নিউজ ডেস্ক:
নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছনার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভিডিও ফুটেজটি পর্যালোচনা করে এটাই প্রতীয়মান হয়, শিক্ষক কোনভাবেই স্বেচ্ছায় কান ধরে উঠবস করেননি। বরং এমপি সেলিম ওসমানের নির্দেশেই তিনি তা করতে বাধ্য হয়েছেন। ফলে এমপি কোনভাবেই দায় এড়াতে পারেন না।
বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে বৃহস্পতিবার এই প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) শেখ হাফিজুর রহমান তদন্ত প্রতিবেদনটি এফিডেভিট করে দাখিল করেন। প্রতিবেদনে সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ৬দফা সিদ্ধান্ত তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্র মো: রিফাত হাসানকে প্রধান শিক্ষক শ্যামলকান্তি ভক্ত গত বছরের ৮ মে মারধর করেছেন বলে প্রমাণিত হয়েছে। গত বছর ১৩ মে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভা চলাকালে স্থানীয় শামসুল হকের ছেলে অপুর নেতৃত্বে ১০/১২ জন সভাকক্ষে প্রবেশ করে প্রধান শিক্ষকে মারধর করেন বলে সত্যতা পাওয়া গেছে।
শিক্ষক শ্যামল কান্তি ইসলাম ধর্ম ও আল্লাহকে নিয়ে কটূক্তি করেছেন- এ দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।
গত বছরের ১৩মে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভা চলাকালে আনুমানিক বেলা ১১টার দিকে স্থানীয় মসজিদ হতে ঘোষণা করা হয়, প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত ইসলাম ধর্ম ও আল্লাহকে নিয়ে কটূক্তি করেছেন। কে বা কারা ওই ঘোষণা দিয়েছেন তা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
তবে বিদ্যালয়ের উন্নয়নমূলক কাজ নিয়ে কমিটির সদস্যদের মধ্যে বিরোধের কারণে এরূপ ঘোষণা হতে পারে বলে বিশ্বাস করার কারণ রয়েছে। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ওই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে লাঞ্ছিত করার ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের জন্য গত বছরের ১০ আগস্ট নির্দেশ দেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ। এ বিষয়ে পুলিশের দেয়া প্রতিবেদন গ্রহণ না করে বিচারিক তদন্ত করে ঢাকার সিএমএমকে প্রতিবেদন দাখিল করতে আদেশ দেয়া হয়। সে অনুযায়ী বৃহস্পতিবার ঢাকার সিএমএম প্রতিবেদন দাখিল করেন।
এ প্রতিবেদনের ব্যাপারে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু বলেন, ‘শিক্ষক শ্যামল কান্তি, অন্যান্য শিক্ষক, ভিকটিম ছাত্র ও তার মা, স্থানীয় জনগণ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সাক্ষ্য গ্রহণ, অডিও ও ভিডিও ক্লিপিং পর্যালোচনা করে পূর্ণাঙ্গ ৬৫ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটি হলফনামা করে আদালতে দেয়া হয়েছে। এই প্রতিবেদনের ওপর আগামী রোববার শুনানি হবে।