নিউজ ডেস্ক:
ছোট্ট একটি মেয়ে। পড়ে ক্লাস এইটে। স্বপ্ন ছিল বড় হওয়ার। কিন্তু স্থানীয় এক লম্পটের লালসার শিকার হয়ে এই শিশুমেয়েটিই এখন আরেক শিশুর মা। পিতৃপরিচয়হীন শিশুর ভবিষ্যৎ এখন কী হবে? কিংবা তারই বা ভবিষ্যৎ কী?
পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলার দারুলহুদা গ্রামের অহেজ উদ্দিন মাতুব্বরের লম্পট ছেলে ছয় সন্তানের জনক বুলবুল মাতুব্বর (৪৫)-এর লালসার শিকার হয় একই গ্রামের ১২ বছরের এই কিশোরী। কিশোরী মাদরাসাছাত্রী। তাকে জোর করে ধর্ষণ করলে সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। গত ২১ অক্টোবর মঙ্গলবার বিকেলে ধর্ষিতা এই কিশোরী একটি পুত্রসন্তান জন্ম দেয়। এ ঘটনায় ধর্ষিতার মা গত ১০ অক্টোবর পিরোজপুর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে লম্পট বুলবুল মাতুব্বর ও তার ভায়রাভাই আল আমিন (৪০)-এর বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলা নম্বর ২৩/১৬।
মেয়েটির মা বলেন, ‘আমার স্বামী ঢাকায় একটি দোকানের কর্মচারী। আমি বাড়িতে ছেলে-মেয়ে নিয়ে থাকি। বেশ কিছু দিন ধরে লম্পট বুলবুল বিভিন্ন সময় আমাকে একা পেয়ে বিভিন্ন বাজে মন্তব্য করত। আমি তাকে এ ব্যাপারে বেশ কয়েকবার সতর্ক করে আমার বাড়ির আশেপাশে না আসার জন্য বলি। গত ১০ মে প্রতিবেশী অহেজ উদ্দিন মাতুব্বরের ছেলে লম্পট বুলবুল মাতুব্বর আমার বাড়িতে ঢুকে আমার মেয়েকে (১২) জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। বাড়িতে কেউ না থাকায় প্রথমে বুলবুল মেয়ের কাছে পানি খেতে চায় এবং মায়ের কথা জিজ্ঞেস করে। আমার মেয়ে জানায়, মা বাড়িতে নেই। তখন ওই লম্পট ঘরে ঢুকে আমার মেয়ের মুখ চেপে ধরে এবং ধর্ষণ করে। ওই সময় বাইরে তার ভায়রাভাই তাকে পাহারা দেয়। ওই দুই লম্পট যাওয়ার সময় আমার মেয়েকে বলে যায়Ñ এ কথা কাউকে জানালে তোকে মেরে ফেলা হবে।’
মেয়েটির মা আরো জানান, তিনি বাড়ি ফিরে মেয়ের মুখ মলিন দেখতে পেয়ে কারণ জানতে চান কিন্তু মেয়েটি ভয়ে তার মাকে ওই ঘটনা জানায়নি। ঘটনার কয়েক মাস পর মেয়েকে নিয়ে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে যান মা। সেখানে ডা: ফারহানা রহমান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান মেয়েটি গর্ভবতী। মেয়েটির মা ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়ে গত ১০ অক্টোবার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। কিন্তু লম্পট বুলবুল তাদের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে ও প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে।
ধর্ষিতার মা বলেন, শিশুটি এখন অসুস্থ, তাকে ভাণ্ডারিয়া হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দিয়েছি। তিনি কেঁদে কেঁদে বলেন, তার স্বামী ঘটনার পর বাড়িতে থাকেন, এখন আমাদের ঘরে রান্না করার মতো কিছু নেই। আমরা অসহায়ভাবে দিন কাটাচ্ছি।
দারুলহুদা আল-গাজ্জালী ইসলামিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ আবদুল্লাহ মাহমুদ তাদের এই শিক্ষার্থীর সন্তান হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, মেয়েটি মেধাবী ছাত্রী ছিল। ক্লাসে তার রোল ১। সে এবার জেডিসি পরীক্ষার্থী ছিল, ফরমও পূরণ করেছিল। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় সে পরীক্ষা দিতে পারেনি। ধর্ষণের শিকার মেয়েটি জানায়, আমি ওই পশুটির ফাঁসি চাই।
এ দিকে, ভাণ্ডারিয়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো: মিজান সালাউদ্দিনকে আদালত এ বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিলে তিনি গত বুধবার তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন বলে জানান। তবে কয়েক দিন পর তিনি চূড়ান্ত রিপোর্ট আদালতে পাঠাবেন বলে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।