকার প্রোয়োজনে। আর বাচ্চারা থাকে ঘরে বা স্কুলে বা কোচিং-এ।  তারা ঘরে একা একা থাকে। তাদের হাতে দেওয়া হয় স্মার্ট মোবাইল, কম্পিউটার ইত্যাদি যেটা তাদের চোখের মারাত্মক ক্ষতি করে। তাদেরকে সবসময়ই চারদেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ থাকতে হয়। এই কারনে তাদের দৃষ্টিশক্তিও এই চারদেওয়ালের মধ্যেই আবদ্ধ থাকে।

কিন্ত তাদের শারিরীক ও মানসিক বিকাশ তথা দৃষ্টিশক্তির উন্নতি সাধনের জন্যও তাদেরকে অবশ্যই একটা নির্দিষ্ট সময় বাইরে খোলা আকাশের নিচে খেলার মাঠ, জিম বা অন্য কোথাও থাকতে হবে। যেখানে দূরে দিগন্ত দেখা যায়, সেখানে থাকতে হবে। সেখানে তারা দূরে দীগন্তে সবুজ বনানী দেখবে, তখন তাদের দূরের দৃষ্টি তৈরী হবে। গ্রামের বাচ্চাদের কিন্তু এই সমস্যা থাকে না। তারা প্রকৃতিগতভাবেই এরকম পরিবেশে বড় হয়ে ওঠে।

এ জন্য তাদের তেমন একটা চশমাও লাগে না। শহরের বাঁচ্চারা এখন সবুজ শাক-সবজি খেতে চায় না। তারা অতিরিক্ত ফাস্ট ফুডে অভ্যস্ত যা বাচ্চাদের সুষম খাদ্য উপাদান সরবরাহ করতে ব্যর্থ। গুড়া মাছ, দুধ, মাছ মাংশ তারা খেতে চায় না। আর এসব খাবারে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ থাকে, যা চোখের স্বাস্থ্যের জন্য বা দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন।

মাওপিয়া রোগের লক্ষণ-
বাচ্চারা দূরে দেখতে পারে না। কাছে বা ঘরের ভিতর বা চার দেওয়ালের মধ্যে তারা ভালই দেখতে পায়। চোখ টেরা বা স্কুয়িন্ট হতে পারে।

প্রতিকার ও চিকিৎসা-
সব রোগের জন্যই চিকিৎসার চেয়ে প্রতিকার বা প্রিভেনশান উত্তম। যে সব কারণে এটা হচ্ছে তা থেকে মুক্ত হতে পারলেই কেবল বাচ্চাদের  চশমা থেকে পরিত্রান পাওয়া সম্ভব।

– যেমন বাচ্চারা যতক্ষণ স্কুলে থাকবে তার তিন ভাগের একভাগ সময় ক্লাস রুমের বাইরে যেমন খেলার মাঠে সময় কাটাবে।
– বাচ্চাদেরকে সাঁতার শেখাতে হবে।
– তাদের খেলার মাঠে নিয়ে যেতে হবে।
– তাদেরকে বাইরে বেড়াতে নিয়ে যেতে হবে। মোট কথা তাদেরকে বেশি বেশি সময় দিতে হবে।

চিকিৎসা:

-নিয়মিত বাচ্চাদের চক্ষু পরীক্ষা করাতে হবে।
-স্কুলে দেওয়ার আগে অবশ্যই বাচ্চাকে চোখের ডাক্তার দেখাতে হবে।

চশমা না পরলে কি ক্ষতি?

চিকিৎসা বা চশমা যদি না ব্যবহার করা হয় তবে সে দূরের জিনিস দেখবে না। তার আইকিউ কম হবে। সে সব ব্যাপারে পিছিয়ে পড়বে।
চশমা ছাড়াও মাইওপিয়া রুগীদের অপারেশন করা যেতে পারে। যেটাকে বলা হয় ক্লিয়ার লেন্স এক্সট্রাকশন প্লাস পিসিআওএল। এটা অবশ্য বড়দের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ল্যাসিক আর একটা অপশন। যারা চশমা নিতে চায় না এবং বয়স ২১ বা এর বেশী এবং পাওয়ার বা মাইওপিয়া আর বাড়ে না তাদের ল্যাসিক করা যায়।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক (ফ্যাকো ও গ্লুকোমা সার্জন), নির্বাহী পরিচালক ও পরামর্শক, বাংলাদেশ আই হাসপাতাল, মিরপুর-২ ঢাকা।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

বিএসএফের হাতে আটক বাংলাদেশী কিশোরকে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বিজিবির নিকট হস্তান্তর

শিশুর চশমা লাগে কেন?

আপডেট সময় : ০৮:৪১:১৮ অপরাহ্ণ, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫
আমি প্রায় ২৫ বৎসর যাবৎ চক্ষু বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রাকটিস করছি। আমি এই দীর্ঘ প্রাকটিস জীবনের অভিজ্ঞতায় দেখেছি ইদানিং প্রায় সকল বাচ্চারই দূরে দেখার জন্য চশমা লাগছে। চিকিৎসা শাস্ত্রের ভাষায় এটাকে বলা হয় মাইওপিয়া বা ক্ষীণ দৃষ্টি। কাছে বা নিকটে সব ভাল দেখা যায় কিন্তু দূরে দেখা যায় না।

কারণ-

বিভিন্ন কারণে এটা হতে পারে। যেমন-

১। পরিবেশগত কারণ
২। জন্মগত বা জেনেটিক
৩। কোনও কারণ জানা যায় না (ইডিওপ্যাথিক)।

পরিবেশগত কারণ
আমাদের আধুনিক জীবন যাপনে এসেছে আমুল পরিবর্তন। আমরা বড়রা সব সময় বাইরে থাকি জীবিকার প্রোয়োজনে। আর বাচ্চারা থাকে ঘরে বা স্কুলে বা কোচিং-এ।  তারা ঘরে একা একা থাকে। তাদের হাতে দেওয়া হয় স্মার্ট মোবাইল, কম্পিউটার ইত্যাদি যেটা তাদের চোখের মারাত্মক ক্ষতি করে। তাদেরকে সবসময়ই চারদেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ থাকতে হয়। এই কারনে তাদের দৃষ্টিশক্তিও এই চারদেওয়ালের মধ্যেই আবদ্ধ থাকে।

কিন্ত তাদের শারিরীক ও মানসিক বিকাশ তথা দৃষ্টিশক্তির উন্নতি সাধনের জন্যও তাদেরকে অবশ্যই একটা নির্দিষ্ট সময় বাইরে খোলা আকাশের নিচে খেলার মাঠ, জিম বা অন্য কোথাও থাকতে হবে। যেখানে দূরে দিগন্ত দেখা যায়, সেখানে থাকতে হবে। সেখানে তারা দূরে দীগন্তে সবুজ বনানী দেখবে, তখন তাদের দূরের দৃষ্টি তৈরী হবে। গ্রামের বাচ্চাদের কিন্তু এই সমস্যা থাকে না। তারা প্রকৃতিগতভাবেই এরকম পরিবেশে বড় হয়ে ওঠে।

এ জন্য তাদের তেমন একটা চশমাও লাগে না। শহরের বাঁচ্চারা এখন সবুজ শাক-সবজি খেতে চায় না। তারা অতিরিক্ত ফাস্ট ফুডে অভ্যস্ত যা বাচ্চাদের সুষম খাদ্য উপাদান সরবরাহ করতে ব্যর্থ। গুড়া মাছ, দুধ, মাছ মাংশ তারা খেতে চায় না। আর এসব খাবারে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ থাকে, যা চোখের স্বাস্থ্যের জন্য বা দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন।

মাওপিয়া রোগের লক্ষণ-
বাচ্চারা দূরে দেখতে পারে না। কাছে বা ঘরের ভিতর বা চার দেওয়ালের মধ্যে তারা ভালই দেখতে পায়। চোখ টেরা বা স্কুয়িন্ট হতে পারে।

প্রতিকার ও চিকিৎসা-
সব রোগের জন্যই চিকিৎসার চেয়ে প্রতিকার বা প্রিভেনশান উত্তম। যে সব কারণে এটা হচ্ছে তা থেকে মুক্ত হতে পারলেই কেবল বাচ্চাদের  চশমা থেকে পরিত্রান পাওয়া সম্ভব।

– যেমন বাচ্চারা যতক্ষণ স্কুলে থাকবে তার তিন ভাগের একভাগ সময় ক্লাস রুমের বাইরে যেমন খেলার মাঠে সময় কাটাবে।
– বাচ্চাদেরকে সাঁতার শেখাতে হবে।
– তাদের খেলার মাঠে নিয়ে যেতে হবে।
– তাদেরকে বাইরে বেড়াতে নিয়ে যেতে হবে। মোট কথা তাদেরকে বেশি বেশি সময় দিতে হবে।

চিকিৎসা:

-নিয়মিত বাচ্চাদের চক্ষু পরীক্ষা করাতে হবে।
-স্কুলে দেওয়ার আগে অবশ্যই বাচ্চাকে চোখের ডাক্তার দেখাতে হবে।

চশমা না পরলে কি ক্ষতি?

চিকিৎসা বা চশমা যদি না ব্যবহার করা হয় তবে সে দূরের জিনিস দেখবে না। তার আইকিউ কম হবে। সে সব ব্যাপারে পিছিয়ে পড়বে।
চশমা ছাড়াও মাইওপিয়া রুগীদের অপারেশন করা যেতে পারে। যেটাকে বলা হয় ক্লিয়ার লেন্স এক্সট্রাকশন প্লাস পিসিআওএল। এটা অবশ্য বড়দের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ল্যাসিক আর একটা অপশন। যারা চশমা নিতে চায় না এবং বয়স ২১ বা এর বেশী এবং পাওয়ার বা মাইওপিয়া আর বাড়ে না তাদের ল্যাসিক করা যায়।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক (ফ্যাকো ও গ্লুকোমা সার্জন), নির্বাহী পরিচালক ও পরামর্শক, বাংলাদেশ আই হাসপাতাল, মিরপুর-২ ঢাকা।