নিউজ ডেস্ক:
অনেকটা চার দেয়ালের মধ্যেই কাটছে বেশিরভাগ মানুষের ঈদ।
গত রোজার ঈদের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি গণসংযোগ থেকে বিরত ছিলেন।
সব মিলিয়ে, ভিন্ন এক বাস্তবতায় ঈদ উদযাপন হয়েছে। করোনাভাইরাস যেন ঈদে আনন্দের আবহকেই থমকে দিয়েছে।
বাংলাদেশের পুরুষদের জন্য ঈদ উদযাপনের একটি বড় অংশ জুড়েই থাকে ঈদগাহে নামাজ আদায় এবং নামাজ শেষে একে অপরের সঙ্গে করমর্দন, কোলাকুলি করা।
কিন্তু করোনাভাইরাসের স্বাস্থ্যবিধি এবার সেটা হতে দেয়নি বলে জানিয়েছেন পুরনো ঢাকার বাসিন্দা নীর তালুকদার।
ঈদগাহে এবং উন্মুক্ত স্থানে জনসমাগম নিষেধ থাকায় এবার তিনি মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। এবারও মসজিদগুলোয় সময় ভাগ করে একাধিক জামাতে নামাজ হয়েছে। সব মিলিয়ে এবারের ঈদ তার জন্য একেবারেই আলাদা।
মি. তালুকদার বলেন, “মসজিদে মানুষের সমাগম খুব কম। একজনের সাথে আরকজনের ৪ হাতের বেশি দূরত্ব ছিল। আগে আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নামাজ পড়তাম। নামাজ শেষে আজ কেউ কারো সাথে হ্যান্ডশেক করেনি, কোলাকুলি করেনি। ঈদের আমেজটা বলতে গেলে একদমই নেই।”
বাংলাদেশের বেশিরভাগ নারীদের এই ঈদ কাটে ভীষণ ব্যস্ততায়।
ঢাকার বাসিন্দা আক্তার জাহান শিল্পীর কাছে কোরবানির ঈদ মানেই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যস্ততা।
ঈদের সকালের মধ্যে তিনি মাংস কেটে ভাগ করে গরিবদের মধ্যে বিতরণ করেন, তারপর শুরু হয় রান্নাবান্নার আয়োজন।
দুপুরের পর থেকে আত্মীয় স্বজন প্রতিবেশীর বাড়িতে যাতায়াত, দাওয়াত খাওয়ানো বা অন্যের আমন্ত্রণে খেতে যাওয়া, তার নিয়মিত ঈদের রুটিনের মধ্য পড়ে।
দীর্ঘ দিনের ছকে বাঁধা ঈদ উদযাপন এবার পাল্টে দিয়েছে করোনাভাইরাস।
মিসেস আক্তার বলেন, “আমার বাসায় এই কোরবানির ঈদে কম করে হলেও একশ মানুষকে দাওয়াত খাওয়ানো হতো। এতো বিশাল রান্নাবান্না। এবারে কারও সাথে দেখা হচ্ছে না, রান্নাও করছি শুধু নিজেদের জন্য। কাউকে দাওয়াত করিনি। কারও বাসাতেও যাবো না। এরকম ঈদ হবে আগে ভাবিনি।”
করোনাভাইরাসের কারণে এবারের ঈদেও কোন রাষ্ট্রীয় আয়োজন থাকছে না। অন্যান্য বছরগুলোয় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সর্বসাধারণের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন।
তাদের এক নজর দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বঙ্গভবন ও গণভবনের সামনে অসংখ্য মানুষ ভিড় করতেন।
কিন্তু এবারে জন সমাগম এমন কোন আয়োজন হচ্ছে না। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী দুজনই ভিডিও-বার্তায় দেশবাসী শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া জানান, “প্রতিবছর এই ঈদের দিনে সাধারণ মানুষ গণভবনে আসতে পারে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে সরাসরি সাক্ষাত করতে পারে, গণভবনে খাওয়া দাওয়া করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও সাধারণ মানুষের সাথে এই সাক্ষাত খুব উপভোগ করেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সবাই সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে।”
ঈদের এই সময়ে অনেকেই পরিবার কিংবা বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে বিনোদনকেন্দ্র না হলে পর্যটন কেন্দ্রগুলোয় ভিড় করতেন। এবারে তেমনটা দেখা যায়নি।
করোনাভাইরাসের প্রভাবে এবারে পশু কোরবানি গত বছরের তুলনায় কম হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার একটা প্রভাব দেখা গেছে চামড়ার আড়তে।
সাধারণত অন্যান্য বছরগুলোয় যে পরিমাণ চামড়া আসতো এবার অন্তত ৩০% থেকে ৪০% কম চামড়া এসেছে বলে জানান বাংলাদেশ হাইড এন্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব টিপু সুলতান।
এ কারণে চামড়ার বাজারে সংকটের আশঙ্কা করছেন তিনি।
“আমাদের কাছে চামড়ার সংগ্রহ এবারে অনেক কম মনে হচ্ছে। অন্য বছর পোস্তায় যে সমাগম হয়। চামড়া বোঝাই ট্রাকগুলো জ্যাম লেগে যেতো। এবারে কোন জ্যাম নেই। কোরবানিও কম হয়েছে চামড়াও প্রায় ৩০% থেকে ৪০% কম।”
এবারের ঈদে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে ব্যাপক বন্যা।
করোনাভাইরাস আতঙ্ক তার ওপর বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির কারণে ঈদ এবার অনেক মানুষের জন্য আগের মতো খুশির বার্তা বয়ে আনতে পারেনি।
ঈদ উদযাপনের চাইতে বেঁচে থাকার লড়াইটাই যেন এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
সূত্র : বিবিসি