বুধবার | ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ | শীতকাল
শিরোনাম :
Logo মহান বিজয় দিবসকে ভারতের বিজয় দাবি করায় ইবি শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ Logo সাতক্ষীরা ও কলারোয়া সীমান্তে বিজিবির অভিযানে সাড়ে চার লাখ টাকার মাদক ও চোরাচালানি পণ্য উদ্ধার Logo চাঁদপুর শহরে ব্র্যাকের উদ্যোগে ডেঙ্গু প্রতিরোধ অভিযান Logo পোস্টাল ভোট দিতে ৪ লাখ ৫৮ হাজার প্রবাসী ও সরকারি চাকরিজীবীর নিবন্ধন Logo কয়রায় যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালিত Logo চাঁদপুরে বিজয় দিবসে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা Logo জাল সিএস কপি ও ভুয়া নথিতে এমপিও আবেদন অগ্রায়ন—গাইবান্ধা জেলা শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ Logo মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে খুবির ন্যাশনালিস্ট টিচার্স এসোসিয়েশন (এনটিএ) এর বিবৃতি Logo মহান বিজয় দিবসে চাঁদপুর ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের মিলাদ ও দোয়া Logo বিজয় দিবসে মনোনয়নপত্র উত্তোলন করলেন ধানের শীষের এমপি প্রার্থী শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক

পুলিশ ও জনগণের সম্পর্ক

  • সম্পাদকীয় ডেস্ক সম্পাদকীয় ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১০:৩০:৪৮ পূর্বাহ্ণ, বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • ৮২৭ বার পড়া হয়েছে
  • সেলিম রানা,

একটি সভ্য ও সুশৃঙ্খল সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য জনতা ও পুলিশের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ সমাজে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা এবং জনতাকে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্বে থাকে। অন্যদিকে জনতা রাষ্ট্রের মূল চালিকাশক্তি, যাদের সুরক্ষা ও সেবার জন্যই পুলিশ বাহিনী কাজ করে। কিন্তু অনেক সময় জনতা ও পুলিশের মধ্যে দূরত্ব, অবিশ্বাস ও বৈরিতা দেখা দেয়, যা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। অপরাধ দমন, সুরক্ষা প্রদান ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় পুলিশের ভূমিকা অপরিসীম। তাদের উপস্থিতি জনতার মধ্যে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার অনুভূতি সৃষ্টি করে। এছাড়া পুলিশ দুর্যোগ মোকাবিলা, সামাজিক সংঘাত প্রতিরোধ এবং অসহায় মানুষকে সাহায্য করার কাজেও জড়িত থাকে।

অন্যদিকে জনতা সমাজের সেই অংশ, যারা দেশের আইন মেনে চলতে বাধ্য এবং যারা নিজেদের অধিকার ও স্বাধীনতার জন্য রাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষ, শ্রমিক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, ছাত্র থেকে শুরু করে প্রবীণ নাগরিক, সবাই জনতার অংশ। জনতা পুলিশের কাছ থেকে সুরক্ষা ও সেবা প্রত্যাশা করে এবং সেই অনুযায়ী তারা আইন মেনে চলে।

পুলিশ ও জনতার মধ্যে সম্পর্কটি পারস্পরিক সম্মান ও বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠতে হবে। জনতা পুলিশের প্রতি নির্ভরশীল, কারণ তারা আইনি নিরাপত্তার জন্য পুলিশের সাহায্য
নিয়ে থাকে। অন্যদিকে, পুলিশও জনতার সেবার দায়িত্বে থাকে। এই দুই পক্ষের সম্পর্ক যত বেশি সহযোগিতামূলক হবে, ততই সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে।

তবে নানা কারণে জনতা ও পুলিশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটতে পারে। যেমন-১. অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ অনেক সময় পুলিশের পক্ষ থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার দেখা যায়, যা জনতার মধ্যে পুলিশের প্রতি অসন্তোষ সৃষ্টি করে। ২. রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ পুলিশকে অনেক সময় রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। এটি জনতার মধ্যে পুলিশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করে। ৩. বিচ্ছিন্নতা ও অবিশ্বাস: পুলিশের কাজের ধরন, যেমন-ধরপাকড় বা তদন্ত, কখনো কখনো জনতার মনে পুলিশের প্রতি অবিশ্বাসের জন্ম দেয়।

জনতা ও পুলিশের সম্পর্কের দূরত্ব দূর করে তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরির জন্য বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করা যেতে পারে। যেমন:

১. বিনিয়োগ ও প্রশিক্ষণ পুলিশের জন্য সঠিক প্রশিক্ষণ ও উন্নত প্রযুক্তির ব্যবস্থা করা উচিত, যাতে তারা আরো দক্ষ ও মানবিক হতে পারে। বিশেষ করে, মানবাধিকার ও জনসাধারণের সঙ্গে ভালো আচরণ কীভাবে করতে হয়, সে বিষয়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।

২. স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা: পুলিশকে রাজনৈতিক চাপ থেকে মুক্ত রাখতে হবে, যাতে তারা ন্যায় ও নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারে।

৩. জনসংযোগ বৃদ্ধি: জনতা ও পুলিশের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। কমিউনিটি প্রোগ্রাম, আলোচনাসভা এবং জনসচেতনতা কার্যক্রমের মাধ্যমে দুই পক্ষের মধ্যে সরাসরি কথাবার্তা ও বোঝাপড়া বাড়ানো উচিত।

৪. মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা: পুলিশের মানসিক চাপ কমানোর জন্য নিয়মিত কাউন্সেলিং এবং মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা উচিত, যাতে তারা সুস্থ ও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

৫. জবাবদিহি বৃদ্ধি পুলিশের কাজের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। যদি কোনো পুলিশ সদস্য কর্তব্যে অবহেলা বা ক্ষমতার অপব্যবহার করে, তাহলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, যাতে জনতার মধ্যে বিশ্বাস বাড়ে।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী ও কলামিস্ট

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

মহান বিজয় দিবসকে ভারতের বিজয় দাবি করায় ইবি শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

পুলিশ ও জনগণের সম্পর্ক

আপডেট সময় : ১০:৩০:৪৮ পূর্বাহ্ণ, বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • সেলিম রানা,

একটি সভ্য ও সুশৃঙ্খল সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য জনতা ও পুলিশের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ সমাজে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা এবং জনতাকে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্বে থাকে। অন্যদিকে জনতা রাষ্ট্রের মূল চালিকাশক্তি, যাদের সুরক্ষা ও সেবার জন্যই পুলিশ বাহিনী কাজ করে। কিন্তু অনেক সময় জনতা ও পুলিশের মধ্যে দূরত্ব, অবিশ্বাস ও বৈরিতা দেখা দেয়, যা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। অপরাধ দমন, সুরক্ষা প্রদান ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় পুলিশের ভূমিকা অপরিসীম। তাদের উপস্থিতি জনতার মধ্যে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার অনুভূতি সৃষ্টি করে। এছাড়া পুলিশ দুর্যোগ মোকাবিলা, সামাজিক সংঘাত প্রতিরোধ এবং অসহায় মানুষকে সাহায্য করার কাজেও জড়িত থাকে।

অন্যদিকে জনতা সমাজের সেই অংশ, যারা দেশের আইন মেনে চলতে বাধ্য এবং যারা নিজেদের অধিকার ও স্বাধীনতার জন্য রাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষ, শ্রমিক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, ছাত্র থেকে শুরু করে প্রবীণ নাগরিক, সবাই জনতার অংশ। জনতা পুলিশের কাছ থেকে সুরক্ষা ও সেবা প্রত্যাশা করে এবং সেই অনুযায়ী তারা আইন মেনে চলে।

পুলিশ ও জনতার মধ্যে সম্পর্কটি পারস্পরিক সম্মান ও বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠতে হবে। জনতা পুলিশের প্রতি নির্ভরশীল, কারণ তারা আইনি নিরাপত্তার জন্য পুলিশের সাহায্য
নিয়ে থাকে। অন্যদিকে, পুলিশও জনতার সেবার দায়িত্বে থাকে। এই দুই পক্ষের সম্পর্ক যত বেশি সহযোগিতামূলক হবে, ততই সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে।

তবে নানা কারণে জনতা ও পুলিশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটতে পারে। যেমন-১. অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ অনেক সময় পুলিশের পক্ষ থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার দেখা যায়, যা জনতার মধ্যে পুলিশের প্রতি অসন্তোষ সৃষ্টি করে। ২. রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ পুলিশকে অনেক সময় রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। এটি জনতার মধ্যে পুলিশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করে। ৩. বিচ্ছিন্নতা ও অবিশ্বাস: পুলিশের কাজের ধরন, যেমন-ধরপাকড় বা তদন্ত, কখনো কখনো জনতার মনে পুলিশের প্রতি অবিশ্বাসের জন্ম দেয়।

জনতা ও পুলিশের সম্পর্কের দূরত্ব দূর করে তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরির জন্য বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করা যেতে পারে। যেমন:

১. বিনিয়োগ ও প্রশিক্ষণ পুলিশের জন্য সঠিক প্রশিক্ষণ ও উন্নত প্রযুক্তির ব্যবস্থা করা উচিত, যাতে তারা আরো দক্ষ ও মানবিক হতে পারে। বিশেষ করে, মানবাধিকার ও জনসাধারণের সঙ্গে ভালো আচরণ কীভাবে করতে হয়, সে বিষয়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।

২. স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা: পুলিশকে রাজনৈতিক চাপ থেকে মুক্ত রাখতে হবে, যাতে তারা ন্যায় ও নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারে।

৩. জনসংযোগ বৃদ্ধি: জনতা ও পুলিশের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। কমিউনিটি প্রোগ্রাম, আলোচনাসভা এবং জনসচেতনতা কার্যক্রমের মাধ্যমে দুই পক্ষের মধ্যে সরাসরি কথাবার্তা ও বোঝাপড়া বাড়ানো উচিত।

৪. মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা: পুলিশের মানসিক চাপ কমানোর জন্য নিয়মিত কাউন্সেলিং এবং মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা উচিত, যাতে তারা সুস্থ ও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

৫. জবাবদিহি বৃদ্ধি পুলিশের কাজের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। যদি কোনো পুলিশ সদস্য কর্তব্যে অবহেলা বা ক্ষমতার অপব্যবহার করে, তাহলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, যাতে জনতার মধ্যে বিশ্বাস বাড়ে।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী ও কলামিস্ট