শিরোনাম :
Logo ভেড়ামারায় আগ্নেয়াস্ত্রসহ শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার Logo বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা সন্দেহে ভারতে আটক ৪৪৮ জন Logo ফ্রান্সে ভয়াবহ দাবানল, আহত শতাধিক মানুষ Logo জমি বিরোধকে কেন্দ্র করে যুবককে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা Logo বীরগঞ্জে দুই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অনিয়ম, ৬০ হাজার টাকা জরিমানা Logo দিনমজুরি করেও স্বপ্ন দেখেছে আইনজীবী হওয়ার, পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয় চান্স পেয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হলেও পড়ালেখার ভবিষ্যৎ টাকার অভাবে অনিশ্চিৎ Logo কুবিতে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদযাপনের দায়িত্বে বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতাকর্মীরা! Logo মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে: ধর্ম উপদেষ্টা Logo সুপারস্টার ডি এ তায়েব অফিসিয়াল ফ্যান ক্লাবের আয়োজনে ঈদ পুনর্মিলনী” শিশু শিল্পী টুনটুনির জন্মদিন উদযাপন Logo রাবিতে ডাইনিং সংকটসহ ৫ দফা দাবিতে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের

বুদ্ধিমান গাড়ি!

  • amzad khan
  • আপডেট সময় : ০৭:২৮:২৮ অপরাহ্ণ, রবিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬
  • ৭৭৯ বার পড়া হয়েছে
নিউজ ডেস্ক:
সিদরানের মনটা আজ খুব খারাপ। কোনো কিছু করতে ইচ্ছা করছে না। লেখাপড়া একদম করতে ইচ্ছা করছে না। মনে হচ্ছে মানুষ না হয়ে পাখি হলে ভালো হতো। লেখাপড়ার কোনো চাপ থাকত না। যখন যেখানে খুশি চলে যেত। সারা দেশ ঘুরে বেড়াত। পাখিরা যখন পাখনা না নেড়ে বাতাসে ভেলা হয়ে ভেসে বেড়ায়Ñ সিদরানের খুব ভালো লাগে। মনে মনে খুব বিস্মিত হয়। কিভাবে এটা সম্ভব! তারও যদি দু’টি পাখা থাকত! কতই না মজা হতো। সিদরানের মন খারাপ হলে চুপি চুপি ছাদে চলে যায়। একা একা দূর দিগন্তের দিকে তাকিয়ে থাকে। মনের কষ্টকে নীল আকাশের সাথে মিশিয়ে দেয়। আজো ভরদুপুরে বাসার ছাদে চলে গেল। ছাদ থেকে চার দিকে তাকালে শুধু দালান আর দালান, আর মাঝে মধ্যে দু-একটা গাছ চোখে পড়ে। অথচ তার দাদুবাড়ি ঠিক এর উল্টোটা। সেখানে বিশাল বড় সবুজ ফসলের মাঠ। বয়ে চলা টলটলে পানির নদী। আকাশজোড়া নানা রকমের গাছ। ঘুটঘুটে বাঁশবাগান। আকাশে চক্কর দেয় শিকারি চিল। সুযোগ পেলেই ছোঁ মারে মুরগির বাচ্চার ওপর। মুরগি কলরব করে মানুষ জড়ো করে।
গত ঈদে দাদুবাড়ি গিয়েছিল। কী মজাই না হয়েছে! ঈদ মানে যে খুশি, আনন্দ এটা তার দাদুবাড়ি গেলে বোঝা যায়। মোতির মালার মতো সার বেঁধে মানুষ ঈদগাহে যায়। বড় পাকুড় গাছের নিচে তাদের ঈদগাহ। ছায়ায় বসে মানুষ নামাজ পড়ে। বাড়িতে বাড়িতে দাওয়াতের ধুম পড়ে যায়। অতিথিতে ভরে যায় বাড়ি। শিশুদের উল্লাস আর দুষ্টুমিতে মুখরিত হয় সারা বাড়ি। চার দিকে নামে আনন্দের ঢল। মানুষে মানুষে উপচে পড়া ভালোবাসা। পুরো গ্রামবাসী যেন একই অঙ্গের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ।
এবার তার বাবা সরাসরি বলে দিয়েছেনÑ ঈদে আর বাড়ি যাবেন না। তাদের নিজস্ব গাড়ি নেই। রেলের টিকিটও পাওয়া যায় না। সবাইকে নিয়ে বাসে যাওয়াটা পছন্দ করেন না তার বাবা। তাদের যেতে হয় ভাড়া করা গাড়িতে। সড়ক দুর্ঘটনা যেভাবে বেড়েছে, তার বাবা আর সাহস পাচ্ছেন না বাড়ি যেতে। মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে আর বাড়ি যাওয়া নয়। তিনি বলেছেন, ‘ঈদের পর কোনো একসময় বাড়ি যাবেন।’ সিদরান এটাকে মেনে নিতে পারছে না। ঈদের মজা কি অন্য সময় পাওয়া যায়? কিন্তু কী আর করা। তার বাবাকে কিছুতেই বোঝানো যাচ্ছে না।
উত্তর দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। মনে মনে দাদুবাড়ির কথা চিন্তা করছে। চোখের সামনে ছবির মতো সব কিছু ভেসে উঠছে। মনে হলো মটরঘুঘুর ডাক শুনতে পেল সিদরান। হঠাৎ পেছন ফিরে তাকাল। তাকিয়ে চমকে উঠল। অদ্ভুত চেহারার এক মানুষ দেখতে পেল ছাদের এক কোনায়। গায়ের রঙ তামাটে। নাক টিকালো। হাত দুটো বেশ লম্বা। মাথার চুল বাদামি। মুখে দুই পাটিতে দুই রকম দাঁত। চলে আসবে বলে পা বাড়াতেই লোকটি খিলখিল করে হাসতে লাগল। হাসিতে শিশুসুলভ সারল্য। তাকে ইশারায় কাছে ডাকল। সিদরান থুম হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। লোকটিই তার কাছে এসে তার কাঁধে হাত রাখল। তোমার মন খারাপ আমি জানি। তোমাদের এখানে এসে আমার মনও ভীষণ খারাপ হয়ে গেছে। তোমাদের সমাজ ছেয়ে গেছে বিভিন্ন অন্যায়, অনাচার আর জুলুমে। কান পাতলেই মানুষের হাহাকার শোনা যায়। তোমরা বুক ছেড়ে ফেসবুক ধরেছ। এটি সমাজের অবক্ষয়ের জন্য অনেকাংশে দায়ী। আসার পথে শুনলাম, এক মধ্যবয়সী মহিলা ডুকরে ডুকরে কাঁদছে। তার ছেলেকে পুলিশে চাকরি দেয়ার লোভ দেখিয়ে সব নিয়ে গেছে প্রতারক চক্র। তিনি নিঃস্ব হয়ে কাঁদছেন। দেখার কেউ নেই। এ কথা শুনে বাড়ি যাওয়ার কথা ভুলে গেল সিদরান।
লোকটি পকেট থেকে ছোট্ট একটি যন্ত্র বের করল। সিদরানের হাতে দিয়ে বলল, ‘তোমরা যে গাড়িতে যাবে, সেই গাড়ির ইঞ্জিন কন্ট্রোল মডিউলের সাথে এটি সেট করে নেবে। গাড়ি বুদ্ধিমান হয়ে যাবে। দুর্ঘটনা এড়িয়ে চলবে। দুর্ঘটনা ৯৯ শতাংশ কমে যাবে।’ মিষ্টি একটি হাসি দিয়ে সিদরানের থুঁতনিতে আলতোভাবে ধরে বলল, ‘এবার খুশি তো।’ সিদরান সত্যিই খুব খুশি হলো। ওপরে-নিচে মাথা নাড়ল।
এবার লোকটি পকেট থেকে একটি নীল রঙের প্যাকেট বের করল। বলল, ‘এখানে কিছু পাবন ফুলের বিচি আছে। এই ফুলের ঘ্রাণ বাতাসে মিশলে বাতাস দূষণমুক্ত হবে এবং মানুষের মনও বিশুদ্ধ হবে।’ হঠাৎ লোকটি অদৃশ্য হয়ে গেল। রহস্যের অন্ধকারে হারিয়ে গেল। এরপর সিদরানের ঘুম ভেঙে গেল।

 

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

ভেড়ামারায় আগ্নেয়াস্ত্রসহ শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার

বুদ্ধিমান গাড়ি!

আপডেট সময় : ০৭:২৮:২৮ অপরাহ্ণ, রবিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬
নিউজ ডেস্ক:
সিদরানের মনটা আজ খুব খারাপ। কোনো কিছু করতে ইচ্ছা করছে না। লেখাপড়া একদম করতে ইচ্ছা করছে না। মনে হচ্ছে মানুষ না হয়ে পাখি হলে ভালো হতো। লেখাপড়ার কোনো চাপ থাকত না। যখন যেখানে খুশি চলে যেত। সারা দেশ ঘুরে বেড়াত। পাখিরা যখন পাখনা না নেড়ে বাতাসে ভেলা হয়ে ভেসে বেড়ায়Ñ সিদরানের খুব ভালো লাগে। মনে মনে খুব বিস্মিত হয়। কিভাবে এটা সম্ভব! তারও যদি দু’টি পাখা থাকত! কতই না মজা হতো। সিদরানের মন খারাপ হলে চুপি চুপি ছাদে চলে যায়। একা একা দূর দিগন্তের দিকে তাকিয়ে থাকে। মনের কষ্টকে নীল আকাশের সাথে মিশিয়ে দেয়। আজো ভরদুপুরে বাসার ছাদে চলে গেল। ছাদ থেকে চার দিকে তাকালে শুধু দালান আর দালান, আর মাঝে মধ্যে দু-একটা গাছ চোখে পড়ে। অথচ তার দাদুবাড়ি ঠিক এর উল্টোটা। সেখানে বিশাল বড় সবুজ ফসলের মাঠ। বয়ে চলা টলটলে পানির নদী। আকাশজোড়া নানা রকমের গাছ। ঘুটঘুটে বাঁশবাগান। আকাশে চক্কর দেয় শিকারি চিল। সুযোগ পেলেই ছোঁ মারে মুরগির বাচ্চার ওপর। মুরগি কলরব করে মানুষ জড়ো করে।
গত ঈদে দাদুবাড়ি গিয়েছিল। কী মজাই না হয়েছে! ঈদ মানে যে খুশি, আনন্দ এটা তার দাদুবাড়ি গেলে বোঝা যায়। মোতির মালার মতো সার বেঁধে মানুষ ঈদগাহে যায়। বড় পাকুড় গাছের নিচে তাদের ঈদগাহ। ছায়ায় বসে মানুষ নামাজ পড়ে। বাড়িতে বাড়িতে দাওয়াতের ধুম পড়ে যায়। অতিথিতে ভরে যায় বাড়ি। শিশুদের উল্লাস আর দুষ্টুমিতে মুখরিত হয় সারা বাড়ি। চার দিকে নামে আনন্দের ঢল। মানুষে মানুষে উপচে পড়া ভালোবাসা। পুরো গ্রামবাসী যেন একই অঙ্গের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ।
এবার তার বাবা সরাসরি বলে দিয়েছেনÑ ঈদে আর বাড়ি যাবেন না। তাদের নিজস্ব গাড়ি নেই। রেলের টিকিটও পাওয়া যায় না। সবাইকে নিয়ে বাসে যাওয়াটা পছন্দ করেন না তার বাবা। তাদের যেতে হয় ভাড়া করা গাড়িতে। সড়ক দুর্ঘটনা যেভাবে বেড়েছে, তার বাবা আর সাহস পাচ্ছেন না বাড়ি যেতে। মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে আর বাড়ি যাওয়া নয়। তিনি বলেছেন, ‘ঈদের পর কোনো একসময় বাড়ি যাবেন।’ সিদরান এটাকে মেনে নিতে পারছে না। ঈদের মজা কি অন্য সময় পাওয়া যায়? কিন্তু কী আর করা। তার বাবাকে কিছুতেই বোঝানো যাচ্ছে না।
উত্তর দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। মনে মনে দাদুবাড়ির কথা চিন্তা করছে। চোখের সামনে ছবির মতো সব কিছু ভেসে উঠছে। মনে হলো মটরঘুঘুর ডাক শুনতে পেল সিদরান। হঠাৎ পেছন ফিরে তাকাল। তাকিয়ে চমকে উঠল। অদ্ভুত চেহারার এক মানুষ দেখতে পেল ছাদের এক কোনায়। গায়ের রঙ তামাটে। নাক টিকালো। হাত দুটো বেশ লম্বা। মাথার চুল বাদামি। মুখে দুই পাটিতে দুই রকম দাঁত। চলে আসবে বলে পা বাড়াতেই লোকটি খিলখিল করে হাসতে লাগল। হাসিতে শিশুসুলভ সারল্য। তাকে ইশারায় কাছে ডাকল। সিদরান থুম হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। লোকটিই তার কাছে এসে তার কাঁধে হাত রাখল। তোমার মন খারাপ আমি জানি। তোমাদের এখানে এসে আমার মনও ভীষণ খারাপ হয়ে গেছে। তোমাদের সমাজ ছেয়ে গেছে বিভিন্ন অন্যায়, অনাচার আর জুলুমে। কান পাতলেই মানুষের হাহাকার শোনা যায়। তোমরা বুক ছেড়ে ফেসবুক ধরেছ। এটি সমাজের অবক্ষয়ের জন্য অনেকাংশে দায়ী। আসার পথে শুনলাম, এক মধ্যবয়সী মহিলা ডুকরে ডুকরে কাঁদছে। তার ছেলেকে পুলিশে চাকরি দেয়ার লোভ দেখিয়ে সব নিয়ে গেছে প্রতারক চক্র। তিনি নিঃস্ব হয়ে কাঁদছেন। দেখার কেউ নেই। এ কথা শুনে বাড়ি যাওয়ার কথা ভুলে গেল সিদরান।
লোকটি পকেট থেকে ছোট্ট একটি যন্ত্র বের করল। সিদরানের হাতে দিয়ে বলল, ‘তোমরা যে গাড়িতে যাবে, সেই গাড়ির ইঞ্জিন কন্ট্রোল মডিউলের সাথে এটি সেট করে নেবে। গাড়ি বুদ্ধিমান হয়ে যাবে। দুর্ঘটনা এড়িয়ে চলবে। দুর্ঘটনা ৯৯ শতাংশ কমে যাবে।’ মিষ্টি একটি হাসি দিয়ে সিদরানের থুঁতনিতে আলতোভাবে ধরে বলল, ‘এবার খুশি তো।’ সিদরান সত্যিই খুব খুশি হলো। ওপরে-নিচে মাথা নাড়ল।
এবার লোকটি পকেট থেকে একটি নীল রঙের প্যাকেট বের করল। বলল, ‘এখানে কিছু পাবন ফুলের বিচি আছে। এই ফুলের ঘ্রাণ বাতাসে মিশলে বাতাস দূষণমুক্ত হবে এবং মানুষের মনও বিশুদ্ধ হবে।’ হঠাৎ লোকটি অদৃশ্য হয়ে গেল। রহস্যের অন্ধকারে হারিয়ে গেল। এরপর সিদরানের ঘুম ভেঙে গেল।