মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে নবীজির পদক্ষেপ

  • নীলকন্ঠ অনলাইন নীলকন্ঠ অনলাইন
  • আপডেট সময় : ১০:২৯:৫৩ পূর্বাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
  • ৭০৬ বার পড়া হয়েছে

সমাজে সংঘটিত বহু বিশৃঙ্খলার মূলে মাদক। এটি যুব সমাজকে ধ্বংসের হাতিয়ার। মহান আল্লাহ তঁার বান্দাদের জন্য মদকে হারাম করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, হে মুমিনরা, নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদী ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ তো নাপাক শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। শয়তান শুধু মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চার করতে চায়। আর (চায়) আল্লাহর স্মরণ ও সালাত থেকে তোমাদের বাধা দিতে। অতএব, তোমরা কি বিরত হবে না?’ (সুরা মায়েদা, আয়াত : ৯০-৯১)

নবীজি (সা.) ও সাহাবিরা মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি শুধু মাদকসেবীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণেই ক্ষ্যান্ত হননি বরং মাদকের উৎস বন্ধ করতে কাজ করেন এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন, নিম্নে সে পদক্ষেপগুলোর কয়েকটি তুলে ধরা হলো;

নৈতিক ও সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি : শুধুমাত্র আইন প্রয়োগ বা শাসি্ত নয়, নবীজি (সা.) মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে মুসলমানদের মধ্যে গভীর নৈতিক ও সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি মদকে শয়তানের কাজ, সকল অনিষ্টের জননী এবং আল্লাহর স্মরণ থেকে বিরত রাখার মাধ্যম হিসেবে উলে্লখ করেছেন। যেমনটা উলি্লখিত সুরা মায়েদার আয়াতেও রয়েছে।

মাদকের উৎপাদন ও ব্যবসায় সরাসরি নিষেধাজ্ঞা : মহানবী (সা.) মাদকের উত্পাদন, বিপনন থেকে শুরু করে সেবন পর্যন্ত প্রতিটি পদক্ষেপকে নিষদ্ধি করেছেন। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করেছেন। এমনকি এর ভয়াবহতা সম্পর্কে সতর্ক করতে তাদের অভিশাপ পর্যন্ত করেছেন। আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, মাদকের সাথে সম্পৃক্ত দশ শ্রেণীর লোককে রাসুলুল্লাহ (সা.) অভিসম্পাত করেছেন। এরা হলো— মদ তৈরিকারী, মদের ফরমায়েশকারী, মদ পানকারী, মদ বহনকারী, যার জন্য মদ বহন করা হয়, মদ পরিবেশনকারী, মদ বিক্রয়কারী, এর মূল্য ভোগকারী, মদ ক্রেতা এবং যার জন্য মদ ক্রয় করা হয়। (তিরমিজি, হাদিস : ১২৯৫)

মাদক বিক্রি মাধ্যমে অর্জিত অর্থ হারাম ঘোষণা : নবীজি (সা.) মাদকদ্রব্য বিক্রির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ সম্পূর্ণ হারাম ঘোষণা করেছেন। এটি মাদকের বাণিজ্যিক দিককে অকার্যকর করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল। হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে, মক্কা বিজয়ের বছর মক্কায় অবস্থানকালে বলতে শুনেছেন; আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসুল মদ, মৃত জন্তু, শূকর ও মূর্তি কেনা-বেচা হারাম করা দিয়েছেন। (বুখারি, হাদিস : ২২৩৬)
এই নিষেধাজ্ঞা মদের সরবরাহ শৃঙ্খলকে ভেঙে দেওয়ার ক্ষেত্রে কার্যকরী পদক্ষেপ ছিল।

মাদকদ্রব্য ধ্বংস করার নির্দেশ : যখন মদের নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত চূড়ান্ত আয়াত (সুরা মায়িদার ৯০-৯১ আয়াত) অবতীর্ণ হয়, তখন নবীজি (সা.) সাহাবিদেরকে সকল প্রকার মজুদকৃত মদ ধ্বংস করে ফেলার নির্দেশ দেন এবং তঁারা তাই করেন। আনাস (রা.) বলেন, একদিন আমি আবু তালহার বাড়িতে লোকজনকে মদ পান করাচ্ছিলাম। সে সময় লোকেরা ফাযীখ মদ ব্যবহার করতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) এক ব্যক্তিকে আদেশ করলেন, যেন সে এই মর্মে ঘোষণা দেয় যে, সাবধান! মদ এখন থেকে হারাম করে দেওয়া হয়েছে। আবু তালহা (রা.) আমাকে বললেন, বাইরে যাও এবং সমস্ত মদ ঢেলে দাও। আমি বাইরে গেলাম এবং সমস্ত শরাব রাস্তায় ঢেলে দিলাম। আনাস (রা.) বলেন, সে দিন মদিনার অলিগলিতে মদের প্লাবন বয়ে গিয়েছিল। (বুখারি, হাদিস : ২৪৬৪)

এই ঘটনাটি মাদকের উৎস বন্ধে নবীজি (সা.)-এর দৃঢ়তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। উৎপাদন বা ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ না দিয়ে, বিদ্যমান সকল মজুদ ধ্বংস করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

এক কথায়, মাদকের উত্স বন্ধে নবীজি (সা.)-এর কর্মপন্থা ছিল একটি সামগ্রিক ও সমন্বিত পদ্ধতি। তিনি কেবল মাদক সেবনকে হারাম করেননি, বরং এর উৎপাদন, ব্যবসা এবং সংশি্লষ্ট সকল অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে নিষদ্ধি করে দিয়েছিলেন। বিদ্যমান সকল মাদকদ্রব্য ধ্বংস করার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং নৈতিক ও ধর্মীয় আলোচনার মাধ্যমে এর প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করেছিলেন। নবীজি (সা.)-এর এই পদক্ষেপগুলোর সমন্বয় মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে কার্যকর ভূমিকরা রেখেছিল। বর্তমান সময়েও মাদকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য এই পদক্ষেপগুলো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

 

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে নবীজির পদক্ষেপ

আপডেট সময় : ১০:২৯:৫৩ পূর্বাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

সমাজে সংঘটিত বহু বিশৃঙ্খলার মূলে মাদক। এটি যুব সমাজকে ধ্বংসের হাতিয়ার। মহান আল্লাহ তঁার বান্দাদের জন্য মদকে হারাম করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, হে মুমিনরা, নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদী ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ তো নাপাক শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। শয়তান শুধু মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চার করতে চায়। আর (চায়) আল্লাহর স্মরণ ও সালাত থেকে তোমাদের বাধা দিতে। অতএব, তোমরা কি বিরত হবে না?’ (সুরা মায়েদা, আয়াত : ৯০-৯১)

নবীজি (সা.) ও সাহাবিরা মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি শুধু মাদকসেবীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণেই ক্ষ্যান্ত হননি বরং মাদকের উৎস বন্ধ করতে কাজ করেন এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন, নিম্নে সে পদক্ষেপগুলোর কয়েকটি তুলে ধরা হলো;

নৈতিক ও সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি : শুধুমাত্র আইন প্রয়োগ বা শাসি্ত নয়, নবীজি (সা.) মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে মুসলমানদের মধ্যে গভীর নৈতিক ও সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি মদকে শয়তানের কাজ, সকল অনিষ্টের জননী এবং আল্লাহর স্মরণ থেকে বিরত রাখার মাধ্যম হিসেবে উলে্লখ করেছেন। যেমনটা উলি্লখিত সুরা মায়েদার আয়াতেও রয়েছে।

মাদকের উৎপাদন ও ব্যবসায় সরাসরি নিষেধাজ্ঞা : মহানবী (সা.) মাদকের উত্পাদন, বিপনন থেকে শুরু করে সেবন পর্যন্ত প্রতিটি পদক্ষেপকে নিষদ্ধি করেছেন। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করেছেন। এমনকি এর ভয়াবহতা সম্পর্কে সতর্ক করতে তাদের অভিশাপ পর্যন্ত করেছেন। আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, মাদকের সাথে সম্পৃক্ত দশ শ্রেণীর লোককে রাসুলুল্লাহ (সা.) অভিসম্পাত করেছেন। এরা হলো— মদ তৈরিকারী, মদের ফরমায়েশকারী, মদ পানকারী, মদ বহনকারী, যার জন্য মদ বহন করা হয়, মদ পরিবেশনকারী, মদ বিক্রয়কারী, এর মূল্য ভোগকারী, মদ ক্রেতা এবং যার জন্য মদ ক্রয় করা হয়। (তিরমিজি, হাদিস : ১২৯৫)

মাদক বিক্রি মাধ্যমে অর্জিত অর্থ হারাম ঘোষণা : নবীজি (সা.) মাদকদ্রব্য বিক্রির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ সম্পূর্ণ হারাম ঘোষণা করেছেন। এটি মাদকের বাণিজ্যিক দিককে অকার্যকর করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল। হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে, মক্কা বিজয়ের বছর মক্কায় অবস্থানকালে বলতে শুনেছেন; আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসুল মদ, মৃত জন্তু, শূকর ও মূর্তি কেনা-বেচা হারাম করা দিয়েছেন। (বুখারি, হাদিস : ২২৩৬)
এই নিষেধাজ্ঞা মদের সরবরাহ শৃঙ্খলকে ভেঙে দেওয়ার ক্ষেত্রে কার্যকরী পদক্ষেপ ছিল।

মাদকদ্রব্য ধ্বংস করার নির্দেশ : যখন মদের নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত চূড়ান্ত আয়াত (সুরা মায়িদার ৯০-৯১ আয়াত) অবতীর্ণ হয়, তখন নবীজি (সা.) সাহাবিদেরকে সকল প্রকার মজুদকৃত মদ ধ্বংস করে ফেলার নির্দেশ দেন এবং তঁারা তাই করেন। আনাস (রা.) বলেন, একদিন আমি আবু তালহার বাড়িতে লোকজনকে মদ পান করাচ্ছিলাম। সে সময় লোকেরা ফাযীখ মদ ব্যবহার করতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) এক ব্যক্তিকে আদেশ করলেন, যেন সে এই মর্মে ঘোষণা দেয় যে, সাবধান! মদ এখন থেকে হারাম করে দেওয়া হয়েছে। আবু তালহা (রা.) আমাকে বললেন, বাইরে যাও এবং সমস্ত মদ ঢেলে দাও। আমি বাইরে গেলাম এবং সমস্ত শরাব রাস্তায় ঢেলে দিলাম। আনাস (রা.) বলেন, সে দিন মদিনার অলিগলিতে মদের প্লাবন বয়ে গিয়েছিল। (বুখারি, হাদিস : ২৪৬৪)

এই ঘটনাটি মাদকের উৎস বন্ধে নবীজি (সা.)-এর দৃঢ়তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। উৎপাদন বা ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ না দিয়ে, বিদ্যমান সকল মজুদ ধ্বংস করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

এক কথায়, মাদকের উত্স বন্ধে নবীজি (সা.)-এর কর্মপন্থা ছিল একটি সামগ্রিক ও সমন্বিত পদ্ধতি। তিনি কেবল মাদক সেবনকে হারাম করেননি, বরং এর উৎপাদন, ব্যবসা এবং সংশি্লষ্ট সকল অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে নিষদ্ধি করে দিয়েছিলেন। বিদ্যমান সকল মাদকদ্রব্য ধ্বংস করার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং নৈতিক ও ধর্মীয় আলোচনার মাধ্যমে এর প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করেছিলেন। নবীজি (সা.)-এর এই পদক্ষেপগুলোর সমন্বয় মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে কার্যকর ভূমিকরা রেখেছিল। বর্তমান সময়েও মাদকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য এই পদক্ষেপগুলো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।