বর্তমানে যে রোগগুলোর শঙ্কা সবচেয়ে বেশি বেড়ে গেছে তার মধ্যে অন্যতম হলো স্ট্রোক। স্ট্রোকে মৃত্যুর হারও তূলনামূলকভাবে বেশি। মিনি স্ট্রোকের উপসর্গের বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করলে স্বাস্থ্যঝুকি অনেকাংশে এড়ানো যায়।
মিনি স্ট্রোক হলো স্ট্রোকের পূর্বসংকেত। বেশির ভাগ মানুষই স্ট্রোকের প্রাথমিক উপসর্গগুলো সম্পর্কে জানেন না। যদি মাইনর স্ট্রোককে প্রথমে চিহ্নিত করা যায় পরবর্তী সময়ে স্ট্রোক হওয়ার দুর্ঘটনা আটকানো যায়।
মস্তিষ্কের রক্তনালিতে রক্তজমাট বাঁধলে সেই অংশে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মস্তিষ্কের সেই নির্দিষ্ট অংশে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পৌঁছায় না। এতে সেখানকার কোষগুলো মরতে থাকে। সেই অংশ আর কাজ করে না। এটি হলো স্ট্রোকের কারণ।
স্ট্রোকের ফলে একজন সুস্থ মানুষ আকস্মিক পক্ষাঘাতগ্রস্ত হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে এই রোগ আগাম পূর্বাভাস দেয় এবং সচেতন হলে রোগটি প্রতিরোধ করা যায়। সে জন্যই মিনি স্ট্রোক শনাক্ত করা জরুরি।
গবেষণার তথ্য বলছে, মিনি স্ট্রোক হওয়ার পরের তিন মাসের মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকি ২ থেকে ১৭ শতাংশ। আর মিনি স্ট্রোক আক্রান্ত প্রায় ৩৩ শতাংশ মানুষ ১ বছরের মধ্যেই স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।
মিনি স্ট্রোকের ক্ষেত্রেও মস্তিষ্কের কোনো রক্তনালিতে রক্ত জমাট বাঁধে, কিন্তু তা সাময়িক। তাই কিছুক্ষণের জন্য রোগীর শরীরে স্ট্রোকের উপসর্গ দেখা দেয়। এরপর নিজ থেকে জমাট বাঁধা রক্ত তরল বা বিলীন হয়ে যায়। ফলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কমে আসে উপসর্গ। উপসর্গগুলো কিন্তু স্ট্রোকের মতোই। হঠাৎ অসংলগ্ন আচরণ, চোখে ঝাপসা দেখা, কোনো দিক অবশ হয়ে যাওয়া, হাত-পা নাড়াতে না পারা, মাথা ঘোরা ইত্যাদি। টিআইএর লক্ষণ ১ ঘণ্টার মধ্যেই চলে যেতে পারে, আবার কখনো ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকতে পারে।
স্ট্রোক ও মিনি স্ট্রোক দুই ক্ষেত্রেই কিছু অসুখ দায়ী। এগুলো হচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তে ক্ষতিকর চর্বির আধিক্য ইত্যাদি। এ ছাড়া পরিবারের কারও স্ট্রোকের ইতিহাস, ধূমপান, মদ্যপান, অতিরিক্ত ওজন ইত্যাদি বিষয়ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। অনেক সময় মাত্র কয়েক ঘণ্টা উপসর্গ থাকে বলে মিনি স্ট্রোক ধরা পড়ে না।
মিনি স্ট্রোক মনে হলে ঝুঁকিগুলো শনাক্ত করতে রোগীর সুগার, রক্তচাপ, কোলেস্টেরল পরীক্ষা করে দেখা উচিত। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে ভবিষ্যৎ স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে। রক্ত তরলীকরণ ওষুধ ও অন্যান্য ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে পারে।