প্রথম চার দিনে উইকেট গিয়েছিল ১৭টি। শেষ দিনের মধ্যাহ্ন বিরতির আগে কোনো উইকেট হারায়নি ইংল্যান্ড।
চেন্নাই টেস্টের নিয়তি লেখা হয়ে যাওয়ার কথা তাতে। সেই ম্যাচটি নাটকীয়ভাবে ইনিংস ও ৭৫ রানে জিতল ভারত। রবীন্দ্র জাদেজার ঘূর্ণিতে শেষ দুই সেশনে ইংল্যান্ড অলআউট ২০৭ রানে। ৭ উইকেট নিয়ে ব্রিটিশ সিংহদের খাঁচাবন্দি করেছেন জাদেজাই। তাতে লেখা হলো বিরাট কোহলির দলের টানা ১৮ টেস্ট অপরাজিত থাকার নতুন ইতিহাস। এর আগে ১৯৮৫-র সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৮৭-র মার্চ পর্যন্ত টানা ১৭ টেস্ট অপরাজিত ছিল ভারত। কোহলিদের এমন সাফল্যে উচ্ছ্বসিত ভারতীয় কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কার, ‘এটা টিম কোহলি। কোহলির মতো পুরো দল আক্রমণাত্মক। না হলে এভাবে টেস্ট জেতাটা অকল্পনীয়। ’ভারতে যাওয়ার আগে মিরপুরে এক সেশনে অলআউট হওয়ার লজ্জা ছিল ইংল্যান্ডের। চিপকের উইকেটে তেমন টার্ন না থাকায় এমন শঙ্কা ছিল না। প্রথম ইনিংসে ৪৭৭ করে ইনিংসে হারের অতীত ছিল না আর কারো। তবে অতিরিক্ত শট খেলতে গিয়ে নিজেদের পায়ে কুড়ালটা মেরেছে ইংল্যান্ড। কেবল ১০ ও ১১ নম্বর ব্যাটসম্যান স্টুয়ার্ট ব্রড ও জ্যাক বল আউট হয়েছেন রক্ষণাত্মক খেলতে গিয়ে। ৪৭৭ করে প্রথম দল হিসেবে ইনিংসে হারার কোনো অজুহাত দিচ্ছেন না অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুক, ‘কোনো অজুহাত নেই, ভারত আমাদের চেয়ে অনেক বেশি ভালো খেলে সিরিজ জিতেছে। সব বিভাগেই আমাদের চেয়ে এগিয়ে ছিল ওরা। সিরিজজুড়ে অনেকগুলো ক্যাচ ছেড়েছি, এর মূল্য দিতে হলো ০-৪ ব্যবধানে হেরে। ’
শেষ দুই সেশনের নাটকীয়তায় ইনিংস ব্যবধানে জয়ে খুশি বিরাট কোহলি। সিরিজ সেরার পুরস্কার পাওয়ার চেয়ে দলের সাফল্যকে এগিয়ে রাখছেন তিনি, ‘৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে শেষ টেস্ট খেলতে নেমেছিলাম। এই টেস্টে আসলে তরুণদের সুযোগ দিতে চেয়েছি। করুণ নায়ার, লোকেশ রাহুলরা আমাদের আস্থার প্রতিদান দিয়েছে। অশ্বিন মাত্র ১ উইকেট পেয়েছে চেন্নাইয়ে। তার পরও ইনিংসে জেতাটা দল হিসেবে আমাদের সামর্থ্য তুলে ধরেছে। ’
মধ্যাহ্ন বিরতিতে ইংল্যান্ডের স্কোর বিনা উইকেটে ৯৭। কুক ও জেনিংস উদ্বোধনী জুটিটা টেনে নিয়ে যান ১০৩ পর্যন্ত। লোকেশ রাহুলের ক্যাচ বানিয়ে অ্যালিস্টার কুককে ফেরান জাদেজা। এই সিরিজে ছয়বার ইংলিশ অধিনায়ককে ফিরিয়েছেন তিনি। ৫৪ করে কিটন জেনিংস কট অ্যান্ড বোল্ড জাদেজার হাতে। জো রুটকেও এলবিডাব্লিউ করেন তিনি। ৪ উইকেটে চা বিরতিতে যাওয়া ইংল্যান্ড শেষ সেশনে হারিয়ে বসে ৬ উইকেট। ম্যাচ বাঁচাতে আর ৬ ওভার কাটিয়ে দিলেই চলত। কুকের দল পারেনি সেটাও। ৪৮ রানে ৭ উইকেটের ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে জাদেজা এনে দিয়েছেন স্মরণীয় জয়।
এ নিয়ে টানা পাঁচ টেস্ট সিরিজ জিতল ভারত। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয়টা এসেছে আবার ২০০৮ সালের পর। গত আট বছরে তিনবারের চেষ্টায় পেরে ওঠেনি ব্রিটিশ সিংহদের সঙ্গে। ১৯৮৫-র সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৮৭-র মার্চ পর্যন্ত অপরাজিত থাকা ১৭ টেস্টে ভারত জিতেছিল ৪টি, ড্র ১২ আর টাই ছিল এক ম্যাচ। তুলনায় এবার জিতেছে ১৪ আর ড্র ৪টিতে। এবারের সিরিজে পাঁচ টেস্টের চারটিতে টসে হেরেছিলেন কোহলি। তিন দিনে টেস্ট শেষ করার মতো ঘূর্ণিও ছিল না উইকেটে। এ জন্যই ৪-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়টা বেশি কৃতিত্বের। এমন সাফল্যে টেস্ট র্যাংকিংয়ের শীর্ষে থেকে বছর শেষ করাটাও নিশ্চিত করেছেন কোহলিরা। ক্রিকইনফো
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ইংল্যান্ড : ৪৭৭ ও দ্বিতীয় ইনিংস ৮৮ ওভারে ২০৭ (জেনিংস ৫৪, কুক ৪৯, মঈন ৪৪, স্টোকস ২৩; জাদেজা ৭/৪৮, ইশান্ত ১/১৭)।
ভারত : ৭৫৯/৭ ডি.।
ফল : ভারত ইনিংস ও ৭৫ রানে জয়ী।
সিরিজ : ভারত ৪-০ ব্যবধানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : করুণ নায়ার।
ম্যান অব দ্য সিরিজ : বিরাট কোহলি।