বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে বেশি করে ফিরে আসে লাল-সবুজ। পোশাকেও দেখা যায় তা। পোশাকের উপকরণ দেশি হলে বিজয় দিবসের চেতনার সঙ্গে মেলে ভালো। বাড়তি কাজ ছাড়া তাঁতে বোনা একরঙা জমিনের সুতি শাড়িতে আভিজাত্যও ফুটে ওঠে। তাই তো সবসময় এটি অমলিন। আজকের তরুণীদের পরনেও এই শাড়ি দেখা যায় বেশ। আবার এই শাড়িগুলোর দামও হাতের নাগালে। ফ্যাশন ডিজাইনার এবং তাঁতশিল্পীদের অনেকেই এবার তাঁতের শাড়িতে লাল–সবুজ নিয়ে এসেছেন নানাভাবে। ডিসেম্বর, বিজয় দিবসের মাসে এগুলো মানিয়ে যাবে বেশ।
বিজয় দিবস সামনে রেখে ফ্যাশন হাউসগুলোর আয়োজন অবধারিত। এই সময়ের বাবা-মায়েরা অন্তত পোশাক দিয়ে হলেও সন্তানের মনে গেঁথে দিতে চান বিজয়ের গল্পগুলো। তরুণেরাও পিছিয়ে নেই। কখনো মাথার ব্যান্ডানায় আঁকা লাল-সবুজ পতাকা, কখনো হাতের ব্রেসলেটে লেখা বাংলাদেশ শব্দটিতে ফুটে ওঠে তাঁদের স্বাধীনতা ও স্বাতন্ত্র্য রক্ষার দৃঢ়তা। এগুলো মাথায় রেখেই প্রতিবছর নতুন পোশাক, অনুষঙ্গ ও রঙের মিশ্রণ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন দেশি ফ্যাশন ডিজাইনাররা। শুধু লাল-সবুজেই কি প্রকাশ পায় আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের বিজয় চেতনা? এটা আরও পোক্ত হয়, যখন পোশাকের উপাদানটা একেবারে থাকে খাঁটি, দেশি। সেই ধারায় বলা চলে তাঁতে বোনা চিরচেনা শাড়ি। যার জমিন সবুজ, পাড় ও আঁচল টুকটুকে লাল। কিংবা উল্টোটা।
সুতি শাড়ির জন্য তাঁতের চেয়ে ভালো কিছু ছিল না কখনো। দেশি তাঁতে দেশি সুতায় লাল-সবুজে রাঙা শাড়িগুলো এবারের বিজয় দিবসের পোশাকে যেন বিশেষ বৈশিষ্ট্য হিসেবে ফিরে এসেছে।
টাঙ্গাইল শাড়ি কুটিরের স্বত্বাধিকারী মুনিরা ইমদাদ কথা প্রসঙ্গে ফিরে গেলেন পুরোনো দিনে। বললেন, ‘তাঁতের শাড়ির প্রধান বৈশিষ্ট্য সাদামাটা ভাব। কয়েক বছর আগেও তাঁতের শাড়ি হয়ে উঠেছিল টিপটপ ফ্যাশনের প্রধান উপকরণ। গত দুই বছরে সাদামাটা ফ্যাশনের প্রতি সবার আগ্রহ বেড়েছে খুব। আর তাই বিজয়ের দিনে সেই সাদামাটা কিন্তু অভিজাত ভাবটি ফুটিয়ে তুলতে এই শাড়িই ফিরে এসেছে আবার।’ আর এতে লাল-সবুজ রং তো আছেই।
কিছু শাড়ির জমিন কখনো হয়েছে সবুজ কিংবা লাল। পতাকার গাঢ় সবুজ নয় শুধু, তার সঙ্গে কিছু শাড়িতে মিশে গেছে কলাপাতার কচি রং। সবুজ পৌঁছে গেছে নীলের কাছাকাছি। খানিকটা মেরুনের ভাব এসেছে লালে। সবুজ আর লালে বোনা কালচে লাল রংও এবার ঠাঁই করে নিয়েছে শাড়িতে। কোনো কোনোটায় লালের সঙ্গে কালো এক পরত সুতাও রয়েছে। বেশ কিছু শাড়ির জমিনে সুতা তুলে করা হয়েছে হালকা কোটার কাজ। সাদাসিধে জমিনেই কখনো কুঁচির অংশে লাল-সবুজের দাগ টেনে দিয়েছেন কেউ। কিংবা লাল-হলুদের। তাতে সুতায় বোনা রেখা টেনেছেন সোনালি-কমলা সুতায়।
পাড় আর আঁচলে জমিনের সঙ্গে তৈরি হয়েছে বৈপরীত্য। তাতে কখনো কখনো চলে গেছে সূক্ষ্ম সোনালি সুতার টান। এবার আবার হলুদ আর কমলার উপস্থিতিও লক্ষ করার মতো। চিকন পাড়ে লাল বা সবুজের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে কমলা ও হলুদের উজ্জ্বল উপস্থিতি। সেটা আঁচলে গিয়ে আবার লম্বা চেকে তৈরি করেছে বৈচিত্র্য। দেখে কিছুটা গামছা শাড়ির প্রভাব মনে হলেও, এই হলুদ-কমলা রং আসলে প্রথম পতাকার মাঝখানে বসানো সেই মানচিত্র থেকে নেওয়া, যা ফুটে ছিল লাল বৃত্তের ওপরে।
যাত্রার ডিজাইনার দলের পক্ষে ঊর্মিলা শুক্লা বললেন, ‘সাদামাটা শাড়িতেই অভিজাত ভাবটি ফুটিয়ে তোলা বরং সহজ। তাই এ দু-তিনটা ঢালাই রঙের শাড়িতে ব্লাউজ একটু ভিন্ন ছাঁটের হতে পারে। পাড় যেহেতু সরু, তাই ব্লাউজের জন্য ওই পাড়ের রং বেছে নিতে পারেন। কোয়ার্টার হাতা কিংবা হাতাকাটা, যেকোনো ব্লাউজে এই শাড়িগুলো ভালো ফুটবে।
‘শাড়ি যখন সুতি, কিছু গয়না না হলেও তো চলে না।’ বলছিলেন ফ্যাশন হাউস বিবিয়ানার প্রধান ডিজাইনার লিপি খন্দকার। তাঁর মতে, মাটির লম্বা মালা, মিলিয়ে কানে ছোট দুল বা টপ বেশ লাগে। হাতভর্তি শুধু লাল-সবুজ কাচের চুড়িতেই অনেকে সন্তুষ্ট। ধাতব বা অ্যান্টিকের গয়না এমন শাড়ির সঙ্গে পরতে চাইলে ছোট্ট একটি লকেটই যথেষ্ট।
আর অবশ্যই সাজটি হালকা হবে। লিপস্টিকের ন্যাচারাল একটা শেড বেছে নিন। পাতলা একজোড়া ল্যাশ লাগিয়ে চোখে গাঢ় করে টানুন কাজল। চুল পরিপাটি করে মুখের ফ্রেমে সাজিয়ে দিন, আর কপালে জুড়ে নিন টকটকে লাল একটা টিপ। বিজয়ের সাজ এইটুকু হলেই কিন্তু চলে। কেননা, বিজয় তো যতটা প্রকাশের, তার চেয়ে বেশি অনুভবের। আর সেই অনুভবেই জেগে থাক বিজয়ের চেতনা।
দরদাম
সুতি শাড়ির দাম এখনো তেমন বাড়েনি। টাঙ্গাইল শাড়ি কুটিরে গেলে ৭০০ থেকে শুরু করে ১ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে পাবেন। কে ক্র্যাফট, যাত্রা ও দেশালের মতো দাম শুরু হবে ১০০০ টাকায়। নিউমার্কেট, চাঁদনীচক, আজিজ সুপার মার্কেটে একটু খোঁজ করলেই ৫০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন একপেড়ে লাল-সবুজ শাড়ি।