নিউজ ডেস্ক:
প্রকল্প শেষ হচ্ছে না। কিন্তু ব্যয় বেড়েই চলছে। রাজধানীর মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ২৭১ কোটি টাকা বাড়লো। বাড়তি ব্যয়সহ প্রায় পাঁচ হাজার ৯৮ কোটি টাকা ব্যয় সংবলিত ১২টি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এদের মধ্যে চলমান পাঁচটি উন্নয়ন প্রকল্পে দরপত্রে উল্লেখিত কাজ বেড়ে যাওয়া ১৬২ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয়সহ ১৩ লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে ব্যয়বৃদ্ধির পৃথক দুটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
বাংলামোটর থেকে মগবাজার মোড়-মৌচাক পর্যন্ত প্রায় দুই দশমিক ২১ কিলোমিটার ফ্লাইওভার নির্মাণে ব্যয় বেড়েছে ১৫৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা এবং তেজগাঁও সাতরাস্তা মোড় হতে এফডিসি মোড়-সোনারগাঁও রেলক্রসিং হয়ে হলিফ্যামিলি হাসপাতাল পর্যন্ত প্রায় দুই দশমিক ৫৬ কিলোমিটার ফ্লাইওভার নির্মাণে ব্যয় বেড়েছে ১১৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।
স্থানীয় সরকার সচিব আবদুল মালেক স্বাক্ষরিত স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনা দুটিতে ফ্লাইওভারের নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধির কারণ উল্লেখ করা হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, প্রকল্প এলাকায় বিভিন্ন সেবা (পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও স্যুয়ারেজ লাইন) প্রদানকারী সংস্থার অবকাঠামো থাকায় প্রতিটি ফাউন্ডেশনের পৃথক নকশা প্রণয়ন করায় পাইল সংখ্যা, দৈর্ঘ্য ও ক্যাপের আকার বৃদ্ধি এবং ভূমিকম্প সহনের জন্য ফ্লাইওভারে পট বিয়ারিং ও শক ট্রান্সমিশন ইউনিট সংযোজনের কারণে ব্যয় ও সময় বেড়েছে।
বৈঠক শেষে অতিরিক্ত সচিব বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) থেকে চুক্তিবদ্ধ তিন লাখ টনের মধ্যে দ্বিতীয় লটে ৩০ হাজার টন ব্যাগড গ্রানুলার ইউরিয়া সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রতি টন সারের দাম ২৩৫ দশমিক ৮৭ ডলার হিসেবে মোট ৫৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয় হবে।
তিনি বলেন, জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলাধীন ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর দুটি ব্রিজ নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় পাইলিং ঘাটে ৫৬০ মিটার দীর্ঘ ব্রিজ নির্মাণে দরপত্রে উল্লেখিত কাজ বেড়ে যাওয়ায় সঙ্গত কারণে এর মোট ব্যয় বেড়ে গেছে। দরপত্রে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এখন সেটা ১৩ কোটি দুই টাকা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১১২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।
মোস্তাফিজুর রহমান জানান, গাজীপুর সদর হাসপাতাল উন্নীতকরণ প্রকল্পের আওতায় বিদ্যমান ১০০ বেডের হাসপাতাল ৫০০ বেডে উন্নীতকরণ কল্পে ১৫ তলা ভবনের ভিত্তির ওপর সাত তলা ভবন নির্মাণ কাজের ভেরিয়েশন প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের দর ছিল ৪৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। তা ২১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা বেড়ে মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৬৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।
আর ভারতীয় ডলার ক্রেডিট লাইন চুক্তির অধীনে বাংলাদেশ রেলওয়ের লাইনসহ ভৈরব দ্বিতীয় ও তিতাস দ্বিতীয় রেলওয়ে সেতু নির্মাণের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কাজেরে ভরিয়েশনের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে ক্রয় কমিটি। প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এর ব্যয় ২২ কোটি দুই লাখ বৃদ্ধি পেয়ে মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৬৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
ইস্টার্ণ রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) দ্বিতীয় ইউনিটের ফ্রন্ট অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন (এফইইডি) ডকুমেন্ট তৈরির জন্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ আইন) ২০১০ অনুসরণে একক প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের টেকনিপের সাথে নেগোশিয়েটেড দাম ৩ কোটি ৭ লাখ ৫০ হাজার ইউরো নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড (এনওএ) প্রদান ও খসড়া চুক্তি অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। বর্তমানে প্রকল্পে ব্যয় হবে ২৬৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, ইস্টার্ণ রিফাইনারি লিমিটেডের প্রক্রিয়াকরণের জন্য ২০১৬ পঞ্জিকাবর্ষে আবুধাবি ন্যাশনাল ওয়েল কোম্পানি ও সৌদি আরাবিয়ান ওয়েল কোম্পানি থেকে অপরিশোধিত মারবান ও এরাবিয়ান লাইট ক্রুড ওয়েল আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
আবুধাবি থেকে সাত লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানি করতে ব্যয় হবে দুই হাজার ৫৫ কোটি টাকায়। সৌদি আরব থেকে ছয় লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানি করতে ব্যয় হবে এক হাজার ৫৪৩ কোটি টাকা। এছাড়া ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে জিটুজি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোটেশন আহ্বানের মাধ্যমে ৫০ হাজার টন ফার্নেস ওয়েল ১৮০ সিএসটি আমদানির প্রিমিয়াম ও মূল্য নির্ধারণ (রেফারেন্স প্রাইজ অনুযায়ী) প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে। এজন্য ব্যয় হবে ১১৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা।
বৈঠকে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের পল্লী বিদ্যুতায়ন সম্প্রসারণ রাজশাহী-রংপুর বিভাগীয় কার্যক্রম-২ শীর্ষক প্রকল্পের একটি প্যাকেজে টার্ন কি ভিত্তিতে একটি সাব-স্টেশন নির্মাণের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। সাব-স্টেশনটি নির্মাণ করবে এনার্জি প্যাক আর ব্যয় হবে ২০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড কর্তৃক পল্লী বিদ্যুৎ বিতরণ সিস্টেমের ক্ষমতা বর্ধন (ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় একটি প্যাকেজের অধীনে সাব-স্টেশন এবং বে-ব্রেকার ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সিমেন্স ইন্ডিয়া প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পে ব্যয় হবে ৪২৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।
সভায় এছাড়া বৈঠকে তাৎক্ষণিকভাবে নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণের একটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে। সৌদি ফান্ডে ব্রিজটি নির্মাণে মোট ব্যয় হবে ৪৪৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। সাইনোকি করপোরেশন নামে একটি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বাস্তবায়ন করবে প্রকল্পটি।
এর আগে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দেশের চা শিল্পের উন্নয়নে ‘উন্নয়নের নকশা : বাংলাদেশের শিল্প’ শীর্ষক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রস্তাবও অনুমোদন দেয়া হয়।
দেশের অর্থনীতিতে চা শিল্পের অবদান বাড়াতে ‘উন্নয়নের পথ নকশা : বাংলাদেশের চা শিল্প’ শীর্ষক একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। এজন্য ব্যয় হবে ৯৬৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। চা চাষের গড় ব্যবহার বাড়িয়ে ২০১৫ সাল নাগাদ দেশের ১৬২টি চা বাগান থেকে চায়ের উৎপাদন ১১ কোটি কেজিতে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে।