বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর একের পর এক মামলা দায়ের হচ্ছে কয়রায় । এবার খুলনার কয়রা উপজেলায় দীর্ঘ এক যুগ পর জামায়াতে ইসলামির এক কর্মী হত্যার ঘটনায় আদালতে কয়রায় ৬ সাংবাদিকের নামে মামলা হয়েছ। বৃহস্পতিবার নিহত জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী ছবিরন নেছা বাদী কয়রা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলা র আবেদন করেন। আদালত শুনানি শেষে আবেদনটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করতে কয়রা থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন। আজ শুক্রবার কয়রা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পেশকার মাইনুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে কয়রা থানায় এফআইআর করতে আদেশ দেয়।
এ মামলায় খুলনা-৬ আসনের সাবেক দুই সংসদ সদস্য,আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে সঙ্গে ৬ সাংবাদিককেও আসামি করে ১১৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মামলায় উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন,খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) সোহরাব আলী, আক্তারুজ্জামান,কয়রা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম, কয়রা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাহারুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিজয় কুমার, সহসভাপতি আবদুস সাত্তার পাড়, আইনজীবী আরাফাত হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক প্রমূখ।
৬ সাংবাদিক হলেন , দৈনিক ভোরের কাগজের কয়রা প্রতিনিধি শেখ সিরাজুদ্দৌলা লিংকন , কয়রা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন ,দৈনিক যায় যায় দিনের মাস্টার হাবিবুল্লাহ ,দৈনিক কালের কণ্ঠ ও পূর্বাঞ্চলের ওবায়দুল কবির সম্রাট, দৈনিক খুলনা অঞ্চলের শাহাজান সিরাজ ,আজকের দর্পনের তারিক লিটু ।
এ অবস্থায় গ্রেফতার ও হয়রানি এড়াতে পরিবার ফেলে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন এই ৬ সাংবাদিক।এতে করে একদিকে তাদের পেশা হুমকির মুখে পড়েছে; অন্যদিকে তাদের অনুপস্থিতিতে পরিবারের সদস্যরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ভুক্তভোগী এসব পরিবারের সদস্যরা সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে সাংবাদিকদের এসব হয়রানিমূলক মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
হত্যা মামলায় সাংবাদিকদের নাম আসায় কয়রা উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের সাংবাদিক নেতা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এ ধরনের হয়রানি মূলক মামলা থেকে পেশাদার সাংবাদিকদের অবিলম্বে অব্যাহতি দেওয়ার আহ্বান জানান ।
মামলার এজাহারে জানা গেছে, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের উদ্যোগে কয়রা সদরে মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ওই সমাবেশ শেষে বাড়ি ফেরার পথে উপজেলার জালালের মোড়ে আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতৃত্বে হামলা হয়। হামলায় কমপক্ষে ২৯ জন আহত হন। এর মধ্যে মামলার বাদীর স্বামী জাহিদুল ইসলাম ঘটনাস্থলেই নিহত হন। সে সময় আহতদেরও হাসপাতালে নিতেও বাঁধা দেয় আওয়ামীলীগ কর্মীরা।
মামলার ৩৯ নং আসামি কালের কণ্ঠের সাংবাদিক ওবায়দুল কবির সম্রাট বলেন,২০১৩ সালের হত্যা মামলার এজাহারে তার নামে দেখে তিনি হতবাক ।তিনি বলেন আমি সে সময় আমার বয়স ১৬ বছর তখন আমি এইচএসসির ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী ।আমি কখনও কোন রাজনীতিনির সাথে জড়িত ছিলাম না ।ঘটনার বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা । উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে আমার নাম দিয়ে হয়রানি করছে একটি মহল।তিনি সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
মামলার ৫২ নম্বর আসামি কয়রা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মামলায় উল্লিখিত ঘটনার সময় আমি খুলনা জেলা শহরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলাম। ঘটনার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। মামলায় আমার নাম থাকাটা বিব্রতকর।’
মামলার বাদী ছবিরন নেছা জানান, তাঁর স্বামী জাহিদুল ইসলাম দিন মজুরি কাজ করতেন। তার স্বামীর মৃত্যুতে তাদের পরিবারে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে । আগে মামলা করতে সাহস পাননি বলে স্বামী হত্যার বিচারের দাবিতে মামলাটি করেছেন এখন ।মামলায় সাংবাদিকদের নাম থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান স্থানীয় রাজনৈতিনক ও জনপ্রতিনিধিদের পরামর্শে মামলা করেছেন।কে সাংবাদিক কে রাজনৈতিক নেতা তিনি অধিকাংশ মামলার আসামিদের চেনেন না ।এ বিষয়ে তিনি আর কোন মন্তব্য করতে চান না বলে মুঠো ফোন জানান ।
কয়রা প্রেস ক্লাবের সভাপতি শেখ হারুনর রশিদ বলেন ,কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে খুনের সঙ্গে জড়িত থাকা বা অন্য বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও প্রমাণ থাকলে সে অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ঢালাওভাবে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দেওয়া গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সংকুচিত করবে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই ।