নিউজ ডেস্ক:
বিশৃংখল চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ সু-শৃংখলে পরিণত হয়েছে প্রতিনিধি সভায়। চট্টগ্রামের দুই শীর্ষ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দিনের বিরোধটি ‘ঐক্যের বন্ধন’ দেখা গেছে গতকাল শনিবার। তৃণমূলের নেতারাও বক্তব্য রাখেন, খুবই সু-শৃঙ্খলভাবে। কেউ কারও পক্ষে-বিপক্ষে স্লোগানে বক্তব্য দেননি। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি দুই নেতার ঐক্য দেখে তার বক্তব্যে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানান তাদের দুই জনকে। আপনারা (মহিউদ্দিন-নাছির) অসাধ্যকে সাধন করেছেন। আমরাও ভাবতে পারিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভুটান যাওয়ার সময় বিমানবন্দরে পত্রিকায় দুই নেতার হাস্যোজ্জ্বল ছবি দেখে নেত্রীর চোখে-মুখে হাসির চেহারা দেখছিলাম। সভায় এ ঐক্য আমাদের উজ্জ্বল একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে এবং দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগকেও এটা অনুসরণ করতে বলেছেন ওবায়দুল কাদের।
তৃণমূলের নেতারা বলছেন, দুই নেতার ঐক্যই আগামী দিনের কাজ করার সুযোগ বৃদ্ধি পাবে। দলের স্বার্থে এ দুই নেতার ভূমিকা, আন্তরিকতা, উন্নয়ন, ঐক্যবদ্ধতার মাধ্যমেই সামনে পথ চলার গতি আরো শক্তিশালী হবে। তাতেই আগামী জাতীয় নির্বাচনে চট্টগ্রাম নগরসহ জেলায় বিজয়ী আশা করা যায়। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হওয়া মহানগর আওয়ামীলীগের প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি।
দীর্ঘ ৩৫ মিনিটের বক্তব্যে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের দল গোছানোর দিক-নির্দেশনাসহ আগামি জাতীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিজয় নিশ্চিত করতে সকল বেদাভেদ ভূলে ঐক্যের বন্ধনে থেকেই আগামীর পথচলার জন্য কাজ করার আহবান জানান।
মহিউদ্দিন-নাছিরের বিরোধের বিষয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরীর উদ্দেশ্য ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মহিউদ্দিন ভাই, নাছির (আ জ ম নাছির উদ্দীন) আপনার ছেলের মতো। সে (নাছির) যদি ভুল করে থাকে, তাহলে তাকে ঘরে ডেকে নিয়ে শাসন করবেন। কিন্তু আমরা ঘরের কথা কি এভাবে পর-কে বলতে পারি। তিনি বলেন, আমাদের সমস্যা হচ্ছে আমরা কেউ ধৈর্য্য ধরতে পারি না। অথচ আমাদের সবার উচিত ধৈর্য্য ধরা। এখানে কাদা ছোঁড়াছুড়ি হয়েছিল। অনেকে বলে ঢাকার হস্তক্ষেপে নাকি এসবের সমাধান হয়েছে। কিন্তু ঢাকার হস্তক্ষেপে এর সমাধান হয়নি। মুরব্বি হিসেবে মহিউদ্দিন ভাই নিজেই এর সমাধান করেছেন। মহিউদ্দিন ভাই, আপনি যদি মুরব্বির ভূমিকায় থাকেন তাহলে এখানে ঢাকাসহ কারও হস্তক্ষেপ করার দরকার নাই। আপনি পুরো চট্টগ্রাম বিভাগের মুরব্বি।
তৃণমূলের নেতাদের উদ্দেশ্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তৃণমূল থেকেই এ জায়গায় এসেছি। উনি (মহিউদ্দিন) আমারও মুরব্বি। যা হবার তা হয়েছে। আমরা সামনে আর বিভেদ চাই না। অসুস্থ প্রতিযোগিতা রাজনীতির জন্য শুভ নয়।
কওমি মাদ্রাসার সনদ স্বীকৃতির বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার কওমি মাদ্রাসার সনদকে স্বীকৃতি দিয়েছে, কিন্তু কোন চুক্তি বা জোট করেনি। আমরা হেফাজতের সঙ্গে কোন চুক্তি করিনি। একটা শিক্ষা ব্যবস্থাকে শিক্ষার মূলধারায় নিয়ে এসেছি। মাদ্রাসার লক্ষ লক্ষ ছাত্র, এদের কোন ঠিকানা নাই, এদের কোন ভবিষ্যত নাই, এরা চাকরি পাবে এমন কোন গ্যারান্টি নাই। এদেরকে আমাদের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে ফিরিয়ে এনেছি। এখানে স্বীকৃতি দেয়া আর জোট করা এক কথা নয়।
হেফাজতে ইসলামকে দিয়ে ৫ মে আরেকটি ‘শাপলা চত্বর’ সৃষ্টির পরিকল্পনার বিএনপি-জামায়াত করেছিল বলে অভিযোগ তুলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, তাদের (বিএনপি-জামায়াত) বড় স্বপ্ন ছিল। আগামী ৫ মে হেফাজতকে দিয়ে আরেকটা শাপল চত্বর বানানোর খায়েশ ছিল। কিন্তু শেখ হাসিনার কৌশলের কাছে সেই খায়েশটা চূর্ণবিচূর্ণ। এখন তাদের মন খারাপ।
তিনি বলেন, মাওলানা শফি হুজুর নিজেই তো বললেন যে জঙ্গিবাদ ইসলাম সমর্থন করে না। আমাদের প্রধান বিপদ, প্রধান শক্র জঙ্গিবাদ। কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি দেয়ার পর তারাও সেই জঙ্গিবাদকে এখন ভিন্নভাবে মোকাবেলার কথা বলছে।
ভারতের সম্পর্কের বিষয়ে বিএনপির ‘মিথ্যাচার’ করছেন জানিয়ে সেতু মন্ত্রী কাদের বলেন, আমরা ভারতের বন্ধু, কিন্তু আমরা বাংলাদেশের স্বার্থকে অক্ষুন্ন রেখে বন্ধুত্ব করি। ভারত আমাদের দু:সময়ের বন্ধু, এটা আমরা স্বীকার করি। কিন্তু জাতীয় স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে আওয়ামী লীগ কোন বন্ধুত্ব করতে পারে না। তিনি বলেন, নরেন্দ্র মোদি বা হিলারি ক্লিনটন আমাদের ক্ষমতায় বসাতে পারবে না। আমাদের ক্ষমতায় বসাতে পারবে বাংলাদেশের জনগণ। আমাদের ক্ষমতার উৎস জনগণ।
বিএনপির সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, বিএনপি ইস্যুর পর ইস্যু খাড়া করে আর সব ইস্যু মার খায়। শেখ হাসিনার কৌশলের কাছে, রাজনীতির দাবাখেলায় বিএনপি হেরে গেছে। মিথ্যাচার করে বিএনপি আগামী দিনেও আর জিততে পারবে না। তারা বলছে, আমরা নাকি হাওড়ে লুটপাট করছি। আসলে তাদের মনে অনেক জ্বালা। তারা ক্ষমতায় থাকলে হাওড়ে গিয়ে আরেকটা লুটপাটের আসর বসাতে পারত। এজন্য তাদের মন খারাপ হয়ে গেছে। বিএনপির নেতারা ঘরে বসে ফেসবুকে মিথ্যাচারের ভাঙা রেকর্ড বাজাচ্ছে।
চট্টগ্রামের রাজনীতির বিষয় উল্লেখ করে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি বলেন, চট্টগ্রামে এক সময় আমরা এতিম ছিলাম। নগর-উত্তর জেলা একছিল। প্রথমেই ঘরোয়া রাজনীতি শুরু করেছিলাম। নেতা-কর্মীরা নির্যাতিত হয়েছেন। অতীত সবকিছু ভূলে গিয়েছি আমরা। তিনি দলের নেতাদের গ্রুপিং এর বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সকল ভেদাভেদ ভুলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা এক এবং অভিন্ন। শেখ হাসিনা আজ বিশ্ব নেতৃত্বে চলে গেছেন। দেশও এগিয়ে যাচ্ছে। তবে আগামি নির্বাচনে সেই নৌকার নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।
বিএনপির উদ্দেশ্যে মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, বিএনপি এবার নির্বাচনে আসেননি। সেটা ছিল আপনাদের ভুল। রাজনীতির মাঠ থেকে অনেক দূরে চলে গেছেন। নিজেরা ভুল করে জনগণের উপর দায় চাপিয়েছেন। আগুন সন্ত্রাস করে মানুষকে কষ্ট দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনে যদি না আসে, আবারও যদি ভুল করে তাহলে এর দায়ভার বিএনপিকেই বহন করতে হবে। জনগণের উপর দায় চাপাতে পারবে না। এবার নির্বাচনে না এলে বিএনপির রাজনীতির আস্তাকুঁড়ে চলে যাবে।
চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম বলেন, রমজানের আগেই নগর আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে। এতে থানা ও ওয়ার্ড পযার্য়ে শৃংখলা ফিরিয়ে আনবো। তিনি বলেন, আগামি নির্বাচনে দল, নৌকা এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বার্থে সকলকে ঐকৗবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশে কিং অব চিটাগং কমিউনিটি সেন্টারে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের পরিচালনায় সভাপতিত্ব করেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। এতে সম্মানীত বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি, প্রচার সম্পাদক ড হাসান মাহমুদ এমপি, চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম এবং ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এছাড়া তৃনমূলের ৮জন নেতা বক্তব্য রাখেন। এ সভায় এমএ লতিফ এমপি, সাবিহা মুসা এমপি এবং কেন্দ্রীয় ও নগরসহ চট্টগ্রামের নেতারা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। তবে এ অনুষ্ঠানে নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আফসারুল আমীন এমপি ও প্রবাসী মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি উপস্থিত ছিলেন না।