নিউজ ডেস্ক:
দেশের অর্থনীতিতে চা শিল্পের অবদান বাড়াতে ‘উন্নয়নের পথ নকশা: বাংলাদেশের চা শিল্প’ শীর্ষক একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার।এজন্য ব্যয় হবে ৯৬৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
চা চাষের গড় ব্যবহার বাড়িয়ে ২০১৫ সাল নাগাদ দেশের ১৬২টি চা বাগান থেকে চায়ের উৎপাদন ১১০ মিলিয়ন কেজিতে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ বিষয়ে ১০টি লক্ষ্য পূরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
চা বর্তমানে একটি জনপ্রিয় পানীয়। বিশ্বেও অধিকাংশ লোক চা পান করে থাকেন। ১৮৫৪ সালে সিলেটের মালনিছড়ায় প্রথম বাণিজ্যিক চা চাষ শুরু হয়। ক্রমান্বয়ে চা আবাদ শ্রমঘন কৃষি ভিত্তিক শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি, আমদানি বিকল্প পণ্য উৎপাদন এবং গ্রামীণ দারিদ্র্য কমানোর মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে চা খাত গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা পালন করছে।
সময়ের বিবর্তনে উৎপাদনের নি¤œ প্রবৃদ্ধি, অভ্যন্তরীন চাহিদার ক্রমবৃদ্ধি এবং চা উৎপাদনকারী অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতার ফলে চায়ের রপ্তানি কমে যায়। বর্তমানে বাংলাদেশের চা শিল্প নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অপর্যাপ্ত অর্থায়ন, উৎপাদন উপকরনের মূল্য বৃদ্ধি এবং অনুন্নত অবকাঠামো। এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করা এবং চা শিল্পের উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি পথ নকশা প্রনয়ণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
চায়ের অভ্যন্তরীন চাহিদা প্রতিদিনই বাড়ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারকে বিবেচনায় নিলে ২০২৫ সাল নাগাদ চায়ের মোট চাহিদা দাঁড়াবে ১২৯ দশমিক ৪৩ মিলিয়ন কেজি এবং বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ওই সময়ে চায়ের উৎপাদন হবে মাত্র ৮৫ দশমিক ৫৯ মিলিয়ন কেজি। দেশের চা শিল্পের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির সুযোগ, সামর্থ ও সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে হেক্টর প্রতি চা এবং জাতীয় গড় উৎপাদন ১২৭০ কেজি এবং চা চাষে জমির গড় ব্যবহার মাত্র ৫১ দশমিক ৪২ শতাংশ।
সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশের উত্তরাঞ্চলে এবং তিনটি পার্বত্য জেলার ক্ষুদ্রয়াতন চা চাষাবাদের মাধ্যমে চা চাষাধীন জমির পরিমান বাড়নোর যথেষ্ঠ সুযোগ রয়েছে। চা চাষে ভ’মির ব্যবহার ৫৫ শতাংশ ও হেক্টর প্রতি উৎপাদন ১৫০০ কেজিতে উন্নীত করা হচ্ছে, অতিপুরাতন ও অর্থনৈতিকভাবে অলাভজনক চা আবাদ এলাকায় পুনরাবাদ, দক্ষ ব্যবস্থাপনায় নিবিড় চাষাবাদ এবং নতুন জমিতে আবাদ সম্প্রসারনের মাধ্যমে চায়ের উৎপাদন ১১০ মিলিয়ন কেজিতে উন্নীত করা সম্ভব। এছাড়াও ক্ষুদ্রায়তন চা বাগান থেকেও প্রায় ৩০ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন করা যেতে পারে। যা অভ্যন্তরীন চাহিদ মেটাতে সক্ষম হবে।
সূত্র জানায়, চা শিল্প উন্নয়নে সরকার ‘উন্নয়নের পথনকশা : বাংলাদেশ চা শিল্প’ শীর্ষক কর্মপরিকল্পনায় ১০টি লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে, প্রতিষ্ঠিত চা বাগান ও ক্ষুদ্রায়তন চা বাগানের মাধ্যমে ২০২৫ সাল নাগাদ ১৪০ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যে অতিরিক্ত ৭২ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন। নতুন ১০ হাজার হেক্টর জমি চা আবাদের আওতায় আনা এবং আগের ১০ হাজার হেক্টরে বিদ্যমান অতিবয়স্ক ও অর্থনৈতিকভাবে অলাভজনক গাছ উত্তোলন করে পুনঃরোপন। হেক্টর প্রতি জাতীয় গড় উৎপাদন ১২৭০ কেজি থেকে ১৫০০ কোজিতে উন্নীত করা। চা চাষে জমির গড় ব্যবহার ৫১ দশমিক ৪২ শতাংশ থেকে ৫৫ শতাংশে উন্নীত করা। অতিরিক্ত উৎপাদিত চা প্রক্রিয়াকরনের জন্য কারখানা সুবিধা উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৮৩৮টি চা প্রক্রিয়াকরণ যন্ত্র সংগ্রহ করা।
এছাড়াও চা শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৫ হাজার ইউনিট শ্রমিক বাসস্থান, ১৫ হাজার শৌচাগার, ৪০টি গভীর নলক’প, ৪৫০০টি হস্তচালিত নলক’প এবং পাতক’য়া স্থাপন। চা বাগানের নারী শ্রমীকদের ক্ষমতায়নের জন্য ১০০টি মাদারস ক্লাব প্রতিষ্ঠা এবং শ্রমিকের আইনগত অধিকার সংরক্ষনের ব্যবস্থা নেওয়া। চা এলাকায় সেচ সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পানির উৎস সৃষ্টির জন্য ৭৫টি বাঁধ/জলাধার নির্মাণ করা এবং প্রয়োজনীয় পরিমাণ সেচ যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা। চা বাগান এলাকায় ৪৭ কিলোমিটার রাস্তা, ৫০টি কালভার্ট ও ৪টি সেতু নির্মাণ এবং ৩০ হাজার স্থায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।
সূত্র জানায়, এই কর্মপরিকল্পনা অনুমোদনের জন্য অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। কমিটি এতে অনুমোদন দিলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।