বুধবার | ৩ ডিসেম্বর ২০২৫ | হেমন্তকাল
শিরোনাম :
Logo খুবিতে রফিক আজম ট্রাভেল স্কলারশিপ চালুর লক্ষ্যে এমওইউ স্বাক্ষর Logo খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় সোনালী ব্যাংক এমপ্লয়ীজ এসোসিয়েশন সিবি’এর দোয়া মাহফিল Logo জলবায়ু সহিষ্ণু ফসল উৎপাদনে বাংলাদেশের কৃষকদের সক্ষম করে তুলতে হবে— আন্তর্জাতিক সেমিনারে নোবিপ্রবি উপাচার্য Logo পুলিশের অভিযানে পলাশবাড়ীতে চোরাই মাল উদ্ধার : দুই ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী আটক Logo পলাশবাড়ীতে জুলাই যোদ্ধার বাবার প্রভাব খাটিয়ে জমি দখলের অভিযোগ Logo পর্যটক সেন্টমার্টিন পৌঁছলে ফুল দিয়ে পর্যটকদের বরণ Logo বিএনপি চেয়ারপার্সনের রোগমুক্তি ও সুস্থতা কামনায় জীবননগরে ছাত্রদল ও শ্রমিকদের দোয়া Logo জাতীয় নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নিরাপত্তা জোরদারে ব্যাপক প্রস্তুতি সরকারের Logo কারুবাক পাণ্ডুলিপি পুরস্কার পেলেন এইচএম জাকির Logo চাঁদপুরে নতুন খাবারের আকর্ষণ ‘কাচ্চি ডাইন’ গ্রাহকদের ভিড় বেড়েই চলছে

টোল আদায়ে তুঘলকি

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ০৮:৫৮:৫৩ পূর্বাহ্ণ, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪
  • ৭৭৫ বার পড়া হয়েছে

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা-গোমতী, চট্টগ্রামের শাহ আমানত (কর্ণফুলী), ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জসহ দেশের ২৬টি সেতুর নির্মাণ ব্যয় অনেক আগেই পূরণ হয়েছে। তবুও এগুলো থেকে টোল আদায় অব্যাহত রয়েছে। শুধু তাই নয়, সময়ের সঙ্গে টোলের হারও বাড়ানো হয়েছে। সেতু নির্মাণে জনগণের টাকায় খরচ হলেও অতিরিক্ত টোল আদায় এবং ঠিকাদার নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেতুর নির্মাণ ব্যয় উঠে যাওয়ার পরও টোল আদায় চালিয়ে যাওয়া অযৌক্তিক। একই সঙ্গে উচ্চ খরচে ঠিকাদার নিয়োগ রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয়ের শামিল।

জানা যায়, ২০১৪ সালে সওজের অধীন সড়ক, সেতু, পাতালপথ (টানেল), উড়ালসড়ক ও ফেরি থেকে টোল আদায়ে নীতিমালা প্রণয়ন করে সরকার। নীতিমালায় ২০০ মিটারের দীর্ঘ সব সেতু টোলের অন্তর্ভুক্ত বলে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া যেসব জায়গায় ফেরি চলাচল বন্ধ করে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে, ২০০ মিটারের কম দৈর্ঘ্যরে হলেও সেগুলোয় কমপক্ষে এক বছর পর্যন্ত টোল আদায়ের কথা বলা হয়েছে। নীতিমালায় বিভিন্ন শ্রেণির সড়কের ভিত্তি টোল ১০০ থেকে ৪০০ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। যানবাহনের শ্রেণি এবং সেতুর দৈর্ঘ্যরে ওপর তা বাড়ে-কমে। তবে একটি সেতু, সড়ক বা স্থাপনা থেকে কত দিন পর্যন্ত টোল তোলা হবে, নীতিমালায় তা উল্লেখ করা হয়নি।

ব্যয় উঠলেও যেসব সেতু থেকে টোল আদায় হচ্ছে : ২০০৯ সাল থেকে রূপগঞ্জের কাঞ্চন সেতুর টোল আদায় হচ্ছে। ১৯৯১ সাল থেকে মেঘনা-গোমতী, ২০১০ সাল থেকে চট্টগ্রামের শাহ আমানত, ২০০৬ সাল থেকে ঘোড়াশাল, ১৯৯১ সাল থেকে গড়াই, ২০০৩ সাল থেকে দোয়ারিকা-শিকারপুর, ১৯৯২ সাল থেকে শম্ভুগঞ্জ, ১৯৯৩ সাল থেকে মহানন্দা, ২০০০ সাল থেকে মোল্লাহাট ও ধল্লা (ভাষাশহীদ রফিক সেতু), ১৯৯১ সাল থেকে সিলেট-শেরপুরু, ২০০৮ সাল থেকে কুষ্টিয়া সৈয়দ মাসুদ রুমি, ২০০৫ সাল থেকে তুলসীখালী ও মরিচা এবং ২০০৬ সাল থেকে কাপাসিয়া ফকির মজনু শাহ সেতুর টোল আদায় হচ্ছে। এ ছাড়া ১৯৯০ সাল থেকে সিলেট লামাকাজী, ২০০৫ সাল থেকে পটুয়াখালী, ১৯৯০ সাল থেকে দিনাজপুরের মোহনপুর, ২০০৩ সাল থেকে বাগেরহাটের দড়াটানা, ২০০৫ সাল থেকে চাঁদপুর, ২০০৭ সাল থেকে শেরপুরের ব্রহ্মপুত্র, ২০০৭ সাল থেকে সিলেট পঞ্জগঞ্জ, ১৯৯৯ সাল থেকে সিলেটের শেওলা, ২০০৭ সাল থেকে হযরত শাহ পরান (রহ.), ২০০০ সাল থেকে পিরোজপুরের বলেশ্বর, ২০০৭ সাল থেকে চৌডালা ও ২০০১ সাল থেকে টাঙ্গাইল হাঁটুভাঙ্গা সেতুর টোল আদায় হচ্ছে।

কুমিল্লার লাকসাম থেকে ঢাকায় যাতায়াতকারী তিশা পরিবহনের চালক মো. ইবরাহীম বলেন, ‘মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল আদায় চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে পাঁচ বছর আগে। মেয়াদ শেষ হওয়ার দিন কমানোর চেয়ে উল্টো ৫০ টাকা বেড়েছে। আগে ছিল ৪০০ টাকা, এখন ৪৫০ টাকা টোল দিতে হচ্ছে। এ টাকা যাচ্ছে সাধারণ মানুষের পকেট থেকে। টোল আদায় বন্ধ করলে ভাড়ার টাকা অনেক কমে যাবে। সাধারণ মানুষও স্বস্তিবোধ করবে।’

ঠিকাদার নিয়োগে অনিয়ম: টোল আদায়ে ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়ায়ও নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এক্সপ্রেসওয়ের জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার একটি কোম্পানিকে দরপত্র ছাড়াই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর জন্য প্রতি বছর ৯৬ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টোল আদায়ে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে নিয়োগ দিলে খরচ অনেক কম হতো। এছাড়া, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অনেক ঠিকাদার এই কাজে নিয়োগ পেয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত: বুয়েটের পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামছুল হক বলেন, একটি সেতু থেকে আজীবন টোল আদায় যৌক্তিক নয়। টোল প্রকল্পের ব্যয় ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হওয়া উচিত। বর্তমান সরকারকে টোল আদায়ের প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।

অন্যদিকে অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বলেন, যেখানে সেতুর ব্যয় উঠে গেছে, সেখানে টোল আদায় বন্ধ করা উচিত। টোল আদায়ে দরপত্র ছাড়াই ঠিকাদার নিয়োগ করা দুর্নীতির সামিল।

সওজের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. জিকরুল হাসান বলেন, টোল আদায় সরকারের রাজস্ব আয়ের একটি খাত হিসেবে বিবেচিত। তবে যেখানে ব্যয় উঠে গেছে, সেখানে টোল আদায় বন্ধ করার বিষয়ে জনগণের প্রত্যাশা যৌক্তিক।

সরকারের উচিত টোল আদায়ের নীতিমালায় সংস্কার আনা এবং সেতুগুলোর ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। অতিরিক্ত টোলের চাপ কমিয়ে নাগরিকদের আর্থিক স্বস্তি প্রদান এবং যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করা এখন সময়ের দাবি।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

খুবিতে রফিক আজম ট্রাভেল স্কলারশিপ চালুর লক্ষ্যে এমওইউ স্বাক্ষর

টোল আদায়ে তুঘলকি

আপডেট সময় : ০৮:৫৮:৫৩ পূর্বাহ্ণ, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা-গোমতী, চট্টগ্রামের শাহ আমানত (কর্ণফুলী), ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জসহ দেশের ২৬টি সেতুর নির্মাণ ব্যয় অনেক আগেই পূরণ হয়েছে। তবুও এগুলো থেকে টোল আদায় অব্যাহত রয়েছে। শুধু তাই নয়, সময়ের সঙ্গে টোলের হারও বাড়ানো হয়েছে। সেতু নির্মাণে জনগণের টাকায় খরচ হলেও অতিরিক্ত টোল আদায় এবং ঠিকাদার নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেতুর নির্মাণ ব্যয় উঠে যাওয়ার পরও টোল আদায় চালিয়ে যাওয়া অযৌক্তিক। একই সঙ্গে উচ্চ খরচে ঠিকাদার নিয়োগ রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয়ের শামিল।

জানা যায়, ২০১৪ সালে সওজের অধীন সড়ক, সেতু, পাতালপথ (টানেল), উড়ালসড়ক ও ফেরি থেকে টোল আদায়ে নীতিমালা প্রণয়ন করে সরকার। নীতিমালায় ২০০ মিটারের দীর্ঘ সব সেতু টোলের অন্তর্ভুক্ত বলে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া যেসব জায়গায় ফেরি চলাচল বন্ধ করে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে, ২০০ মিটারের কম দৈর্ঘ্যরে হলেও সেগুলোয় কমপক্ষে এক বছর পর্যন্ত টোল আদায়ের কথা বলা হয়েছে। নীতিমালায় বিভিন্ন শ্রেণির সড়কের ভিত্তি টোল ১০০ থেকে ৪০০ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। যানবাহনের শ্রেণি এবং সেতুর দৈর্ঘ্যরে ওপর তা বাড়ে-কমে। তবে একটি সেতু, সড়ক বা স্থাপনা থেকে কত দিন পর্যন্ত টোল তোলা হবে, নীতিমালায় তা উল্লেখ করা হয়নি।

ব্যয় উঠলেও যেসব সেতু থেকে টোল আদায় হচ্ছে : ২০০৯ সাল থেকে রূপগঞ্জের কাঞ্চন সেতুর টোল আদায় হচ্ছে। ১৯৯১ সাল থেকে মেঘনা-গোমতী, ২০১০ সাল থেকে চট্টগ্রামের শাহ আমানত, ২০০৬ সাল থেকে ঘোড়াশাল, ১৯৯১ সাল থেকে গড়াই, ২০০৩ সাল থেকে দোয়ারিকা-শিকারপুর, ১৯৯২ সাল থেকে শম্ভুগঞ্জ, ১৯৯৩ সাল থেকে মহানন্দা, ২০০০ সাল থেকে মোল্লাহাট ও ধল্লা (ভাষাশহীদ রফিক সেতু), ১৯৯১ সাল থেকে সিলেট-শেরপুরু, ২০০৮ সাল থেকে কুষ্টিয়া সৈয়দ মাসুদ রুমি, ২০০৫ সাল থেকে তুলসীখালী ও মরিচা এবং ২০০৬ সাল থেকে কাপাসিয়া ফকির মজনু শাহ সেতুর টোল আদায় হচ্ছে। এ ছাড়া ১৯৯০ সাল থেকে সিলেট লামাকাজী, ২০০৫ সাল থেকে পটুয়াখালী, ১৯৯০ সাল থেকে দিনাজপুরের মোহনপুর, ২০০৩ সাল থেকে বাগেরহাটের দড়াটানা, ২০০৫ সাল থেকে চাঁদপুর, ২০০৭ সাল থেকে শেরপুরের ব্রহ্মপুত্র, ২০০৭ সাল থেকে সিলেট পঞ্জগঞ্জ, ১৯৯৯ সাল থেকে সিলেটের শেওলা, ২০০৭ সাল থেকে হযরত শাহ পরান (রহ.), ২০০০ সাল থেকে পিরোজপুরের বলেশ্বর, ২০০৭ সাল থেকে চৌডালা ও ২০০১ সাল থেকে টাঙ্গাইল হাঁটুভাঙ্গা সেতুর টোল আদায় হচ্ছে।

কুমিল্লার লাকসাম থেকে ঢাকায় যাতায়াতকারী তিশা পরিবহনের চালক মো. ইবরাহীম বলেন, ‘মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল আদায় চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে পাঁচ বছর আগে। মেয়াদ শেষ হওয়ার দিন কমানোর চেয়ে উল্টো ৫০ টাকা বেড়েছে। আগে ছিল ৪০০ টাকা, এখন ৪৫০ টাকা টোল দিতে হচ্ছে। এ টাকা যাচ্ছে সাধারণ মানুষের পকেট থেকে। টোল আদায় বন্ধ করলে ভাড়ার টাকা অনেক কমে যাবে। সাধারণ মানুষও স্বস্তিবোধ করবে।’

ঠিকাদার নিয়োগে অনিয়ম: টোল আদায়ে ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়ায়ও নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এক্সপ্রেসওয়ের জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার একটি কোম্পানিকে দরপত্র ছাড়াই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর জন্য প্রতি বছর ৯৬ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টোল আদায়ে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে নিয়োগ দিলে খরচ অনেক কম হতো। এছাড়া, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অনেক ঠিকাদার এই কাজে নিয়োগ পেয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত: বুয়েটের পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামছুল হক বলেন, একটি সেতু থেকে আজীবন টোল আদায় যৌক্তিক নয়। টোল প্রকল্পের ব্যয় ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হওয়া উচিত। বর্তমান সরকারকে টোল আদায়ের প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।

অন্যদিকে অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বলেন, যেখানে সেতুর ব্যয় উঠে গেছে, সেখানে টোল আদায় বন্ধ করা উচিত। টোল আদায়ে দরপত্র ছাড়াই ঠিকাদার নিয়োগ করা দুর্নীতির সামিল।

সওজের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. জিকরুল হাসান বলেন, টোল আদায় সরকারের রাজস্ব আয়ের একটি খাত হিসেবে বিবেচিত। তবে যেখানে ব্যয় উঠে গেছে, সেখানে টোল আদায় বন্ধ করার বিষয়ে জনগণের প্রত্যাশা যৌক্তিক।

সরকারের উচিত টোল আদায়ের নীতিমালায় সংস্কার আনা এবং সেতুগুলোর ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। অতিরিক্ত টোলের চাপ কমিয়ে নাগরিকদের আর্থিক স্বস্তি প্রদান এবং যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করা এখন সময়ের দাবি।