গায়ানার প্রোভিডেন্স স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টায় শুরু হবে নবম আসরের দ্বিতীয় সেমিফাইনালের ম্যাচটি। ২০১০ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের তৃতীয় আসরে প্রথমবারের মতো ফাইনাল খেলার সুযোগ পেয়ে শিরোপা ঘরে তোলে ইংল্যান্ড। শিরোপা নির্ধারণী ওই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ৭ উইকেটে হারিয়েছিল ইংলিশরা। এরপর ২০১৬ সালের আসরে ফাইনালে উঠলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ৪ উইকেটে হেরে যায় ইংল্যান্ড। মূলত ম্যাচের শেষ ওভারে ক্রেগ ব্রাথওয়েটের অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ের সামনে হার মানে ইংলিশরা। শেষ ওভারে ১৯ রানের প্রয়োজনে ইংল্যান্ডের পেসার বেন স্টোকসের প্রথম ৪ বলে চারটি ছয়ে ২৪ রান তুলে উইন্ডিজকে শিরোপা এনে দেন ব্রাথওয়েট।
২০২২ সালে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠে ইংল্যান্ড। নিজেদের তৃতীয় ফাইনালে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারায় ইংলিশরা। তাই ২০১০, ২০১৬ ও ২০২২ সালের পর চতুর্থবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলার সুযোগ ইংল্যান্ডের সামনে। ফাইনাল খেলার লক্ষ্য সেমিফাইনালে জয় ছাড়া অন্যকিছুই ভাবছে না ইংলিশরা। দলের অধিনায়ক জস বাটলার বলেন, ‘আমাদের সামনে চতুর্থ ফাইনাল খেলার সুযোগ। ফাইনালে খেলার সুযোগ যে কেউ লুফে নেবে। আমরাও এর ব্যতিক্রম না। ফাইনালে খেলতে দলের সবাই মুখিয়ে আছে। আমাদের লক্ষ্য ফাইনাল খেলা।’ এবারের বিশ্বকাপের শুরুটা ভালো হয়নি ইংল্যান্ডের। গ্রুপ পর্ব থেকেই ছিটকে যাওয়ার শঙ্কায় ছিল তারা। কিন্তু ভাগ্যের জোরে গ্রুপ পর্বের বাধা টপকাতে পারে ইংলিশরা। গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে স্কটল্যান্ডের সঙ্গে বৃষ্টির কারণে পয়েন্ট ভাগাভাগি এবং অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে মহাবিপদে পড়ে তারা। পরের দুই ম্যাচ জিতে সুপার এইটে খেলার লড়াইয়ে ফিরে ইংল্যান্ড। ৪ ম্যাচে ৫ পয়েন্ট ছিল তাদের। একই অবস্থা ছিল স্কটল্যান্ডেরও। কিন্তু রান রেটে এগিয়ে থাকার সুবাদে সুপার এইটে জায়গা করে নেয় ইংলিশরা।
সুপার এইটেও চাপে পড়েছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু নিজেদের শেষ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ হেরে যাওয়ায় সেমির টিকিট পায় তারা। তবে গ্রুপ পর্ব বা সুপার এইটের ম্যাচগুলো নিয়ে ভাবতে চান না ইংল্যান্ডের অধিনায়ক বাটলার। সেমিফাইনালে ভারতকে আটকাতে বদ্ধপরিকর তারা। বাটলার বলেন, ‘গ্রুপ পর্ব ও সুপার এইটের ম্যাচ এখন অতীত। আমরা সামনের ম্যাচ নিয়ে ভাবছি। সেমিফাইনালে বাধা টপকাতে ভারতের বিপক্ষে নিজেদের সেরা ক্রিকেট খেলতে চাই আমরা। কাজটি কঠিন হলেও সেরা ক্রিকেট খেলার সামর্থ্য ও যোগ্যতা আমাদের দলের আছে।’ ২০০৭ সালে শুরু হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরেই চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। ফাইনালে পাকিস্তানকে ৫ রানে হারিয়েছিল তারা। এরপর ২০১৪ সালে বাংলাদেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের ফাইনালে জায়গা করে নেয় ভারত। কিস্তু শ্রীলঙ্কার কাছে ৬ উইকেটে হেরে যায় টিম ইন্ডিয়া।
২০১৪ সালের পর আর কখনো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলতে পারেনি ভারত। দুবার সেমিফাইনালে খেললেও ফাইনালে উঠতে পারেনি তারা। ১০ বছর পর আবারও বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলার সুযোগ ভারতের সামনে। এ সুযোগকে হাতছাড়া করতে চায় না ভারত। দলের অধিনায়ক রোহিত শর্মা বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর ফাইনালে খেলার সুযোগ তৈরি হয়েছে আমাদের সামনে। এ সুযোগ কোনোভাবেই হাতছাড়া করতে রাজি নই আমরা। ফাইনালে খেলার লক্ষ্য নিয়ে সেমির লড়াইয়ে নামবে দল।’ ২০২২ সালে বিশ্বকাপের সর্বশেষ আসরের সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে হেরে ফাইনাল খেলার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল ভারতের। ইংলিশদের কাছে ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরেছিল তারা। প্রথমে ব্যাট করে ৬ উইকেটে ১৬৮ রান করে ভারত। জবাবে ৪ ওভার বাকি রেখে বিনা উইকেটে টার্গেট স্পর্শ করে ভারতকে হারের লজ্জায় ডোবায় ইংল্যান্ড।
টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে প্রতিপক্ষ হিসেবে ইংল্যান্ডকে পেয়েছে ভারত। আগের আসরে ইংল্যান্ডের কাছে হারের প্রতিশোধ নেওয়ার দারুণ সুযোগ এখন ভারতের সামনে। কিন্তু প্রতিশোধ নিয়ে ভাবতে রাজি নন রোহিত। প্রতিপক্ষ কে, সেটিও ভাবতে চান না তিনি, ‘আমরা আলাদা কিছু করতে চাই না। যে ক্রিকেট খেলছি সেটাই খেলতে চাই। কে প্রতিপক্ষ, সেটি দেখার দরকার নেই। ছেলেদের বলেছি, চাপ না নিয়ে নিজেদের মতো খেলতে। এরকম ক্রিকেট খেললেই আমরা সফল হব।’ বিশ্বকাপের গ্রুপ ও সুপার এইট পর্বে দারুণ দাপট দেখিয়েছে ভারত। গ্রুপ পর্বে ৩ ম্যাচ ও সুপার এইট পর্বে ৩ ম্যাচ জিতেছে তারা। গ্রুপ পর্বে ভারতের একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। আগের ম্যাচগুলোর মতো পারফরম্যান্স করতে পারলে ইংল্যান্ডের মতো শক্তিশালী দলকে হারানোর ব্যাপারে আশাবাদী রোহিত। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত পুরো টুর্নামেন্টেই আমরা ভালো ক্রিকেট খেলেছি। ছেলেরা কোনোরকম চাপ নেয়নি। মাঠে নিজেদের সেরাটা দিতে মরিয়া ছিল তারা এবং ঠিকঠাক সেগুলোর বাস্তবায়নও করেছে। আশা করি, আরো একটি পরীক্ষায় সেরা পারফরম্যঅন্সই দেখাবে দল।’
তবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, গায়ানায় ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচে ৮৮ শতাংশ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু ভারত-ইংল্যান্ডের মধ্যকার দ্বিতীয় সেমিফাইনালে কোনো রিজার্ভ ডে রাখেনি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। তবে ওই ম্যাচের জন্য অতিরিক্ত ৪ ঘণ্টা ১০ মিনিট রেখেছে আইসিসি। কিন্তু কোনোভাবেই পরের দিন ম্যাচ আয়োজনের কোনো সুযোগ নেই। তবে বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা-আফগানিস্তান ম্যাচে রিজার্ভ ডে রাখা হয়েছে। ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেস্তে গেলে সুবিধা পাবে ভারত। কারণ সুপার এইটে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিফাইনালে উঠেছে ভারত। সুপার এইটে গ্রুপ রানার্সআপ হয়েছে ইংল্যান্ড। এজন্য খেলা পরিত্যক্ত হলে ফাইনালে খেলবেন রোহিত-কোহলিরা। এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতে ২৩ বার মুখোমুখি হয়েছে ভারত-ইংল্যান্ড। এর মধ্যে ভারতের জয় ১২ ম্যাচে। ইংল্যান্ড জিতেছে ১১ ম্যাচে। বিশ্বকাপের মঞ্চে জয় ও হারের দিক দিয়ে মুখোমুখি দেখায় দুদলই সমান-সমান। ৪ বারের দেখায় ২টি করে জয় পেয়েছে ভারত ও ইংল্যান্ড।