নিউজ ডেস্ক:
গুলাম মহম্মদ বা ‘দ্য গ্রেট গামা’ ভারতের মাটিতে অনেক পালোয়ানকে চোখের পলকেই পরাজিত করে ফেলতেন। দেশের মাটিতে তিনি অনেক পালোয়ানকে দৈহিক কসরত দেখিয়েছেন৷ একবারে কয়েক হাজার বুক ডন দেওয়া ছিল তার প্রতিদিনের শরীরচর্চার অঙ্গ৷ তার নিত্যদিনের খাবারের তালিকায় ছিল ছটি দেশি মুরগি, দশ লিটার দুধ, হাফ লিটার ঘি ও আমন্ডের মিশ্রণ৷
ব্রিটিশের দখলে থাকা ভারতবর্ষে পাঞ্জাবের অমৃতসরে ১৮৭৮ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন গুলাম মহম্মদ৷ ছোটো থেকেই শরীরচর্চার প্রতি ছিল তার গভীর টান৷ বিখ্যাত বডি বিল্ডার ব্রুশ লিকে নিজের এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা হিসেবে মানতেন গুলাম মহম্মদ৷ প্রথমে নিজের বাবা মহম্মদ আজিজ বক্সের কাছেই অনুশীলন করতেন তিনি৷ দশবছর বয়সেই তিনি জয় করে নিয়েছিলেন বিভিন্ন স্থানীয় প্রতিযোগিতা৷ ফলে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে তার নাম৷ তবে ১৮৯৫ সালে কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পরতে হয় তাকে৷ একটি প্রতিযোগিতায় তাকে লড়াতে হয় ‘রুস্তম-ই-হিন্দ’ নামে খ্যাত রহিম বক্স সুলতানিওয়ালার সঙ্গে৷ ৬ ফুট ৯ ইঞ্চির দৈত্যাকার রহিমের সঙ্গে ৫ ফুট ৭ ইঞ্চির গুলামের লড়াই অমীমাংসিত রয়ে যায়৷
বেড়ে যায় গামার কদর৷ সর্বত্র জয় জয়কার পরে যায়৷ এরপরে একের পর এক প্রতিযোগিতার তৎকালীন ভারতের নাম করা পালোয়ানদের পরাজিত করতে থাকেন গামা৷ ১৮৯৮ সালে গুলাম মহিউদ্দিন, ১৯০২ সালে ভোপালের প্রতাপ সিং, ১৯০৪ সালে ইন্দোরের আলি বাবা সাইন ও ১৯০৭ সালে মুলতানের হাসান বক্স৷ এরপর আবারও তার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রহিম বক্স সুলতানিওয়ালার মুখোমুখি হয়েছিলেন গুলাম মহম্মদ কিন্তু এবারও প্রতিযোগিতা অমীমাংসিত থাকে৷
এরপরে ভারতে অপরাজিত থেকে গামা ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্যে রওনা দেন৷ কিন্তু উচ্চতা কম থাকার কারণে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় তাকে৷ থেমে যাননি তিনি৷ হুঁশিয়ারি দেন যে ইংল্যান্ডের যেকোনও ব্রিটিশ পালোয়ান ত্রিশ মিনিটে পরাজিত করতে পারেন তিনি৷ এমনকি সেই সময়ে ইংল্যান্ডের নামকরা পালোয়ান স্টেনিশলাস জোবিশকো ও ফ্রাঙ্ক গোটচকে৷ কিন্তু স্টেনিশলাস ছাড়া আর কেউ তার সঙ্গে লড়তে সাহস দেখাননি৷ ১৯১০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর স্টেনিশলাসের সঙ্গে রেশলিং রিংয়ে মুখোমুখি হন গামা৷ সবাইকে অবাক করে এক মিনিটেরও কম সময়ে স্টেনিশলাসকে কাবু করে ফেলেছিলেন গামা এবং পরবর্তী ২ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট একইভাবে স্টেনিশলাসকে কাবু করে রেখেছিলেন৷ প্রতিযোগিতা থেকে যায় অমিমাংসীত৷ সেই মাসেরই ১৯ তারিখ আবারও গামার মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল স্টেনিশলাসের৷ কিন্তু গামার সঙ্গে লড়াইয়ের ময়দানে আর নামতে চাননি তিনি৷ ফলে প্রথম ভারতীয় রেশলার হিসেবে ওয়ার্ল্ড হেভিওয়েট টাইটেলের বিজয়ী হন গুলাম মহম্মদ, পান রুস্তম-ই-জামানা ফেতাব৷
১৯১১ সালে আবারও তার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রহিম বক্স সুলতানিওয়ালার সঙ্গে লড়াইয়ে নামেন গুলাম মহম্মদ৷ তবে এবার আর অমীমাংসিত রইল না খেলা জয়ী হন গুলাম মহম্মদ৷ ১৯২৯ সালে সুইডিশ পালোয়ান জিশেস পিটারশনের বিরুদ্ধে শেষবারের মত রেশলিংয়ের রিংয়ে নামেন তিনি৷ তারপরে ইতিটানেন নিজের পঞ্চাশ বছরের রেশলিং কেরিয়ারে৷ ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা লাভের পরে পাকিস্তানে বসবাস করতে শুরু করেন তিনি৷ তবে শেষ বয়সে অর্থারাইটিসে ভুগে ১৯৬৩ সালে মৃত্যু হয় গুলাম মহমম্দের৷ শেষ হয় ভারতের মাটিতে জন্মান এক বীর পালোয়ান ‘দ্য গ্রেট গামা’র জীবন৷