ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহ’র হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল আবারও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। কর্মসূচিতে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের শাখা নেতাকর্মীরাও অংশ নিয়ে সংহতি প্রকাশ করেছেন।
শনিবার (১১ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের নিচতলায় অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচিতে শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক সাহেদ আহম্মেদ, সদস্য সচিব মাসুদ রুমি মিথুন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার পারভেজ, যুগ্ম আহ্বায়ক আবু দাউদ ও রোকন উদ্দিন, সদস্য রাফিজ আহমেদ, নুর উদ্দিনসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী ও শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের শাখা সভাপতি ইসমাইল হোসেন রাহাতসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দও অংশ নেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে তুমি কে আমি কে? সাজিদ,সাজিদ; বিচার নিয়ে টালবাহানা চলবে না, চলবে না; সাজিদ হত্যার বিচার চাই; আপোষ না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম, দালালী না রাজপথ, রাজপথ; উই ওয়ান্ট জাস্টিস,জাস্টিস; বাংলাদেশ জিন্দাবাদ; সবার আগে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন প্রতিবাদী স্লোগান দেন।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি ইসমাইল হোসেন রাহাত অভিযোগ করেছেন, সাজেক আব্দুল্লার মতো আমাদের ভাইকে হারানোতে প্রশাসন কেন নীরব—তারা যদি কোনো শিক্ষকের সন্তান হত, তাহলে প্রশাসন ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে, ক্যাম্পাসে গিয়ে প্রতিবাদ করত; কিন্তু আমরা কেন এখনো নির্দ্বিধায় ক্লাস করছি, কেন আমাদের ভাইদের হত্যাকারীদের শাস্তি দিতে পারছি না, এ প্রশ্নগুলো বারবার মুখে বললেও কোনো ফল মিলছে না।
তিনি আরও বলেন, যাদের কাছে অভিযোগ জানাবো তারা তো আমাদের ছাত্রই মনে করেন না, মানুষও মনে করেন না—ইতিমধ্যেই শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে ছাত্রলীগের লোকদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে, ফ্যাসিস্টদের সদস্য করা হয়েছে; অথচ এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা তাঁদের উচিত ছিল ছাত্রবান্ধব কাজ করা, ফ্যাসিস্ট পুনর্বাসনের পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষা করা।
রাহাত প্রশাসনের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, ছাত্রদের জন্য আপনারা কী করেছেন? পরিবহন সমস্যা, হলের আবাসিক অবস্থার দুরত্ব, মানসম্মত খাবারের অসুবিধা—এসব নিয়ে তারা কোনো কার্যকর উদ্যোগগুলো নেয়নি; মফিজ লেগ পরিবর্তন ও অযথা নির্মিত রাস্তা তেমনই উদাহরণ — এমন রাস্তা যেখানে এখন এক হাঁটু পানি জমে থাকে।
পরিবহন পুলে যে তিনটি গাড়ি দেওয়া হয়েছে, সেগুলো আগের থেকেই অচল—এটি স্পষ্টভাবে দেখাচ্ছে প্রশাসনের উদাসীনতা। গত বছরে আরবি বিভাগীয় ছাত্র মুনিরের সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যু ঘটলেও বিশ্ববিদ্যালয় পক্ষ থেকে মামলাও করা হয়নি—তাই তিনি জানতে চান, আপনি আসলে কী করেছেন? নতুন পরিবহন প্রশাসক নিয়োগের পর থেকে পরিবহন পুলে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন হেনস্থা, সড়ক দুর্ঘটনা ও সাম্প্রতিক আমাদের পল্টন ভাইয়ের ওপর হওয়া হামলার সঠিক ব্যাখ্যা দিতে হবে; যদি দিতে না পারেন, তাহলে দায়িত্ব ছেড়ে দেন।
শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে আবার কী ও কী উদ্দেশ্যে এই প্রশাসন।
শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক সাহেদ আহম্মেদ বলেন, সাজিদ হত্যার বিষয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বার বার আমাদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে। কিন্তু আমরা এই বৃদ্ধাঙ্গুলি আর দেখতে চাই না।
গতকাল আমাদের ক্যাম্পাসে এক বাস চালক ভাইকে বা কারা তাকে আহত করেছে আমরা নিন্দা জানাচ্ছি এবং দোষীদের গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় একটি ব্যর্থ, নির্লজ্জ ও বেহায়া প্রশাসন যা আমরা আগে কখনো দেখি নি।
আপনি এসেছেন ছাত্র জনতার রক্তের উপর দিয়ে, আপনি ভিসি হয়েছেন ২০০০ শহীদদের রক্তের বিনিময়ে, প্রোভিসি ও ট্রেজারার হয়েছেন এই শহীদদের রক্তের বিনিময়ে, ছাত্রজনতাই আপনাদের বসিয়েছে।
এখন আপনারা এমন ভাব দেখান যেন কিছুই জানেন না বোঝেন না। আপনার আছেন আওয়ামী লীগ আর ছাত্রলীগের পুনর্বাসন নিয়ে।
শিক্ষক নিয়োগের বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ হাইয়ার বোর্ডে কারা রয়েছে আপনারা সেটা এখনো বলেন নাই, আমাদের সাংবাদিকরাও জানেন না, আপনাদের যা ইচ্ছা তাই গোপনে গোপনে করতেছেন। ফোকলোর বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে বোর্ডে ছাত্রলীগ আমন্ত্রণ নিমন্ত্রণ করা হয়েছে, তাদের পুনর্বাসন করেছে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়াও গতকাল ল এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে বোর্ডে যে চেয়ারম্যান একটি মামলায় জড়িত তাকে সেখানে সদস্য করা হয়েছে।
এছাড়াও ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সাজিদের খুনিদের গ্রেফতার না করা হলে প্রশাসনকে অফিস করতে না দেওয়াসহ কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার হুশিয়ারি দেন তারা।