বিক্ষোভ ও সংঘাত অব্যাহত থাকায় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরের তিন জেলায় শান্তি রক্ষায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়েছে। ইম্ফল পশ্চিম, ইম্ফল পূর্ব এবং থৌবল জেলায় মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টা থেকে সর্বাত্মক কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে। রাজ্যের শান্তি পুনরুদ্ধারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের এক দিন পরই মণিপুরের এই তিন জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। খবর হিন্দুস্তান টাইমসের।
সহিংস সংঘর্ষের জেরে আরও একবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মণিপুরের পরিস্থিতি। গত কয়েকদিনে দফায় দফায় গুলি বিনিময়, বোমা বিস্ফোরণ, ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা, বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু, মণিপুর রাইফেলসের দুটি ব্যাটেলিয়নের অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্রশস্ত্র লুটের চেষ্টাসহ একাধিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অবস্থা সামাল দিতে মোতায়েন করা হয়েছে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও যৌথ বাহিনী।
আদেশ অনুযায়ী, কারফিউ চলাকালীন বাসিন্দাদের তাদের বাসস্থানের বাইরে চলাচলের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ১০ সেপ্টেম্বর ভোর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় বেলা ১১টা থেকে তা আবার কঠোরভাবে কার্যকর করা হয়েছে।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে শুধু জরুরি পরিষেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে স্বাস্থ্যকর্মী, বিদ্যুৎ ও পানীয় জল পরিষেবার কর্মী, প্রেস ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং আদালতের কর্মচারীরা অন্তর্ভুক্ত।
এদিকে, শান্তি ফেরানোর ক্ষেত্রে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রতিবাদে নেমেছেন বহু মানুষ। রোববার রাতে বিপুল সংখ্যক নারী ইম্ফলে রাস্তায় নামেন। রাজ্যে শান্তি ফেরানোর পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের পদত্যাগের দাবি তুলেছেন তারা।
এই আবহে রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠক করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন মণিপুরের পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য প্রশাসন সচেষ্ট। সাম্প্রতিক সহিংস সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের পাশে রয়েছে তার রাজ্যের বিজেপি সরকার। নিহত এক ব্যক্তির পরিবারের হাতে ক্ষতিপূরণের টাকাও তুলে দেন তিনি।
মণিপুর পুলিশের কর্মকর্তা কে খাবিব (আইজিপি, ইন্টেলিজেন্স) বলেন, ‘রাজ্যে সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনাগুলোর কারণে, মণিপুর পুলিশ যৌথ বাহিনীর সঙ্গে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জেলা সদরে রয়েছেন এবং পরিস্থিতি মনিটর করছেন। ’
ড্রোনের সাহায্যে হামলা চালানো হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। পুলিশের সন্দেহ হামলাকারী সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি সম্প্রদায়ভুক্ত। তারপর থেকে রাজ্যের একাধিক জায়গায় হামলা হয়েছে এবং কুকি ও মেইতেই সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে বলে অভিযোগ। পুলিশের সঙ্গেও কুকি সম্প্রদায়ের সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যদের সংঘর্ষ হয়েছে বলে অভিযোগ।