শিরোনাম :
Logo কর্ণফুলী পেপার মিলের কাগজ উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজ করছে সরকার Logo বিএনপি-সিপিসির সমঝোতা দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন মাত্রায় উন্নীত করবে Logo যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু আলোচনার কোনো পরিকল্পনা নেই: ইরান Logo যেসব অঞ্চলে সন্ধ্যার মধ্যে ৬০ কি.মি. বেগে ঝড়ের আশঙ্কা Logo অসুস্থ্য যুব নেতা রফিকুল ইসলামে পাশে দাঁড়ালেন উত্তর কচুয়া জাতীয়তাবাদী প্রবাসী কল্যান সংগঠন Logo ইনকাম ট্যাক্স অফিসে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে একজন আন্দোলন করছেন: রিজভী Logo চার ইস্যুতে জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা বন্ধের দাবি সাম্যবাদী আন্দোলনের Logo প্রয়াত জামায়াত নেতার কবর জিয়ারত করলেন শফিকুর রহমান Logo ৮ আগস্ট ‘বিপ্লব বেহাত দিবস’ পালনের ঘোষণা ইনকিলাব মঞ্চের Logo ২৫০০ ফিট উচ্চতা থেকে ফিরে এলো বাংলাদেশি বিমান

চীন-যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় পারমাণবিক বোমার মালিক পাকিস্তান, ব্যর্থ ইসরায়েল

ইসরায়েল ও ভারতের বাধা সত্ত্বেও চীন-যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে সহায়তা করে। যদিও মাঝে কিছু দিন যুক্তরাষ্ট্র বিরোধিতাও করেছে। চীন পাকিস্তানকে ইউরেনিয়াম এমনকি পরমাণু বিজ্ঞানীও দেয়। যুক্তরাষ্ট্র ওই সময় পাকিস্তানকে সহায়তা করে; কারণ তখন স্নায়ু যুদ্ধ চলছিল। আর এতে পাকিস্তানকে তাদের প্রয়োজন ছিল।

পাকিস্তানের অবকাঠামোতে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল ভারত ও ইসরায়েল। এছাড়া পরমাণু বিজ্ঞানীসহ কয়েকজনকে গুপ্তহত্যার ছকও কষেছিল তারা। কিন্তু এই পরিকল্পনায় তারা সফল হয়নি। কারণ ভারত পাকিস্তানের অবকাঠামোতে হামলার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।

পরমাণু বিজ্ঞানী আব্দুল কাদের খান পাকিস্তানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে সহায়তা করেছেন। তিনি ১৯৩৮ সালে জন্ম নেন। ২০২১ সালে ৮৫ বছর বয়সে মৃত্যু হয় তার। তবে ইসরায়েল আব্দুল কাদের খানকে গুপ্তহত্যা করতে চেয়েছিল।
আব্দুল কাদের খান শুধুমাত্র পাকিস্তান নয়— ইরান, লিবিয়া এবং উত্তর কোরিয়াকেও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়েছিলেন। যার মধ্যে উত্তর কোরিয়া গণবিধ্বংসী এই অস্ত্র তৈরিতে সমর্থ হয়েছে।

পাকিস্তানের প্রতিবেশী ভারত ১৯৭৪ সালের ১৮ মে তাদের প্রথম পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করে। যেটির কোড নেম ছিল ‘হাস্যোজ্জল বৌদ্ধ’। ভারত এই অস্ত্র পরীক্ষার পরই তৎকালীন পাক প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেন তারাও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করবেন। তিনি ওই সময় বলেছিলেন, ‘আমরা ঘাস বা পাতা খাব, এমনকি ক্ষুধার্থ থাকব। তবুও নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্র বানাব।” তিনি আরও বলেছিলেন, “খ্রিষ্টান বোমা, ইহুদি বোমা, এখন আছে হিন্দু পারমাণবিক বোমা। তাহলে ইসলামিক বোমা থাকবে না কেন।’

পাক পারমাণবিক অস্ত্রের গডফাদার আব্দুল কাদের খান ১৯৬০ সালে করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সায়েন্স ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর জার্মানির বার্লিনে ধাতুবিদ্যায় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে যান তিনি। এছাড়া নেদারল্যান্ডস ও বেলজিয়ামেও পড়াশোনা করতে যান আব্দুল কাদের। ১৯৭৪ সালে আব্দুল কাদের নেদারল্যান্ডসের আমসটারডামের পরমাণু জ্বালানি কোম্পানি ইউরেঙ্কোতে কাজ করছিলেন। এই কোম্পানিটি ইউরোপীয় পারমাণবিক রিয়েক্টরগুলোতে সমৃদ্ধকৃত ইউরেনিয়াম জ্বালানি সরবরাহ করত। সেখানে কাজ করার সুবাদে ইউরেঙ্কোর অবকাঠামোর গোপন তথ্য এবং বিশ্বের সেরা সেন্ট্রিফিউজগুলোর বিশদ তথ্য তার কাছে ছিল। যেগুলো প্রাকৃতিক ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে এবং বোমার জ্বালানিতে পরিণত করে।

পাকিস্তান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির ঘোষণা দেওয়ার পর ১৯৭৬ সালে হঠাৎ করে নেদারল্যান্ডসের কোম্পানির চাকরি ছেড়ে পাকিস্তানে ফিরে আসেন তিনি। ওই সময় কোম্পানিটিকে তিনি জানান, পাকিস্তান থেকে এমন প্রস্তাব পেয়েছেন যেটি ফিরিয়ে দিতে পারবেন না।

ওই বছরের জুলাইয়ে রাওয়ালপিন্ডিতে একটি গবেষণাগার তৈরি করেন তিনি। এরপর ডামি কোম্পানির মাধ্যমে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের উপাদান আমদানি করেন। ওই সময় বিষয়টি গোপন রেখে বলা হচ্ছিল, পাকিস্তান সরকার নতুন একটি টেক্সটাইল মিল তৈরি করবে। আব্দুল কাদেরর এই প্রজেক্ট সম্পর্কে পাকিস্তান সেনাবাহিনী জানত। কিন্তু বেসামরিক সরকারকে এ ব্যাপারে অন্ধকারে রাখা হয়। বিষয়টি সম্পর্কে জানতেন শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী।

১৯৭৯ সালের জুন মাসে ‘৮ ডেইজ’ নামের একটি ম্যাগাজিন পাকিস্তানের এ গোপন কার্যক্রমের তথ্য ফাঁস করে দেয়। যা নিয়ে বিশ্বে তোলপাড় শুরু হয়। দখলদার ইসরায়েল নেদারল্যান্ড সরকারের কাছে এর এ ব্যাপারে নিন্দা জানায়। তখন দেশটি তদন্ত শুরু করে। ১৯৮৩ সালে তারা আব্দুল কাদেরকে গুপ্তচরগিরির প্রচেষ্টার অভিযোগে অভিযুক্ত করে। যদিও পরবর্তীতে এ অভিযোগ তুলে নেয় তারা। এত কিছুর মধ্যেও পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কার্যক্রম চলতে থাকে।

১৯৮৬ সালের মধ্যে আব্দুল কাদের নিশ্চিত হন পাকিস্তান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি অবস্থানে আছে। আব্দুল কাদের খান পশ্চিমাদের বাধার কারণে ক্ষুব্ধ ছিলেন। একবার ব্রিটেনের সমালোচনা করে তিনি বলেছিলেন, ‘এই জারজরা কী বিশ্বের অভিভাবক নাকি।’

১৯৮০ সালের দিকে দখলদার ইসরায়েল ভারতকে প্রস্তাব দেয় তারা একযোগে হামলা চালিয়ে পাকিস্তানের পারমাণবিক অবকাঠামো ধ্বংস করে দেবে। তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এতে সম্মতিও দেন। পরিকল্পনা করা হয় ভারতের জামনগর বিমানঘাঁটি থেকে ইসরায়েলি এফ-১৬ এবং এফ-১৫ যুদ্ধবিমান উড্ডয়ন করবে এবং পাকিস্তানের পারমাণবিক অবকাঠামোতে হামলা চালাবে। কিন্তু ইন্ধিরা গান্ধী আবার পরিকল্পনাটি বাদ দেন।

এরপর ১৯৮৭ সালে তৎকালীন ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল কৃষ্ণস্বামী সুন্দরজি উস্কানি দিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ বাধানোর চেস্টা করেন। তিনি সীমান্তে ৫ লাখ সেনা ও ট্যাংক জড়ো করেন। তবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজিব গান্ধী সেনাপ্রধানের পরিকল্পনা সম্পর্কে খুব বেশি জানতেন না। এ কারণে তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনা কমিয়ে আনেন।

পাকিস্তানের পারমাণবিক বোমা তৈরির পরিকল্পনা ফাঁস হলে ১৯৭৯ সালে দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে হামলা চালানোর পর পাকিস্তানের সঙ্গে কয়েক মাস পরই আবারও সম্পর্ক স্থাপন করেন তিনি। কারণ আফগানিস্তানের প্রতিবেশী হিসেবে ওই সময় পাকিস্তানের সহায়তা যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজন ছিল। এরপর স্নায়ুযুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পর পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানও পরিবর্তন হয়ে যায়।

১৯৯০ সালে পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। তখন পাকিস্তান জানায় তারা পারমাণবিক বোমা তৈরি থেকে বেরিয়ে আসবে। মুখে বললেও গোপনে তাদের কাজ চলতে থাকে।
১৯৯৮ সালের ১১ মে ভারত পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালায়। এর পরের মাসে পাকিস্তান বেলুচিস্তানের মরুভুমিতে নিজেদের অস্ত্রের পরীক্ষা চালায়। এরমাধ্যমে বিশ্বের সপ্তম পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ হয় তারা। এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভারত-পাকিস্তান উভয় দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়।

নিজ দেশের পাশাপাশি ওই সময় ইরান, উত্তর কোরিয়া ও লিবিয়াকেও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছিলেন আব্দুল কাদের। তবে ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা পেতে লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট মোহাম্মার গাদ্দাফি এই তথ্য ফাঁস করে দেন। এদিকে আব্দুল কাদের খান পরবর্তীতে বলেছিলেন, পাকিস্তানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে সহায়তা করে নিজ দেশকে শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করেছেন তিনি।

 

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

কর্ণফুলী পেপার মিলের কাগজ উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজ করছে সরকার

চীন-যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় পারমাণবিক বোমার মালিক পাকিস্তান, ব্যর্থ ইসরায়েল

আপডেট সময় : ১০:৩৬:৪৮ পূর্বাহ্ণ, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

ইসরায়েল ও ভারতের বাধা সত্ত্বেও চীন-যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে সহায়তা করে। যদিও মাঝে কিছু দিন যুক্তরাষ্ট্র বিরোধিতাও করেছে। চীন পাকিস্তানকে ইউরেনিয়াম এমনকি পরমাণু বিজ্ঞানীও দেয়। যুক্তরাষ্ট্র ওই সময় পাকিস্তানকে সহায়তা করে; কারণ তখন স্নায়ু যুদ্ধ চলছিল। আর এতে পাকিস্তানকে তাদের প্রয়োজন ছিল।

পাকিস্তানের অবকাঠামোতে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল ভারত ও ইসরায়েল। এছাড়া পরমাণু বিজ্ঞানীসহ কয়েকজনকে গুপ্তহত্যার ছকও কষেছিল তারা। কিন্তু এই পরিকল্পনায় তারা সফল হয়নি। কারণ ভারত পাকিস্তানের অবকাঠামোতে হামলার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।

পরমাণু বিজ্ঞানী আব্দুল কাদের খান পাকিস্তানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে সহায়তা করেছেন। তিনি ১৯৩৮ সালে জন্ম নেন। ২০২১ সালে ৮৫ বছর বয়সে মৃত্যু হয় তার। তবে ইসরায়েল আব্দুল কাদের খানকে গুপ্তহত্যা করতে চেয়েছিল।
আব্দুল কাদের খান শুধুমাত্র পাকিস্তান নয়— ইরান, লিবিয়া এবং উত্তর কোরিয়াকেও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়েছিলেন। যার মধ্যে উত্তর কোরিয়া গণবিধ্বংসী এই অস্ত্র তৈরিতে সমর্থ হয়েছে।

পাকিস্তানের প্রতিবেশী ভারত ১৯৭৪ সালের ১৮ মে তাদের প্রথম পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করে। যেটির কোড নেম ছিল ‘হাস্যোজ্জল বৌদ্ধ’। ভারত এই অস্ত্র পরীক্ষার পরই তৎকালীন পাক প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেন তারাও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করবেন। তিনি ওই সময় বলেছিলেন, ‘আমরা ঘাস বা পাতা খাব, এমনকি ক্ষুধার্থ থাকব। তবুও নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্র বানাব।” তিনি আরও বলেছিলেন, “খ্রিষ্টান বোমা, ইহুদি বোমা, এখন আছে হিন্দু পারমাণবিক বোমা। তাহলে ইসলামিক বোমা থাকবে না কেন।’

পাক পারমাণবিক অস্ত্রের গডফাদার আব্দুল কাদের খান ১৯৬০ সালে করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সায়েন্স ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর জার্মানির বার্লিনে ধাতুবিদ্যায় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে যান তিনি। এছাড়া নেদারল্যান্ডস ও বেলজিয়ামেও পড়াশোনা করতে যান আব্দুল কাদের। ১৯৭৪ সালে আব্দুল কাদের নেদারল্যান্ডসের আমসটারডামের পরমাণু জ্বালানি কোম্পানি ইউরেঙ্কোতে কাজ করছিলেন। এই কোম্পানিটি ইউরোপীয় পারমাণবিক রিয়েক্টরগুলোতে সমৃদ্ধকৃত ইউরেনিয়াম জ্বালানি সরবরাহ করত। সেখানে কাজ করার সুবাদে ইউরেঙ্কোর অবকাঠামোর গোপন তথ্য এবং বিশ্বের সেরা সেন্ট্রিফিউজগুলোর বিশদ তথ্য তার কাছে ছিল। যেগুলো প্রাকৃতিক ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে এবং বোমার জ্বালানিতে পরিণত করে।

পাকিস্তান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির ঘোষণা দেওয়ার পর ১৯৭৬ সালে হঠাৎ করে নেদারল্যান্ডসের কোম্পানির চাকরি ছেড়ে পাকিস্তানে ফিরে আসেন তিনি। ওই সময় কোম্পানিটিকে তিনি জানান, পাকিস্তান থেকে এমন প্রস্তাব পেয়েছেন যেটি ফিরিয়ে দিতে পারবেন না।

ওই বছরের জুলাইয়ে রাওয়ালপিন্ডিতে একটি গবেষণাগার তৈরি করেন তিনি। এরপর ডামি কোম্পানির মাধ্যমে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের উপাদান আমদানি করেন। ওই সময় বিষয়টি গোপন রেখে বলা হচ্ছিল, পাকিস্তান সরকার নতুন একটি টেক্সটাইল মিল তৈরি করবে। আব্দুল কাদেরর এই প্রজেক্ট সম্পর্কে পাকিস্তান সেনাবাহিনী জানত। কিন্তু বেসামরিক সরকারকে এ ব্যাপারে অন্ধকারে রাখা হয়। বিষয়টি সম্পর্কে জানতেন শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী।

১৯৭৯ সালের জুন মাসে ‘৮ ডেইজ’ নামের একটি ম্যাগাজিন পাকিস্তানের এ গোপন কার্যক্রমের তথ্য ফাঁস করে দেয়। যা নিয়ে বিশ্বে তোলপাড় শুরু হয়। দখলদার ইসরায়েল নেদারল্যান্ড সরকারের কাছে এর এ ব্যাপারে নিন্দা জানায়। তখন দেশটি তদন্ত শুরু করে। ১৯৮৩ সালে তারা আব্দুল কাদেরকে গুপ্তচরগিরির প্রচেষ্টার অভিযোগে অভিযুক্ত করে। যদিও পরবর্তীতে এ অভিযোগ তুলে নেয় তারা। এত কিছুর মধ্যেও পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কার্যক্রম চলতে থাকে।

১৯৮৬ সালের মধ্যে আব্দুল কাদের নিশ্চিত হন পাকিস্তান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি অবস্থানে আছে। আব্দুল কাদের খান পশ্চিমাদের বাধার কারণে ক্ষুব্ধ ছিলেন। একবার ব্রিটেনের সমালোচনা করে তিনি বলেছিলেন, ‘এই জারজরা কী বিশ্বের অভিভাবক নাকি।’

১৯৮০ সালের দিকে দখলদার ইসরায়েল ভারতকে প্রস্তাব দেয় তারা একযোগে হামলা চালিয়ে পাকিস্তানের পারমাণবিক অবকাঠামো ধ্বংস করে দেবে। তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এতে সম্মতিও দেন। পরিকল্পনা করা হয় ভারতের জামনগর বিমানঘাঁটি থেকে ইসরায়েলি এফ-১৬ এবং এফ-১৫ যুদ্ধবিমান উড্ডয়ন করবে এবং পাকিস্তানের পারমাণবিক অবকাঠামোতে হামলা চালাবে। কিন্তু ইন্ধিরা গান্ধী আবার পরিকল্পনাটি বাদ দেন।

এরপর ১৯৮৭ সালে তৎকালীন ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল কৃষ্ণস্বামী সুন্দরজি উস্কানি দিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ বাধানোর চেস্টা করেন। তিনি সীমান্তে ৫ লাখ সেনা ও ট্যাংক জড়ো করেন। তবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজিব গান্ধী সেনাপ্রধানের পরিকল্পনা সম্পর্কে খুব বেশি জানতেন না। এ কারণে তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনা কমিয়ে আনেন।

পাকিস্তানের পারমাণবিক বোমা তৈরির পরিকল্পনা ফাঁস হলে ১৯৭৯ সালে দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে হামলা চালানোর পর পাকিস্তানের সঙ্গে কয়েক মাস পরই আবারও সম্পর্ক স্থাপন করেন তিনি। কারণ আফগানিস্তানের প্রতিবেশী হিসেবে ওই সময় পাকিস্তানের সহায়তা যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজন ছিল। এরপর স্নায়ুযুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পর পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানও পরিবর্তন হয়ে যায়।

১৯৯০ সালে পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। তখন পাকিস্তান জানায় তারা পারমাণবিক বোমা তৈরি থেকে বেরিয়ে আসবে। মুখে বললেও গোপনে তাদের কাজ চলতে থাকে।
১৯৯৮ সালের ১১ মে ভারত পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালায়। এর পরের মাসে পাকিস্তান বেলুচিস্তানের মরুভুমিতে নিজেদের অস্ত্রের পরীক্ষা চালায়। এরমাধ্যমে বিশ্বের সপ্তম পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ হয় তারা। এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভারত-পাকিস্তান উভয় দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়।

নিজ দেশের পাশাপাশি ওই সময় ইরান, উত্তর কোরিয়া ও লিবিয়াকেও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছিলেন আব্দুল কাদের। তবে ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা পেতে লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট মোহাম্মার গাদ্দাফি এই তথ্য ফাঁস করে দেন। এদিকে আব্দুল কাদের খান পরবর্তীতে বলেছিলেন, পাকিস্তানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে সহায়তা করে নিজ দেশকে শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করেছেন তিনি।