শিরোনাম :
Logo বাংলাদেশকে ‘ম্যানুফ্যাকচারিং হাব’ বানানোর আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার Logo শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে পাঁচ অভিযোগ আমলে নিল ট্রাইব্যুনাল Logo বাজেট উপস্থাপনের সময় পরিবর্তন Logo কুবির সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনায় ইবি রিপোর্টার্স ইউনিটির নিন্দা ও প্রতিবাদ Logo রোটারেক্ট ক্লাব অব এইচএসটিইউ এর নেতৃত্বে সিয়াম-নিলয় Logo চুয়াডাঙ্গায় গাফফার হত্যার বিচারের দাবিতে ট্রেন আটকে বিক্ষোভ Logo বিজিএমইএ সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় মাহমুদ হাসান খান বাবু জীবননগর উপজেলা বিএনপিসহ প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে অভিনন্দন Logo চুয়াডাঙ্গায় অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে ভারতীয় নাগরিক Logo বিচারহীনতায় বাড়ছে মানব পাচার, কার্যকর উদ্যোগ নেই সরকারের6 Logo এবার নেতাকর্মীদের যে বার্তা দিলেন জামায়াত আমির

ব্যাংকিং খাতের আতঙ্ক খেলাপি ঋণ!

  • amzad khan
  • আপডেট সময় : ১১:৩৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ, বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬
  • ৭৬০ বার পড়া হয়েছে

নিউজ ডেস্ক:

ব্যাংকিং খাতের আতঙ্ক খেলাপি ঋণ। বিগত কয়েক বছর বিশেষ ছাড় দিয়ে বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ নিয়মিত করেও এর ছোবল কমানো যায়নি। চলতি বছর বিশেষ কোনো ছাড় না থাকায় খেলাপি ঋণ ক্রমশ বাড়ছে।

গত বছর শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৫১ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। ওই বছরে প্রায় ১৬ হাজার ৪১০ কোটি টাকা পুনর্গঠন, ২৬ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা পুনঃতফসিল এবং ৪ হাজার ২১২ কোটি টাকা অবলোপন করা হয়। এগুলো করা না হলে আরও ৪৬ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা খেলাপি হিসেবে যোগ হতো। কিন্তু ছাড় পাওয়া ঋণগুলো আবার খেলাপি হতে থাকে। যার ফলে প্রতিনিয়ত খেলাপি ঋণ বেড়ে চলেছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের এমডি আবদুস সালাম বলেন, জনতা ব্যাংকে খেলাপি ঋণ কমছে। কিন্তু সমগ্র ব্যাংকিং খাত খেলাপি ঋণের চাপে পড়েছে। আগে পুনঃতফসিল করা অনেক ঋণ খেলাপি হয়ে যাচ্ছে। ফলে গত বছরের তুলনায় এ বছর শেষে খেলাপি ঋণ বাড়বে।

চলতি বছরে বিশেষ ছাড়ের সুবিধা না দিলেও ঋণ অবলোপন ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করা হচ্ছে। এরপরও প্রতি প্রান্তিকেই খেলাপি ঋণ বাড়ছে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেই খেলাপি ঋণ বাড়ে ৮ হাজার ৪০ কোটি টাকা। মার্চ প্রান্তিকে মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়ায় ৫৯ হাজার ৪১১ কোটি টাকা; যা ওই সময়ে বিতরণকৃত ঋণের ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ।

ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আনিস এ খান বলেন, চলতি বছর ব্যাংকগুলো ভালো ব্যবসা করেছে। কিন্তু এনপিএল (নন-পারফর্মিং লোন) নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি। নানা কারণে খেলাপি ঋণ বেড়েছে।

বছরজুড়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছিল। ব্যবসার পরিবেশ ভালো থাকায় গত বছরের তুলনায় ঋণ বিতরণ বেড়েছে। কিন্তু বিতরণকৃত ঋণ থেকে আদায় বাড়াতে পারেনি ব্যাংকগুলো। চলতি বছরের ছয় মাসে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয় ৬৩ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা। গত বছরের ডিসেম্বরের তুলনায় জুন পর্যন্ত খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১১ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা।

সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। চলতি বছরের নয় মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৪ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে প্রান্তিকে বিতরণ করা ঋণের ১০ দশমিক ৩৪ শতাংশই খেলাপি হয়ে গেছে। বছর শেষে খেলাপি ঋণ আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন একাধিক ব্যাংকার। তবে কয়েকটি ব্যাংকে তা কমতে পারে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ঋণের চাহিদা না থাকায় ব্যাংকে প্রচুর অলস তারল্য রয়েছে। ফলে আমানতের বিপরীতে সুদহার ক্রমশ কমে আসছে। পাশাপাশি কমছে ঋণের সুদহারও। ব্যাংকের সবচেয়ে বড় আয়ের খাত ঋণের সুদহার কমে যাওয়ার বছর শেষে এমনিতেই আয় কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে খেলাপি ঋণ ক্রমশ বাড়ায় ব্যাংকের সম্পদ ও আয় দুটোই আটকে যাচ্ছে। বর্ধিত খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখতে গিয়ে ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফা কমে যেতে পারে।

ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে গিয়ে ঋণের মান ঠিক রাখা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। এজন্য খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্রমাগত খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি ব্যাংকিং খাতকে ভোগাচ্ছে। ঋণের চাহিদা কম থাকা ও আমানতের সুদ কমে যাওয়ায় ঋণের সুদ ক্রমশ কমেছে। একদিকে ঋণের সুদ হার কমেছে অন্যদিকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। ফলে ব্যাংকের আয়ে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। এই অবস্থায় আগের মতো মুনাফা ধরে রাখা অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে।

গত বছরের তুলনায় খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির পরিমাণ (কোটি টাকা)
২০১৫ মার্চ-১৬ জুন-১৬ সেপ্টেম্বর-১৬
৫১৩৭১ ৫৯৪১১ ৬৩৩৬৫ ৬৫৭৩১
বৃদ্ধি ৮০৪০ ১১৯৯৪ ১৪৩৬০

ট্যাগস :

বাংলাদেশকে ‘ম্যানুফ্যাকচারিং হাব’ বানানোর আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

ব্যাংকিং খাতের আতঙ্ক খেলাপি ঋণ!

আপডেট সময় : ১১:৩৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ, বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬

নিউজ ডেস্ক:

ব্যাংকিং খাতের আতঙ্ক খেলাপি ঋণ। বিগত কয়েক বছর বিশেষ ছাড় দিয়ে বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ নিয়মিত করেও এর ছোবল কমানো যায়নি। চলতি বছর বিশেষ কোনো ছাড় না থাকায় খেলাপি ঋণ ক্রমশ বাড়ছে।

গত বছর শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৫১ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। ওই বছরে প্রায় ১৬ হাজার ৪১০ কোটি টাকা পুনর্গঠন, ২৬ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা পুনঃতফসিল এবং ৪ হাজার ২১২ কোটি টাকা অবলোপন করা হয়। এগুলো করা না হলে আরও ৪৬ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা খেলাপি হিসেবে যোগ হতো। কিন্তু ছাড় পাওয়া ঋণগুলো আবার খেলাপি হতে থাকে। যার ফলে প্রতিনিয়ত খেলাপি ঋণ বেড়ে চলেছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের এমডি আবদুস সালাম বলেন, জনতা ব্যাংকে খেলাপি ঋণ কমছে। কিন্তু সমগ্র ব্যাংকিং খাত খেলাপি ঋণের চাপে পড়েছে। আগে পুনঃতফসিল করা অনেক ঋণ খেলাপি হয়ে যাচ্ছে। ফলে গত বছরের তুলনায় এ বছর শেষে খেলাপি ঋণ বাড়বে।

চলতি বছরে বিশেষ ছাড়ের সুবিধা না দিলেও ঋণ অবলোপন ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করা হচ্ছে। এরপরও প্রতি প্রান্তিকেই খেলাপি ঋণ বাড়ছে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেই খেলাপি ঋণ বাড়ে ৮ হাজার ৪০ কোটি টাকা। মার্চ প্রান্তিকে মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়ায় ৫৯ হাজার ৪১১ কোটি টাকা; যা ওই সময়ে বিতরণকৃত ঋণের ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ।

ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আনিস এ খান বলেন, চলতি বছর ব্যাংকগুলো ভালো ব্যবসা করেছে। কিন্তু এনপিএল (নন-পারফর্মিং লোন) নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি। নানা কারণে খেলাপি ঋণ বেড়েছে।

বছরজুড়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছিল। ব্যবসার পরিবেশ ভালো থাকায় গত বছরের তুলনায় ঋণ বিতরণ বেড়েছে। কিন্তু বিতরণকৃত ঋণ থেকে আদায় বাড়াতে পারেনি ব্যাংকগুলো। চলতি বছরের ছয় মাসে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয় ৬৩ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা। গত বছরের ডিসেম্বরের তুলনায় জুন পর্যন্ত খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১১ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা।

সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। চলতি বছরের নয় মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৪ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে প্রান্তিকে বিতরণ করা ঋণের ১০ দশমিক ৩৪ শতাংশই খেলাপি হয়ে গেছে। বছর শেষে খেলাপি ঋণ আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন একাধিক ব্যাংকার। তবে কয়েকটি ব্যাংকে তা কমতে পারে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ঋণের চাহিদা না থাকায় ব্যাংকে প্রচুর অলস তারল্য রয়েছে। ফলে আমানতের বিপরীতে সুদহার ক্রমশ কমে আসছে। পাশাপাশি কমছে ঋণের সুদহারও। ব্যাংকের সবচেয়ে বড় আয়ের খাত ঋণের সুদহার কমে যাওয়ার বছর শেষে এমনিতেই আয় কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে খেলাপি ঋণ ক্রমশ বাড়ায় ব্যাংকের সম্পদ ও আয় দুটোই আটকে যাচ্ছে। বর্ধিত খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখতে গিয়ে ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফা কমে যেতে পারে।

ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে গিয়ে ঋণের মান ঠিক রাখা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। এজন্য খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্রমাগত খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি ব্যাংকিং খাতকে ভোগাচ্ছে। ঋণের চাহিদা কম থাকা ও আমানতের সুদ কমে যাওয়ায় ঋণের সুদ ক্রমশ কমেছে। একদিকে ঋণের সুদ হার কমেছে অন্যদিকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। ফলে ব্যাংকের আয়ে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। এই অবস্থায় আগের মতো মুনাফা ধরে রাখা অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে।

গত বছরের তুলনায় খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির পরিমাণ (কোটি টাকা)
২০১৫ মার্চ-১৬ জুন-১৬ সেপ্টেম্বর-১৬
৫১৩৭১ ৫৯৪১১ ৬৩৩৬৫ ৬৫৭৩১
বৃদ্ধি ৮০৪০ ১১৯৯৪ ১৪৩৬০