নিউজ ডেস্ক:
নতুন এক শ্রেণির ‘প্রেত’-এর উপদ্রবে স্বাভাবিক জনজীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে। এই ‘প্রেত’-এর কারণে ২০১৬ সালে পথ দুর্ঘটনার সংখ্যা গত পাঁচবছরে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার তিনগুণ হয়ে দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে সেদেশের সরকার। এই মুহূর্তে সিউল-সহ বিশ্বের প্রায় সব শহরের আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘স্মার্টফোন জোম্বি’-র দল।
কারা এই স্মার্টফোন জোম্বি? ইন্টারনেট ঘাঁটলে উত্তর মেলে— যে পথচারীরা মাথা নীচু করে তাঁদের স্মার্টফোনে চোখ নিবদ্ধ রেখে পথ চলেন, তাঁরাই এই স্মার্টফোন জোম্বি। মার্কিন আর্বান লিজেন্ড থেকে তুলে আনা ‘জোম্বি’ টার্মটির সাধারণ অর্থ ‘জীবন্মৃত প্রেত’। হলিউডি ছবিতে প্রায়শই দেখা মেলে কবর থেকে উঠে আসা পচা-গলা দেহ-ওয়ালা জোম্বিদের। মাথা নীচু করে এক বিশেষ ভঙ্গিমায় তারা হাঁটা-চলা করে, যাতে মনে হয়েই পারে তারা কোন আবেশের মধ্যে রয়েছে। মার্কিন নাগরিক কিংবদন্তি এ কথাও বলে, জোম্বিরা নিজে থেকে কিছুই করতে পারে না। কোনও ডার্ক ম্যাজিশিয়ান তাদের জাগায়। তারা ওই ম্যাজিশিয়ানের ‘রোবট’ হিসেবে কাজ করে।
সিউল-সহ দূরপ্রাচ্যের অনেকগুলি দেশেই একই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে গত তিন-চার বছরে। হংকংয়ে স্মার্টফোনাসক্ত এই বিশেষ প্রজন্মের নামকরণ হয়েছে ‘দাই তাউ জুক’ বা ‘মাথা হেঁট উপজাতি’। চীনে মহামারীর আকার নিয়েছে এই ‘অসুখ’। সে দেশের মোট স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের অর্ধাংশই স্মার্টফোন জোম্বি। সিউলে সরকারের পক্ষ থেকে বার বার সাবধানবাণী আউড়ে, বিজ্ঞাপন টাঙিয়ে শহরের পাঁচটি ব্যস্ততম স্পটে বিশাল কর্মকাণ্ড জারি রেখেছে। এতে খরচ হয়ছে ৩৩,০০০ মার্কিন ডলার। বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে— ‘হাঁটার সময়ে স্মার্টফোন হতে সাবধান’। কিন্তু হাঁটতে হাঁটতে টেক্সটবাজ-প্রজন্ম তাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তাদের জোম্বিবৃত্তি জারি রেখেছে।
প্রসঙ্গত, দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বের সবচেয়ে বেশি স্মার্টফোন ব্যবহারকারী দেশ। প্রাপ্তবয়স্ক প্রজন্মের ৮৮ শতাংশের হাতে রয়েছে এই ডিভাইস। এর মধ্যে ১৫ শতাংশ মানুষ স্মার্টফোন অ্যাডিক্ট বলে জানিয়েছে চোংশিন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সমীক্ষা। এই সমীক্ষার মতে, স্মার্টফোন জোম্বিরা স্মার্টফোনকে তাদের দেহের এক সম্প্রসারিত অংশ বলেই মনে করেন। বলাই বাহুল্য, এটা একটা মনোবিকার। এই মনোবিকার থেকে মুক্তির কোনও উপায় আপাতত তেমন দেখা যাচ্ছে না— এই মত পুরো বিশ্ববাসীর।