গত বুধবার রাত ১১টা থেকে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত দফায় দফায় উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের সায়েদাবাদ ও বালুরচর এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন-সায়েদাবাদ এলাকার মৃত ইসমাইল ব্যাপারীর ছেলে আমির হোসেন (৬০) ও বাদল মিয়া (৪৫), শাহীন মিয়ার ছেলে জুনাইদ মিয়া (১৬), মো. আব্বাস আলীর ছেলে আনিস মিয়া (৩০) ও সাহাব উদ্দিনের স্ত্রী ফিরোজা বেগম (৪০)।
নিহতদের মধ্যে আমির হোসেন, জুনাইদ মিয়া ও ফিরোজা বেগমের লাশ রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাখা রয়েছে। নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন আনিস মিয়া। এছাড়া নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে ঢাকায় নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়েছে বাদল মিয়ার। বাদল মিয়ার মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন তার ছোট বোন আনোয়ারা বেগম।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সায়েদাবাদ গ্রামে বালু ব্যবসাসহ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে হানিফ মাস্টারের গ্রুপ। প্রতিরাতে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। পার্শ্ববর্তী বালুরচর গ্রামের লোকজনকে এ এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হত না। বর্ষার কারণে পানিতে টইটুম্বুর হয়ে যাওয়ায় বালুরচর এলাকার লোকজনের চলাচলের পথও সীমিত হয়ে যায়। গত বুধবার রাত ১১টায় বালুরচর এলাকার লোকজন এরশাদ মিয়া ও সাবমিয়ার নেতৃত্বে সায়েদাবাদ বাজারে অবস্থান নেন। এ সময় তাদের হামলায় হানিফ মাস্টারের পাঁচ-ছয়জন কর্মী গুলিবিদ্ধ হন। আহতদের রাতেই রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে হানিফ মাস্টারের লোকজন ওই বাজারে আগে থেকে অবস্থান নেওয়া বালুরচরের লোকজনের ওপর হামলা চালান। এ সময় টেঁটা ও গুলির আঘাতে উভয়পক্ষের কমপক্ষে ৩০ জন আহত হন। রাত একটায়, ভোরে এবং গতকাল বেলা ১১টার দিকে দফায় দফায় তাদের মধ্যে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদের মধ্যে বিকাল পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. রঞ্জন বর্মণ জানান, সায়েদাবাদ এলাকা থেকে আমাদের হাসপাতালে জুনাইদ, ফিরোজা ও আমির নামের তিনজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়। এছাড়াও আহত আরও অন্তত ১৯ জনকে আমরা চিকিৎসা দিয়েছি। একজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় নরসিংদী সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হতাহতরা সবাই গুলিবিদ্ধ ছিলেন।
নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মাহমুদুল কবির বাসার জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় আহত ১৫ জন তার হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। আনিস নামের একজন মারা গেছেন। গুরুতর আহত পাঁচজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে শ্রীনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রিয়াজ মোর্শেদ খানের মুঠোফোন নাম্বারে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাফায়েত হোসেন পলাশ জানান, আধিপত্য বিস্তার ও বালুর ব্যবসাকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলেও জানান তিনি।