শিরোনাম :
Logo বীরগঞ্জে ক্ষমতার অপব্যবহারকারী ডিপিইও নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মানববন্ধন। Logo টাকার জন্য হরিদাস বাবু’কে হয়রানী তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার অনুসন্ধানে প্রমাণ। Logo খুবির সঙ্গে গবেষণা সহযোগিতায় আগ্রহ জাপানি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের Logo শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পথে ট্রাকের ধাক্কায় এনজিও কর্মীর মৃত্যু Logo সাতক্ষীরায় রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ তরুণী, থানায় সাধারণ ডায়েরি Logo আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস ২০২৫ উপলক্ষে কয়রায় র‍্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত Logo দর্শনা থানা পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযান, ৪ কেজি গাঁজাসহ আটক ১ Logo জীবননগরে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস-২০২৫ উদযাপন Logo আইএফএডিকে বাংলাদেশের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তাদের জন্য সামাজিক ব্যবসা তহবিল গঠনের প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার Logo চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ডিঙ্গেদহ এলাকায় বিষাক্ত মদপানে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে।

রোহিঙ্গা শিশুদের নিয়ে চরম উদ্বেগে আইআরসি

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ০৬:৪১:০৭ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫
  • ৭৪৪ বার পড়া হয়েছে

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে হঠাৎ করে শিক্ষাকেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রায় ৫ লাখ শিশু চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যেই শিক্ষাবঞ্চিত হয়ে পড়বে বলে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি (আইআরসি)।

এই শিক্ষাকেন্দ্রগুলো বন্ধ হওয়ার পেছনে মূল কারণ হিসেবে সংস্থাটি উল্লেখ করেছে তীব্র তহবিল সংকট এবং যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দাতাদের মানবিক সহায়তা কমিয়ে দেওয়া এবং বন্ধ করে দেওয়া।

এ বছর মে মাস পর্যন্ত ‘এডুকেশন ক্যানট ওয়েট’ প্রোগ্রামের আওতায় কক্সবাজারের পাঁচটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের জন্য প্রারম্ভিক শিক্ষা এবং ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের জন্য ত্বরান্বিত শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল আইআরসি ও তাদের স্থানীয় অংশীদাররা।
আইআরসি জানায়, শিক্ষার সুযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এসব শিশু এখন শিশুশ্রম, মানবপাচার ও বাল্যবিবাহের মতো ঝুঁকিতে পড়ছে—যা বিশেষভাবে মেয়েশিশুদের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠেছে।

আইআরসি’র এশিয়া অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক এবং বাংলাদেশ পরিচালক হাসিনা রহমান বলেন, ‘রোহিঙ্গা শিশুদের একটি সম্পূর্ণ প্রজন্মের জন্য এটি ভয়াবহ বিপর্যয়। শিক্ষা কোনো বিলাসিতা নয়, এটি একটি জীবনরক্ষাকারী উপাদান। শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করে তাদের শুধু শেখার অধিকারই কেড়ে নেওয়া হচ্ছে না বরং তাদের সুরক্ষা ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনাও ধ্বংস করা হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কক্সবাজারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অর্ধেকের বেশি শিশু। এসব শিক্ষাকেন্দ্র বন্ধ হলে, নিরাপদ ও মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে গত কয়েক বছরের অগ্রগতি বিলীন হয়ে যাবে। আমরা আন্তর্জাতিক দাতাদের প্রতি আহ্বান জানাই—শরণার্থী শিশুদের শিক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে বিনিয়োগ বাড়ান, অনুদান পুনর্বহাল করুন এবং মেয়েশিশুদের অগ্রাধিকার দিন।’

শিক্ষাকেন্দ্র বন্ধ হওয়ায় উদ্বেগ জানিয়ে নিজস্ব ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে রোহিঙ্গা শিশুরাও। ১৪ বছর বয়সী জান্নাত বিবি বলেন, ‘আমি অনুরোধ করছি যেন শিক্ষাকেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়। পড়াশোনা ছাড়া আমি আমার সমাজের জন্য কিছু করতে পারব না।১০ বছর বয়সী আবুল হাসিম বলেন, ‘যদি আমি স্কুলে না যেতে পারি, তাহলে ভবিষ্যতে আমি ডাক্তার হতে পারব না। আমাদের শিক্ষিত করে তুলুন, যেন আমরা আমাদের সমাজের ভাগ্য বদলাতে পারি।’

গত কয়েক বছর ধরে আইআরসি ও অন্যান্য সংস্থা বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে মিলে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য শিক্ষার সুযোগ তৈরি করে এসেছে। এতে এই দীর্ঘস্থায়ী সংকটে শিশুদের মাঝে আশার সঞ্চার হয়েছিল। এখন এই শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে তাদের দুর্বলতা আরও গভীর হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আইআরসি আন্তর্জাতিক দাতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে—কক্সবাজারে জরুরি শিক্ষা কার্যক্রম পুনরায় চালুর জন্য দ্রুত, স্থায়ী ও নমনীয় তহবিল বরাদ্দ দিতে হবে। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানানো হয়েছে—শরণার্থীদের জন্য পুনর্বাসন, বৃত্তি এবং ক্যাম্পের বাইরেও শিক্ষা কার্যক্রমের সুযোগ তৈরি করতে।

দীর্ঘ মেয়াদে বাস্তুচ্যুতি কোনোভাবেই মৌলিক অধিকার থেকে দীর্ঘদিনের বঞ্চনার মানে হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছে সংস্থাটি।উল্লেখ্য, কক্সবাজারে স্বাস্থ্য, সুরক্ষা, জীবিকা, জরুরি সহায়তা ও শিক্ষা সেবা দিয়ে যাচ্ছে আইআরসি। প্রয়োজন অনুযায়ী তহবিল পেলে এই সহায়তা আরও বাড়ানোর প্রস্তুতিও তাদের রয়েছে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

বীরগঞ্জে ক্ষমতার অপব্যবহারকারী ডিপিইও নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মানববন্ধন।

রোহিঙ্গা শিশুদের নিয়ে চরম উদ্বেগে আইআরসি

আপডেট সময় : ০৬:৪১:০৭ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে হঠাৎ করে শিক্ষাকেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রায় ৫ লাখ শিশু চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যেই শিক্ষাবঞ্চিত হয়ে পড়বে বলে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি (আইআরসি)।

এই শিক্ষাকেন্দ্রগুলো বন্ধ হওয়ার পেছনে মূল কারণ হিসেবে সংস্থাটি উল্লেখ করেছে তীব্র তহবিল সংকট এবং যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দাতাদের মানবিক সহায়তা কমিয়ে দেওয়া এবং বন্ধ করে দেওয়া।

এ বছর মে মাস পর্যন্ত ‘এডুকেশন ক্যানট ওয়েট’ প্রোগ্রামের আওতায় কক্সবাজারের পাঁচটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের জন্য প্রারম্ভিক শিক্ষা এবং ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের জন্য ত্বরান্বিত শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল আইআরসি ও তাদের স্থানীয় অংশীদাররা।
আইআরসি জানায়, শিক্ষার সুযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এসব শিশু এখন শিশুশ্রম, মানবপাচার ও বাল্যবিবাহের মতো ঝুঁকিতে পড়ছে—যা বিশেষভাবে মেয়েশিশুদের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠেছে।

আইআরসি’র এশিয়া অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক এবং বাংলাদেশ পরিচালক হাসিনা রহমান বলেন, ‘রোহিঙ্গা শিশুদের একটি সম্পূর্ণ প্রজন্মের জন্য এটি ভয়াবহ বিপর্যয়। শিক্ষা কোনো বিলাসিতা নয়, এটি একটি জীবনরক্ষাকারী উপাদান। শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করে তাদের শুধু শেখার অধিকারই কেড়ে নেওয়া হচ্ছে না বরং তাদের সুরক্ষা ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনাও ধ্বংস করা হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কক্সবাজারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অর্ধেকের বেশি শিশু। এসব শিক্ষাকেন্দ্র বন্ধ হলে, নিরাপদ ও মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে গত কয়েক বছরের অগ্রগতি বিলীন হয়ে যাবে। আমরা আন্তর্জাতিক দাতাদের প্রতি আহ্বান জানাই—শরণার্থী শিশুদের শিক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে বিনিয়োগ বাড়ান, অনুদান পুনর্বহাল করুন এবং মেয়েশিশুদের অগ্রাধিকার দিন।’

শিক্ষাকেন্দ্র বন্ধ হওয়ায় উদ্বেগ জানিয়ে নিজস্ব ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে রোহিঙ্গা শিশুরাও। ১৪ বছর বয়সী জান্নাত বিবি বলেন, ‘আমি অনুরোধ করছি যেন শিক্ষাকেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়। পড়াশোনা ছাড়া আমি আমার সমাজের জন্য কিছু করতে পারব না।১০ বছর বয়সী আবুল হাসিম বলেন, ‘যদি আমি স্কুলে না যেতে পারি, তাহলে ভবিষ্যতে আমি ডাক্তার হতে পারব না। আমাদের শিক্ষিত করে তুলুন, যেন আমরা আমাদের সমাজের ভাগ্য বদলাতে পারি।’

গত কয়েক বছর ধরে আইআরসি ও অন্যান্য সংস্থা বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে মিলে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য শিক্ষার সুযোগ তৈরি করে এসেছে। এতে এই দীর্ঘস্থায়ী সংকটে শিশুদের মাঝে আশার সঞ্চার হয়েছিল। এখন এই শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে তাদের দুর্বলতা আরও গভীর হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আইআরসি আন্তর্জাতিক দাতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে—কক্সবাজারে জরুরি শিক্ষা কার্যক্রম পুনরায় চালুর জন্য দ্রুত, স্থায়ী ও নমনীয় তহবিল বরাদ্দ দিতে হবে। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানানো হয়েছে—শরণার্থীদের জন্য পুনর্বাসন, বৃত্তি এবং ক্যাম্পের বাইরেও শিক্ষা কার্যক্রমের সুযোগ তৈরি করতে।

দীর্ঘ মেয়াদে বাস্তুচ্যুতি কোনোভাবেই মৌলিক অধিকার থেকে দীর্ঘদিনের বঞ্চনার মানে হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছে সংস্থাটি।উল্লেখ্য, কক্সবাজারে স্বাস্থ্য, সুরক্ষা, জীবিকা, জরুরি সহায়তা ও শিক্ষা সেবা দিয়ে যাচ্ছে আইআরসি। প্রয়োজন অনুযায়ী তহবিল পেলে এই সহায়তা আরও বাড়ানোর প্রস্তুতিও তাদের রয়েছে।