নিউজ ডেস্ক:
রিজার্ভ চুরির ঘটনার জন্য আবারো বাংলাদেশ ব্যাংককে দায়ী করল ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংক। এ ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা উপেক্ষা করে রিজাল ব্যাংক। অথচ এ রিজাল ব্যাংকই এখন এর দায় না নিয়ে উল্টো বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলার কথা ভাবছে। এমনকি ব্যাংকটি বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো টাকা ফেরত দেবে না বলে অঙ্গীকার করেছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশী এক পুলিশ কর্মকর্তার বক্তবেথ্যর পর দিন ব্যাংকটি বলেছে, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় রিজাল ব্যাংকের কোনো দায় নেই, বাংলাদেশ ব্যাংকই এ জন্য দায়ী।
ব্যাংকটির আইনজীবী থিয়ে দায়েপ’র বরাত দিয়ে গত মঙ্গলবার রয়টার্স বলেছে, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তার ইচ্ছাকৃত অবহেলার যে কথা বাংলাদেশী তদন্তকারী বলেছেন, তা আরসিবিসি এতদিন যা বলে আসছে তাকেই প্রমাণ করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজেদের কর্মকাণ্ডই তাদের অর্থ হারানোর কারণ। ‘তারা (বাংলাদেশ) এর দায়ভার আরসিবিসির ওপর চাপাতে পারে না, অর্থ চুরিতে যাদের কোনো দায় নেই।’ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলায় বাংলাদেশ বথ্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করা যায় কি না তা আরসিবিসি খুঁজে দেখবে বলেও জানান তিনি।
গত সোমবার সিআইডির অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ শাহ আলমের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে রয়টার্স জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তাও জড়িত বলে তারা মনে করছেন। শাহ আলম বলেন, ওই কর্মকর্তারা জেনেশুনেই ব্যাংকের কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ঝুঁকির মধ্যে রেখেছিলেন, যাতে হ্যাকাররা নিউ ইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে অর্থ চুরি করতে পারে। সন্দেহভাজন ওই কর্মকর্তাদের নাম না বললেও তাদের ‘শিগগিরই’ গ্রেফতার করা হবে বলে জানিয়েছেন সিআইডির এ কর্মকর্তা।
প্রসঙ্গত, রিজার্ভ চুরির পর সরকার গঠিত বিশেষ তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে রিজার্ভ চুরির বিষয়টি আবার সামনের দিকে চলে আসে।
ফিলিপাইনে জুয়ার আসরে যাওয়া আট কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে দেড় কোটি ডলার স্বপ্রণোদিত হয়ে কিং অং নামক এক জুয়ার কারবারি ওই দেশের তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কাছে ফিরিয়ে দেন। এ অর্থ গত নভেম্বরে ফিলিপাইন সরকার সে দেশের উচ্চ আদালতের নির্দেশে বাংলাদেশ ব্যাংককে ফেরত দিয়েছে।
এ ঘটনার পর বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সবাই আশা করছিল, বাকি রিজার্ভ চুরির বাকি অংশও সহজেই ফিরে আসবে। বাকি অর্থ ফেরত আনার দেনদরবার করতে গত মাসে আইনমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল ফিলিপাইনে গিয়েছিল। কিন্তু তারা শূন্য হাতে ফিরে এসেছে। ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংক জানিয়ে দেয় তারা বাংলাদেশ ব্যাংককে আর কোনো অর্থ ফেরত দেবে না। যদিও ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজাল ব্যাংককে দায়িত্ব অবহেলার জন্য ২০ কোটি ডলার জরিমানা করেছিল এবং জরিমানার অর্থ পরিশোধও করেছে ব্যাংকটি।
চলতি মাসের শুরুতেই ফিলিপাইন সরকার রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ সরকার গঠিত বিশেষ তদন্ত কমিটির ফল জানতে চায়। তাদের যুক্তি হলো চুরি যাওয়া অর্থ দ্রুত উদ্ধারে সহায়তার জন্য এ রিপোর্টটি তাদের প্রয়োজন। দেশটির অর্থমন্ত্রী কার্লোস ডমিনগেজের এক বিবৃতিকে উদ্ধৃত করে গত রোববার রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। বাংলাদেশের চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারে ফিলিপিন্স সরকারের পক্ষে যা যা করা সম্ভব তা করা হবে বলেও আশ্বাস দেন রডরিগেজ। তবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাফ জানিয়ে দেন রিজার্ভ চুরির তদন্ত প্রতিবেদন ফিলিপাইনকে দেয়া হবে না। এটি আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।