বর্ণাঢ্য আয়োজনে ইবিতে নবীনবরণ সম্পন্ন

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) বর্ণাঢ্য আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছে দুইদিনব্যাপী নবীনবরণ অনুষ্ঠান। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দ্বিতীয় দিনের আয়োজনে থিওলজি অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদ, কলা অনুষদ এবং ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের নবীন শিক্ষার্থীদের আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করে নেওয়া হয়।

সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে নবীনদের হাতে রজনীগন্ধা ফুলের স্টিক, নোটপ্যাড ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোড অব কন্ডাক্ট তুলে দেওয়া হয়। একইসঙ্গে ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিটি ইউনিটে সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ। প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষাবিদ ও দার্শনিক অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. এয়াকুব আলী এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম। আরও উপস্থিত ছিলেন কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সেলিনা নাসরিন, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মনজুরুল হকসহ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং নবীন শিক্ষার্থীরা। সঞ্চালনা করেন সমাজকল্যাণ বিভাগের প্রভাষক মো. হাবিবুর রহমান।

সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হলো শিক্ষা ও জ্ঞানের সর্বোচ্চ স্তর। এখানে প্রবেশ মানে মানবজীবনের এক বিশেষ গৌরব ও দায়িত্বের সূচনা। শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পায়নি বরং জ্ঞানের উচ্চতর পরিসরে প্রবেশ করছেন, যা তাদেরকে বিশ্বপরিসরে জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ করে দেয়। মাধ্যমিকের জন্য, উচ্চ মাধ্যমিকের জন্য বই আছে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কোনো নির্দিষ্ট বই তৈরি করা হয়নি। এখানে সাধারণত শিক্ষকরা বই রেকমেন্ড করেন, সাথে গবেষণা মূলক জার্নালের কথাও বলেন। তোমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস দেখবে, এই সিলেবাস তোমাদের সংযোগ করবে চিন্তা করার, গবেষণা করার।

তিনি আরো বলেন, তোমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে বলছি তোমরা কোনো সময় নষ্ট করবে না। তুমি যতটুকু পরিশ্রম করবে, ততোটাই সফল হবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরে তুমি নিজেকে নিয়োজিত করবে দেশের সেবায়, রাষ্ট্রের সেবায়, জনগণের সেবায়। তুমি স্বাস্থ্য সেবা করবে, জনকল্যাণ মূলক কাজ করবে, অতএব তোমাদের প্রস্তুত হতে হবে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা শিক্ষকরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তোমাদেরকে কোয়ালিটি প্রোভাইড করতে। আমরা চাই আগামীর বিশ্বে তোমরা শিক্ষিত মানুষ হবে, সমাজকে দিতে হলে নিজেকে তৈরি করতে হবে। এই তৈরি করার সকল সম্ভাব্য ব্যবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে করা হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশদ্বারে বাংলা, আরবি ও ইংরেজি—তিন ভাষায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উৎকীর্ণ করার জন্য কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন,“এটি দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি অনুকরণীয় পদক্ষেপ।” বক্তৃতার মূল অংশে তিনি বর্তমান উচ্চশিক্ষার সংকট ও সীমাবদ্ধতার ওপর আলোকপাত করেন। তার অভিমত, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা আজ চরম সীমাবদ্ধতায় আবদ্ধ, এবং এর মুক্তির উপায় নিহিত রয়েছে জ্ঞানের ব্যাপক প্রসার ও মুক্ত প্রবাহ নিশ্চিতকরণে। তিনি প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস ও অ্যারিস্টটলসহ বিভিন্ন শাসনতান্ত্রিক চিন্তাধারার বিশদ আলোচনা করেন এবং শাসনব্যবস্থার শক্তি ও দুর্বলতা বিশ্লেষণ করেন।

তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, শাসনব্যবস্থার পতন বা অবক্ষয়ের মূল কারণ হলো শাসকশ্রেণীর আত্মভ্রম—যখন তারা মনে করে তাদের প্রতিটি কর্মকাণ্ডই নিঃসন্দেহে সঠিক এবং অন্য মত ও চর্চা সবই ভুল। জুলাই-সংশ্লিষ্ট পূর্ববর্তী শাসনব্যবস্থা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সবই তার বাবা করেছেন”—এমন আত্মম্ভরিতা একজন নিকৃষ্টতম অসহিষ্ণু শাসকের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। প্রকৃত জ্ঞানচর্চার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেছেন, অর্জিত জ্ঞানকে শুধু তাত্ত্বিক বা আনুষ্ঠানিক জ্ঞান হিসেবে নয়, বরং আত্মজীবন, পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের কল্যাণে ব্যবহার করাই শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য।

প্রসঙ্গত, দুইদিনব্যাপী নবীনবরণ অনুষ্ঠানের প্রথম দিনে (২০ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য পাঁচটি অনুষদের শিক্ষার্থীদের বরণ করা হয়। প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস. এম. এ. ফায়েজ। এদিন পরিবেশবান্ধব ই-কার উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ এবং ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফায়েজ।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

বর্ণাঢ্য আয়োজনে ইবিতে নবীনবরণ সম্পন্ন

বর্ণাঢ্য আয়োজনে ইবিতে নবীনবরণ সম্পন্ন

আপডেট সময় : ০৯:৫০:২৯ অপরাহ্ণ, রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) বর্ণাঢ্য আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছে দুইদিনব্যাপী নবীনবরণ অনুষ্ঠান। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দ্বিতীয় দিনের আয়োজনে থিওলজি অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদ, কলা অনুষদ এবং ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের নবীন শিক্ষার্থীদের আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করে নেওয়া হয়।

সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে নবীনদের হাতে রজনীগন্ধা ফুলের স্টিক, নোটপ্যাড ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোড অব কন্ডাক্ট তুলে দেওয়া হয়। একইসঙ্গে ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিটি ইউনিটে সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ। প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষাবিদ ও দার্শনিক অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. এয়াকুব আলী এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম। আরও উপস্থিত ছিলেন কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সেলিনা নাসরিন, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মনজুরুল হকসহ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং নবীন শিক্ষার্থীরা। সঞ্চালনা করেন সমাজকল্যাণ বিভাগের প্রভাষক মো. হাবিবুর রহমান।

সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হলো শিক্ষা ও জ্ঞানের সর্বোচ্চ স্তর। এখানে প্রবেশ মানে মানবজীবনের এক বিশেষ গৌরব ও দায়িত্বের সূচনা। শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পায়নি বরং জ্ঞানের উচ্চতর পরিসরে প্রবেশ করছেন, যা তাদেরকে বিশ্বপরিসরে জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ করে দেয়। মাধ্যমিকের জন্য, উচ্চ মাধ্যমিকের জন্য বই আছে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কোনো নির্দিষ্ট বই তৈরি করা হয়নি। এখানে সাধারণত শিক্ষকরা বই রেকমেন্ড করেন, সাথে গবেষণা মূলক জার্নালের কথাও বলেন। তোমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস দেখবে, এই সিলেবাস তোমাদের সংযোগ করবে চিন্তা করার, গবেষণা করার।

তিনি আরো বলেন, তোমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে বলছি তোমরা কোনো সময় নষ্ট করবে না। তুমি যতটুকু পরিশ্রম করবে, ততোটাই সফল হবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরে তুমি নিজেকে নিয়োজিত করবে দেশের সেবায়, রাষ্ট্রের সেবায়, জনগণের সেবায়। তুমি স্বাস্থ্য সেবা করবে, জনকল্যাণ মূলক কাজ করবে, অতএব তোমাদের প্রস্তুত হতে হবে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা শিক্ষকরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তোমাদেরকে কোয়ালিটি প্রোভাইড করতে। আমরা চাই আগামীর বিশ্বে তোমরা শিক্ষিত মানুষ হবে, সমাজকে দিতে হলে নিজেকে তৈরি করতে হবে। এই তৈরি করার সকল সম্ভাব্য ব্যবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে করা হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশদ্বারে বাংলা, আরবি ও ইংরেজি—তিন ভাষায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উৎকীর্ণ করার জন্য কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন,“এটি দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি অনুকরণীয় পদক্ষেপ।” বক্তৃতার মূল অংশে তিনি বর্তমান উচ্চশিক্ষার সংকট ও সীমাবদ্ধতার ওপর আলোকপাত করেন। তার অভিমত, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা আজ চরম সীমাবদ্ধতায় আবদ্ধ, এবং এর মুক্তির উপায় নিহিত রয়েছে জ্ঞানের ব্যাপক প্রসার ও মুক্ত প্রবাহ নিশ্চিতকরণে। তিনি প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস ও অ্যারিস্টটলসহ বিভিন্ন শাসনতান্ত্রিক চিন্তাধারার বিশদ আলোচনা করেন এবং শাসনব্যবস্থার শক্তি ও দুর্বলতা বিশ্লেষণ করেন।

তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, শাসনব্যবস্থার পতন বা অবক্ষয়ের মূল কারণ হলো শাসকশ্রেণীর আত্মভ্রম—যখন তারা মনে করে তাদের প্রতিটি কর্মকাণ্ডই নিঃসন্দেহে সঠিক এবং অন্য মত ও চর্চা সবই ভুল। জুলাই-সংশ্লিষ্ট পূর্ববর্তী শাসনব্যবস্থা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সবই তার বাবা করেছেন”—এমন আত্মম্ভরিতা একজন নিকৃষ্টতম অসহিষ্ণু শাসকের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। প্রকৃত জ্ঞানচর্চার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেছেন, অর্জিত জ্ঞানকে শুধু তাত্ত্বিক বা আনুষ্ঠানিক জ্ঞান হিসেবে নয়, বরং আত্মজীবন, পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের কল্যাণে ব্যবহার করাই শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য।

প্রসঙ্গত, দুইদিনব্যাপী নবীনবরণ অনুষ্ঠানের প্রথম দিনে (২০ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য পাঁচটি অনুষদের শিক্ষার্থীদের বরণ করা হয়। প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস. এম. এ. ফায়েজ। এদিন পরিবেশবান্ধব ই-কার উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ এবং ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফায়েজ।