বুধবার, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৫
বুধবার, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৫

যে কারণে হোয়াইট হাউসে ঢুকতে পারলেন না এপির সাংবাদিক

মেক্সিকো ইস্যুতে ট্রাম্প প্রশাসনের হুমকির পর এবার যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে পুরনো বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেসের (এপি) সংবাদ কর্মীকে হোয়াইট হাউসে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) এপির এক প্রতিবেদনে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

মিডিয়াটির দাবি, হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে একটি অনুষ্ঠানের সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়ার সময় এপির প্রতিবেদককে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্দেশনা মেনে সংস্থাটি তাদের সব লেখায় মেক্সিকো উপসাগরের নাম বদলে ‘গালফ অব আমেরিকা’ না করাতেই এই বিপত্তি বলে দাবি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়ার।

যদিও সেই ভুক্তভোগী গণমাধ্যম কর্মীর নাম প্রকাশ করেনি এপি। গত মঙ্গলবার বিকালে যথারীতি হোয়াইট হাউসের এক অনুষ্ঠানে প্রবেশের চেষ্টা করলে তাকে বাধা দেওয়া হয় এবং জানানো হয়। এখন থেকে আর হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করতে পারবেন না। পরবর্তীকালে সন্ধ্যার সময় হোয়াইট হাউসের কূটনীতিক কক্ষে অপর এক অনুষ্ঠানেও এপির আরেক সাংবাদিককেও ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গণমাধ্যমের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের এই নিষেধাজ্ঞা নজিরবিহীন ও অস্বাভাবিক।

গতকাল মঙ্গলবার ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা এপিকে হুঁশিয়ার করে বলেন- প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী এখন থেকে মেক্সিকো উপসাগরের নাম গালফ অব মেক্সিকোর বদলে গালফ অব আমেরিকা লিখতে হবে।

যদিও এপির সম্পাদকীয় নীতি অনুসারে এখনো গালফ অব মেক্সিকোই লেখা হচ্ছে। আচমকা বার্তা সংস্থাটিকে অন্য কিছু লিখতে বাধ্য করা ‘সাংবিধানিক অধিকারের’ লঙ্ঘন হতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

 

এপির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও নির্বাহী সম্পাদক জুলি পেইসও ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্যোগটিকে গ্রহণযোগ্য নয় বলে দাবি করেছেন।

বিবৃতির মাধ্যমে জুলি বলেছেন, এটি ভীষণই উদ্বেগজনক যে ট্রাম্প প্রশাসন এপিকে নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার চর্চা অব্যাহত রাখার জন্য শাস্তি দিচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এপি তাদের প্রতিবেদনে কী লিখেছে, সেটার ভিত্তিতে সাংবাদিকদের ওভাল অফিসে প্রবেশে বিধিনিষেধ দেওয়া শুধু স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপের উদ্যোগই নয়, একই সঙ্গে এটি (মার্কিন সংবিধানের) প্রথম সংশোধনীরও লঙ্ঘন।

যদিও তাৎক্ষণিকভাবে ট্রাম্প প্রশাসন এসব উদ্যোগের বিষয়ে কোনো ঘোষণা দেয়নি। এমনকি অন্য কোনো মিডিয়া বা গণমাধ্যম কর্মী এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শিকার হয়েছেন কি না, সেটাও জানা যায়নি।

বিশ্লেষকদের মতে, মিডিয়ার সঙ্গে ট্রাম্পের বৈরিতার বিষয়টি আজ নতুন নয়। আবাসন ব্যবসায়ী থাকাকালীন সময় থেকে শুরু করে প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদে এবং প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবেও একাধিকবার সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি তিক্ততায় জড়িয়েছেন।

গত ২০ জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের আগেই ট্রাম্প গালফ অব মেক্সিকোর নাম বদলানোর কথা জানিয়েছিলেন। এরই ইতো তিনি বিষয়টি নিয়ে একটি নির্বাহী আদেশেও স্বাক্ষর করেছেন। যদিও মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ও অন্যান্যরা বিষয়টিকে এক রকম হালকা দৃষ্টিতেই দেখছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কাগজে-কলমে নাম বদলালেও মানুষ এই উপসাগরকে মেক্সিকো উপসাগর নামেই চিনবে। প্রায় ৪০০ বছর আগে উপসাগরটির নামকরণ। এর বেশিরভাগ অংশ মার্কিন ভূখণ্ডের অংশ হলেও মেক্সিকোর তীরেও এর উল্লেখযোগ্য অংশ পড়েছে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের তিন দিন পর এপি জানিয়েছিল, তারা গালফ অব মেক্সিকো নামটিই ব্যবহার করবে। সে সময় এপি এ ক্ষেত্রে যুক্তিও দিয়েছে। বৈশ্বিক সংবাদমাধ্যম হিসেবে তারা কোনো জায়গার নাম ও ভৌগলিক বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে সর্বজনবিদিত ও বেশিরভাগ মানুষ সহজে চিনতে ও বুঝতে পারে, এমন ভাষা ব্যবহার অব্যাহত রাখবে।

এ দিকে এপি স্টাইল বা স্টাইল বুকেও বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। এটি এমন একটি নীতিমালা, যা সারা বিশ্বে হাজারো সাংবাদিক ও অন্যান্য লেখকরা অনুসরণ করে থাকেন।

পেন আমেরিকার জার্নালিজম অ্যান্ড মিসইনফরমেশান প্রোগ্রামের পরিচালক টিম রিচার্ডসন বলেছেন, এপির সাংবাদিককে সংবাদ সংগ্রহে বাধা দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন মার্কিন সংবিধানের প্রথম সংশোধনী লঙ্ঘন করেছে। এই সংশোধনী মতে, সরকার সাংবাদিকদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে পারে না।

হোয়াইট হাউস করেসপনডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন হোয়াইট হাউসের এই উদ্যোগের নিন্দা জানিয়ে বিধিনিষেধটি বাতিলের আহ্বান জানায়।

সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট ইউজিন ড্যানিয়েলস বলেছেন, মিডিয়ায় সাংবাদিকরা কীভাবে সংবাদ লিখবেন, সেটা হোয়াইট হাউজ বলে দিতে পারে না। কোনো সংবাদমাধ্যমের সম্পাদকের সিদ্ধান্ত অপছন্দ হলে সেই সংবাদমাধ্যমকে শাস্তি দেওয়ারও কোনো এখতিয়ার নেই হোয়াইট হাউসের।

উল্লেখ্য, গুগল ম্যাপ ও অ্যাপল ম্যাপে ইতোমধ্যে শুধু মার্কিন ইউজারদের জন্য মেক্সিকো উপসাগরের নাম ‘গালফ অব আমেরিকা’ করা হয়েছে।

যদিও মজার বিষয় হলো- মেক্সিকোর ইউজাররা শুধু গালফ অব মেক্সিকো দেখছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া বিশ্বের বাকি সব দেশের মানুষ দুইটি নামই দেখতে পাচ্ছেন।

Similar Articles

Advertismentspot_img

Most Popular