নিউজ ডেস্ক:আলমডাঙ্গায় পরকীয়ার কারণে আত্মহত্যার সংখ্যা বাড়ছে। গতকাল মঙ্গলবার পরকীয়ায় জের ধরে উপজেলার বিনোদপুর গ্রামের এক গৃহবধূ বিষপান করে আত্মহত্যা করেছেন। এ নিয়ে গত ৭ মাসে (জানুয়ারি-জুলাই) আলমডাঙ্গায় ২৭ জন নারী-পুরুষ আত্মহত্যা করলেন। প্রতিটি আত্মহত্যার পিছনে রয়েছে ভিন্ন গল্প। সাধারণত একজন মানুষ নানা কারণে আত্মহত্যা করে থাকেন। এর মধ্যে ব্যক্তিত্ব সমস্যা, গুরুতর মানসিক রোগ, মাদকাসক্ত, ডিপ্রেশন ও প্ররোচনা অন্যতম।
২০১৮ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ লাখ ৩৯ দশমিক ৬ জন আত্মহত্যা করে। অন্যান্য দেশে ছেলেদের আত্মহত্যার হার বেশি হলেও বাংলাদেশে নারীদের মধ্যে এর হার বেশি। সাধারণত কম বয়সী মেয়েদের মধ্যে এর প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। স্বল্প শিক্ষা, দারিদ্র্য, দাম্পত্য কলহের জন্য অনেকে আত্মহত্যা করে। এ ছাড়াও প্রেম-সম্পর্কিত জটিলতা, আর্থিক অনটন, দীর্ঘস্থায়ী রোগ ও পারিবারিক দ্বন্দ্ব আত্মহত্যার পেছনের অন্যতম কারণ।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে গলায় ফাঁস লাগিয়ে এক নারী এবং বিষপান করে একজন পুরুষ আত্মহত্যা করেন। ফেব্রুয়ারি মাসে তিনজন নারী ও একজন পুরুষ গলায় ফাঁস লাগিয়ে এবং একজন পুরুষ বিষপান করে আত্মহত্যা করেন। মার্চ মাসে তিনজন নারী ও চারজন পুরুষ গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। এপ্রিল মাসে একজন নারী ও দুজন পুরুষ, মে মাসে চারজন নারী ও দুজন পুরুষ এবং জুন মাসে একজন নারী ও দুজন পুরুষ আত্মহত্যা করেন। এ ছাড়াও ৭ জুলাই আলমডাঙ্গায় পরকীয়ার জেরে পল্লি চিকিৎসক মোশারেফ হোসেন ও মালয়েশিয়াপ্রবাসীর স্ত্রী পারুলা বেগম নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন। এ ঘটনাটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয় উপজেলাজুড়ে। আবারও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে আলমডাঙ্গায়। গতকাল মঙ্গলবার আলমডাঙ্গা উপজেলার ডাউকী ইউনিয়নের বিনোদপুর গ্রামের আলম হোসেনের স্ত্রী বর্ষা খাতুন (২১) বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন। এ ঘটনায় বেরিয়ে আসে পরকীয়ার গুঞ্জন। এ নিয়ে ৭ মাসে মোট ২৭ জন আত্মহত্যা করেছেন। হিসাব অনুযায়ী, আলমডাঙ্গায় প্রতি সাত দিনে একজন করে আত্মহত্যা করে থাকেন।
বর্তমানে আলমডাঙ্গা উপজেলা আত্মহত্যার প্রবণতার দিক থেকে পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর তুলনায় এগিয়ে এবং শীর্ষে অবস্থান করছে। দিনের পর দিন আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পেলেও সামাজিকভাবে এটি রোধের ব্যাপারে নেই কোনো উদ্যোগ।
তবে এসব আত্মহত্যার ঘটনা লুকানোর জন্য থানায় করা হয় অপমৃত্যুর মামলা। উল্লেখ করা হয়, আত্মহত্যাকারী মানসিক রোগী। কিন্তু সঠিকভাবে পরিবারের লোকেরা আত্মহত্যাকারীর ডাক্তারি পরীক্ষা দেখাতে ব্যর্থ হন প্রশাসনের নিকট। বিশিষ্টজনেরা দাবি করেন, এসব আত্মহত্যার ঘটনায় জড়িত অধিকাংশ নারী-পুরুষের বয়স সাধারণত ১৬ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। তবে অনেক ক্ষেত্রে বয়স্ক ব্যক্তি বা বৃদ্ধরা তাঁদের মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন।
এ ছাড়া বর্তমানে অধিকাংশ তরুণ-তরুণীর আত্মহত্যার ঘটনা আবেগতাড়িত হয়ে সংঘটিত। পারিবারিক বিবাহের কারণে পরকীয়ার সম্পর্কে জড়িয়ে আত্মহত্যার সংখ্যা বর্তমানে ভয়ানক রূপ ধারণ করছে। তবে ঋণের বোঝার কারণেও অনেক পুরুষ আত্মহত্যা করে থাকেন বলে জানা গেছে।