সোমবার | ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ | শীতকাল
শিরোনাম :
Logo কুয়াশার চাদরে মোড়া ডিসেম্বরের ক্যাম্পাস Logo যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে রাশিয়ার ওপর আরও চাপ প্রয়োগের আহ্বান জেলেনস্কির Logo নির্বাচনে আস্থার পরিবেশ তৈরিতে অপারেশন শুরু করবে যৌথবাহিনী: ইসি সানাউল্লাহ Logo রজব মাসের চাঁদ দেখা গেছে Logo কুমিল্লায় আইদি পরিবহন প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা, চাঁদপুরে মানববন্ধন Logo মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন চাঁদপুর-৩ আসনে ইসলামী ফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী সাংবাদিক আহসান উল্লাহ Logo আগামী ২৭ ডিসেম্বর শনিবার চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমির শীতকালীন গিটারসন্ধ্যা Logo তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষ্যে সাতক্ষীরায় স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রস্তুতি সভা ও শুভেচ্ছা মিছিল Logo সুদানের আবেই শান্তিরক্ষা মিশনের ড্রোন হামলায় শহীদ সেনা সদস্যের রাষ্টীয় মর্যাদায় দাফন সম্পন্ন পলাশবাড়ীতে Logo ৪৭৫ কোটি টাকা ‘জলে’: খনন শেষ হতেই ভরাট সাতক্ষীরার নদী-খাল ​জলাবদ্ধতা কাটেনি, উল্টো সেচ সংকটে কৃষক ও ঘেরমালিকরা ​

চুয়াডাঙ্গার চিত্রা খননে সুফল পাচ্ছে না নদী পাড়ের মানুষ

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ১২:৩২:০০ অপরাহ্ণ, শনিবার, ৩১ আগস্ট ২০২৪
  • ৭৫৮ বার পড়া হয়েছে

পূর্বে সারা বছর পানিতে টইটুম্বর থাকলেও বর্তমানে বছরের বেশির ভাগ সময় পানিশূন্য থাকে চিত্রা নদী। দখল, দূষণ আর পলিমাটি জমে দৃশ্যত এক প্রকার বিলিন হওয়ায় চিত্রা নদী প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে খনন করা হলেও কার্যত সুফল পায়নি নদীর দুই পাড়ের বাসিন্দারা। অনেকেই হারিয়েছেন ফসলি জমি। সেই সাথে নদী থেকে বিলুপ্ত হতে বসেছে দেশীও প্রজাতির মাছ। খননকৃত নদীর মাটি দুপাড়ে গাইড আদালে রেখে দিলেও তা বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে জেলা সদরের আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতারা।

চিত্রার মাটি ও বালু বিক্রি দ্বন্দ্বে জড়িয়ে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে অহরহ। আওয়ামী লীগ সরকার নদী খননের উদ্যোগ নিলেও আওয়ামী লীগের স্থানীয় অনেক নেতা পরবর্তীতে চিত্রা নদীর জমি দখল করে পুকুর খনন বা চাষাবাদ করেছেন। দলীয় দখলদারদের কবজা থেকে চিত্রা নদীকে উদ্ধার করে খনন বন্ধ থাকা অংশটুকু খনন করে নদীর স্বাভাবিক গতি প্রবাহ ফিরে আনার দাবি সচেতন মহলের।

চিত্রা নদী চুয়াডাঙ্গার দর্শনার নিম্ন অঞ্চল থেকে উৎপন্ন হয়ে ১৭২ কিলোমিটার বয়ে গিয়ে ভৈরবের সাথে মিশেছে। মাথাভাঙ্গা নদী থেকে চিত্রার জন্ম হলেও মূল নদীর জলে¯্রাত বঞ্চিত হয়ে চিত্রা দক্ষিণ পূর্ব মুখে দর্শনার নিম্ন অংশ থেকে অঁাকাবাঁকা পথে চুয়াডাঙ্গা জেলার মধ্যে প্রায় ২৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছে। এই নদীর পানি সর্বশেষ জরিপ করা হয় ১৯৭১ সালে। তখন নদীতে ৩ হাজার কিউসেক পানি প্রবাহিত হতো।
সরেজমিনে চুয়াডাঙ্গা সদরের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত একসময়ের খরে¯্রাত চিত্রা নদী খনন পরবর্তী দৃশ্য দেখলে মনে হবে নদী খনন করে কচুরিপনার চাষ করা হচ্ছে। সুদীর্ঘ সময় ধরে দখল দূষণ ও পলিমাটি জমা পড়ে মৃতপ্রায় নদীটি বাঁচাতে খননের উদ্যোগ নেওয়া হলেও মাঝপথে মামলা জটিলতায় তা থেমে যাওয়ায় কার্যত চাষের জমি নষ্ট ও কিছু স্বার্থন্বেষী মহলের মাটি ও বালি বিক্রির পথ হয়ে দাঁড়ায় চিত্রা।

২০২০ সালে জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাস্তবায়নাধীন ৬৪টি জেলার অভ্যন্তরীণ ছোট নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্প ১ম পর্যায়’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় চুয়াডাঙ্গার চিত্রানদী পুনঃখনন কাজের উদ্বোধন করা হয়। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দোস্ত, কুন্দিপুর, কুকিয়াচাঁদপুর, শ্রীকোল এলাকার চিত্রানদীর ১০ কিলোমিটার পুনঃখনন প্রকল্পের কাজের বেশ অগ্রগতি সে সময় লক্ষ্য করা যায়। ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দর্শনা উৎসমুখ থেকে কালুপোল পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার চিত্রা নদীর পুনঃখনন কাজ শুরু হয়। যা সে বছর ৩১ মে শেষ হবার কথা থাকলেও সদরের বড়শলুয়া পর্যন্ত খনন কাজ চলা অবস্থায় মামলা জটিলতায় বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে এই কাজে আর কোনো অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি। ফলে সরকারের পুরো টাকায় পানিতে গেছে বলে মনে করে এলাকাবাসী।

অভিযোগ রয়েছে, চিত্রা নদী পাড়ের মাটি বিক্রির পাশাপাশি স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা—কর্মীরা চিত্রার অন্তত ২০টি স্থানে প্রকাশ্যে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করে। যার মধ্যে নেহালপুর, শ্রীকোল, ফুলবাড়ী, বড়শলুয়া, তিতুদহ, খাড়াগোদা, গোষ্টবিহার ও কালুপোল গ্রাম অন্যতম। বড়শলুয়া বসতিপাড়ার অদূরে চিত্রা নদী থেকে উত্তোলিত বালি বিক্রি নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে খুন হন তিতুদহ ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের কর্মী জাহাঙ্গীর আলম।

অন্যদিকে দীর্ঘদিন যাবত অগভীর অবস্থায় থাকা চিত্রার জমি বিভিন্ন জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে নিজেদের বলে দাবি করে চাষাবাদ করতে থাকে প্রভাবশালীরা। চিত্রা নদী এখন সব মৌসুমেই কৃষকদের গলার কাটায় পরিণত হয়েছে। শুকনো মৌসুমে যেমন এই নদী থাকে পানি শূন্য, তেমন বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত বৃষ্টিতে পানি বেড়ে সংলগ্ন কৃষকদের জমিতে জমে ফসল নষ্ট হয়।

বড়শলুয়া গ্রামের বাসিন্দা মোমিনুল ইসলাম বলেন, নদীর জায়গা দখলমুক্ত ও নদীকে তার গতি মতো চলার ব্যবস্থা করে দিলে চিত্রা নদী এই এলাকার মানুষের জন্য আশির্বাদ হত। কিন্তু এখন তার বিপরীত।

নেহালপুর গ্রামের কৃষক সাইদ বলেন, আগে চিত্রা নদীতে বর্ষা মৌসুমে দেশীও মাছ পাওয়া যেত, তাছাড়া ধান চাষও করা হত। কিন্তু খননের পর নদীটি পুরোটাই একটা বড় গর্তে পরিণত হয়েছে। বলদিয়া গ্রামের শিপন হোসেন বলেন, আগে পশ্চিম দিক দিয়ে পূর্ব দিকে ে¯্রাত যেত। আর এখন পূর্ব দিক দিয়ে পশ্চিম দিকে ে¯্রাত যায়।
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, নদীর আংশিক অংশ খনন করার জন্য এমন অবস্থা হয়েছে। চিত্রা পাড়ের বাসিন্দারা আসন্ন শুকনো মৌসুমে চিত্রা নদীর চুয়াডাঙ্গা অংশের খনন সম্পন্ন করার জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

কুয়াশার চাদরে মোড়া ডিসেম্বরের ক্যাম্পাস

চুয়াডাঙ্গার চিত্রা খননে সুফল পাচ্ছে না নদী পাড়ের মানুষ

আপডেট সময় : ১২:৩২:০০ অপরাহ্ণ, শনিবার, ৩১ আগস্ট ২০২৪

পূর্বে সারা বছর পানিতে টইটুম্বর থাকলেও বর্তমানে বছরের বেশির ভাগ সময় পানিশূন্য থাকে চিত্রা নদী। দখল, দূষণ আর পলিমাটি জমে দৃশ্যত এক প্রকার বিলিন হওয়ায় চিত্রা নদী প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে খনন করা হলেও কার্যত সুফল পায়নি নদীর দুই পাড়ের বাসিন্দারা। অনেকেই হারিয়েছেন ফসলি জমি। সেই সাথে নদী থেকে বিলুপ্ত হতে বসেছে দেশীও প্রজাতির মাছ। খননকৃত নদীর মাটি দুপাড়ে গাইড আদালে রেখে দিলেও তা বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে জেলা সদরের আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতারা।

চিত্রার মাটি ও বালু বিক্রি দ্বন্দ্বে জড়িয়ে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে অহরহ। আওয়ামী লীগ সরকার নদী খননের উদ্যোগ নিলেও আওয়ামী লীগের স্থানীয় অনেক নেতা পরবর্তীতে চিত্রা নদীর জমি দখল করে পুকুর খনন বা চাষাবাদ করেছেন। দলীয় দখলদারদের কবজা থেকে চিত্রা নদীকে উদ্ধার করে খনন বন্ধ থাকা অংশটুকু খনন করে নদীর স্বাভাবিক গতি প্রবাহ ফিরে আনার দাবি সচেতন মহলের।

চিত্রা নদী চুয়াডাঙ্গার দর্শনার নিম্ন অঞ্চল থেকে উৎপন্ন হয়ে ১৭২ কিলোমিটার বয়ে গিয়ে ভৈরবের সাথে মিশেছে। মাথাভাঙ্গা নদী থেকে চিত্রার জন্ম হলেও মূল নদীর জলে¯্রাত বঞ্চিত হয়ে চিত্রা দক্ষিণ পূর্ব মুখে দর্শনার নিম্ন অংশ থেকে অঁাকাবাঁকা পথে চুয়াডাঙ্গা জেলার মধ্যে প্রায় ২৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছে। এই নদীর পানি সর্বশেষ জরিপ করা হয় ১৯৭১ সালে। তখন নদীতে ৩ হাজার কিউসেক পানি প্রবাহিত হতো।
সরেজমিনে চুয়াডাঙ্গা সদরের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত একসময়ের খরে¯্রাত চিত্রা নদী খনন পরবর্তী দৃশ্য দেখলে মনে হবে নদী খনন করে কচুরিপনার চাষ করা হচ্ছে। সুদীর্ঘ সময় ধরে দখল দূষণ ও পলিমাটি জমা পড়ে মৃতপ্রায় নদীটি বাঁচাতে খননের উদ্যোগ নেওয়া হলেও মাঝপথে মামলা জটিলতায় তা থেমে যাওয়ায় কার্যত চাষের জমি নষ্ট ও কিছু স্বার্থন্বেষী মহলের মাটি ও বালি বিক্রির পথ হয়ে দাঁড়ায় চিত্রা।

২০২০ সালে জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাস্তবায়নাধীন ৬৪টি জেলার অভ্যন্তরীণ ছোট নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্প ১ম পর্যায়’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় চুয়াডাঙ্গার চিত্রানদী পুনঃখনন কাজের উদ্বোধন করা হয়। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দোস্ত, কুন্দিপুর, কুকিয়াচাঁদপুর, শ্রীকোল এলাকার চিত্রানদীর ১০ কিলোমিটার পুনঃখনন প্রকল্পের কাজের বেশ অগ্রগতি সে সময় লক্ষ্য করা যায়। ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দর্শনা উৎসমুখ থেকে কালুপোল পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার চিত্রা নদীর পুনঃখনন কাজ শুরু হয়। যা সে বছর ৩১ মে শেষ হবার কথা থাকলেও সদরের বড়শলুয়া পর্যন্ত খনন কাজ চলা অবস্থায় মামলা জটিলতায় বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে এই কাজে আর কোনো অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি। ফলে সরকারের পুরো টাকায় পানিতে গেছে বলে মনে করে এলাকাবাসী।

অভিযোগ রয়েছে, চিত্রা নদী পাড়ের মাটি বিক্রির পাশাপাশি স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা—কর্মীরা চিত্রার অন্তত ২০টি স্থানে প্রকাশ্যে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করে। যার মধ্যে নেহালপুর, শ্রীকোল, ফুলবাড়ী, বড়শলুয়া, তিতুদহ, খাড়াগোদা, গোষ্টবিহার ও কালুপোল গ্রাম অন্যতম। বড়শলুয়া বসতিপাড়ার অদূরে চিত্রা নদী থেকে উত্তোলিত বালি বিক্রি নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে খুন হন তিতুদহ ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের কর্মী জাহাঙ্গীর আলম।

অন্যদিকে দীর্ঘদিন যাবত অগভীর অবস্থায় থাকা চিত্রার জমি বিভিন্ন জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে নিজেদের বলে দাবি করে চাষাবাদ করতে থাকে প্রভাবশালীরা। চিত্রা নদী এখন সব মৌসুমেই কৃষকদের গলার কাটায় পরিণত হয়েছে। শুকনো মৌসুমে যেমন এই নদী থাকে পানি শূন্য, তেমন বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত বৃষ্টিতে পানি বেড়ে সংলগ্ন কৃষকদের জমিতে জমে ফসল নষ্ট হয়।

বড়শলুয়া গ্রামের বাসিন্দা মোমিনুল ইসলাম বলেন, নদীর জায়গা দখলমুক্ত ও নদীকে তার গতি মতো চলার ব্যবস্থা করে দিলে চিত্রা নদী এই এলাকার মানুষের জন্য আশির্বাদ হত। কিন্তু এখন তার বিপরীত।

নেহালপুর গ্রামের কৃষক সাইদ বলেন, আগে চিত্রা নদীতে বর্ষা মৌসুমে দেশীও মাছ পাওয়া যেত, তাছাড়া ধান চাষও করা হত। কিন্তু খননের পর নদীটি পুরোটাই একটা বড় গর্তে পরিণত হয়েছে। বলদিয়া গ্রামের শিপন হোসেন বলেন, আগে পশ্চিম দিক দিয়ে পূর্ব দিকে ে¯্রাত যেত। আর এখন পূর্ব দিক দিয়ে পশ্চিম দিকে ে¯্রাত যায়।
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, নদীর আংশিক অংশ খনন করার জন্য এমন অবস্থা হয়েছে। চিত্রা পাড়ের বাসিন্দারা আসন্ন শুকনো মৌসুমে চিত্রা নদীর চুয়াডাঙ্গা অংশের খনন সম্পন্ন করার জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন।