নিউজ ডেস্ক:
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত অভিবাসন নীতির খপ্পরে পড়েছেন তার স্ত্রী মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প! মেলানিয়ার অভিবাসন সংক্রান্ত নথিপত্র প্রকাশের জন্য হোয়াইট হাউসের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটর ন্যান্সি স্কিনার।
গত সপ্তাহে ক্যালিফোর্নিয়ার রাজ্যভবনে রাজ্য সিনেটের নেতা টেম কেভিন ডি লিও এবং স্পিকার অ্যান্থনি রেনডনের উপস্থিতিতেই ন্যান্সি এই দাবি তোলেন।
মার্কিন পত্রিকা পলিটিকো বলছে, ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির প্রতি আপত্তি জানিয়ে, বিশেষত ‘অভিবাসীদের অভয়ারণ্য’ হিসেবে পরিচিত রাজ্যগুলোর বরাদ্দ তহবিল কমিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদেই এই আহ্বান জানান স্কিনার।
পলিটিকোর খবরে বলা হয়, গত বছরের নভেম্বরে বার্তা সংস্থা এপির এক অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে যে মেলানিয়া ট্রাম্পের অভিবাসনের সপক্ষে পর্যাপ্ত নথিপত্র নেই। দুই দশকেরও বেশি সময় আগে মেলানিয়া মাতৃভূমি স্লোভেনিয়া ছেড়ে মডেল হিসেবে আমেরিকায় এসেছিলেন। এর জন্য তাকে কর্মী হিসেবে ভিসা নিতে হয়েছিল। কিন্তু তার ভিসা যথাযথ ছিল না।
পলিটিকোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্কিনার বলেন, ‘ট্রাম্পের পক্ষ থেকে মেলানিয়ার এমন কোনো নথি প্রকাশ করা হয়নি যার মাধ্যমে বোঝা যায় যে মেলানিয়া কী অবস্থায় ছিলেন বা আদৌ তার কাজ করার মতো পূর্ণ বৈধতা ছিল কিনা। ’
স্কিনার এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন গত বছরের আগস্ট মাসে ট্রাম্পের দেওয়া প্রতিশ্রুতির কথা। ট্রাম্প বলেছিলেন যে তার স্ত্রী মেলানিয়া নির্বাচনের আগেই একটি সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাবেন। কিন্তু সেই সংবাদ সম্মেলন আর অনুষ্ঠিত হয়নি। ট্রাম্প এখন অভিবাসী প্রসঙ্গে যে ধরনের নীতিমালা গ্রহণ করছেন তা উপযুক্ত নথিপত্র না থাকা হাজার হাজার অভিবাসীর নিজ দেশে ফেরত যাওয়ার কারণ হতে পারে। অভিবাসীদের এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি করার জন্য দায়ী ট্রাম্প। তাই তার স্ত্রীর অভিবাসনের নথিপত্র নিয়ে যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, তাকে ‘অপর্যাপ্ত’ বলে অভিহিত করেছেন স্কিনার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হোয়াইট হাউসের কাছ থেকে তাৎক্ষণিক কোনও প্রতিক্রিয়া পায়নি পলিটিকো। তবে রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটির সদস্য, সান ফ্রান্সিসকোর অ্যাটর্নি হারমিট ডিলন বলেছেন, স্কিনারের এই আহ্বান ‘অনুপযুক্ত’ ও ‘সস্তা জনপ্রিয়তার কৌশল’ যা ‘ক্যালিফোর্নিয়ার একজন আইনপ্রণেতার মর্যাদার জন্য হানিকর। ’
মেলানিয়া ট্রাম্পের অভিবাসনের নথিপত্র প্রকাশের আহ্বানকে ‘লৈঙ্গিক দিক থেকে বৈষম্য হয়রানিমূলক’ অভিহিত করে ডিলন বলেন, ‘আমার মনে হয় না প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নীতিমালার সঙ্গে তার স্ত্রীকে জড়ানো ঠিক কাজ। ‘
অন্যদিকে, অভিবাসনবিষয়ক অ্যাটর্নি ও মার্কিন অভিবাসনবিষয়ক আইনজীবীদের সংগঠন আমেরিকান ইমিগ্রেশন ল’ইয়ারস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডেভিড লিওপোল্ড বলছেন, ট্রাম্প যে অভিবাসন নীতি গ্রহণ করেছেন তার প্রেক্ষিতে ফার্স্ট লেডির অভিবাসন ইতিহাসকে টেনে আনায় দোষের কিছু নেই। এপি’র অনুসন্ধানে এবং পলিটিকোর এর আগের এক প্রতিবেদনেও তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন, মেলানিয়া ট্রাম্প কাজ করার উপযোগী না নিয়েই আমেরিকায় এসেছিলেন কিনা। আর তিনি সেটা করে থাকলে সেটা ছিল প্রতারণা।
গত সপ্তাহে ট্রাম্প যে নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন তাতে বলা হয়েছে, কোনো অভিবাসী প্রতারণা করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। লিওপোল্ড বলেন, ‘এটাই তাদের জন্য ভালো হবে যে তারা মেলানিয়ার ফাইল সবার সামনে প্রকাশ করে দিক, যেন আমরা জানতে পারি যে তার (ট্রাম্প) পরিবারও অভিবাসনের আইন মেনেই চলেছে। ’
আলামেডা কাউন্টির রিপাবলিকান প্রধান সু ক্যারো অবশ্য ক্ষুব্ধ স্কিনারের দাবির ঘটনায়। তিনি এই দাবিতে ‘আবর্জন ‘ অভিহিত করে টুইটও করেন।
প্রসঙ্গত, শরণার্থী ও অভিবাসী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জানিয়ে ট্রাম্পের নতুন নির্বাহী আদেশের কয়েক দিনের মধ্যেই মেলানিয়ার অভিবাসনবিষয়ক নথিপত্র প্রকাশের দাবি তুললেন স্কিনার।
গত শুক্রবার ট্রাম্পের সই করা ওই আদেশে ইরান, ইরাক, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া ও ইয়েমেনের নাগরিকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ওপর ৯০ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এছাড়া চার মাসের জন্য সব ধরনের শরণার্থী এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য সিরিয়ান শরণার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেন ট্রাম্প। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের জন্য অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত কয়েকটি রাজ্যেও তিনি বরাদ্দ কমিয়ে দেন।