শিরোনাম :
Logo বীরগঞ্জে বীজ ডিলার ও কৃষক সমাবেশ Logo হাবিপ্রবিতে প্রথম ধাপের ভর্তি সম্পন্ন হয়েছে ৬৭.৭৫ শতাংশ। Logo রাবিতে আন্তঃকলেজ সাঁতার প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল Logo পাক-ভারত যুদ্ধবিরতি ট্রাম্পের মধ্যস্থতা ছাড়াই হয়েছে, দাবি জয়শঙ্করের Logo হাসিনার নির্বাচনি হলফনামায় গরমিল: ব্যবস্থা নিতে ইসিকে দুদকের চিঠি Logo ১৫০ ব্যবসায়ী প্রতিনিধি নি‌য়ে ঢাকায় আসছেন চীনা বাণিজ্যমন্ত্রী Logo বাঁচতে চায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ধর্মীয় শিক্ষক আঃ ছাত্তার Logo নতুন হারে মহার্ঘ ভাতা, কোন গ্রেডে কত বাড়ছে? Logo এবার মশার শরীরে ম্যালেরিয়ার ওষুধ! গবেষকদের যুগান্তকারী আবিষ্কার Logo পঞ্চগড়ে ভারতীয় পুশ-ইন, নারী-শিশুসহ ২১ বাংলাদেশিকে সীমান্তে ফেরত

হাদিসের গল্পঃ কুষ্ঠরোগী, অন্ধ ও টেকোর কাহিনী !

  • আপডেট সময় : ১১:৩৭:৩৪ পূর্বাহ্ণ, বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬
  • ৭৮৩ বার পড়া হয়েছে

বনী ইসরাঈলের মাঝে তিনজন ব্যক্তি ছিল- কুষ্ঠরোগী টেকো ও অন্ধ।মহান  আল্লাহ্‌  তাদেরকে  পরীক্ষা  করতে  চাইলেন  এবং  তাদের  নিকট একজন ফেরেশতা পাঠালেন।

অতঃপর কুষ্ঠরোগীর কাছে এসে তিনি বললেন,‘তোমার সবচেয়ে পছন্দের জিনিস কোনটি?সে বলল,  ‘সুন্দর রং ও সুন্দর চামড়া। কেননা মানুষ আমাকে ঘৃণা করে’। ফেরেশতা তার শরীরে হাত বুলালেন। এতে তার রোগ দূর হ’ল এবং তাকে সুন্দর বর্ণ ও সু্নদর চামড়া দান করা হ’ল।

অতঃপর তিনি প্রশ্ন করলেন, ‘তোমার নিকট কোন্ সম্পদ সবচেয়ে বেশী পছন্দনীয়? সে বলল,  উট অথবা গরু’। এ ব্যাপারে বর্ণনাকারীর সন্দেহ রয়েছে যে,কুষ্ঠরোগী বা টেকো দু’জনের  একজন বলেছিল উট  আর অপরজন বলেছিল গরু। তাকে তখন দশ মাসের গর্ভবতী  একটি  উটনী  দেয়া  হ’ল। ফেরেশতা  বললেন, ‘আল্লাহ এতে তোমায় বরকত দিন’।

তারপর তিনি টেকো ব্যক্তির কাছে গিয়ে প্রশ্ন করলেন, ‘তোমার সবচেয়ে পছন্দের জিনিস কোনটি? সে বলল, ‘সুন্দর চুল এবং এই টাক হ’তে মুক্তি, লোকেরা যার কারণে আমাকে ঘৃণা করে’।

বর্ণনাকারী বলেন, তিনি তার মাথায় হাত বুলালেন। এতে তার টাক ভাল হয়ে গেল এবং তাকে সুন্দর চুল দান করা হ’ল। এরপর ফেরেশতা বললেন, ‘কোন মাল তোমার নিকট অধিক প্রিয়’? সে বলল, গরু। বর্ণনাকারী বলেন,তখন তাকে একটি গর্ভবতী গাভী দেয়া হ’ল। ফেরেশতা বললেন, আল্লাহ এতে তোমাকে বরকত দিন।

তারপর ফেরেশতা অন্ধ ব্যক্তির  কাছে  এসে  প্রশ্ন  করলেন,  ‘তোমার  অধিক  পছন্দের  জিনিস কোনটি’? সে বলল, ‘আল্লাহ আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিন, আমি যাতে মানুষকে দেখতে পারি’।

ফেরেশতা তার চোখ স্পর্শ করলেন। এতে তার চোখের দৃষ্টি আল্লাহ ফিরিয়ে দিলেন। এরপর ফেরেশতা প্রশ্ন করলেন,‘কোন মাল তোমার নিকট অধিক প্রিয়’? সে বলল, ছাগল। তাকে তখন এমন ছাগী দেয়া হ’ল, যা অধিক সংখ্যক বাচ্চা দেয়।

তারপর উট, গাভী ও ছাগলের বাচচা হ’ল। ফলে একজনের উটে ময়দান ভরে গেল, অপরজনের গরুতে মাঠ পূর্ণ হয়ে গেল এবং আর একজনের ছাগলে উপত্যকা ভরে গেল।

তারপর ফেরেশতা কুষ্ঠরোগীর কাছে তাঁর প্রথম রূপ ধারণ করে এসে বললেন, ‘আমি একজন মিসকীন। সফরে আমার সবকিছু নিঃশেষ হয়ে গেছে। আজ আল্লাহ ব্যতীত কেউ নেই, যার সাহায্যে আমি আমার গন্তব্যে পৌছাতে পারি, তারপর তোমার সহায়তায়। যে আল্লাহ তোমাকে সুন্দর বর্ণ, সুন্দর ত্বক ও সম্পদ দিয়েছেন, সে আল্লাহর নামে তোমার নিকট আমি একটা উট চাচিছ, যার সাহায্যে আমি গন্তব্যে পৌছাতে পারি’।

সে বলল,‘(আমার উপর) অনেকের অধিকার রয়েছে’। ফেরেশতা বললেন,‘তোমাকে বোধ হয় আমি চিনি। তুমি কি কুষ্ঠরোগী ছিলে না? লোকেরা তোমাকে কি ঘৃণা  করত  না? তুমি না নিঃস্ব ছিলে? অতঃপর আল্লাহ তোমাকে সম্পদ দিয়েছেন’। সে বলল, ‘এই সম্পদ তো আমি উত্তরাধিকার সূত্রে পূর্বপুরুষ থেকে পেয়েছি’।

তিনি বললেন, ‘তুমি যদি মিথ্যাবাদী হও, তাহ’লে তোমাকে যেন আল্লাহ আগের মতো করে দেন’।

এরপর তিনি টেকো ব্যক্তির কাছে তাঁর প্রথম রূপ ধারণ করে এসে প্রথম লোকটিকে যা বলেছিলেন তা বললেন এবং সেও একই উত্তর দিল,যা পূর্বের লোকটি দিয়েছিল। ফেরেশতা একেও বললেন,‘তুমি যদি মিথ্যাবাদী হয়ে থাক, তাহলে আল্লাহ যেন তোমাকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দেন’।

এরপর ফেরেশতা অন্ধ ব্যক্তির কাছে তাঁর আগের রূপ ধারণ করে এসে বললেন, ‘আমি একজন মিসকীন মুসাফির। আমার সবকিছু সফরে নিঃশেষ হয়ে গেছে। এখন গন্তব্যে পৌঁছাতে আল্লাহ ব্যতীত আর কোন উপায় নেই, তারপর তোমার সহায়তায়। সেই আল্লাহর নামে তোমার কাছে একটি ছাগল সাহায্য চাচিছ, যিনি তোমাকে তোমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন’।  এ ছাগলটি দিয়ে আমি বাড়ি পৌছাতে পারব।

লোকটি বলল, ‘আমি অন্ধ ছিলাম। আল্লাহ্‌ আমার দৃষ্টিশক্তি ফেরত দিয়েছেন। আমি দরিদ্র ছিলাম, আল্লাহই আমাকে ধনী করেছেন। কাজেই তোমার যত ইচছা মাল তুমি নিয়ে যাও। আল্লাহর শপথ! মহান আল্লাহর ওয়াস্তে আজ তুমি যা কিছু  নিবে, তার জন্য আমি আজ তোমার নিকট কোন প্রশংসাই দাবী করব না’।

ফেরেশতা বললেন, ‘তোমার সম্পদ তোমার কাছেই রাখ। তোমাদেরকে শুধুমাত্র পরীক্ষা করা হয়েছে। তোমার প্রতি আল্লাহ তা‘আলা সন্তুষ্ট এবং তোমার অপর দু’জন সাথীর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন’।

[আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, বুখারী হা/৩৪৬৪ ‘নবীদের কাহিনী’ অধ্যায়, অনুচেছদ-৫১; মুসলিম হা/২৯৬৪, মিশকাত হা/১৮৭৮ ‘যাকাত’ অধ্যায়, অনুচেছদ-৫]

 শিক্ষা : সর্বদা আল্লাহর নে’মতের শোকর-গুযার হতে হবে।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বীরগঞ্জে বীজ ডিলার ও কৃষক সমাবেশ

হাদিসের গল্পঃ কুষ্ঠরোগী, অন্ধ ও টেকোর কাহিনী !

আপডেট সময় : ১১:৩৭:৩৪ পূর্বাহ্ণ, বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬

বনী ইসরাঈলের মাঝে তিনজন ব্যক্তি ছিল- কুষ্ঠরোগী টেকো ও অন্ধ।মহান  আল্লাহ্‌  তাদেরকে  পরীক্ষা  করতে  চাইলেন  এবং  তাদের  নিকট একজন ফেরেশতা পাঠালেন।

অতঃপর কুষ্ঠরোগীর কাছে এসে তিনি বললেন,‘তোমার সবচেয়ে পছন্দের জিনিস কোনটি?সে বলল,  ‘সুন্দর রং ও সুন্দর চামড়া। কেননা মানুষ আমাকে ঘৃণা করে’। ফেরেশতা তার শরীরে হাত বুলালেন। এতে তার রোগ দূর হ’ল এবং তাকে সুন্দর বর্ণ ও সু্নদর চামড়া দান করা হ’ল।

অতঃপর তিনি প্রশ্ন করলেন, ‘তোমার নিকট কোন্ সম্পদ সবচেয়ে বেশী পছন্দনীয়? সে বলল,  উট অথবা গরু’। এ ব্যাপারে বর্ণনাকারীর সন্দেহ রয়েছে যে,কুষ্ঠরোগী বা টেকো দু’জনের  একজন বলেছিল উট  আর অপরজন বলেছিল গরু। তাকে তখন দশ মাসের গর্ভবতী  একটি  উটনী  দেয়া  হ’ল। ফেরেশতা  বললেন, ‘আল্লাহ এতে তোমায় বরকত দিন’।

তারপর তিনি টেকো ব্যক্তির কাছে গিয়ে প্রশ্ন করলেন, ‘তোমার সবচেয়ে পছন্দের জিনিস কোনটি? সে বলল, ‘সুন্দর চুল এবং এই টাক হ’তে মুক্তি, লোকেরা যার কারণে আমাকে ঘৃণা করে’।

বর্ণনাকারী বলেন, তিনি তার মাথায় হাত বুলালেন। এতে তার টাক ভাল হয়ে গেল এবং তাকে সুন্দর চুল দান করা হ’ল। এরপর ফেরেশতা বললেন, ‘কোন মাল তোমার নিকট অধিক প্রিয়’? সে বলল, গরু। বর্ণনাকারী বলেন,তখন তাকে একটি গর্ভবতী গাভী দেয়া হ’ল। ফেরেশতা বললেন, আল্লাহ এতে তোমাকে বরকত দিন।

তারপর ফেরেশতা অন্ধ ব্যক্তির  কাছে  এসে  প্রশ্ন  করলেন,  ‘তোমার  অধিক  পছন্দের  জিনিস কোনটি’? সে বলল, ‘আল্লাহ আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিন, আমি যাতে মানুষকে দেখতে পারি’।

ফেরেশতা তার চোখ স্পর্শ করলেন। এতে তার চোখের দৃষ্টি আল্লাহ ফিরিয়ে দিলেন। এরপর ফেরেশতা প্রশ্ন করলেন,‘কোন মাল তোমার নিকট অধিক প্রিয়’? সে বলল, ছাগল। তাকে তখন এমন ছাগী দেয়া হ’ল, যা অধিক সংখ্যক বাচ্চা দেয়।

তারপর উট, গাভী ও ছাগলের বাচচা হ’ল। ফলে একজনের উটে ময়দান ভরে গেল, অপরজনের গরুতে মাঠ পূর্ণ হয়ে গেল এবং আর একজনের ছাগলে উপত্যকা ভরে গেল।

তারপর ফেরেশতা কুষ্ঠরোগীর কাছে তাঁর প্রথম রূপ ধারণ করে এসে বললেন, ‘আমি একজন মিসকীন। সফরে আমার সবকিছু নিঃশেষ হয়ে গেছে। আজ আল্লাহ ব্যতীত কেউ নেই, যার সাহায্যে আমি আমার গন্তব্যে পৌছাতে পারি, তারপর তোমার সহায়তায়। যে আল্লাহ তোমাকে সুন্দর বর্ণ, সুন্দর ত্বক ও সম্পদ দিয়েছেন, সে আল্লাহর নামে তোমার নিকট আমি একটা উট চাচিছ, যার সাহায্যে আমি গন্তব্যে পৌছাতে পারি’।

সে বলল,‘(আমার উপর) অনেকের অধিকার রয়েছে’। ফেরেশতা বললেন,‘তোমাকে বোধ হয় আমি চিনি। তুমি কি কুষ্ঠরোগী ছিলে না? লোকেরা তোমাকে কি ঘৃণা  করত  না? তুমি না নিঃস্ব ছিলে? অতঃপর আল্লাহ তোমাকে সম্পদ দিয়েছেন’। সে বলল, ‘এই সম্পদ তো আমি উত্তরাধিকার সূত্রে পূর্বপুরুষ থেকে পেয়েছি’।

তিনি বললেন, ‘তুমি যদি মিথ্যাবাদী হও, তাহ’লে তোমাকে যেন আল্লাহ আগের মতো করে দেন’।

এরপর তিনি টেকো ব্যক্তির কাছে তাঁর প্রথম রূপ ধারণ করে এসে প্রথম লোকটিকে যা বলেছিলেন তা বললেন এবং সেও একই উত্তর দিল,যা পূর্বের লোকটি দিয়েছিল। ফেরেশতা একেও বললেন,‘তুমি যদি মিথ্যাবাদী হয়ে থাক, তাহলে আল্লাহ যেন তোমাকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দেন’।

এরপর ফেরেশতা অন্ধ ব্যক্তির কাছে তাঁর আগের রূপ ধারণ করে এসে বললেন, ‘আমি একজন মিসকীন মুসাফির। আমার সবকিছু সফরে নিঃশেষ হয়ে গেছে। এখন গন্তব্যে পৌঁছাতে আল্লাহ ব্যতীত আর কোন উপায় নেই, তারপর তোমার সহায়তায়। সেই আল্লাহর নামে তোমার কাছে একটি ছাগল সাহায্য চাচিছ, যিনি তোমাকে তোমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন’।  এ ছাগলটি দিয়ে আমি বাড়ি পৌছাতে পারব।

লোকটি বলল, ‘আমি অন্ধ ছিলাম। আল্লাহ্‌ আমার দৃষ্টিশক্তি ফেরত দিয়েছেন। আমি দরিদ্র ছিলাম, আল্লাহই আমাকে ধনী করেছেন। কাজেই তোমার যত ইচছা মাল তুমি নিয়ে যাও। আল্লাহর শপথ! মহান আল্লাহর ওয়াস্তে আজ তুমি যা কিছু  নিবে, তার জন্য আমি আজ তোমার নিকট কোন প্রশংসাই দাবী করব না’।

ফেরেশতা বললেন, ‘তোমার সম্পদ তোমার কাছেই রাখ। তোমাদেরকে শুধুমাত্র পরীক্ষা করা হয়েছে। তোমার প্রতি আল্লাহ তা‘আলা সন্তুষ্ট এবং তোমার অপর দু’জন সাথীর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন’।

[আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, বুখারী হা/৩৪৬৪ ‘নবীদের কাহিনী’ অধ্যায়, অনুচেছদ-৫১; মুসলিম হা/২৯৬৪, মিশকাত হা/১৮৭৮ ‘যাকাত’ অধ্যায়, অনুচেছদ-৫]

 শিক্ষা : সর্বদা আল্লাহর নে’মতের শোকর-গুযার হতে হবে।