নিউজ ডেস্ক:
ক্যানসার নানা কারণে হতে পারে। জেনেটিক, ধূমপান, রেডিয়েশন- ক্যানসার সৃষ্টির জন্য দায়ী এ ধরনের বিভিন্ন কারণের কথা আমরা জানি।
আসুন, আজ আরো নতুন কিছু কারণ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। এসব কারণ নিশ্চিতভাবেই আপনাকে বিস্মিত করবে।
অতিরিক্ত চিনি খেলে
আমরা এতদিন শুনে এসেছি যে, চিনি আমাদের অনেক ক্ষতির কারণ হতে পারে। ডায়াবেটিস এর মধ্যে অন্যতম। অতিরিক্ত চিনি হার্ট এরও ক্ষতি করার পাশাপাশি ক্যানসার ঝুঁকিও বাড়ায়। টেক্সাস ইউনিভার্সিটির এমডি অ্যান্ডারসন ক্যানসার সেন্টারের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, যারা বেশি পরিমানে চিনি খান তাদের স্তন ক্যানসার ঝুঁকির সম্ভাবনা বেশি। অ্যাকটিভ ইটিং অ্যাডভাইস এর সত্ত্বাধিকারী লেসলি বঙ্কি বলেন, তারা মেয়ে ইঁদুরের ওপর একটা পরীক্ষা করে দেখেছেন যে, ইঁদুরটির সুগার লেভেল টিউমার বৃদ্ধির লেভেলটাকে ত্বরান্বিত করেছে। আমেরিকার একজন নারী দিনে যে পরিমান চিনি গ্রহণ করে তারা ইঁদুরকে ঠিক সেই পরিমানে চিনি খাইয়েছিলেন এবং জেনেটিক্যালি স্তন ক্যানসার হবার সকল সম্ভাবনাময় পরিবর্তন ইঁদুরটির মধ্যে দেখা গেছে। তারা পরামর্শ দিয়েছেন, চিনি-মিষ্টিযুক্ত পানীয়, চকলেট, ডেজার্ট জাতীয় খাদ্যে বাদ দিয়ে, প্রাকৃতিকভাবে যে সুগার পাওয়া যায় ওটাতেই নির্ভরশীল থাকতে। যেমন ফলের মধ্যে প্রচুর পরিমানে প্রাকৃতিক সুগার থাকে।
গরম পানীয় পান করলে
আপনি কি আপনার সকালের চা বা কফিটা টগবগে গরম ছাড়া খান না? তাহলে কিন্তু একটা চিন্তার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে এই বেশি গরম কফি বা চা। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ক্যানসার এর একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, অতিরিক্ত গরম পানীয় জলের কারণে খাদ্যনালীর ক্যানসার হতে পারে। গবেষক বঙ্কির মতে, অতিরিক্ত গরম পানীয় পান খাদ্যনালীতে জ্বালাপোড়ার কারণ হতে পারে, এর ফলে খাদ্যনালীতে ক্যানসার সৃষ্টি হতে পারে। বঙ্কির পরামর্শ হচ্ছে, ‘যদি বেশি গরম চা বা কপি খেতে ইচ্ছে হয়, তাহলে অল্প পরিমানে চুমুক দিবেন। এতে খাদ্যনালী জ্বালাপোড়া হবার সম্ভাবনা কিছুটা কম।’
বেশি পরিমানে প্রক্রিয়াজাত মাংস খেলে
ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ ক্যানসার গবেষণায় জানিয়েছে, বেশি পরিমানে নিয়মিত প্রক্রিয়াজাত মাংস খেলে কলোরেক্টাল ক্যানসার (কোলন ও রেক্টামের ক্যানসারকে একসঙ্গে কলোরেক্টাল ক্যানসার বলে) হওয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এই ধরনের মাংসের কোয়ার্টার পাউন্ড খেলে মানুষের কলোরেক্টাল ক্যানসার হবার সম্ভাবনা ১৮ শতাংশ বেড়ে যায়। গবেষকদের মতে, পরিমাণ মতো খেতে হবে।
রাত জেগে কাজ করলে
কাজের চাপে আমাদের করার কিছুই থাকেনা অনেক সময়। প্রয়োজনের তাগিদেই আমরা অনেকে রাতে কাজ এগিয়ে রাখি। এতে করে রাতে ঘুমটা কম হয়। অনেক সমীক্ষায় যেটা উঠে এসেছে প্রতিনিয়ত অনেক রাত জেগে কাজ করলে আপনার ক্যানসার হবার সম্ভাবনাকে অনেকটা বাড়িয়ে দিবে। যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট রাজ্যের নিউজ মিলফোর্ডের সাধারণ ক্যানসার বিশেষজ্ঞ সান্ড্রা লম্বার্ডোর মতে, ‘রাত জেগে কাজ শরীরের ইমুউনিটি কমিয়ে দেয় এবং পাশাপাশি শারীরিক জ্বালাতন হতে পারে।’
একটানা বসে বা শুয়ে থাকলে
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটের একটি জার্নালের তথ্যানুসারে, যারা একটানা বসে বা শুয়ে থাকেন তাদের কার্ডিওভাসকুলার, স্থুলতা রোগ হতে পারে। আর এর থেকেই ক্যানসার ঝুঁকি বাড়তে সৃষ্টি করতে পারে। এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, একটানা বসে থাকলে ক্যানসার হবার ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়। মিশেল ইয়াগোডা, এমডি, নিউ ইয়র্ক সিটির এক ওটোল্যারিঙ্গোলজিস্ট জানিয়েছেন, প্রতিদিন চলাফেরা এবং শরীর চর্চা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা আপনার রক্তে অক্সিজেনের চলাচল ঠিক রাখবে এবং মাংসপেশীকে শক্তি যোগাবে।
অতিরিক্ত ওজন
অতিরিক্ত ওজনের কারণে নানাবিধ সমস্যার কথা আমরা কম বেশি সবাই জানি। ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট এর তথ্যানুসারে, অতিরিক্ত ওজনের ফলে খাদ্যনালী, অগ্ন্যাশয়, কোলন এবং মলদ্বার, স্তন, কিডনি এবং থাইরয়েড সহ বিভিন্ন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। অতিরিক্ত মোটা নারীদের ফ্যাট সেল শরীরের ইস্ট্রোজেন লেভেল বাড়িয়ে দেয়, আর এটাই এন্ডমেট্রিয়াল এবং স্তন ক্যানসারের ঝুঁকিটা বাড়িয়ে দেয়। প্রতিনিয়ত শরীর চর্চা এবং খাদ্য তালিকায় গুরুত্বারোপ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।