শিল্প বর্জ্য ও রাসায়নিকের ক্ষতিকর প্রভাব ও প্রতিকার

এই পৃথিবীতে সুস্থ ও সুন্দর ভাবে জীবন যাপন করার জন্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, দূষণমুক্ত পরিবেশ অত্যন্ত জরুরি। উদ্ভিদ, প্রাণী এবং মানুষের সুস্থ স্বাভাবিক সহাবস্থান বজায় রাখার জন্য দূষণমুক্ত পরিবেশ আবশ্যক। কিন্তু শিল্পায়নের এই যুগে ব্যাপকভাবে শিল্প, কলকারখানা বেড়ে চলেছে এবং সেই সাথে এসব শিল্প কলকারখানা থেকে প্রতিনিয়ত ব্যাপকভাবে শিল্প বর্জ্য ও রাসায়নিক পদার্থ পরিবেশে অবমুক্ত হচ্ছে যা পরিবেশ দূষণ ঘটাচ্ছে।
 এরই ফলশ্রুতিতে  সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পরিবেশ দূষণ যে হারে বেড়ে চলেছে তাতে পরিবেশ দূষণ এখন শুধুমাত্র সাধারণ দূষণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বরং এটি এখন বিষাক্ত দূষণে রূপ নিয়েছে। এবং এভাবে যদি দূষণ অব্যাহত থাকে তাহলে ব্যাপক আকারে পরিবেশ বিপর্যয় হবে যা উদ্ভিদ, প্রাণী ও মানুষের সুস্থ ও স্বাভাবিক সহাবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলবে।এই আর্টিকেলে আমরা জানব, শিল্প বর্জ্য ও রাসায়নিক পদার্থ কীভাবে পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে এবং পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকাতে কীভাবে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।
শিল্প বর্জ্য ও রাসায়নিকের ধরণ এবং শব্দ দূষণ। শিল্প বর্জ্য হলো শিল্পকলকারখানা অথবা উৎপাদন প্রক্রিয়ার ফলে সৃষ্ট সেইসব বর্জ্য পদার্থ যা পরিবেশ এবং মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অর্থাৎ শিল্প কারখানা থেকে সৃষ্ট দূষণকারী পদার্থ যা পরিবেশ দূষণ করে এবং মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তাই হলো শিল্প বর্জ্য।এই শিল্প বর্জ্য বিভিন্ন ধরণের হতে পারে।
তরল বর্জ্য কারখানা থেকে নির্গত বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রবণ, তেল, এবং রঞ্জক জাতীয় পদার্থ।কঠিন বর্জ্য প্লাস্টিক দ্রব্য, ধাতব বস্তু, ও বিভিন্ন লৌহ পদার্থ।গ্যাসীয় বর্জ্য রাসায়নিক কারখানা থেকে নির্গত বিভিন্ন বিষাক্ত গ্যাস (সালফার ডাই অক্সাইড, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে)জৈব বর্জ্য খাদ্য উৎপাদন শিল্প,বেকারী শিল্প , এবং খাদ্য উৎপাদনের সাথে সংশ্লিষ্ট শিল্প থেকে নির্গত বিভিন্ন উপজাত।
তাছাড়া এসব বর্জ্য পদার্থে বিভিন্ন বিষাক্ত রাসায়নিক,ভারী ধাতু, এবং বিভিন্ন রকম দূষক যুক্ত থাকে যা পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ। বিভিন্ন উৎস থেকে এসব শিল্প বর্জ্য ও রাসায়নিক নির্গত হয়ে থাকে।
শিল্প কারখানা শিল্প কারখানা থেকে নির্গত বর্জ্য পদার্থ যেমন- পারদ, সীসা,ভারী ধাতু, কার্বন ডাই অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড এর মতো বিষাক্ত গ্যাস। এছাড়াও টেক্সটাইল শিল্প ,ট্যানারি শিল্প, প্লাস্টিক শিল্প, ঔষধ শিল্প থেকে প্রচুর পরিমাণে দূষক নির্গমন হয় যা পরিবেশ বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প তেল শোধনাগার ও গ্যাস প্রক্রিয়াকরণ শিল্প থেকে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয় যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর কৃষিক্ষেত্র কৃষিক্ষেত্রে অতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার ,যা মাটি দূষণ করে এবং পানিতে মিশে জলজ পরিবেশকে বিনষ্ট করে।
খনিজ শিল্প খনি থেকে বিভিন্ন রাসায়নিক যেমন সীসা,পারদ, ক্যাডমিয়াম ও আকরিক উত্তোলনের সময় সৃষ্ট বর্জ্য মাটি দূষণ করে এবং পরবর্তীতে তা খাদ্য শৃঙ্খলে প্রবেশ করে স্বাস্থ্যহানি ঘটায়। ধাতব শিল্প ধাতব শিল্প যেমন ইস্পাত কারখানা, অ্যালুমিনিয়াম ,সীসা এবং এই ধরণের বিভিন্ন ধাতব পদার্থ উৎপাদন কারখানা থেকে বিষাক্ত বর্জ্য ও ভারী ধাতু ছড়িয়ে পড়ে যা পরিবেশ দূষণের উৎস। প্লাস্টিক শিল্প প্লাস্টিক শিল্প থেকে নির্গত পদার্থ যেমন পলিভিনাইলক্লোরাইড(পিভিসি),
স্টাইরিন,পলিপ্রোপলিন জাতীয় বিষাক্ত উপজাত।
এছাড়াও রেয়ন শিল্প রেয়ন শিল্পে কাগজ উৎপাদন এ সৃষ্ট উপজাত যেমন- ক্লোরিন, ক্যালসিয়াম হাইপোক্লোরাইট, হাইড্রোক্লোরিক এসিড ইত্যাদি ট্যানারি শিল্প ট্যানারি শিল্পে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় উৎপন্ন ক্রোমিয়াম এবং বিভিন্ন ভারী ধাতু যা খাদ্য শৃঙ্খলে প্রবেশ করে স্বাস্থ্যহানি ঘটায়।
এছাড়াও আরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনেক শিল্প কলকারখানা রয়েছে যেখানে সঠিক ভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা না হলে পরিবেশে বিষাক্ত দূষণ হতে পারে।
শিল্প বর্জ্য ও রাসায়নিকের ক্ষতিকর প্রভাব নগরায়ন ও শিল্পায়নের এই যুগে বিভিন্ন শিল্পের প্রসার হচ্ছে মানুষের প্রয়োজনেই। কিন্তু অধিকাংশ শিল্পেই সঠিক ভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রয়োগ করা হয় না যার ফলে এসব শিল্প বর্জ্য ও বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ পরিবেশে অবমুক্ত হচ্ছে যা একইসাথে পরিবেশ দূষণ করছে এবং মানব স্বাস্থ্যে ও প্রাণী স্বাস্থ্য কে ব্যাপক হুমকির সম্মুখীন করছে।
এর মধ্যে রয়েছে পরিবেশগত প্রভাব:
বায়ু দূষণ শিল্প বর্জ্য ও রাসায়নিকের সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব হল বায়ু দূষণ। শিল্প কারখানা থেকে নির্গত বিভিন্ন বিষাক্ত উপজাত ও গ্যাস যেমন সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড , কার্বন ডাই অক্সাইড ইত্যাদি বায়ু দূষণ করে এবং এই গ্যাস গুলোর কারণে প্রতিনিয়ত গ্রীন হাউজ ইফেক্ট বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে সাম্প্রতিক সময়ে জলবায়ু পরিবর্তন ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাটি দূষণশিল্প বর্জ্যে থাকা ভারী ধাতু যেমন সীসা, আর্সেনিক, ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম ,পারদ ইত্যাদি মাটিতে মিশে মাটির উর্বরতা নষ্ট করছে এবং ফলশ্রুতিতে ফসল উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। এছাড়াও এসব ভারী ধাতু বিভিন্ন ভাবে মাটি থেকে ফসলের মাধ্যমে খাদ্য শৃঙ্খলে প্রবেশ করছে।
আরও রয়েছে পানি দূষণ শিল্প বর্জ্য ও এসব বিষাক্ত রাসায়নিক উপজাত নদী নালা,হ্রদ ,ও ভুগর্ভস্থ পানির সাথে মিশে পানি দূষণ করছে। ফলে জলজ পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে । বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, ট্যানারি শিল্প থেকে নির্গত হওয়া ক্রোমিয়াম উপজাত এবং টেক্সটাইল শিল্পের রঞ্জক প্রতিনিয়ত জলজ বাস্তু তন্ত্র কে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।তাছাড়া এসব বিষাক্ত ভারী ধাতু বিভিন্ন ভাবে পানির সাথে মিশে খাদ্য শৃঙ্খলে প্রবেশ করে স্নায়ুরোগ তৈরি করে।
জীববৈচিত্রের ওপর প্রভাব শিল্প বর্জ্য ও রাসায়নিক দূষণের কারণে জীববৈচিত্র্য বিভিন্ন প্রতিকূলতার সম্মুখীন। শিল্প কলকারখানা থেকে নির্গত বিভিন্ন দূষক ও বিষাক্ত উপজাত জীববৈচিত্র্যের স্বাভাবিক সহাবস্থান কে ক্রমাগত বিনষ্ট করে চলেছে। এছাড়া বিভিন্ন বিষাক্ত ভারী ধাতু খাদ্য শৃঙ্খলে প্রবেশ করে প্রাণীদের প্রজনন হার হ্রাস করছ।
এছাড়া শিল্প বর্জ্য থাকা রাসায়নিক পদার্থ মাটির pH কে পরিবর্তন করে,যার কারণে উদ্ভিদের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাছাড়া এসব বিষাক্ত রাসায়নিক বর্জ্যের কারণে জিন মিউটেশন ঘটে যার কারণে অনেক প্রজাতি বিলুপ্তির পথে। শিল্প কারখানা থেকে‌ সালফার ডাই অক্সাইড ও নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড নিঃসৃত হয় যা এসিড বৃষ্টি ঘটায় ফলে উদ্ভিদ, মাটি ও জলজ বাস্তুতন্ত্রের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে ।
এছাড়াও মানব স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব শ্বাসযন্ত্রের প্রভাব শিল্প বর্জ্য ও রাসায়নিকের দূষণের কারণে বায়ু দূষণ হচ্ছে।ফলে এই দূষিত বায়ু শ্বাস প্রশ্বাস এর সমস্যা সহ বিভিন্ন ধরনের রোগ সৃষ্টি করছে যেমন অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিস , ফুসফুস ক্যান্সার ইত্যাদি। ক্যান্সারের ঝুঁকি বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে যে, শিল্প বর্জ্যের এসব ভারী ধাতু ও রাসায়নিক পদার্থের দীর্ঘমেয়াদি সংস্পর্শে থাকার ফলে কিডনি, লিভার ও ফুসফুসে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে যা অত্যন্ত ভীতিকর।
এছাড়া শিল্প বর্জ্যে থাকা বিষাক্ত উপজাত ও বিভিন্ন তেজস্ক্রিয় পদার্থ মানব শরীরে অত্যন্ত বাজে প্রভাব ফেলে যার কারণে বিকলাঙ্গ , মানসিক ভারসাম্যহীনতা , অটিজম, স্নায়ুবিক বিকলাঙ্গ ইত্যাদির মত অস্বাভাবিক অবস্থা তৈরি হয়।
কৃষিক্ষেত্রে প্রভাব শিল্প বর্জ্য ও রাসায়নিক দূষণের কারণে মাটির pH পরিবর্তিত হয়ে যায় যার ফলে মাটির গুণগত মান বিনষ্ট হয়,যা কৃষিজ উৎপাদনকে ব্যাহত করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে,দূষিত মাটিতে উৎপাদিত ফসলে বিভিন্ন ভারী ধাতু থাকে যা মানুষের সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।
জলবায়ু পরিবর্তনে প্রভাব:
জলবায়ু পরিবর্তন এই শতাব্দীর জন্য একটা চরম অশনি সংকেত। এবং এই জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য শিল্প বর্জ্য থেকে নির্গত গ্রীন হাউজ গ্যাস প্রত্যক্ষ ভাবে দায়ী। যেমন কার্বন ডাই অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড, মিথেন ইত্যাদি গ্যাস গ্রীন হাউজ ইফেক্ট প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি করছে যার ফলশ্রুতিতে বৈশ্বিক উষ্ণতা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায় সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের ভয়াবহ বন্যা, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের ভয়াবহ দাবানল যা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব হিসাবে পরিগণিত হচ্ছে। তাই আমাদের এই বসুন্ধরায় উদ্ভিদ প্রাণী ও মানুষের স্বাভাবিক সহাবস্থান নিশ্চিত করার জন্য টেকসই সমাধানের পথ খুঁজতে হবে , অন্যথায় অদূর ভবিষ্যতে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে আমাদের এই প্রিয় বসুন্ধরা।
টেকসই সমাধানের উপায় শিল্প বর্জ্য ও রাসায়নিকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পরিত্রাণের জন্য টেকসই সমাধানের পথ বের করতে হবে। এই পৃথিবীকে একটি নিরাপদ ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে হলে পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকাতে হবে এবং জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের জন্য জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। এজন্য শিল্প বর্জ্য ও রাসায়নিকের ক্ষতিকর প্রভাব হ্রাস করতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উদ্দ্যোগ: শিল্প দূষণ প্রতিরোধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নীতিমালা প্রণয়ন করা এবং তা কার্যকর বাস্তবায়ন করা।
•সকল শিল্প কারখানা এবং প্রক্রিয়াকরণ ইউনিটকে সরকারি নজরদারির আওতায় আনা এবং কঠোর আইন প্রণয়ন করা এবং তা কার্যকর করা।
প্রযুক্তিগত ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তির কার্যকর প্রয়োগের মাধ্যমে কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চালু করা। যেমন শিল্প বর্জ্য শোধনাগার তথা ইটিপি স্থাপন করে কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চালু করা।
-শিল্প কারখানায় পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করা। নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে দূষণ হ্রাস করা।বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: রিসাইক্লিং এর মাধ্যমে বর্জ্য কে পুনঃ ব্যবহার উপযোগী করা।সচেতনতা তৈরি করা: সচেতনতা মূলক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে এই দূষণকে অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।যেমন
বিভিন্ন সেমিনার, সিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে শিল্প বর্জ্য ও রাসায়নিকের ক্ষতিকর প্রভাব আলোচনা করা, গণমাধ্যমে এই ধরণের সচেতনতা মূলক প্রচারণা চালানো,সোশ্যাল মিডিয়াতে বিভিন্ন ধরনের সচেতনতা মূলক পোস্ট শেয়ার করা। এছাড়া ব্যক্তিগত ও সামাজিক পর্যায়ে বৃক্ষ রোপন করা মানুষকে বৃক্ষ রোপন করতে উদ্বুদ্ধ করা এবং প্লাস্টিক ও রাসায়নিক ব্যবহারে সচেতন করা।
পরিশেষে শিল্প বর্জ্য ও রাসায়নিক দূষণ শুধুমাত্র পরিবেশের জন্য হুমকি নয়, বরং এটি জীববৈচিত্র্য ও মানব স্বাস্থ্যের উপর দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে এবং উদ্ভিদ প্রাণী ও মানুষের স্বাভাবিক সহাবস্থান কে হুমকির মুখে ফেলছে । জীববৈচিত্র্য কে বিলুপ্তির মুখে ঠেলে দিচ্ছে এবং ক্রমাগত দূষণের কারণে কৃষিজ উৎপাদনকে ব্যাহত করছে। সুতরাং  শিল্প বর্জ্য ও রাসায়নিকের দূষণ থেকে পরিবেশ কে বাঁচাতে সবাই কে সম্মিলিত ভাবে এগিয়ে আসতে হবে। প্রযুক্তি গত ও নীতিগত সমাধানের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং টেকসই ও পরিবেশ বান্ধব শিল্প নীতি বাস্তবায়ন করতে হবে।
ট্যাগস :

শিল্প বর্জ্য ও রাসায়নিকের ক্ষতিকর প্রভাব ও প্রতিকার

আপডেট সময় : ০৬:৫৮:৩১ অপরাহ্ণ, শনিবার, ১ মার্চ ২০২৫
এই পৃথিবীতে সুস্থ ও সুন্দর ভাবে জীবন যাপন করার জন্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, দূষণমুক্ত পরিবেশ অত্যন্ত জরুরি। উদ্ভিদ, প্রাণী এবং মানুষের সুস্থ স্বাভাবিক সহাবস্থান বজায় রাখার জন্য দূষণমুক্ত পরিবেশ আবশ্যক। কিন্তু শিল্পায়নের এই যুগে ব্যাপকভাবে শিল্প, কলকারখানা বেড়ে চলেছে এবং সেই সাথে এসব শিল্প কলকারখানা থেকে প্রতিনিয়ত ব্যাপকভাবে শিল্প বর্জ্য ও রাসায়নিক পদার্থ পরিবেশে অবমুক্ত হচ্ছে যা পরিবেশ দূষণ ঘটাচ্ছে।
 এরই ফলশ্রুতিতে  সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পরিবেশ দূষণ যে হারে বেড়ে চলেছে তাতে পরিবেশ দূষণ এখন শুধুমাত্র সাধারণ দূষণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বরং এটি এখন বিষাক্ত দূষণে রূপ নিয়েছে। এবং এভাবে যদি দূষণ অব্যাহত থাকে তাহলে ব্যাপক আকারে পরিবেশ বিপর্যয় হবে যা উদ্ভিদ, প্রাণী ও মানুষের সুস্থ ও স্বাভাবিক সহাবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলবে।এই আর্টিকেলে আমরা জানব, শিল্প বর্জ্য ও রাসায়নিক পদার্থ কীভাবে পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে এবং পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকাতে কীভাবে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।
শিল্প বর্জ্য ও রাসায়নিকের ধরণ এবং শব্দ দূষণ। শিল্প বর্জ্য হলো শিল্পকলকারখানা অথবা উৎপাদন প্রক্রিয়ার ফলে সৃষ্ট সেইসব বর্জ্য পদার্থ যা পরিবেশ এবং মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অর্থাৎ শিল্প কারখানা থেকে সৃষ্ট দূষণকারী পদার্থ যা পরিবেশ দূষণ করে এবং মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তাই হলো শিল্প বর্জ্য।এই শিল্প বর্জ্য বিভিন্ন ধরণের হতে পারে।
তরল বর্জ্য কারখানা থেকে নির্গত বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রবণ, তেল, এবং রঞ্জক জাতীয় পদার্থ।কঠিন বর্জ্য প্লাস্টিক দ্রব্য, ধাতব বস্তু, ও বিভিন্ন লৌহ পদার্থ।গ্যাসীয় বর্জ্য রাসায়নিক কারখানা থেকে নির্গত বিভিন্ন বিষাক্ত গ্যাস (সালফার ডাই অক্সাইড, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে)জৈব বর্জ্য খাদ্য উৎপাদন শিল্প,বেকারী শিল্প , এবং খাদ্য উৎপাদনের সাথে সংশ্লিষ্ট শিল্প থেকে নির্গত বিভিন্ন উপজাত।
তাছাড়া এসব বর্জ্য পদার্থে বিভিন্ন বিষাক্ত রাসায়নিক,ভারী ধাতু, এবং বিভিন্ন রকম দূষক যুক্ত থাকে যা পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ। বিভিন্ন উৎস থেকে এসব শিল্প বর্জ্য ও রাসায়নিক নির্গত হয়ে থাকে।
শিল্প কারখানা শিল্প কারখানা থেকে নির্গত বর্জ্য পদার্থ যেমন- পারদ, সীসা,ভারী ধাতু, কার্বন ডাই অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড এর মতো বিষাক্ত গ্যাস। এছাড়াও টেক্সটাইল শিল্প ,ট্যানারি শিল্প, প্লাস্টিক শিল্প, ঔষধ শিল্প থেকে প্রচুর পরিমাণে দূষক নির্গমন হয় যা পরিবেশ বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প তেল শোধনাগার ও গ্যাস প্রক্রিয়াকরণ শিল্প থেকে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয় যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর কৃষিক্ষেত্র কৃষিক্ষেত্রে অতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার ,যা মাটি দূষণ করে এবং পানিতে মিশে জলজ পরিবেশকে বিনষ্ট করে।
খনিজ শিল্প খনি থেকে বিভিন্ন রাসায়নিক যেমন সীসা,পারদ, ক্যাডমিয়াম ও আকরিক উত্তোলনের সময় সৃষ্ট বর্জ্য মাটি দূষণ করে এবং পরবর্তীতে তা খাদ্য শৃঙ্খলে প্রবেশ করে স্বাস্থ্যহানি ঘটায়। ধাতব শিল্প ধাতব শিল্প যেমন ইস্পাত কারখানা, অ্যালুমিনিয়াম ,সীসা এবং এই ধরণের বিভিন্ন ধাতব পদার্থ উৎপাদন কারখানা থেকে বিষাক্ত বর্জ্য ও ভারী ধাতু ছড়িয়ে পড়ে যা পরিবেশ দূষণের উৎস। প্লাস্টিক শিল্প প্লাস্টিক শিল্প থেকে নির্গত পদার্থ যেমন পলিভিনাইলক্লোরাইড(পিভিসি),
স্টাইরিন,পলিপ্রোপলিন জাতীয় বিষাক্ত উপজাত।
এছাড়াও রেয়ন শিল্প রেয়ন শিল্পে কাগজ উৎপাদন এ সৃষ্ট উপজাত যেমন- ক্লোরিন, ক্যালসিয়াম হাইপোক্লোরাইট, হাইড্রোক্লোরিক এসিড ইত্যাদি ট্যানারি শিল্প ট্যানারি শিল্পে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় উৎপন্ন ক্রোমিয়াম এবং বিভিন্ন ভারী ধাতু যা খাদ্য শৃঙ্খলে প্রবেশ করে স্বাস্থ্যহানি ঘটায়।
এছাড়াও আরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনেক শিল্প কলকারখানা রয়েছে যেখানে সঠিক ভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা না হলে পরিবেশে বিষাক্ত দূষণ হতে পারে।
শিল্প বর্জ্য ও রাসায়নিকের ক্ষতিকর প্রভাব নগরায়ন ও শিল্পায়নের এই যুগে বিভিন্ন শিল্পের প্রসার হচ্ছে মানুষের প্রয়োজনেই। কিন্তু অধিকাংশ শিল্পেই সঠিক ভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রয়োগ করা হয় না যার ফলে এসব শিল্প বর্জ্য ও বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ পরিবেশে অবমুক্ত হচ্ছে যা একইসাথে পরিবেশ দূষণ করছে এবং মানব স্বাস্থ্যে ও প্রাণী স্বাস্থ্য কে ব্যাপক হুমকির সম্মুখীন করছে।
এর মধ্যে রয়েছে পরিবেশগত প্রভাব:
বায়ু দূষণ শিল্প বর্জ্য ও রাসায়নিকের সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব হল বায়ু দূষণ। শিল্প কারখানা থেকে নির্গত বিভিন্ন বিষাক্ত উপজাত ও গ্যাস যেমন সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড , কার্বন ডাই অক্সাইড ইত্যাদি বায়ু দূষণ করে এবং এই গ্যাস গুলোর কারণে প্রতিনিয়ত গ্রীন হাউজ ইফেক্ট বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে সাম্প্রতিক সময়ে জলবায়ু পরিবর্তন ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাটি দূষণশিল্প বর্জ্যে থাকা ভারী ধাতু যেমন সীসা, আর্সেনিক, ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম ,পারদ ইত্যাদি মাটিতে মিশে মাটির উর্বরতা নষ্ট করছে এবং ফলশ্রুতিতে ফসল উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। এছাড়াও এসব ভারী ধাতু বিভিন্ন ভাবে মাটি থেকে ফসলের মাধ্যমে খাদ্য শৃঙ্খলে প্রবেশ করছে।
আরও রয়েছে পানি দূষণ শিল্প বর্জ্য ও এসব বিষাক্ত রাসায়নিক উপজাত নদী নালা,হ্রদ ,ও ভুগর্ভস্থ পানির সাথে মিশে পানি দূষণ করছে। ফলে জলজ পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে । বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, ট্যানারি শিল্প থেকে নির্গত হওয়া ক্রোমিয়াম উপজাত এবং টেক্সটাইল শিল্পের রঞ্জক প্রতিনিয়ত জলজ বাস্তু তন্ত্র কে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।তাছাড়া এসব বিষাক্ত ভারী ধাতু বিভিন্ন ভাবে পানির সাথে মিশে খাদ্য শৃঙ্খলে প্রবেশ করে স্নায়ুরোগ তৈরি করে।
জীববৈচিত্রের ওপর প্রভাব শিল্প বর্জ্য ও রাসায়নিক দূষণের কারণে জীববৈচিত্র্য বিভিন্ন প্রতিকূলতার সম্মুখীন। শিল্প কলকারখানা থেকে নির্গত বিভিন্ন দূষক ও বিষাক্ত উপজাত জীববৈচিত্র্যের স্বাভাবিক সহাবস্থান কে ক্রমাগত বিনষ্ট করে চলেছে। এছাড়া বিভিন্ন বিষাক্ত ভারী ধাতু খাদ্য শৃঙ্খলে প্রবেশ করে প্রাণীদের প্রজনন হার হ্রাস করছ।
এছাড়া শিল্প বর্জ্য থাকা রাসায়নিক পদার্থ মাটির pH কে পরিবর্তন করে,যার কারণে উদ্ভিদের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাছাড়া এসব বিষাক্ত রাসায়নিক বর্জ্যের কারণে জিন মিউটেশন ঘটে যার কারণে অনেক প্রজাতি বিলুপ্তির পথে। শিল্প কারখানা থেকে‌ সালফার ডাই অক্সাইড ও নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড নিঃসৃত হয় যা এসিড বৃষ্টি ঘটায় ফলে উদ্ভিদ, মাটি ও জলজ বাস্তুতন্ত্রের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে ।
এছাড়াও মানব স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব শ্বাসযন্ত্রের প্রভাব শিল্প বর্জ্য ও রাসায়নিকের দূষণের কারণে বায়ু দূষণ হচ্ছে।ফলে এই দূষিত বায়ু শ্বাস প্রশ্বাস এর সমস্যা সহ বিভিন্ন ধরনের রোগ সৃষ্টি করছে যেমন অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিস , ফুসফুস ক্যান্সার ইত্যাদি। ক্যান্সারের ঝুঁকি বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে যে, শিল্প বর্জ্যের এসব ভারী ধাতু ও রাসায়নিক পদার্থের দীর্ঘমেয়াদি সংস্পর্শে থাকার ফলে কিডনি, লিভার ও ফুসফুসে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে যা অত্যন্ত ভীতিকর।
এছাড়া শিল্প বর্জ্যে থাকা বিষাক্ত উপজাত ও বিভিন্ন তেজস্ক্রিয় পদার্থ মানব শরীরে অত্যন্ত বাজে প্রভাব ফেলে যার কারণে বিকলাঙ্গ , মানসিক ভারসাম্যহীনতা , অটিজম, স্নায়ুবিক বিকলাঙ্গ ইত্যাদির মত অস্বাভাবিক অবস্থা তৈরি হয়।
কৃষিক্ষেত্রে প্রভাব শিল্প বর্জ্য ও রাসায়নিক দূষণের কারণে মাটির pH পরিবর্তিত হয়ে যায় যার ফলে মাটির গুণগত মান বিনষ্ট হয়,যা কৃষিজ উৎপাদনকে ব্যাহত করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে,দূষিত মাটিতে উৎপাদিত ফসলে বিভিন্ন ভারী ধাতু থাকে যা মানুষের সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।
জলবায়ু পরিবর্তনে প্রভাব:
জলবায়ু পরিবর্তন এই শতাব্দীর জন্য একটা চরম অশনি সংকেত। এবং এই জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য শিল্প বর্জ্য থেকে নির্গত গ্রীন হাউজ গ্যাস প্রত্যক্ষ ভাবে দায়ী। যেমন কার্বন ডাই অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড, মিথেন ইত্যাদি গ্যাস গ্রীন হাউজ ইফেক্ট প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি করছে যার ফলশ্রুতিতে বৈশ্বিক উষ্ণতা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায় সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের ভয়াবহ বন্যা, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের ভয়াবহ দাবানল যা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব হিসাবে পরিগণিত হচ্ছে। তাই আমাদের এই বসুন্ধরায় উদ্ভিদ প্রাণী ও মানুষের স্বাভাবিক সহাবস্থান নিশ্চিত করার জন্য টেকসই সমাধানের পথ খুঁজতে হবে , অন্যথায় অদূর ভবিষ্যতে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে আমাদের এই প্রিয় বসুন্ধরা।
টেকসই সমাধানের উপায় শিল্প বর্জ্য ও রাসায়নিকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পরিত্রাণের জন্য টেকসই সমাধানের পথ বের করতে হবে। এই পৃথিবীকে একটি নিরাপদ ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে হলে পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকাতে হবে এবং জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের জন্য জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। এজন্য শিল্প বর্জ্য ও রাসায়নিকের ক্ষতিকর প্রভাব হ্রাস করতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উদ্দ্যোগ: শিল্প দূষণ প্রতিরোধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নীতিমালা প্রণয়ন করা এবং তা কার্যকর বাস্তবায়ন করা।
•সকল শিল্প কারখানা এবং প্রক্রিয়াকরণ ইউনিটকে সরকারি নজরদারির আওতায় আনা এবং কঠোর আইন প্রণয়ন করা এবং তা কার্যকর করা।
প্রযুক্তিগত ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তির কার্যকর প্রয়োগের মাধ্যমে কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চালু করা। যেমন শিল্প বর্জ্য শোধনাগার তথা ইটিপি স্থাপন করে কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চালু করা।
-শিল্প কারখানায় পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করা। নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে দূষণ হ্রাস করা।বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: রিসাইক্লিং এর মাধ্যমে বর্জ্য কে পুনঃ ব্যবহার উপযোগী করা।সচেতনতা তৈরি করা: সচেতনতা মূলক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে এই দূষণকে অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।যেমন
বিভিন্ন সেমিনার, সিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে শিল্প বর্জ্য ও রাসায়নিকের ক্ষতিকর প্রভাব আলোচনা করা, গণমাধ্যমে এই ধরণের সচেতনতা মূলক প্রচারণা চালানো,সোশ্যাল মিডিয়াতে বিভিন্ন ধরনের সচেতনতা মূলক পোস্ট শেয়ার করা। এছাড়া ব্যক্তিগত ও সামাজিক পর্যায়ে বৃক্ষ রোপন করা মানুষকে বৃক্ষ রোপন করতে উদ্বুদ্ধ করা এবং প্লাস্টিক ও রাসায়নিক ব্যবহারে সচেতন করা।
পরিশেষে শিল্প বর্জ্য ও রাসায়নিক দূষণ শুধুমাত্র পরিবেশের জন্য হুমকি নয়, বরং এটি জীববৈচিত্র্য ও মানব স্বাস্থ্যের উপর দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে এবং উদ্ভিদ প্রাণী ও মানুষের স্বাভাবিক সহাবস্থান কে হুমকির মুখে ফেলছে । জীববৈচিত্র্য কে বিলুপ্তির মুখে ঠেলে দিচ্ছে এবং ক্রমাগত দূষণের কারণে কৃষিজ উৎপাদনকে ব্যাহত করছে। সুতরাং  শিল্প বর্জ্য ও রাসায়নিকের দূষণ থেকে পরিবেশ কে বাঁচাতে সবাই কে সম্মিলিত ভাবে এগিয়ে আসতে হবে। প্রযুক্তি গত ও নীতিগত সমাধানের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং টেকসই ও পরিবেশ বান্ধব শিল্প নীতি বাস্তবায়ন করতে হবে।