নিউজ ডেস্ক:
কারাগার বললেই চোখে ভেসে ওঠে বন্দিদের আর্তনাদ, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, সারি সারি সেল কিংবা গণরুমে গাদাগাদি করে থাকা। কিন্তু পৃথিবীতে এমন কিছু কয়েদখানা রয়েছে যেগুলো অবিশ্বাস্য পরিবর্তনের মাধ্যমে এখন বিলাসবহুল হোটেল, শপিং কমপ্লেক্স এমনকি জনপ্রিয় স্কুলে রূপ নিয়েছে।
নির্মাণ প্রকৌশলীরা কারাগারগুলোর সম্ভবনা দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন। পর্যটক বা অন্যরা এখন কারাগার থেকে রূপান্তরিত সেসব হোটেল, শপিং কমপ্লেক্স বা স্কুল-কলেজে গেলে বিস্মিত হন, কাটান দারুণ উপভোগ্য সময়।
পেনট্রিজ কারাগার, মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া: ১৮৫১ সালে নির্মিত হয় পেনট্রিজ কারাগার। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের এ কারাগারটিতে দস্যু নেড কেলি থেকে শুরু করে রোনাল্ড রিয়ানের মতো কুখ্যাত সব অপরাধীদের রাখা হতো।
১৯৯৭ সালের ১ মে কারাগারটি আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০১৩ সালে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এটি কিনে নেয় এবং বিলাসবহুল আবাসিক হোটেল গড়ে তোলে। সংস্কার করে আবাসিক ও বাণিজ্যিকভাবে। সাবেক এই কারাগার এখন কর্মচঞ্চল মেলবোর্নের বাণিজ্যিক যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু।
লোভিয়ার্স কারাগার, ফ্রান্স: ফ্রান্সের লোভিয়ার্সের ‘কনভেন্ট অব দ্য পেনিটেন্ট্স’ পুরাকালের অসাধারণ নির্মাণশৈলীর একটি উদাহরণ। ১৬৪৬ থেকে ১৬৫৯ সাল পর্যন্ত খ্রিস্টান ধর্ম অনুসারী ফ্যান্সিসকান গুরুভাইদের জন্য এটি নির্মাণ করা হয়। ১৭৮৯ সালে এর অংশ বিশেষ কারাগারে রূপান্তর করা হয় এবং গির্জাকে বানানো হয় বিচারালয়। এটি ছিলো অনুতপ্তদের জন্য সংশোধন কেন্দ্র। ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত এখানে বন্দিদের রাখা হয়।
১৯৯০ সাল থেকে এটিকে মিউজিক স্কুল হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়। মিউজিক স্কুলে রয়েছে গ্লাস নির্মিত মর্ডান অর্কেস্ট্রা হল, ক্ল্যাসিকেল স্টোনের বহিরাবন, নান্দনিক কর্নসার্ট হল। মিউজিক স্কুল হিসেবে এ প্রতিষ্ঠানটি কয়েকবার পুরস্কার জিতে নিয়েছে। আগের অবকাঠামোর কিছু এখনো সংরক্ষিত আছে।
ক্যাপিটাল সিটি মার্ডার কারাগার, তুরস্ক : ১৯১৮-১৯ সালের দিকে অটোম্যান সম্রাট তুরস্কের ইস্তাম্বুলে নির্মাণ করেন সুলতাহমেত জেল বা ‘ক্যাপিটাল সিটি মার্ডার জেল’। কারাগারটিতে অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং নারীদেরও রাখা হতো। ১৯৬৯ সালের ২৫ জানুয়ারি এখানকার কয়েদিদের অন্যত্র পাঠানো হলে কারাগারটি পরিত্যক্ত ঘোষণা হয়। অবশ্য পরে সামরিক শাসনের সময় এটিকে সামরিক কারাগার হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
শিল্প ও স্থাপত্য ইতিহাসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ কারাগারটি ১৯৯৬ সালে টরেন্ট বেইজ্ড ফোর সিজসন হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট চেইনের অধীনে ডিলাক্স হোটেল হিসেবে যাত্রা করে। হোটেলটির চমৎকার বাগানটি একসময় কয়েদিদের শরীরচর্চার জন্য ব্যবহৃত হতো।
সেনট্রো সিভিকো, প্যালেন্সিয়া, স্পেন: স্পেনের সেনট্রো সিভিকো কারাগারটি এখন দেশটির সংস্কৃতি ও শিল্পকেন্দ্র। সাবেক এই কারাগারটিতে অসাধারণ কাজ করেছেন ডেভেলপাররা। তারা এখানে স্কাইলাইট্স বা স্বচ্ছ জানালায় জুড়ে দিয়েছেন জিংক প্যানেল। আরও বেশি ন্যাচারাল আলো পেতে লাগানো হয়েছে নান্দনিক গ্লাস স্ট্রাকচার। এই আর্ট অ্যান্ড মিউজিক সেন্টারটিতে প্রতিনিয়তই লেগে থাকে ভিড়।
রিডিং কারাগার: ইংল্যান্ডের রিডিং কারাগারের বিশ্বখ্যাত লেখক অস্কার ওয়াইল্ড ১৮৯৫ সাল থেকে দুই বছর নির্জন কারাবাসে ছিলেন। এ কারাগারে বসেই প্রেমিকা আলফ্রেড ডগলাসের উদ্দেশে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রেমপত্র লিখেছিলেন অস্কার। তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এ কারাগারটিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনে দেশটি। তবে অস্কার ওয়াইল্ড যে কক্ষে থাকতেন, তার দরজা সংরক্ষণ করা হয়েছে।
১৮৪৪ সালে এ কারাগারটি নির্মাণ করা হয়েছিলো। ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে এটিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। সংরক্ষণ করা হয় পর্যটক আকর্ষণের জন্য। ২০১৪ সালে এটিকে থিয়েটার ভেন্যুতে রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সাবেক এই কারাগারটি এক্সিভেশন ভেন্যু হিসেবে প্রথমবারের জন্য উম্মুক্ত করা হয়।
হালেট হাউজ, হংকং: ১৮৮১ সালে নির্মিত হয় হংকংয়ের হালেট হাউজ কারাগার। ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে এটি হংকং রয়্যাল মেরিন পুলিশে কাছে ছিল। ব্যবহার হতো শহরের মেরিন পুলিশ হেডকোয়াটার্স এবং কারাগার হিসেবে।
ঔপনিবেশিক ও আধুনিক স্থাপত্যের অনন্য নির্দশন এ ভবনটিতে এখন আবাসিক ভবন, রেস্টুরেন্ট, শপিং সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে।
কালচারাল পার্ক অব ভালপারাইসো: অগাস্টটো পিনোচেটের একনায়কতন্ত্রের সময় চিলির বন্দরনগরীর এই কারাগারটি ব্যবহার হতো রাজনৈতিক বন্দিদের জন্য। ১৯৯৯ সালে এটি বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং ২০১৩ সালে চাইনিজ শিল্পী ওয়াইওয়াই থেকে শুরু করে চিলির কবি পাবলো নেরুদাকে উৎসর্গ করে কালচারাল পার্ক অব ভালপারাইসো যাত্রা শুরু করে। এখানে রয়েছে আধুনিক থিয়েটারে আবর্তিত প্রদর্শনী গ্যালারি। নতুন লাগানো গাছ এবং সমুদ্রের মনোরম দৃশ্যের সঙ্গে এটি পাবলিক পার্ক হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে।
মিউজিয়াম অব বেলাইজ, ব্রিটিশ হন্ডুরাস: ১৮৫৫ সালে নির্মিত বেলাইজ কয়েদখানা একসময় ছিলো ব্রিটিশ হন্ডুরাসের সবচেয়ে কুখ্যাত অপরাধীদের আবাস। সেটি এখন জাতীয় সম্পদ। ১৯৯৩ সালে বেলাইজ কারাগারটি বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং ২০০২ সালে জাদুঘর হিসেবে পুনরায় যাত্রা শুরু করে।