জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ থেকেঃ ৬ ডিসেম্বর, ঝিনাইদহ হানাদার মুক্ত দিবস। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ শেষে ৬ ডিসেম্বর পাক হানাদার ও এদেশে তাদের দোসরদের হটিয়ে ঝিনাইদহকে শত্রুমুক্ত করে। মুক্তির আনন্দে সেদিন রাস্তায় নেমে আসে নারী-পুরুষসহ সর্বস্তরের মানুষ। উল্লাসে আর আনন্দে তারা ফেটে পড়ে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান হুকুম দেন তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। ঐতিহাসিক এ ভাষণের পরই বাংলার আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। ঝিনাইদহের মুক্তিকামী দামাল ছেলেরাও এ থেকে পিছিয়ে ছিল না। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামে এ দেশে প্রথম যে সম্মুখ সমর হয় তা সংঘটিত হয়েছিল ঝিনাইদহের বিষয়খালীতে। ১ এপ্রিল যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে ভারী অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পাকবাহিনী ঝিনাইদহ দখলের জন্য এগিয়ে আসে। সেদিন বিষয়খালীতে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধা বেগবর্তি নদীর ধারে তাদেরকে প্রবল বাধা দেয়। প্রায় ৩ ঘণ্টা তুমুল যুদ্ধের পর হানাদাররা পিছু হটতে বাধ্য হয়। ১৬ এপ্রিল তারা আরও অস্ত্রে-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আবারও বেগবর্তি নদীর তীরে বাধার সম্মুখীন হয়। প্রায় ৬ ঘণ্টা যুদ্ধের পর মুক্তিসেনারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। সে যুদ্ধে গোলাম মোস্তফা, সদর উদ্দিন, দুখি মাহমুদ, আব্দুল কুদ্দুসসহ নাম না জানা অনেক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ওই রাতেই ঝিনাইদহ শহরের পতন হয়। মুক্তিসেনারা মহেশপুর, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে আবারও ঝিনাইদহে ফিরে আসে। সে সময়ের উল্লেখযোগ্য যুদ্ধের মধ্যে রয়েছে ২ এপ্রিল সদর উপজেলার বিষয়খালী যুদ্ধ, ৪ এপ্রিল শৈলকুপা উপজেলার গাড়াগঞ্জ যুদ্ধ, ৪ আগস্ট একই উপজেলার আলফাপুর যুদ্ধ, ১৪ অক্টোবর আবাইপুর যুদ্ধ ও ২৬ নভেম্বর কামান্না যুদ্ধ। এছাড়াও ৬ আগষ্ট, ১৭ আগষ্ট ও ১১ই নভেম্বর জেলার বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। মুক্তিসেনাদের সাঁড়াশি আক্রমণে পাকহানাদাররা যশোর ক্যান্টনমেন্টর দিকে পিছু হটতে বাধ্য হয়। ৩ ডিসেম্বর মুক্ত হয় মহেশপুর, ৪ ডিসেম্বর কোটচাঁদপুর, ৫ ডিসেম্বর কালীগঞ্জ ও ৬ ডিসেম্বর ঝিনাইদহ শহরসহ অনান্য এলাকা। এ যুদ্ধে সারা জেলায় কমপক্ষে ১৭৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ঝিনাইদহের গর্ব সিপাহী শহীদ বীর শ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান বাংলার ইতিহাসে চির অম্লাান হয়ে রয়েছে। ৬ ডিসেম্বর ঝিনাইদহে মুক্ত হওয়ার সাথে সাথে বাড়ি ঘর থেকে দলে দলে সর্বস্তরের মানুষ রাস্তায় নেমে এসে জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে উল্লাস করতে থাকে। ফুল দিয়ে তারা মুক্তিসেনাদের বরণ করে নেয়। ৬ ডিসেম্বরের এ দিনটি ঝিনাইদহবাসীর কাছে চীর স্মরণীয় হয়ে থাকবে।