এটি ছেলে ও মেয়েদের টেস্ট ক্রিকেটে একদিনে কোনো দলের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। এর আগের রেকর্ডটি ছিল শ্রীলঙ্কার ছেলেদের দখলে।
এর আগে ২০০২ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে একদিনে ৫০৯ রান করেছিল লঙ্কানরা। টেস্টের ইতিহাসে একদিনে সবচেয়ে বেশি রান হজমের সেই লজ্জার রেকর্ডটি তাড়া করতো টাইগারদের। এবার সেই রেকর্ড গেল দক্ষিণ আফ্রিকার মেয়েদের ঝুলিতে। অবশ্য শুধু ছেলেদের টেস্টে রেকর্ডটি এখনও বাংলাদেশেরই রয়েছে।
একদিনে সবচেয়ে বেশি রান তোলার রেকর্ড অবশ্য যৌথভাবে ভারত ও ইংল্যান্ডের দখলে রয়েছে। ১৯৩৬ সালে ম্যানচেস্টার টেস্টের দ্বিতীয় দিনে দুই দল মিলে তুলেছিল ৫৮৮ রান। ১৯২৪ সালে ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা মিলে লর্ডস টেস্টের দ্বিতীয় দিনে ৫২২ রান তুলেছিল। সেদিক থেকে ছেলেদের ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কার ওই রেকর্ডটি আছে তৃতীয় স্থানে।
শুক্রবার (২৮ জুন) চেন্নাইয়ে আগে ব্যাট করতে নেমে শেফালি ভার্মার রেকর্ড ডাবল সেঞ্চুরিতে ভর করে দিন শেষে মাত্র ৪ উইকেট হারিয়েই ৫২৫ রান তুলেছে ভারত। নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে এটাই তাদের এক ইনিংসে সর্বোচ্চ সংগ্রহ দলীয় সংগ্রহ। এর আগে ২০২২ সালে ৪৬৭ রান তুলেছিল তারা।
মেয়েদের টেস্টে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ সংগ্রহ অস্ট্রেলিয়ার। এ বছরের শুরুতে পার্থে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার মেয়েরা ইনিংস ঘোষণা করার আগে করেছিল ৫৭৫ রান। এছাড়া ১৯৯৮ সালে অজি মেয়েরাই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৬৯ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করেছিল। ভারতের মেয়েরা এই রেকর্ড ভাঙার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে।
ভারত টেস্ট ক্রিকেটের ৮৯ বছর পুরনো রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। ইংল্যান্ড নারী দল ১৯৩৫ সালে ক্রাইস্টচার্চে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একদিনে ৪৩১ রান তুলেছিল। সেটিই ক্রিকেটে একদিনে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড ছিলো।
এই দিন ব্যক্তিগত রেকর্ডও ভেঙেছে বেশ কয়েকটি। ১৯৪ বলে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন শেফালি। মেয়েদের টেস্টে সবচেয়ে দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরি এখন এই ভারতীয় ব্যাটারদের দখলে। এর আগে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২৪৮ বলে ডাবল ছুঁয়ে রেকর্ড গড়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার অ্যানাবেল সাদারল্যান্ড।
অবশ্য ডাবল ছোঁয়ার পর বেশিদূর যেতে পারেননি শেফালি। ১৯৭ বলে ২০৫ রান করে বিদায় নেন তিনি। ২০ বছর বয়সী এই ব্যাটারের এটি প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি তো বটেই, প্রথম সেঞ্চুরিও। এর আগে তার সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল ৯৬ রানের। ক্যারিয়ারের মাত্র পঞ্চম টেস্ট খেলতে নামা এই ব্যাটার আজ ২৩টি বাউন্ডারি ও ৮টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন। স্মৃতি মান্ধানার সঙ্গে গড়েছেন ২৯২ রানের ওপেনিং জুটি। মেয়েদের টেস্টে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। শীর্ষে আছে ১৯৮৭ সালে ইংলিশদের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার ডেনিস অ্যানেটস ও লিন্ডসে রিলার ৩০৯ রানের জুটি।
মাত্র দ্বিতীয় ভারতীয় নারী ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন শেফালি। এর আগে ভারতের সাবেক অধিনায়ক মিতালি রাজ হাঁকিয়েছিলেন প্রথম সেঞ্চুরিটি। ২০০২ সালের আগস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ড্র হওয়া টেস্টে ৪০৭ বলে ২১৪ রান করেছিলেন তিনি। অর্থাৎ প্রায় ২২ বছর পর টেস্টে ডাবলের দেখা পেলেন ভারতের কোনো নারী ক্রিকেটার।
টেস্টের প্রথম দিনে ডাবল হাঁকানো প্রথম নারী ক্রিকেটারও শেফালি। তাছার সবচেয়ে কম বয়সে টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ডে দ্বিতীয় স্থানে আছেন তিনি। আজ এই কীর্তি গড়ার দিনে তার বয়স ২০ বছর ১৫২ দিন। সবচেয়ে কম বয়সে ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড অবশ্য তারই স্বদেশী মিতালি রাজের দখলে ২০০২ সালে টন্টনে ডাবল হাঁকানোর দিনে তার বয়স ছিল ১৯ বছর ২৫৪ দিন।
মেয়েদের টেস্টে একদিনে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডও গড়েছেন শেফালি। ইংল্যান্ডের এলিজাবেথ স্নোবল ১৯৩৪-৩৫ মৌসুমে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একদিনে ১৮৯ করেছিলেন। তাছাড়া মেয়েদের টেস্টের এক ইনিংসে সর্বোচ্চ (৮টি) ছক্কার রেকর্ডও গড়েছেন শেফালি। এক ইনিংসে কারও দুইটির বেশি ছক্কা মারার রেকর্ডও নেই এর আগে।