আসাদ শাসনের নৃশংসতার শেষ অধ্যায়

0
2

সিরিয়ার বিদ্রোহীদের প্রবল চাপের মুখে রোববার (৮ ডিসেম্বর) সকালেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। এর মধ্য দিয়ে দেশটিতে আসাদ পরিবারের ৫৪ বছরের শাসনামলের অবসান হয়েছে।

এদিকে আসাদ সরকার পতনের পরে সিরিয়ার কুখ্যাত সায়দনায়া কারাগারে মানুষ আটকা পড়ে থাকার অভিযোগ উঠেছে। সিভিল ডিফেন্স গ্রুপ “হোয়াইট হেলমেটস” জানিয়েছে, জীবিত বন্দিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, কারাগারের ভূগর্ভস্থ সেলগুলোতে মানুষ আটকা পড়েছে। বন্দিদের উদ্ধারকাজে পাঁচটি বিশেষ দল মোতায়েন করা হয়েছে, যাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন কারাগারের ভৌগোলিক কাঠামো সম্পর্কে পরিচিত একজন গাইড। সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে এই তথ্য।

দামেস্ক প্রদেশের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভূগর্ভস্থ সেলের দরজা খুলতে না পারার কারণে বন্দিদের মুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। সাবেক সেনা ও কারা কর্মীদের কাছ থেকে দরজার কোড সংগ্রহের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, এক ব্যক্তি দেয়াল ভেঙে গোপন সেলের প্রবেশপথ উন্মোচন করছেন। আরেকটি ভিডিওতে বন্দি নারীদের সঙ্গে এক শিশুকে মুক্তি পেতে দেখা গেছে। এ সময় বিদ্রোহীদের একজন তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, ” তার (আসাদ) পতন ঘটেছে। ভয়ের কিছু নেই।”

সায়দনায়া সিরিয়ার সামরিক কারাগার। কারাগারটি দেশটির রাজধানী দামেস্ক থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। এটি বিশ্বের অন্যতম কুখ্যাত বন্দিশালা হিসেবে পরিচিত। সিরিয়ার সরকারের অধীনে পরিচালিত এই কারাগারটি বছরের পর বছর ধরে অত্যাচার এবং গণফাঁসির জন্য কুখ্যাত।

সায়দনায়াকে গণফাঁসির কেন্দ্র হিসেবে বর্ণনা করা হয়। বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, প্রতি সপ্তাহে বন্দিদের দল বেঁধে ফাঁসিতে ঝোলানো হত। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ২০১৭ সালের এক প্রতিবেদনে সায়দনায়াকে “মানব কসাইখানা” হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ২০১১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সেখানে ৩০,০০০ বন্দি নির্যাতন, অভুক্তি, চিকিৎসার অভাবে কিংবা মৃত্যুদণ্ডে প্রাণ হারিয়েছে বলে অভিযোগ।

সায়দনায়া থেকে বেঁচে ফেরা বন্দি ওমর আল-শোগর জানিয়েছেন, “তারা আমাকে আমার কাজিনকে নির্যাতন করতে বাধ্য করেছিল। তাকে নির্যাতন না করলে আমাদের দুজনকেই হত্যা করা হতো।”

হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) বিদ্রোহীরা হোমস থেকে ৩,৫০০ বন্দিকে মুক্ত করার পর রাজধানী দামেস্কের সাইদনায়া কারাগারেও অভিযান চালায়। এসময় সায়দনায়াতে আসাদের অত্যাচারের যুগের সমাপ্তি ঘটেছে বলে ঘোষণা করেছে বিদ্রোহীরা।