বুধবার | ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ | শীতকাল
শিরোনাম :
Logo মহান বিজয় দিবসকে ভারতের বিজয় দাবি করায় ইবি শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ Logo সাতক্ষীরা ও কলারোয়া সীমান্তে বিজিবির অভিযানে সাড়ে চার লাখ টাকার মাদক ও চোরাচালানি পণ্য উদ্ধার Logo চাঁদপুর শহরে ব্র্যাকের উদ্যোগে ডেঙ্গু প্রতিরোধ অভিযান Logo পোস্টাল ভোট দিতে ৪ লাখ ৫৮ হাজার প্রবাসী ও সরকারি চাকরিজীবীর নিবন্ধন Logo কয়রায় যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালিত Logo চাঁদপুরে বিজয় দিবসে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা Logo জাল সিএস কপি ও ভুয়া নথিতে এমপিও আবেদন অগ্রায়ন—গাইবান্ধা জেলা শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ Logo মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে খুবির ন্যাশনালিস্ট টিচার্স এসোসিয়েশন (এনটিএ) এর বিবৃতি Logo মহান বিজয় দিবসে চাঁদপুর ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের মিলাদ ও দোয়া Logo বিজয় দিবসে মনোনয়নপত্র উত্তোলন করলেন ধানের শীষের এমপি প্রার্থী শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক
সংস্কার ও নির্বাচন

সংস্কার আগে, নির্বাচন পরে: বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রয়োজনীয়তা

|| মিয়া মোঃ নাফিস সাদিক ||

বাংলাদেশের রাজনীতি এক সংকটময় অধ্যায়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। বিগত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দেশ-বিদেশে বিতর্ক চলছেই। প্রশ্ন উঠেছে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা, প্রশাসনের ভূমিকা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম, এমনকি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়েও। এমন বাস্তবতায়, দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে প্রয়োজনীয় সংস্কার আগে সম্পন্ন করা জরুরি হয়ে উঠেছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: সময়ের দাবি
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। ক্ষমতায় যেই থাকুক না কেন, বিরোধী দল বরাবরই অভিযোগ তোলে নির্বাচনে কারচুপি ও অনিয়মের। জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে হলে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব একটি নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে তুলে দেওয়া সময়ের দাবি।

একটি কার্যকর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান কাজ হবে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার। বিশেষ করে নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে, সেগুলোর প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা জরুরি।
সংস্থাগুলোর সংস্কার কেন জরুরি?

বর্তমানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা। কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে, যেন তারা কোনো রাজনৈতিক চাপ ছাড়াই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে পারে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনকে অবশ্যই রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে। নির্বাচনকালীন সময়ে এই সংস্থাগুলোর নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করা না গেলে, নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে।
বিচার বিভাগকেও আরও স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। নির্বাচনী অনিয়ম বা বিরোধের ক্ষেত্রে দ্রুত ও নিরপেক্ষ বিচারিক সিদ্ধান্ত নিতে হলে, বিচারকদের ওপর রাজনৈতিক চাপ মুক্ত রাখা জরুরি।

নির্বাচন: আস্থার সংকট মোকাবিলা
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনই হবে আসল পরীক্ষা। এ সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে — সব দলের জন্য সমান সুযোগ, ভোটারদের নিরাপত্তা, অবাধ প্রচার-প্রচারণা এবং সহিংসতামুক্ত পরিবেশ। এর পাশাপাশি, ফলাফল ঘোষণার প্রক্রিয়া হতে হবে স্বচ্ছ এবং কারচুপিমুক্ত।

উপসংহার: সংস্কার ছাড়া নির্বাচন অর্থহীন
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারা টিকিয়ে রাখতে হলে এখন প্রয়োজন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক সংস্কার। সংস্থা সংস্কার ছাড়া আরেকটি তড়িঘড়ি নির্বাচন মানে হবে রাজনৈতিক সংকটকে আরও ঘনীভূত করা। জনগণের আস্থা ফেরাতে হলে, আগে সংস্কার — পরে নির্বাচনই একমাত্র পথ।
বাংলাদেশ কি সেই পথে হাঁটবে, নাকি আবারও একটি বিতর্কিত নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাবে — সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।

লেখক : মিয়া মোঃ নাফিস সাদিক
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (লোকপ্রশাসন বিভাগ)

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

মহান বিজয় দিবসকে ভারতের বিজয় দাবি করায় ইবি শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

সংস্কার ও নির্বাচন

সংস্কার আগে, নির্বাচন পরে: বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রয়োজনীয়তা

আপডেট সময় : ১২:২৩:০৭ অপরাহ্ণ, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫

|| মিয়া মোঃ নাফিস সাদিক ||

বাংলাদেশের রাজনীতি এক সংকটময় অধ্যায়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। বিগত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দেশ-বিদেশে বিতর্ক চলছেই। প্রশ্ন উঠেছে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা, প্রশাসনের ভূমিকা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম, এমনকি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়েও। এমন বাস্তবতায়, দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে প্রয়োজনীয় সংস্কার আগে সম্পন্ন করা জরুরি হয়ে উঠেছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: সময়ের দাবি
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। ক্ষমতায় যেই থাকুক না কেন, বিরোধী দল বরাবরই অভিযোগ তোলে নির্বাচনে কারচুপি ও অনিয়মের। জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে হলে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব একটি নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে তুলে দেওয়া সময়ের দাবি।

একটি কার্যকর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান কাজ হবে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার। বিশেষ করে নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে, সেগুলোর প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা জরুরি।
সংস্থাগুলোর সংস্কার কেন জরুরি?

বর্তমানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা। কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে, যেন তারা কোনো রাজনৈতিক চাপ ছাড়াই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে পারে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনকে অবশ্যই রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে। নির্বাচনকালীন সময়ে এই সংস্থাগুলোর নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করা না গেলে, নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে।
বিচার বিভাগকেও আরও স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। নির্বাচনী অনিয়ম বা বিরোধের ক্ষেত্রে দ্রুত ও নিরপেক্ষ বিচারিক সিদ্ধান্ত নিতে হলে, বিচারকদের ওপর রাজনৈতিক চাপ মুক্ত রাখা জরুরি।

নির্বাচন: আস্থার সংকট মোকাবিলা
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনই হবে আসল পরীক্ষা। এ সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে — সব দলের জন্য সমান সুযোগ, ভোটারদের নিরাপত্তা, অবাধ প্রচার-প্রচারণা এবং সহিংসতামুক্ত পরিবেশ। এর পাশাপাশি, ফলাফল ঘোষণার প্রক্রিয়া হতে হবে স্বচ্ছ এবং কারচুপিমুক্ত।

উপসংহার: সংস্কার ছাড়া নির্বাচন অর্থহীন
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারা টিকিয়ে রাখতে হলে এখন প্রয়োজন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক সংস্কার। সংস্থা সংস্কার ছাড়া আরেকটি তড়িঘড়ি নির্বাচন মানে হবে রাজনৈতিক সংকটকে আরও ঘনীভূত করা। জনগণের আস্থা ফেরাতে হলে, আগে সংস্কার — পরে নির্বাচনই একমাত্র পথ।
বাংলাদেশ কি সেই পথে হাঁটবে, নাকি আবারও একটি বিতর্কিত নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাবে — সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।

লেখক : মিয়া মোঃ নাফিস সাদিক
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (লোকপ্রশাসন বিভাগ)