শুক্রবার | ২৮ নভেম্বর ২০২৫ | হেমন্তকাল
শিরোনাম :
Logo সাতক্ষীরা-০২ এ ধানের শীষের জয়ে নতুন অধ্যায়—বিএনপির একতাবদ্ধ ঘোষণা Logo বুটেক্স অ্যালামনাই ইউএসএ-এর আত্মপ্রকাশ: যুক্তরাষ্ট্রে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের মিলনমেলা ও কমিটি গঠন Logo বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন আগামী ২৭ ডিসেম্বর Logo রাবিতে ইলা মিত্রকে নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত Logo নোবিপ্রবির সঙ্গে তুরস্কের রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর Logo নোবিপ্রবিতে গবেষণা, বৈশ্বিক র‌্যাঙ্কিং এবং সরকারের নীতিনির্ধারকদের করণীয় শীর্ষক প্রশিক্ষণ Logo রাবি ময়মনসিংহ জেলা সমিতির নতুন কমিটি ঘোষণা Logo “কণিকা”সংগঠনের সচেতনতা সেমিনার ও কুইজ এমইএস কলেজে অনুষ্ঠিত Logo গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি রবিউল হাসানকে চাঁদপুর জেলার পুলিশ সুপার পদে বদলী Logo প্রতিষ্ঠার পর থেকে নির্মাণ হয়নি চাঁদপুর সদর হাসপাতালে স্থায়ী মর্গ, জীর্ণ-ভবনে ময়নাতদন্ত

যে দেশে সন্ত্রাসের চেয়ে প্রেমের বলি বেশি !

  • amzad khan
  • আপডেট সময় : ১১:০১:১০ পূর্বাহ্ণ, সোমবার, ৩ এপ্রিল ২০১৭
  • ৭৮০ বার পড়া হয়েছে

নিউজ ডেস্ক:

জঙ্গিহানায় প্রাণনাশ খবরের শিরোনামে থাকলেও প্রেমের কাছে হার মেনেছে তা। ভারতে জঙ্গিহানা বা সন্ত্রাসের চেয়ে প্রেমঘটিত কারণে প্রাণ হারাচ্ছে আরও বেশি মানুষ। সম্প্রতি সরকারিভাবেই এমন পরিসংখ্যান মিলল। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।

সরকারি রিপোর্টে প্রকাশ, ভারতে ২০০১-১৫ এই পনেরো বছরে প্রেমঘটিত কারণে খুন হয়েছেন মোট ৩৮ হাজার ৫৮৫ জন। এর সঙ্গে যোগ করুন ৭৯ হাজার ১৮৯টি আত্মহত্যার বা ২ লক্ষ ৬০ হাজার অপহরণের ঘটনাও। অন্য দিকে, ওই সময়ের মধ্যে জঙ্গিহানায় নিহত হয়েছেন ২০ হাজার সেনাকর্মী বা সাধারণ নাগরিক। সরকারি ওই পরিসংখ্যান ঘেঁটে জানা গেছে, প্রেমজনিত কারণে গড়ে প্রতি দিন ৭টি খুন, ১৪টি আত্মহত্যা ও ৪৭টি অপহরণের ঘটনা ঘটছে।

প্রেমের ফাঁদে পড়েই হোক বা তাতে সাড়া দিয়ে সমাজের চাপে পিষে মরেছেন এমন মানুষজনের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি অন্ধ্রপ্রদেশে। এর পরেই রয়েছে উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু ও মধ্যপ্রদেশের নাম। সরকারি এই রিপোর্টে পিছিয়ে নেই পশ্চিমবঙ্গও। বরং অন্তত একটি ক্ষেত্রে এগিয়েই রয়েছে এ রাজ্য। পনেরো বছরের মধ্যে ২০১২-র সঠিক পরিসংখ্যান না মিললেও আত্মহত্যার ঘটনায় শীর্ষে পশ্চিমবঙ্গ। গত চোদ্দো বছরে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে বা প্ররোচনার জেরে আত্মহত্যা করেছেন এ রাজ্যের ১৫ হাজার মানুষ। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে তামিলনাড়ু। সে রাজ্যে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন ৯,৪০৫ জন। এই তালিকায় আসাম, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশও পিছিয়ে নেই। প্রতিটি রাজ্যেই ঘটে গিয়েছে ৫ হাজারের বেশি এমন ঘটনা। রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, দেশের ৩৫টির মধ্যে ১৯টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাষিত অঞ্চলে পুরুষদের তুলনায় মহিলারাই প্রেমের বলি হয়েছেন বেশি।

কিন্তু, কেন ঘটে এমন ঘটনা?
কারণ হিসাবে টাইমস অব ইন্ডিয়া প্রকাশিত প্রতিবেদনে জাতপাত ও পুরুষতন্ত্রকেরই দায়ী করছেন অধিকাংশ বিষেশজ্ঞ। সামাজিক পরিকাঠামোর মধ্যে থেকে প্রচলিত ‘নিয়ম’ ভাঙার সাহস যাঁরা দেখিয়েছেন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁরাই প্রেমসন্ত্রাসের শিকার বলে মত তাঁদের। তথাকথিত সামাজিক সম্মানের জন্যই আপোস করতে হচ্ছে বহু নারীকে। আর তাতে মদত যোগাচ্ছে খাপ পঞ্চায়েতের মতো সামাজিক প্রতিষ্ঠানও। অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক উমা চক্রবর্তী দীর্ঘ দিন ধরেই লিঙ্গভিত্তিক বিষয়ে গবেষণা করেছেন। তাঁর মতে, বিয়ে করার মতো বিষয়েও স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিতে গেলে হিংসার আশ্রয় নিচ্ছে অনেকে। মানুষের অস্তিত্বকে দমিয়ে রাখতে হিংসার আশ্রয় নেওয়ার প্রবণতার পিছনে আসল কারণ খুঁজতে গেলে পিতৃতন্ত্র ও জাতপাতের সমীকরণটা আগে ভাল ভাবে বুঝতে হবে বলে দাবি তাঁর। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ ও হরিয়ানার খাপ পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে সেখানকার মহিলাদের প্রতিরোধ গড়ে তোলার কাহিনি তথ্যচিত্রে তুলে ধরেছেন নকুল সিংহ সাহানে। ‘ইজ্জতনগরী কি অসভ্য বেটিয়াঁ’ নামে তথ্যচিত্রের পরিচালক নকুলের মতে, “এই আত্মহত্যার পিছনে রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক মদত। ”

অল ইন্ডিয়া ডেমোক্রেটিক উইমেন্স অ্যাসোশিয়েশনের জগমতী সাঙ্গওয়ানের মতে, সমাজে জাতপাত ও শ্রেণিভেদ বাঁচিয়ে রাখতেই হিংসাকে হাতিয়ার করছে কিছু স্বৈরাচারী প্রতিষ্ঠান। আর তাতে জড়িয়ে পড়া অসহায় মানুষদের পাশে এসে দাঁড়ানোর পরিবর্তে মদত দিচ্ছে রাষ্ট্রতন্ত্র। এরই পাশাপাশি আরও একটি বিষয়ে চিন্তিত অধিকাংশ বিশেষজ্ঞরা। সরকারি রিপোর্টে প্রকাশিত পরিসংখ্যানের চেয়েও ওই সংখ্যাটা আরও বেশি বলে মত তাঁদের। পুলিশ-প্রশাসনের মদতই হোক সামাজিক চাপে— হরিয়ানা বা পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের অধিকাংশ জায়গায় সামনেই আসে না আত্মহত্যা বা খুন-অপহরণের বহু ঘটনা।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

সাতক্ষীরা-০২ এ ধানের শীষের জয়ে নতুন অধ্যায়—বিএনপির একতাবদ্ধ ঘোষণা

যে দেশে সন্ত্রাসের চেয়ে প্রেমের বলি বেশি !

আপডেট সময় : ১১:০১:১০ পূর্বাহ্ণ, সোমবার, ৩ এপ্রিল ২০১৭

নিউজ ডেস্ক:

জঙ্গিহানায় প্রাণনাশ খবরের শিরোনামে থাকলেও প্রেমের কাছে হার মেনেছে তা। ভারতে জঙ্গিহানা বা সন্ত্রাসের চেয়ে প্রেমঘটিত কারণে প্রাণ হারাচ্ছে আরও বেশি মানুষ। সম্প্রতি সরকারিভাবেই এমন পরিসংখ্যান মিলল। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।

সরকারি রিপোর্টে প্রকাশ, ভারতে ২০০১-১৫ এই পনেরো বছরে প্রেমঘটিত কারণে খুন হয়েছেন মোট ৩৮ হাজার ৫৮৫ জন। এর সঙ্গে যোগ করুন ৭৯ হাজার ১৮৯টি আত্মহত্যার বা ২ লক্ষ ৬০ হাজার অপহরণের ঘটনাও। অন্য দিকে, ওই সময়ের মধ্যে জঙ্গিহানায় নিহত হয়েছেন ২০ হাজার সেনাকর্মী বা সাধারণ নাগরিক। সরকারি ওই পরিসংখ্যান ঘেঁটে জানা গেছে, প্রেমজনিত কারণে গড়ে প্রতি দিন ৭টি খুন, ১৪টি আত্মহত্যা ও ৪৭টি অপহরণের ঘটনা ঘটছে।

প্রেমের ফাঁদে পড়েই হোক বা তাতে সাড়া দিয়ে সমাজের চাপে পিষে মরেছেন এমন মানুষজনের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি অন্ধ্রপ্রদেশে। এর পরেই রয়েছে উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু ও মধ্যপ্রদেশের নাম। সরকারি এই রিপোর্টে পিছিয়ে নেই পশ্চিমবঙ্গও। বরং অন্তত একটি ক্ষেত্রে এগিয়েই রয়েছে এ রাজ্য। পনেরো বছরের মধ্যে ২০১২-র সঠিক পরিসংখ্যান না মিললেও আত্মহত্যার ঘটনায় শীর্ষে পশ্চিমবঙ্গ। গত চোদ্দো বছরে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে বা প্ররোচনার জেরে আত্মহত্যা করেছেন এ রাজ্যের ১৫ হাজার মানুষ। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে তামিলনাড়ু। সে রাজ্যে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন ৯,৪০৫ জন। এই তালিকায় আসাম, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশও পিছিয়ে নেই। প্রতিটি রাজ্যেই ঘটে গিয়েছে ৫ হাজারের বেশি এমন ঘটনা। রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, দেশের ৩৫টির মধ্যে ১৯টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাষিত অঞ্চলে পুরুষদের তুলনায় মহিলারাই প্রেমের বলি হয়েছেন বেশি।

কিন্তু, কেন ঘটে এমন ঘটনা?
কারণ হিসাবে টাইমস অব ইন্ডিয়া প্রকাশিত প্রতিবেদনে জাতপাত ও পুরুষতন্ত্রকেরই দায়ী করছেন অধিকাংশ বিষেশজ্ঞ। সামাজিক পরিকাঠামোর মধ্যে থেকে প্রচলিত ‘নিয়ম’ ভাঙার সাহস যাঁরা দেখিয়েছেন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁরাই প্রেমসন্ত্রাসের শিকার বলে মত তাঁদের। তথাকথিত সামাজিক সম্মানের জন্যই আপোস করতে হচ্ছে বহু নারীকে। আর তাতে মদত যোগাচ্ছে খাপ পঞ্চায়েতের মতো সামাজিক প্রতিষ্ঠানও। অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক উমা চক্রবর্তী দীর্ঘ দিন ধরেই লিঙ্গভিত্তিক বিষয়ে গবেষণা করেছেন। তাঁর মতে, বিয়ে করার মতো বিষয়েও স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিতে গেলে হিংসার আশ্রয় নিচ্ছে অনেকে। মানুষের অস্তিত্বকে দমিয়ে রাখতে হিংসার আশ্রয় নেওয়ার প্রবণতার পিছনে আসল কারণ খুঁজতে গেলে পিতৃতন্ত্র ও জাতপাতের সমীকরণটা আগে ভাল ভাবে বুঝতে হবে বলে দাবি তাঁর। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ ও হরিয়ানার খাপ পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে সেখানকার মহিলাদের প্রতিরোধ গড়ে তোলার কাহিনি তথ্যচিত্রে তুলে ধরেছেন নকুল সিংহ সাহানে। ‘ইজ্জতনগরী কি অসভ্য বেটিয়াঁ’ নামে তথ্যচিত্রের পরিচালক নকুলের মতে, “এই আত্মহত্যার পিছনে রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক মদত। ”

অল ইন্ডিয়া ডেমোক্রেটিক উইমেন্স অ্যাসোশিয়েশনের জগমতী সাঙ্গওয়ানের মতে, সমাজে জাতপাত ও শ্রেণিভেদ বাঁচিয়ে রাখতেই হিংসাকে হাতিয়ার করছে কিছু স্বৈরাচারী প্রতিষ্ঠান। আর তাতে জড়িয়ে পড়া অসহায় মানুষদের পাশে এসে দাঁড়ানোর পরিবর্তে মদত দিচ্ছে রাষ্ট্রতন্ত্র। এরই পাশাপাশি আরও একটি বিষয়ে চিন্তিত অধিকাংশ বিশেষজ্ঞরা। সরকারি রিপোর্টে প্রকাশিত পরিসংখ্যানের চেয়েও ওই সংখ্যাটা আরও বেশি বলে মত তাঁদের। পুলিশ-প্রশাসনের মদতই হোক সামাজিক চাপে— হরিয়ানা বা পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের অধিকাংশ জায়গায় সামনেই আসে না আত্মহত্যা বা খুন-অপহরণের বহু ঘটনা।