প্রেমের বিয়ে মেনে না নেওয়ায়, শশুরবাড়ির সদস্যদের ওপর চেয়ারম্যানের হামলা

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে মেয়ের বিয়েকে কেন্দ্র করে মেয়ের শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের বাসায় তুলে এনে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে এক ইউপি চেয়ারম্যান ও তার পরিবারের লোকজনের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যানের নাম হারুন অর রশিদ। তিনি একই সাথে উপজেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ঘটনাটি ঘটে চিলাহাটি ইউনিয়নের তিস্তাপাড়া এলাকায়।

এই ঘটনায় দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গুরুতর আহত অবস্থায় ভর্তি হয়েছেন-আব্দুস সাত্তার, তার স্ত্রী ফরিদা বেগম, ছেলে খোকন বাবু ও তার চার মাসের অন্তসত্ত্বা স্ত্রী রেহেনা খাতুন। বুধবার (২৬ মার্চ) ফরিদা বেগমের উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।

মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) আব্দুস সাত্তার বাদী হয়ে হারুন অর রশিদকে প্রধান আসামী করে ৮ জনের নামে দেবীগঞ্জ থানায় এজাহার দায়ের করেন।

মামলার এজাহার ও ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আব্দুস সাত্তারের বড় ছেলে মোস্তাকিম ইসলাম ১ নং চিলাহাটি ইউপি চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদের মেয়ে সিফাতে সাদিয়া সুহার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। দুই পরিবারের অগোচরে ২০২১ সালে মোস্তাকিম ও সুহা বিয়ে করেন। বিষয়টি সম্প্রতি জানাজানি হয়, বিয়ের বিষয়টি মেয়ের পরিবার থেকে মেনে না নেওয়ায় প্রায় ২০ দিন আগে মোস্তাকিম ও সুহা বাড়ি ছেড়ে চলে যান। পরে মেয়ের বাবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় মেয়েকে উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে আসেন। এরপর সোমবার (২৪ মার্চ) সুহা ও মোস্তাকিম বাড়িতে কিছু না জানিয়ে আবারো বাড়ি ছেলে চলে যান।

বিষয়টি সুহার পরিবার জানতে পেরে গতকাল রাত ৯ টায় চেয়ারম্যানের নির্দেশে তার লোকজন মোস্তাকিমের বাসায় গিয়ে তার বাবা-মায়ের কাছে মোস্তাকিমের অবস্থান জানতে চায়। কিন্তু তারা মোস্তাকিমের অবস্থান জানেন না বলে জানালে, বাসায় থাকা বাবা-মা ও তার ভাবিকে জোর করে তুলে আনা হয় চেয়ারম্যানের ভাই নূর হোসেনের বাসায়। এরপর মেয়ের সন্ধান চেয়ে তাদেরকে বেধড়ক মারধর শুরু করে চেয়ারম্যানের লোকজন। এতে মোস্তাকিমের মাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে দুই হাত ভেঙ্গে দেয়। মোস্তাকিমের ছোট ভাইয়ের চার মাসের অন্তসত্ত্বা স্ত্রীকে এসময় পেটে ও পিঠে আঘাত করা হয়। একই সাথে ছোট ভাই খোকনকে ভাউলাগঞ্জ বাজারে তার কর্মস্থল থেকে কৌশলে ঘটনাস্থলে ডেকে এনে বস্তাবন্দী করে তার পিঠ ও নিতম্বে বেধড়ক মারধর করা হয়।

পরে বিষয়টি জানতে পেরে খোকনের শ্বশুর হোসেন আলী ৯৯৯ এ কল করেন এবং দেবীগঞ্জ থানাকে অবগত করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ভুক্তভোগীদের উদ্ধার করে। এরপর গুরুতর আহত অবস্থায় মঙ্গলবার ভোরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন চারজন। বর্তমানে তারা চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

মুঠোফোনে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চিলাহাটি ইউপি চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ শুরুতে বলেন, সাজানো নাটক, আবার থাকতেও পারে কিছু সত্য, চুরি করে বিয়ে করলে করতে পারে, অভিযোগ হয়েছে শুনেছি, আইনে যা হয় হবে।

এদিকে চেয়ারম্যানের ছোট ভাই নূর ইসলাম প্রতিবেদককে জানান, মারপিট করেছে আমার ইমিডিয়েট বড়ো ভাই এবং এলাকার কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী, তবে খুব বেশি না।

ডা: স্বপূর্ণ কুমার সাহা, মেডিকেল অফিসার, দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স তিনি বলেন, গত ২৫ তারিখে মারপিটের ঘটনার চার জন রোগী আসে এর মধ্যে ফরিদা বেগম (৪১) এক্সরে করে দেখা যায় দুটি হাত ভেঙেছে এবং রেহানা খাতুন (২১) কে মারপিটের
আঘাতে তার গর্ভে থাকা চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা সন্তানটি নষ্ট হয়ে গেছে । রেহানা খাতুনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গাইনি ও অবস বিভাগে রেফার্ড করা হয়।

দেবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সোয়েল রানা বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগে কিছুটা ত্রুটি রয়েছে। সংশোধন করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

প্রেমের বিয়ে মেনে না নেওয়ায়, শশুরবাড়ির সদস্যদের ওপর চেয়ারম্যানের হামলা

আপডেট সময় : ০৯:০৪:৫৫ অপরাহ্ণ, বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে মেয়ের বিয়েকে কেন্দ্র করে মেয়ের শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের বাসায় তুলে এনে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে এক ইউপি চেয়ারম্যান ও তার পরিবারের লোকজনের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যানের নাম হারুন অর রশিদ। তিনি একই সাথে উপজেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ঘটনাটি ঘটে চিলাহাটি ইউনিয়নের তিস্তাপাড়া এলাকায়।

এই ঘটনায় দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গুরুতর আহত অবস্থায় ভর্তি হয়েছেন-আব্দুস সাত্তার, তার স্ত্রী ফরিদা বেগম, ছেলে খোকন বাবু ও তার চার মাসের অন্তসত্ত্বা স্ত্রী রেহেনা খাতুন। বুধবার (২৬ মার্চ) ফরিদা বেগমের উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।

মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) আব্দুস সাত্তার বাদী হয়ে হারুন অর রশিদকে প্রধান আসামী করে ৮ জনের নামে দেবীগঞ্জ থানায় এজাহার দায়ের করেন।

মামলার এজাহার ও ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আব্দুস সাত্তারের বড় ছেলে মোস্তাকিম ইসলাম ১ নং চিলাহাটি ইউপি চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদের মেয়ে সিফাতে সাদিয়া সুহার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। দুই পরিবারের অগোচরে ২০২১ সালে মোস্তাকিম ও সুহা বিয়ে করেন। বিষয়টি সম্প্রতি জানাজানি হয়, বিয়ের বিষয়টি মেয়ের পরিবার থেকে মেনে না নেওয়ায় প্রায় ২০ দিন আগে মোস্তাকিম ও সুহা বাড়ি ছেড়ে চলে যান। পরে মেয়ের বাবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় মেয়েকে উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে আসেন। এরপর সোমবার (২৪ মার্চ) সুহা ও মোস্তাকিম বাড়িতে কিছু না জানিয়ে আবারো বাড়ি ছেলে চলে যান।

বিষয়টি সুহার পরিবার জানতে পেরে গতকাল রাত ৯ টায় চেয়ারম্যানের নির্দেশে তার লোকজন মোস্তাকিমের বাসায় গিয়ে তার বাবা-মায়ের কাছে মোস্তাকিমের অবস্থান জানতে চায়। কিন্তু তারা মোস্তাকিমের অবস্থান জানেন না বলে জানালে, বাসায় থাকা বাবা-মা ও তার ভাবিকে জোর করে তুলে আনা হয় চেয়ারম্যানের ভাই নূর হোসেনের বাসায়। এরপর মেয়ের সন্ধান চেয়ে তাদেরকে বেধড়ক মারধর শুরু করে চেয়ারম্যানের লোকজন। এতে মোস্তাকিমের মাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে দুই হাত ভেঙ্গে দেয়। মোস্তাকিমের ছোট ভাইয়ের চার মাসের অন্তসত্ত্বা স্ত্রীকে এসময় পেটে ও পিঠে আঘাত করা হয়। একই সাথে ছোট ভাই খোকনকে ভাউলাগঞ্জ বাজারে তার কর্মস্থল থেকে কৌশলে ঘটনাস্থলে ডেকে এনে বস্তাবন্দী করে তার পিঠ ও নিতম্বে বেধড়ক মারধর করা হয়।

পরে বিষয়টি জানতে পেরে খোকনের শ্বশুর হোসেন আলী ৯৯৯ এ কল করেন এবং দেবীগঞ্জ থানাকে অবগত করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ভুক্তভোগীদের উদ্ধার করে। এরপর গুরুতর আহত অবস্থায় মঙ্গলবার ভোরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন চারজন। বর্তমানে তারা চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

মুঠোফোনে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চিলাহাটি ইউপি চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ শুরুতে বলেন, সাজানো নাটক, আবার থাকতেও পারে কিছু সত্য, চুরি করে বিয়ে করলে করতে পারে, অভিযোগ হয়েছে শুনেছি, আইনে যা হয় হবে।

এদিকে চেয়ারম্যানের ছোট ভাই নূর ইসলাম প্রতিবেদককে জানান, মারপিট করেছে আমার ইমিডিয়েট বড়ো ভাই এবং এলাকার কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী, তবে খুব বেশি না।

ডা: স্বপূর্ণ কুমার সাহা, মেডিকেল অফিসার, দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স তিনি বলেন, গত ২৫ তারিখে মারপিটের ঘটনার চার জন রোগী আসে এর মধ্যে ফরিদা বেগম (৪১) এক্সরে করে দেখা যায় দুটি হাত ভেঙেছে এবং রেহানা খাতুন (২১) কে মারপিটের
আঘাতে তার গর্ভে থাকা চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা সন্তানটি নষ্ট হয়ে গেছে । রেহানা খাতুনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গাইনি ও অবস বিভাগে রেফার্ড করা হয়।

দেবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সোয়েল রানা বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগে কিছুটা ত্রুটি রয়েছে। সংশোধন করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।