লামা-আলীকদম (বান্দরবান) প্রতিনিধি: বান্দরবানের আলীকদম উপজেলা সৃষ্টির ৩৫ বছর পর ও উন্নয়নের ছোঁয়ালাগেনি চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ¤্রাে ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত মেনপা পাড়াসহ ১১টি পাড়ায়। উপজেলা সদর থেকে ১০/১৫ কিঃমিঃ দুের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী অধ্যুষিত এসব এলাকার রাস্তাঘাট ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে এখনো সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। এ ওয়ার্ডের একমাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যায়ে যাতায়াতের নেই কোন ভালো রাস্তা। ফলে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থ্ানীয় এলাকাবাসীকে বর্ষা মৌসুমে দুর্ভোগের সীমা থাকে না।
ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড সদস্য শিমন ত্রিপুরা জানায়, উপজেলা সদর থেকে এ ওয়ার্ডের দুরত্ব ১৫ কিলোমিটার। এ ওয়ার্ডে মুরুং, ত্রিপুরা ও বাঙ্গালী পরিবার মিলে কমপক্ষে ৫ হাজার মানুষ বাস করে। পরিতাপের বিষয়, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ কিংবা সরকারের অন্যকোন দপ্তর থেকে অবহেলিত এ ওয়ার্ডের রাস্তাঘাটের উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। চলাচলের জন্য কাঁচা রাস্তাই ভরসা এলাকাবাসীর। একমাত্র বিদ্যালয়টির অবকাঠামো উন্নয়নেও নেই কার্যকর পদক্ষেপ।
তিনি অভিযোগ করেন, গত দু’বছর আগে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ লাঘবের জন্য চৈক্ষ্যং খালের ওপর একটি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণের বরাদ্দ হলেও চাঁদাবাজদের দৌরাত্মে কাজটি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে উন্নত যোগাযোগ সুবিধা থেকে ওয়ার্ডবাসী সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। কাঁচা মাটির রাস্তাগুলোকে ব্রিক সলিং করে সড়ক যোগাযোগে উন্নয়ন করতে তিনি জোর দাবী জানিয়েছেন।
স্থানীয় শিক্ষক শফিকুল ইসলাম জানান, ১৯৮৮ সালে এ ওয়ার্ডের মেনপা পাড়ায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। কয়েক বছর পূর্বে বিদ্যালয়টি সরকারি হয়েছে। কিন্তু এখনো সেই টিনসেট ঘরেই শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে। বিভিন্ন পাড়া থেকে বিদ্যালয়মুখি সড়ক যোগাযোগ ভালো নয়। ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পাহাড়ি দুর্গম পথ অতিক্রম করে বিদ্যালয়ে আসে। যোগাযোগ অসুবিধার কারণে বর্ষা মৌসুমে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমে যায়। বিদ্যালয় পার্শ্ববর্তী চৈক্ষ্যং খালের ওপর ব্রিজ না থাকায় বর্ষা মৌসুমে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীকে খাল পারাপারে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়।
মেনপা পাড়ার বাসিন্দা বর্তমানে উপজেলা সদরে একটি ছাত্রাবাসের পরিচালক ইয়োংলক মুরুং বলেন, এ ওয়ার্ডের বাসিন্দারা যুগ যুদ ধরে সরকারের উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। দুর্গম পাহাড়ি এ ওয়ার্ডে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী মুরুং জনসংখ্যাই বেশী। উন্নয়নের মূল¯্রােত থেকে পিছিয়ে থাকা এ নৃ-জনগোষ্ঠী মূলতঃ জুমচাষ নির্ভর জীবিকা নির্বাহ করেন। ভালো রাস্তাঘাট না থাকায় তাদের উৎপাদিত জুমের ফসলের ন্যায্য মূল্য থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছেন।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে বিদ্যালয় পার্শ্ববর্তী চৈক্ষ্যং খালের ওপর গার্ডার ব্রিজ নির্মাণের বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রায় অর্ধকোটি টাকা বরাদ্দের এ ব্রিজটি চাঁদাবাজদের দৌরাত্মের কারণে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ করতে পারে নি। ফলে ব্রিজটি অন্যত্র নির্মাণ করা হয়।
চৈক্ষ্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফেরদৌস রহমান জানান, আমি নির্বাচিত হওয়ার পর ৭নং ওয়ার্ডের রাস্তার উন্নয়নে কাবিখা থেকে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। তবে তা পর্যাপ্ত নয়। সে এলাকাটি উন্নয়ন ছোঁয়া বঞ্চিত। সেখানকার রাস্তাঘাট করতে গেলে অনেক টাকার প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। যেটি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সীমিত বরাদ্ধ দিয়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।